জ্বলদর্চি

সনেট গুচ্ছ/ওয়াহিদা খাতুন

সনেট গুচ্ছ
ওয়াহিদা খাতুন 

 যবনিকা 

অনুকূলে নয় প্রতিকূলতায় হেসে;
জীর্ণকুয়াশা ভেদ করে চৈতি-আসরে,
বৈষম্য-আলপথ বেয়ে সাম্য-বাসরে,
তিতাসের খামে শ্বেতপদ্ম হয়ে ভেসে;
বঞ্চিত-গারদে পাষাণ কপাট খুলে, 
কৃষ্ণচূড়া-দাবানলে সরাবো কুয়াশা;
ঝরবে বিকারগ্রস্ত সভ্যতা-ধুয়াশা;
টর্নেডো হয়ে এ বিভেদ প্রাচীর ভুলে !

ফাগুনের আগুনবস্ত্রে পুড়বে হিংসা,
ফুটন্ত নক্ষত্র বেশে নিশুতি-উদরে;
কালাশয্যায় জ্যোৎস্নালোক দেবো উগরে;
খরবায়ু বেগে ধ্বংস হবে সর্বলিপ্সা,

কালবৈশাখী হয়ে বৈকালে আচমকা !
ভাঙবো বিকৃত সভ্যতার যবনিকা !!


তোমার প্রহরে রজনীগন্ধা
     
অপেক্ষার নিঃশ্বাসে ছন্দপতন আজ;
দেউলিয়া হৃদয়ে বিষাদী করাঘাত ;
অন্তঃকর্ণে বাজে শুধু তারি স্বরাঘাত;
বিরহে ভেঙেছে আমার বসন্ত-সাজ;
ফনিমনসা হয়ে রঙ বাগিচা-মধ্যে,
লাবণ্যহীনা ক্যাকটাসী ধূধূ প্রান্তরে;
বিষন্ন বাঁশির সুর পোড়া মরু অন্তরে;
পদ্যছন্দ হারিয়ে ডুবি ভাবেভরা গদ্যে !

কিযে অশনি শঙ্কাতে মরি সারাক্ষণ,
নিঃশব্দের অক্ষরে তোমাতেই মিশেছি ;
কায়মনোবাক্যে এই হৃদয় শোপেঁছি;
প্রতিক্ষার প্রহরে বিলীন হলো মন,

কাঙ্ক্ষিত আঙিনায় বসে সকাল-সন্ধ্যা !
কুড়াই তোমার প্রহরে-রজনীগন্ধা !


অন্তর্দহন

বিকৃত মনুষ্যত্বের পৈশাচিক দ্বারে
তারুণ্যের বাগান জুড়ে পৌঢ়-জ্বালা;
টর্নেডোয় বিদ্ধস্ত যৌবন-পাঠশালা ;
দ্বিমুখী দহন আর দ্বৈরাত্মের ভারে;
শ্যেন চোখের অন্দরমহল-শয্যায়--
রক্তকরবীর উষ্ণ ঠোঁটের উদরে;
লোহার-হাপর গরল দেয় উগরে;
বিরক্তির নির্যাশ খেলে শিরা,মজ্জায়!

কামনার শয্যা কাঁঁদে ভ্রুকুটি-তর্জনে,
প্রেমবনে তাকাশূর সুখ করে চূর্ণ;
কুবেরের মন তার অর্থ-দম্ভে পূর্ণ;
বিনিদ্র রাত কাটে পৈশাচিক গর্জনে,

সম্ভ্রম শঙ্কায় করি আত্মসমর্পণ!
কূল ভেঙে কোঁকিয়ে ওঠে অন্তর্দহন !!


 সামাজিক ব্যধি 

মিথ্যা ত্রাসে মরি শুধু সমাজের ভয়ে;
বিকৃত সমাজে কিবা আছে গ্রহণীয়,
জ্ঞানচক্ষু দিয়ে দেখো সব বর্জনীয়,
অশ্রু ঢেকেও হাসতে হবে জ্বালা সয়ে;
এ কী মারণযজ্ঞ নেশাতে আছি বাঁধা--
বিবাহ নামে এক নারকীয় যন্ত্রণা ;
পৈশাচিক কুটুম্বের হিংস্র কূমন্ত্রণা;
হাজারো সংস্কারের কিযে গোলকধাঁধা !

বৈষম্যের ঘুর্ণিপাকে অহর্নিশি জ্বলি,
মৎস্য কণ্টকের ন্যায় ওষ্ঠাগত প্রাণ ;
শ্বাসাঘাতে গেঁথে নিয়ে করি আনচান ;
ন্যায়ের দন্ডেও আত্ম,স্বার্থ-দলাদলি,

 সামাজিক ব্যধির কবে হবে উৎখাত !
এ ব্যধি-পরে কেনো হয়না বজ্রপাত !!


 মহা ঔষধি কালমেঘ
  
কালমেঘ পাতায় আছে মহা ঔষধি ;
ক্যান্সার,ডায়াবেটিস যাবে চিরতরে,
ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ায় ভুগবেনা জ্বরে,
ডাক্তারের পরামর্শে খেয়ে যাও যদি;
জ্বর,সর্দি,কাশি,টন্সিলাইটিস সারে,
পেস্টিসাইড-এফেক্ট করে নিরাময় ;
ডায়রিয়া,গ্যাসের সমস্যা দূর হয়;
 আর্থারাইটিস সারিয়ে তুলতে পারে !

এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর মাত্রায় থাকে,
শারীরিক শক্তি, কর্মক্ষমতা বাড়ায় ;
বিষাক্ত প্রাণীর বিষ-প্রদাহ কমায়;
ত্বকের জৌলুষ,উজ্বলতা ধরে রাখে,

প্রয়োজন মতো খেয়ো কালমেঘ পেলে !
বহুমুত্রে ভুগবে মাত্রাতিরিক্ত খেলে! 


তোমার সৃষ্টির সন্ধান
        
মহাকাশে কতযান ভাসে দিনরাত,
আবিস্কারের নেশায় ঘুম ছুটে যায়;
গ্রহ-উপগ্রহ,নক্ষত্র কিম্বা সে চাঁদ,
ছায়াপথে দূরবিক্ষণের নিশানায়;
কিন্তু রাতের আকাশে অসংখ্য তারার,
আঁকিবুঁকি লিপিমালা,কজন জেনেছে?
কী লিখে সারারাত,তা নেইকি জানার,
কার স্তবগান চলে--কেউ কি ভেবেছে?

সকাল হলে কী সূর্য গ্রাস করে ফেলে 
সব তারকারাজিকে;নাকি অন্য কিছু;
কত যে রহস্যময়,কেযে কাকে গেলে,
আমি বলি সবাই ঘোরে তোমার পিছু;

হৃদয় দিয়ে করিনা তা অনুসন্ধান !
কজন খোঁজে তোমার সৃষ্টির সন্ধান !!

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments