জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -২৭


সম্পাদকীয়

'তুই কি ভাবিস দিন রাত্তির খেলতে আমার মন?' আরে খেললে শুধু হবে? খেলার জন্য চাই খেলার সাজ। হ্যাঁ, এই যেমন ক্রিকেটে লেগ গার্ড, হেলমেট, ফুটবলে বুট, ব্যাটমিন্টনে র‍্যাকেট, এমনকি রান দিতে গেলেও কের্স আর মোজা পরা জরুরী। দেখছো না প্রচ্ছদের বাচ্চাটা কী সুন্দর হাঁটু অবধি মোজা আর জুতো পরে খেলছে। আচ্ছা বলতো, ও কী খেলছে? ভাবছো? ভাবো। খেলা কী কম আছে। এই তো আমিও সেদিন খেলতে বেরিয়ে কাঠবেড়ালীর সাথে কত্ত খেললাম অঞ্জলীর মতো। আর শীতকাল এলেই সার্কাসের ট্রাপিজের খেলা দেখার কথা মনে পড়ে যায়। খেলা দেখা শেষ হলেই মন খারাপ ভিড় করে আসে৷ খেলা শেষ হবার কথায় বলি, সতেরোটা রবিবার ধরে যে ধারাবাহিকটি তোমরা পড়লে আজ সাতাশতম ছোটোবেলা সংখ্যায় সেটার শেষ পর্ব প্রকাশ পাচ্ছে। মন তোমাদেরও ইলু বিলু তিলুর জন্য কাঁদবে জানি। তার জন্য ভালো ভালো গল্প কবিতা পড়ো, মন ভালো হয়ে যাবে। যেমন সুখী রাজপুত্রের গল্প, রবি ঠাকুরের কবিতা, নজরুলের কবিতা। আর তোমরা যদি সবাই বলো তবে আবার নতুন কোনো ধারাবাহিকের কথা ভাবব। নতুন গল্পের কথায় মন ভালো হয়ে গেল তো? জানতাম। গৌতম বাড়ইকে তাঁর কিশোর উপন্যাসটি আমাদের সতেরো পর্বে উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ প্রচ্ছদের অপূর্ব ছবিটি উপহার দেবার জন্য কল্যাণ সাহাকেও। এই সংখ্যাটি যাঁদের কলমে সমৃদ্ধ হয়েছে, শাঁওলি দে, মুক্তি দাশ, হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, ও শুভেন্দু মজুমদার তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানাই। দুই খুদে পাঠক সুখময় আর প্রীতি তাদের পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠানোয় আমাদের উৎসাহ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অন্য যারা প্রতি সংখ্যা পড়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠাচ্ছেন তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ছোটোবন্ধুরা যারা লিখছ আর আঁকছ তাদের দায়িত্ব ক্রমে বেড়ে চলেছে। পাঠকদের কাছে মনোগ্রাহী করে তোলার এমন দায়িত্ব তোমরা ছোটোরাও কাঁধে তুলে নিয়েছ বলে আমি এখন অনেক নিশ্চিন্ত। এসো এবার তবে পড়া পড়া খেলা খেলি।৷ - মৌসুমী ঘোষ।
অঞ্জলি ও কাঠবেড়ালী

মুক্তি দাশ

একেবারে মোম-পুতুলের মতো দেখতে ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটি। নাম অঞ্জলি। নজরুলের বাড়ির পাশেই তার বাড়ি। হ্যাঁ, বিদ্রোহীকবি কাজী নজরুল ইসলামের কথাই বলছি। 

একদিন নজরুল তাঁর বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন। এখান থেকে সামনের পেয়ারা-বাগানটা দিব্যি দেখা যায়। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়লো অঞ্জলির ওপর। তিঁনি দেখলেন, একটা পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ-ঠোঁট উল্টিয়ে, হাত-পা নেড়ে বাচ্চামেয়েটি যেন কার সঙ্গে কথা বলছে। সে কী কথা! কথা আর শেষই হতে চায় না। কথাগুলো অবশ্য এখান থেকে কিছুই শোনা যাচ্ছে না। 

নজরুল ভাবলেন, নিশ্চয়ই কেউ পেয়ারা গাছে উঠেছে। তার কাছে কাকুতি-মিনতি করে অঞ্জলি নিশ্চয়ই পেয়ারা চাইছে। কিন্তু গাছের ওপর যে আছে, সে তাকে পেয়ারা দিচ্ছে না। নজরুল তো ছোটদের খুব ভালোবাসতেন। তিঁনি ভাবলেন, অঞ্জলির হয়ে তিনিই না হয় পেয়ারা চাইবেন। ছেলেটা দেয় তো ভালো। না দিলে নিজেই পেয়ারা পেড়ে দেবেন। 

মজার ব্যাপার হলো, অঞ্জলির সামনে গিয়ে কবি নজরুল গাছের ওপর কাউকেই দেখতে পেলেন না। তবে অঞ্জলি কথা বলছিলো কার সঙ্গে? নজরুল তখন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ ও খুকি, তুমি অমন হাত-পা নেড়ে কার সাথে কথা বলছিলে?’ 

অঞ্জলি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, ‘দ্যাখো না কাকাবাবু! ওই যে গাছের ওপর পাতার ফাঁকে একটা কাঠবেড়ালী...দেখতে পাচ্ছো? ভীষণ দুষ্টু ওটা! ভারী বজ্জাত! রোজ রোজ দুষ্টুটা পেয়ারা খেয়ে পালিয়ে যায়। আমাকে একটাও দেয় না।’ 

কাঠবেড়ালীর সঙ্গে অঞ্জলির এই মান-অভিমানের ঘটনাটি নজরুলকে এতোটাই চমৎকৃত করলো যে, এই ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য বাড়ি ফিরে লিখেই ফেললেন ‘খুকী ও কাঠবেড়ালী’ নামের সেই বিখ্যাত কবিতা, যার প্রথম লাইন-

‘কাঠবেড়ালী! কাঠবেড়ালী! পেয়ারা তুমি খাও?’

বাকিটা নিশ্চয়ই আর তোমাদের বলে দিতে হবে না।


টুংটাং, সুখী রাজপুত্র ও একটি ইচ্ছেপূরনের গল্প 

শাঁওলি দে

(১)
আজ একবারও টিভির কাছে যায়নি টুংটাং। ওর বেজার মুখ দেখে বাবা একবার বলেছিল ঠিকই কিন্তু মায়ের ভয়ে ওদিকে আর তাকানোরই সাহস হয়নি টুংটাংয়ের। গন্ডোগোলটা তো সুব্রত আঙ্কলই করেছে আজ। কাল পড়াতে আসুক একটাও বাড়তি কথা বলবে না ও।  আর চকোলেট ? সেতো কোনোমতেই নেবে না। এই যে ও রোজ কী সুন্দর পড়া করে, সব 'টাস্ক' করে রাখে কই তখন তো এসব মাকে জানায় না আঙ্কল। আর আজই ওই কথাটা জানাতে হল। সুব্রত আঙ্কলের ওপর খুব অভিমান হয় ওর। 

ছোটা ভীম আজ দারুণ হবে৷ বন্ধুরা সবাই দেখবে, শুধু ওরই দেখা হবে না। ধুর, ধুর। কাল যখন স্কুলে সবাই ছোটা ভীমের কান্ডকারখানা নিয়ে কথা বলবে ওকে চুপ করেই থাকতে হবে৷ সুব্রত আঙ্কলের সঙ্গে কাট্টি কাট্টি কাট্টি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় ছোট্ট টুংটাং।  
সাড়ে নটার সময় মা খেতে ডাকল। চিকেন আর রুটি, টুংটাংয়ের প্রিয়৷ তবু ভালো করে খেলো না ও, মা দেখল কিন্তু কিচ্ছু বলল না। অন্যান্য দিনের মতো রুটি ছিঁড়েও দিল না। মায়ের থমথমে মুখ দেখে খারাপও লাগছিল টুংটাংয়ের। ও ভালো ছেলের মতো ব্রাশ করে ঘুমোতে চলে গেল। 

টুংটাংয়ের এখন ক্লাস থ্রী। ঠাম্মুর সঙ্গেই শোয় ও৷ মাকে কত বলেছে এখন ও কত্ত বড়, একা তো শুতেই পারে। কিন্তু মা শুনলে তো। বলে, ক্লাস ফাইভ হলে ভাববে। টুটান কী সুন্দর একা একা ঘুমোয়। অবশ্য ওর মামার ছেলে টুটানের এখন ক্লাস ফোর। যদিও ঠাম্মুর কাছে শুতে টুংটাংয়ের মজাই লাগে। কত্ত গল্প জানে ঠাম্মু। রাজকন্যা ও দৈত্যের গল্প, হিংসুটে দৈত্যের গল্প কিম্বা ওই সুখী রাজপুত্রের গল্প, যে মারা যাওয়ার পর ওর শরীরের সব সোনা খুলে দিয়েছিল গরীবদের !  এসব তো ঠাম্মুর মুখেই শোনা। আজ অবশ্য গল্প শুনতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। স্কুল থেকে ফেরার পর মায়ের বকাটাই মনে পড়ছে বারবার। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুম পেয়ে যায় টুংটাংয়ের নিজেও টের পায় না। 

সকাল ছটা বাজতে না বাজতেই মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে টুংটাংয়ের। ওমনি গতদিনের কষ্টটা আবার ফিরে আসে। মন খারাপ নিয়েই স্কুলের জন্য তৈরি হয় ও। 

মাকে আজ বেশ হাসিখুশি লাগছে। অন্যান্য দিনের মতো মা খাইয়েও দিল টুংটাংকে। তারপর বাবার হাত ধরে সোজা স্কুল বাস। স্কুল গেটে ঢোকার মুখেই থমকে দাঁড়ালো টুংটাং। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে পেল নোংরা, ছেঁড়া জামা পড়া প্রায় ওরই বয়সী ছেলেটাকে। ও হাত বাড়িয়ে ডাক দিল, 'এ্যাই বিপুল, এদিকে আয় একটু।' ওকে দেখেই ফোকলা দাঁতে হাসি ফুটে উঠল বিপুল নামে ছেলেটার। কাছে আসতেই টুংটাং বলে উঠল, 'স্কুল শেষে ওইদিকটায় থাকবি, এখানে না, বুঝলি ?' চকচক করে উঠল বিপুলের মুখটা। ও ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। এরপর স্কুলে ক্লাস ও ছোটা ভীমের গল্প করতে করতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। টিফিনের সময় বাক্সটা খুলতেই একটু অবাকই হল ও। মা অল্প চাউমিন দিয়েছে। কেন যে জানে। মন খারাপ হল টুংটাংয়ের। ও না খেয়েই বক্সশুদ্ধ ব্যাগে পুরে রাখল। 

(২)
ছুটির ঘন্টা পড়তেই টুংটাং বাসে ওঠার আগে বিপুলকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোথায় ? যেখানে দাঁড়ানোর কথা ছিল সেখানে তো নেই! তবে কি গেটের কাছে আছে ? দৌড়ে গেল টুংটাং। নাহ, সেখানেও নেই বিপুল। খুব কষ্ট পেল ও৷ আর অপেক্ষা করারও উপায় নেই। ড্রাইভারকাকু হর্ণ দিচ্ছে৷ বাধ্য হয়েই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হল টুংটাং। 

আজ বাড়ি ফিরতেই ইচ্ছে করছিল না টুংটাংয়ের। শুধু বিপুলের কথা মনে হচ্ছিল।কোথায় যে গেল ছেলেটা ?  কলিংবেল বাজাতেই ঠাম্মু দরজাটা খুলে দিল। অন্যান্যদিন ঘরে ঢুকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেয় ও, আজ সেসবে মন নেই। ঘরের ভেতরে ঢুকতেই সুব্রত আঙ্কলের গলা পেল ও, 'ছোট্ট প্রিন্স কি আমার ওপর রাগ করেছে ?' 
সামনে তাকাতেই অবাক টুংটাং। সোফায় মা বাবা আর সুব্রত আঙ্কল বসে আছে আর তার পাশে খানিকটা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে বিপুল। হাতে খাবারের থালা। ভয়ে ভয়ে মায়ের দিকে তাকায় টুংটাং। মা উঠে এসে আদর করে ছেলেকে, বলে,'আমরা তো জানতামই না আমাদের সোনা এত্ত বড় হয়ে গেছে।' টুংটাং আরও অবাক হয়। ওর মা বলতেই থাকে, 'তুমি যে কিছুদিন ধরে টিফিন খাচ্ছিলে না, তা বাড়ি ফেরার পর তোমার খাওয়া দেখেই টের পাচ্ছিলাম। জিজ্ঞেস করলে মিথ্যে বলছিলে সেটাও বুঝছিলাম।' 
'এইজন্য তো আমি গত তিনচারদিন ধরে তোমার স্কুলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলাম।কাল যখন তুমি তোমার টিফিনটা বিপুলকে দিচ্ছিলে আমি কাছেই ছিলাম।' বলে উঠল সুব্রত আঙ্কল। মাথা নিচু করে ফেলল টুংটাং। বাবা এবার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, 'খাইয়েছ খুব ভালো কথা, কিন্তু মাকে মিথ্যে বলাটা কি ঠিক হয়েছে ? এজন্য তো কাল বকা খেয়েছ মায়ের কাছে।'

টুংটাংয়ের ভীষন কান্না পাচ্ছিল। ও ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠল, 'তোমরা যদি বকো, তাই তো কিছু বলিনি। যদি আর আমাকে টিফিন না দিতে তখন তো ওর খাওয়াই হত না। জানো মা ওর না কেউ নেই, আমার তো সবাই আছে।' 
সকলেই অবাক হল ছোট্ট টুংটাংয়ের মুখে এইসব কথা শুনে। টুংটাং বিপুলের দিকে তাকালো, ও খাওয়ায় ব্যস্ত৷ ভালো করে দেখছেও না ওকে। টুংটাং বলতে লাগল, 'এখানে হ্যাপি প্রিন্স থাকলে কী ভালো হত না, মা ?' পেছন থেকে ঠাম্মু বলে উঠল, 'কে বলেছে হ্যাপি প্রিন্স নেই। এই যে আমাদের ছোট্ট প্রিন্স। ও থাকতে আর বিপুলের চিন্তা কী ?'
ওদের কথার মাঝেই বিপুল বলে উঠল, 'আরেকটা মিষ্টি খাব।'
বিপুলের কথায় সকলের মুখেই হাসি ফুটে উঠল। আর টুংটাং ? এক ছুট্টে মাকে জড়িয়ে ধরল আর মনে মনে মাকে ধন্যবাদ দিল ওর ইচ্ছে-পূরণ করার জন্য।

সামনে দিকে চাও

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

দেখতে দেখতে একটা বছর
হয়ে গেল পার,
কারও ভালো, কারও মন্দ
ভাবনা যেমন যার ।

ভেবেছিলে অনেক কিছু
কিছু হল পূর্ণ,
কিছু আবার মাঝপথেতে
হয়ে গেল চূর্ণ ।

যা গেছে যাক ওসব ছাড়ো
নতুন কিছু নাও,
পিছন পানে না তাকিয়ে
সামনে দিকে চাও ।

নতুন বছর নতুন করে
আবার শুরু কর,
ভেঙে গিয়েও আবার সোজা ----
তুমিই কেবল পারো ।

তাইতো তুমি পারবে জানি
তুমিই শুধু পারবে,
একবারেতেই হাল না ছেড়ে
শেষ দেখে তার ছাড়বে ।


শুভেন্দু মজুমদারের ছড়া

কালো কালো ভোমরারা করে শুধু ভনভন । 
ভয় পেয়ে সুকুদার মাথা ঘোরে বনবন ।
চারধারে মৌমাছি
সুকুদা ছোটেন রাঁচি
রাঁচিতে পৌঁছে বাছা শীতে করে কনকন ।।


সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন

পর্ব- ১৭
গৌতম বাড়ই

শেষের প্রথম ভাগ

এক লম্বামতন লোককে বাঁধা রয়েছে টেলিগ্রাফের খুঁটিতে। আড়াল থেকে তার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। এ যে দেখছি সেই বানজারা দলের লম্বু বানজারাটি! তাহলে সত্যি ওরা চুরি করে? চোর হয়? আমায় যদি দেখতে পায় ঐ লম্বু? তাই ভয়ে  মুখ লুকিয়ে চলে এলাম বাড়িতে। বাবার কাছে পরে শুনলাম থানা থেকে পুলিশ এসে চোরটিকে নিয়ে গিয়েছে। সবাই কিন্তু চিনতে পারে নি। 

আমরা এখন মাঝে মধ্যে এফপি স্কুলের মাঠে ফুটবলও খেলি আবার শীতের আগেই এবার ক্রিকেট খেলাও শুরু করেছি। কপিলদেব সদ্য তখন  ইন্ডিয়া টিমে এসেছেন। রেডিওতে কান পেতে খেলা শুনতাম। বাবা কপিল দেবের চারছয় আর বলহাতে উইকেট পেতে দেখে শুধু বলতেন- এইসব বাঘের মতন প্লেয়াররা দেখবি একদিন দেশকে খেলারজগতে কোথায় নিয়ে যাবে। সত্যি তাই হল!  তার বছর তিনেক পরেই এই কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বকাপ পেল। আমরা বাজী- পটকা ফাটিয়েছিলাম। এই গ্রামীণ শহরে যেটুকু যোগাড় হয়েছিল। 

সে যাক গে, এখন সন্ধে খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে। আজ ফুটবল খেলেই বাড়ি ফিরছিলাম। দেওয়ানি কাকার রাস্তার ওপর  কলপাড়ে হাত- পায়ে ধুলোবালি লেগে গিয়েছিল বলে ধুচ্ছিলাম। কাকা খুব নিস্তব্ধে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমায় শুধু বলল- একদিন একলা আমার কাছে বাড়িতে আসবি তো কথা আছে। আমি অন্ধকারে চেয়ে রইলাম কাকার মুখটি আবছা দেখা যাচ্ছিল। আমি শুধু বললাম- কেন? 
দেওয়ানি কাকা বললেন-- খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা আছে। এই বলে দেওয়ানি কাকা চলে গেলেন। আমি পেছন থেকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম এই দেওয়ানি কাকাকে আমি চিনিনা। মানুষ এত পাল্টে যেতে পারে?

পুজো এসে গেল। খুব আনন্দ খুব মজা আর দেদার এটা- ওটা খাওয়া হল। বিশের কুড়ি পয়সার ঘুগনি আর বুলবুল ভাজা খুব খেলাম চেটেপুটে। পুজো দেখলাম, লঙ্কাবাজি, তারাবাজি পোড়ালাম ফাটালাম । তোমরা বুঝতে পারছো না তো! লঙ্কাবাজি মানে কালিপটকা আর তারাবাজি হল ফুলঝুড়ি। আমরা এই নামে ডাকতাম। পুজোর পর স্কুল আর পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই এখানে ওখানে পোস্টার পড়ল শহরে আসছে পূর্ণিমা সার্কাস। ফালাকাটা ডাক- বাংলো ময়দানে। আমাদের এই গ্রামীণ শহরে খুব বড় আকারের নয় একটু ছোটোখাটো ধরনের সার্কাস আসত। বড় সার্কাস দেখতে বাবা একবার আমাদের সবাইকে কোচবিহার শহরে রাসেরমেলায় নিয়ে গিয়েছিল। শীত তো ভালই পড়েছে, তবে আমার ঐ তিন ভিনগ্রহী বন্ধু ইলু- বিলু- তিলু এখনও এলো না বলে মনটি খারাপ লাগে মাঝে- মাঝেই। বাড়িতে বড়রা একজায়গায় হলে এখনও সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সেই দিনগুলোর সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে দেদার গল্পকথা হয়। 

শেষের শেষটুকু

সার্কাস দেখতে যাব বলেও এখনও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আমি অনুপ আর সুশান্ত যাব। সঙ্গে অনুপের ভাই আর আমার ভাই-ও যাবে। রেজাল্ট বেরিয়ে গিয়ে নতুন ক্লাস শুরু হবে জানুয়ারি মাসে। এরমধ্যে একদিন দেওয়ানিকাকার ঘরে চুপিচুপি গেলাম ঐ গুরুত্বপূর্ণ কথাটি শুনতে। দেওয়ানি কাকা এক বড় চাবির গোছা দেখিয়ে বললেন-- এই আমার চৌকির নীচে এই বড় কৌটো এরমধ্যে রাখলাম। এটি মাটি খুঁড়ে আমাদের জিকাগাছের নীচে গোপনে রাখব আগামীকাল, তুই কাকীমাকে দেখিয়ে দিবি। 
আমি বললাম-- কেন কাকা তুমি কোথায় যাবে?
কাকা হাল্কা হেসে বললেন-- না না আমি দু- চার- পাঁচ মাস পরে ঠিক ফিরে আসব।

পূর্ণিমা সার্কাসের আজকেই শেষ শো। আমরা খুব মজা করে খেলা দেখছি। ইলু- বিলু- তিলু এখানে ক্লাউন সেজে বেশ মজা করছে আর নানারকম ব্যালেন্সের খেলা দেখাচ্ছে। আমি অবশ্য কদিন আগেই আগাম খবর পাই ঐ ভিনগ্রহী বন্ধুদের মারফত। আমি তো ওদের দেখতে পেয়েই আরও অবাক। ওরা আমার কাছে এসে নানা রকম কথা বলল। পূর্ণিমা সার্কাসের মালিক ঘোষণা করছেন বারেবারে---- আজকের এই অন্তিম শোয়ে আজকের ভাগ্যবান দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করছে এক চমকপ্রদ চমক। যা সারাজীবন মনে রাখবেন আপনারা। 

শেষের খেলা ট্রাপিজের। খেলা চলতে চলতেই হঠাৎ করে এই ছোট্ট সার্কাসের তাঁবুও রঙ- বেরঙের আলোয় ভরে উঠল। ঐ রকম আলোরচ্ছটা কেউ দেখেনি আগে। আমরা ঐ মুহূর্তে যেন অন্য এক মহা জাগতিক আলোর দেশে পৌঁছে গিয়েছিলাম।  তাঁবুর ওপরের কাপড়ের ছাদ বা ঢাকা খুলে গেল। আমরা ঐ শোয়ের পূর্ণিমা সার্কাসের দর্শকরা অবাক হয়ে দেখলাম এক গোল মহাকাশ যান রাতের আকাশে অপরূপ বিভিন্ন রঙের আলোমেখে ভাসছে। ইলু- বিলু- তিলুর খেলায় মুগ্ধ সবাই। এবার রকেটের মতন গতিতে ইলু- বিলু- তিলু সেই খোলাছাদ ফুঁড়ে মহাকাশযানে চেপে বসল। আলোয় আলোয় ভরে গেল চারদিক। দর্শকের হাততালি আর থামতে চায়না। সত্যি যা দেখল এ সারাজীবনের সম্পদ। তবে আমায় এটুকু বলল কানে- কানে--  বন্ধু আমাদের এবারের মতন কাজ শেষ। আবার অন্যকোন সময় দেখা হবে।‌ না তোমাদের শান্তির জীবন এবারে একদমই ব্যাঘাত ঘটাই নি। তবে আমাদের সাথে এবারে তোমাদের গ্রাম থেকে একজন বিশেষ কেউ যাবে। তুমি জানতে পারবে। আর এই সার্কাসের দলটি ঐ বানজারা দলটিকে দিয়েই গড়া। খেতে না পেলে মানুষ তো বেঁচে থাকবার জন্য একটা রাস্তা খুঁজে নেয়। যখন বেঁচে থাকবার সবকিছু বন্ধ হয়ে পড়ে। লম্বুকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। আলোয় আলোয় ঠিকরে পড়া ঐ মহাজাগতিক বিভিন্ন আলোর বর্ণে আমরা চোখেমুখে মেখে উঠে দাঁড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছিলাম ভিনগ্রহীদের।  সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় দিনগুলোর আর পুনরাবৃত্তি হবে না ঠিকই, তবে দেওয়ানি কাকার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আর আমার দেখিয়ে দেওয়া ঐ সম্পত্তির চাবির কৌটো কাকীমাকে দেখিয়ে দেওয়াতে--- সবাই বুঝল এই সংসারের বন্ধনে দেওয়ানি কাকা আর আবদ্ধ হয়ে থাকতে চাইছেন না। 

সেই রহস্যময়তা সেই তিন ভিনগ্রহী বন্ধু আজও মনে পড়ে। শুধু দেখি দেওয়ানিকাকা বাড়ির নিচে একতলাতে বসে সেই চুপটি করে বাইরে তাকিয়ে বসে থাকেন আজও। অশীতিপর বৃদ্ধ একজন।(শেষ)

মাতৃভাষা

নম্রতা সাঁতরা 
দ্বাদশ শ্রেণি, চন্দননগর বঙ্গ বিদ্যালয়, হুগলি

পাপনের স্কুলে অ্যানুয়াল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর, সুমিতা ঠিক করল দোলের সময়টা শান্তিনিকেতনে কাটাবে। ওর বান্ধবীদের গ্রুপটা গোটাটা যাবে ফ্যামিলি নিয়ে। বসন্ত উৎসবের সময় দারুন দেখতে লাগে শান্তিনিকেতন - দু একদিন ছুটি কাটানোর ভালো জায়গা। পাপনকে বলেছিল, যদি ৯৫% পাও তবে শান্তিনিকেতন আর তার বেশি পেলে মানালি।কিন্তু পাপনের বাংলা পরীক্ষাটা খারাপ হল বলে ৯৫% হল না আর শান্তিনিকেতনই জুটল কপালে। যদিও পাপনের ইচ্ছে ছিল মানালি। বাংলায় টিউশন মাস্টার দেওয়ার পরও কম নম্বর পাওয়ায় ছেলেকে খুব বকলেও সুমিতা বেশ গর্ব করেই সবাইকে বলেছে ওর ছেলে বাংলাটা ভালো পারেনা। তাই নম্বর কম এল..আসলে ইংরেজি মিডিয়াম কিনা! সুমিতা ছোটবেলায় বই টই পড়তে ভালোবাসলেও ,পাপন এসবের ধার ধারে না। সুমিতাও এখন বাংলাকে পড়ার বিষয় বলে মনে করেনা। যাহোক, তারা ঘুরে এল ভালোয় ভালোয়। পাপনের টিউশন শুরু হয় গেল। একদিন হঠাৎ পড়ার সময় নিজের মনেই পাপন গুনগুন করে গেয়ে উঠল "তোমার অশোক কিংশুকে অলক্ষ রং লাগল আমার অকারণে সুখে..." কিচেন থেকে এই কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে যায় সুমিতা।তার ইংলিশ মিডিয়াম এ পড়া ছেলে, বাংলা বানান ভুল করা ছেলে এত নিখুঁত করে গাইছে! তাও এত শক্ত উচ্চারণ! সে পাপনকে জিজ্ঞাসা করল -"বাবু,এই গান টা তুই গাইলি কীকরে?" পাপন উত্তর দিল -"কতবার শুনলাম শান্তিনিকেতনে, নাচ হল, গান হল , তুমি শোননি?"
আরও বলল - "মা, এই গান টা কে লিখেছে?" সুমিতা ঘোরের মধ্যে উত্তর দিল - "রবি ঠাকুর"। তারপর ভালো করে ভেবে দেখল - পাপন শুনেছে আর দেখেছে বলেই একেবারে এত গুলো শক্ত শব্দ শিখে গেল। কিন্তু সে নিজে কখনো ছেলেকে গান শোনায়নি।বাংলায় কোনো গল্পের বই কিনে দেয়নি। বাংলা ছড়াগুলো কখনো মজা করে বলেনি। কখনো রবি ঠাকুর, নজরুল এর কীর্তির কথা বলেনি। সুমিতা বুঝল - বাংলায় যে পাপন কম পেয়েছে, তার দোষ পাপনের নয়, দোষ তার নিজের। সুমিতার ১৮ বছরের জন্মদিনে মা'র দেওয়া রবীন্দ্র রচনাবলীর কথা মনে পড়ে গেলো। তার মা তাকে বুঝিয়ে দিত বহু কবিতার মানে। তার গলার কাছে দলা পাকানো একটা কান্না এসে গেল। সে ঠিক করল পাপন কে বাংলাটা নিজেই পড়াবে, হাজার হোক মাতৃভাষা বলে কথা, মা এর মুখ থেকে শুনলে তবেই ভালো করে শেখা যায়।।

অস্মিতার ভ্রমণের ডায়রি থেকে সত্যি কারের গল্প

অস্মিতা ঘোষ
দ্বিতীয় শ্রেণি, সেন্ট জেভিয়ার্স ইনস্টিটিউশান, পানিহাটি

ঘুরতে গিয়ে সবাই খুব আনন্দ করে। কিন্তু গত বছর ঘুরতে গিয়ে আমরা পড়েছিলাম ভীষন বিপদে। সেই গল্প তোমাদের আজ বলব। গত বছর আমি বাবা মার সাথে উত্তরাখন্ড রাজ্যের কার্তিক স্বামী  মন্দির দেখতে গেছিলাম। যোশীমঠ থেকে আউলি ঘোরার পর গাড়ি করে এলাম কনকচৌরি গ্ৰামে। রাস্তা খুব খারাপ। আমাদের পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেছিল।যেখানে ছিলাম সেটা একটা ছোট্ট গ্ৰাম। সেখান থেকে ৩.৪কি.মি হেঁটে পাহাড়ের চূড়ায় কার্তিক স্বামী মন্দিরে যেতে হয়। আমার তো ভয় লাগছিল পারব তো যেতে! আমরা যে হোম স্টেতে ছিলাম সেখানের ছাদ থেকে দারুন পাহাড় দেখা যায়। মনে হয় হাত বারালেই ধরতে পারব। ছাদে ওঠার ঘোরানো সিঁড়িটা লোহার।ওটাকে বাবি নাম দিয়েছিল পালকি সিঁড়ি। উঠতে সোজা লাগলেও নামাটা আমার কাছে খুব কঠিন ছিল। রাতে ঠান্ডায় প্রায় জমে যাবার দশা। প্রেশার কুকারে রান্না করা অদ্ভূত ভাত কোন রকমে খেলাম।বাবি আর মা দেখি খবর দেখে খুব চিন্তায় পড়ে গেছে।কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। রাত তিনটার সময় বাবির ডাকে ঘুম ভাঙল। বাবি আমাকে ট্রেকিং এর জন্য তৈরী করল। মাথায় একটা লাইট আর হাতে লাঠি নিয়ে একজন আঙ্কেলকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। এই আঙ্কেল আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা। অন্ধকারে বুঝতেই পারছি না কোথায় কি ভাবে যাচ্ছি। হঠাৎ মা বলল, ঐ দেখ!দেখলাম পাহাড়ের গায়ে হাজার জোনাকি জ্বলছে আর নিভছে। আমি তো অবাক। বাবি বলল, ওগুলো দূরের গ্ৰামের আলো। কি অপূর্ব লাগছিল। আবার হাঁটতে শুরু করলাম। পথ যেন আর শেষ হয় না। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমরা গভীর বনের মধ্য দিয়ে হাঁটছি। গাছগুলো যেন ভূতের মতো হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড ভয়ে বাবির হাত চেপে ধরলাম।অন্ধকারে কোথাও বসতে পারছি না। আস্তে আস্তে  আলো দেখা দিল। আমরা আরো তাড়াতাড়ি চলতে লাগলাম। প্রায় ১৫০টা সিঁড়ি পার হয়ে মন্দিরে যখন এলাম সূর্য তখন তার নানা রঙ দিয়ে পাহাড়ের গায়ে ছবি আঁকছে। 
     সাথে নাম না জানা পাখির গান। পাহাড়ের মাথায় হেঁটে চড়া আমার প্রথম বার। এখান থেকে চারপাশটা ছবির মতো লাগছিল। দেখে মন ভরে না। আমরা  অনেকক্ষন ছিলাম। এবার ফেরার পালা। হঠাৎ দেখি বাবির মুখ গম্ভীর। শুনলাম ২ঘন্টার মধ্যে আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে। কোন রকমে হোমস্টেতে এসে ম্যাগি খেলাম। মা আর বাবি মিলে সব গোছগাছ করল। ঘোরার আনন্দ তখন আতঙ্ক। কি হবে কিছু জানি না। অনেক ভেবে আমরা একটা গাড়ি ঠিক করলাম যে আমাদেরকে হরিদ্বার পৌঁছে দেবে। বাবি তৎকালে পরের দিনের ট্রেনের টিকিট কাটল‌। আমরা রাতে হরিদ্বার পৌঁছালাম। সব প্রায় বন্ধ। কনকচৌরি তে যেখানে ছিলাম ওনাদের চেনা একটা হোটেলে থাকলাম। সারাক্ষন একটা আতঙ্ক। পরের দিন সকালে আমরা হরিদ্বারে কিছুটা ঘুরলাম। কিন্তু সারাক্ষন একটা ভয়। রাতে অনেক শুকনো খাবার নিয়ে ট্রেনে উঠলাম। একটা দিন ট্রেনে কাটিয়ে ভালোয় ভালোয় ভোর বেলায় হাওড়ায় নামলাম। সে দিন ছিল ২৩.০৩.২০২০। বিকেল থেকে লক ডাউন।

পাঠ প্রতিক্রিয়া ১
(দশম শ্রেণীর ছাত্র সুখময় বিশ্বাস ২৬ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে যা লিখল) 

সময়টা কত দ্রুত কেটে যায় তাই না! দেখতে দেখতে ফাগুনও এসে দাঁড়িয়েছে তার  অন্তিম পর্যায়ে। আমরা বড়ো হয়ে গেলে আবার ছোটবেলাটাকেই খুঁজি। আমারও বার বার মনে হয় যে ঐ দিনগুলোতে ফিরে যাই। সশরীরে হয়তো পারব না। কিন্তু জ্বলদর্চি আমাকে বারবার নিয়ে যায় আমার ছোটবেলায়। অনেক অনেক ধন্যবাদ মৌসুমী ঘোষ মহাশয়াকে এই রকম একটা পত্রিকা উপহার দেওয়ার জন্য। 
     অনন্যা দাশ তার ‌‌"রিমি ও মার্গারেট" গল্পে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন টাইম মেশিনের সঙ্গে। যে মেশিন অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। যদিও এই মেশিন আমাদের কল্পনা। তবু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা গল্পটা প্রশংসনীয়। এছাড়াও উল্লেখ আছে ভগিনী নিবেদিতার কথা। মানুষকে সেবা করার প্রসঙ্গ। মানবিকতায় পূর্ণ এক চরিত্র। "The Master as I Saw Him"একটি বিখ্যাত ব‌ই।
     প্রভাত মিশ্রের "আমপাতা জামপাতা"কবিতাটা পড়ে মনে পড়ে গেল ছোটোবেলার একটা খেলার কথা। "মাটির বুকে একটা গোলক এঁকে তার ভেতরে সাত রকমের পাতা এনে রাখতে হবে। একজন চোর, পাতা আনার সময় সবাইকে ধরার চেষ্টা করবে। আর যাকে ধরবে সেই চোর। একদমে আনতে হবে পাতা। পাতা আনাআনি খেলা। আজ অনেক দিন পরে ভেসে উঠল সেই দিনগুলো।  
     রীতা মজুমদারের "হাসি" গল্পে রয়েছে দুটি শিশুর বুদ্ধির কিছু সীলমোহর। সবচেয়ে ভালো লাগে মিতুলের অভিভাবক হ‌ওয়া দেখে। যখন সে গল্পের কথকের মুখ চেপে তার কান্না করা আটকায়। মিতুল সত্যিই বাস্তবের সঙ্গে মিল রেখে চলেছে, সে হারিয়ে গিয়েও ভয় পায়নি। বরং অপেক্ষা করছে তার মা, মাসির জন্য। আবার কথক চেয়েছে টিকিটচেকার বা পুলিশের কাছে তাদের হারিয়ে যাওয়ার কথা বলতে। আমরা সাধারণত শিশুদের যা শেখাই, হারিয়ে গেলে কী করবে। অর্থাৎ কথক,তাকে শেখানো শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ।বিশেষ বাস্তবিক নয়।
    বানীয়া সাহার "আঁকাআঁকি"লেখাটা পড়ে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে একটা লাইন,"practice  makes a man perfect." সত্যিই তাই প্র‍্যাকটিস মানুষকে  যথাযথ করে তোলে। শুধু অঙ্কন নয় সব বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা যেন সবার ভেতরে চিরস্থায়ী হয়। 
     প্রবাহনীল দাশের কবিতা "বিতর্ক" মজার ছলে একটু ভিন্ন স্বাদ। বিতর্ক অর্থাৎ মতের অমিল। আমাদের জীবনে কখনও কখনও আমাদের নিজস্ব মতামত অন্যের কাছে ভুল মনে হয়, আর তখন শুরু হয় বিতর্ক। কবিতায় যেমন মুরগি পায়রার বিতর্ক শুনে বুলবুলি আর কাকাতুয়া পালিয়ে যায় তেমনি আমাদের সমাজের কিছু দুষ্ট মানুষ কোনো দ্বন্দ্ব থামানোর চেষ্টা না করে দূরে বসে থাকে। কিন্তু সমাজে কিছু ভালো মানুষ‌ও থাকে যারা দ্বন্দ্বটাকে মেটাতে চেষ্টা করে। আমার মনে হয় এই দৃষ্টি ভঙ্গিতে কবিতাটা সার্থক  হয়েছে।
    ছোটোবেলাতে কোনো জিনিস পছন্দ হলে আমার তা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে উৎসুখ হয়ে উঠি। সে বিষয়-সম্পত্তি যে আসলে কার তা জানার দরকার পড়ে না। আর জানলেও তেমন আমল দিই না। মোদ্দাকথা ঐ জিনিস আমার চাই। এখানে সাঁঝবাতি কুন্ডুর খেলনা গল্পের তার ব্যতিক্রম হয়নি। বেশ মজা লাগছিল যখন গুবলু কাঁদতে কাঁদতে বলছিল যে খেলনাটা  তার বালিশের নিচে আছে। আসলে সে লুকোনো খেলনার হদিস দিয়ে দিয়েছে। 
     গৌতম বাড়‌ই তার ধারাবাহিক লেখায় অপূর্ব, উত্তেজনা পূর্ণ একটা প্লট তৈরি করেছেন। জীবনে প্রথম চোর দেখা আর তাকে চিনতে পারা সত্যিই  বিস্ময়কর। তবে চমকটা তোলা র‌‌ইল পরের সংখ্যার জন্য। ততদিনে আন্দাজ করি কী হতে চলেছে...।
    পলাশ, শিমুল, মহুয়া যেমন গাছগুলোকে রঙীন করেছে তেমনি পত্রিকাটিকে রঙের ছিটে দিয়ে রঙীন করেছে ছোটো ছোটো চিত্র শিল্পীরা।
    সব মিলিয়ে জ্বলদর্চি সেজে উঠেছে রঙীন সাজে এই বসন্ত উৎসবের দিনে। সকলকে দোলপূর্ণিমার শুভেচ্ছা র‌ইল আর ধন্যবাদ মৌসুমী ঘোষ মহাশয়াকে ও সমস্ত লেখক, লেখিকা ও চিত্রশিল্পীদেরকে। অপেক্ষায় থাকবো পরের সংখ্যার...।

সুখময় বিশ্বাস 
পাটিকাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, পাটিকাবাড়ি, নদিয়া, দশম শ্রেণি


প্রকাশিত।  ক্লিক করে পড়ুন। 

পাঠ প্রতিক্রিয়া ২

(অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী প্রীতি জ্যোতি ২৬ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে যা লিখল) 

প্রথমেই জানাই মৌসুমী আণ্টিকে দোল পূর্ণিমায় অশেষ ধন‍্যবাদ। কারণ রঙিন রঙিন গল্প, কবিতা, ছবিআঁকা এমনকি 'জানো কি' উপহার দেওয়ার জন‍্য। অপেক্ষায় থাকি রবিবার -এর জন‍্য।করোনা পরিস্থিতিতে সব দিন গুলি যেন রবিবারে পরিণত হয়েছে। আগের মতো রবিবারের কোনো গুরুত্ব নেই। আমি আগের মতো রবিবার কে ফিরে পেয়েছি অন্য রূপে ও ভিন্ন স্বাদে সম্পাদিকা মৌসুমী আণ্টির ' জ্বলদর্চি' পত্রিকার মধ‍্য দিয়ে। আর একবার ধন‍্যবাদ আণ্টিকে ছোটদের একঘেয়েমি দূর করার জন‍্য।
       ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যা - ২৬ - এ চিত্রগ্রাহক সুদীপ পাত্র মহাশয়ের ছবি অন‍্যান‍্য সংখ্যার তুলনায় এবারের প্রচ্ছদ সত‍্যিই দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো। আমার মতে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও শিশুটির সরলতা যেন একে অপরের পরিপূরক।
       অনন‍্যার লেখা 'রিমি আর মার্গারেট' আমার খুব ভালো লেগেছে। এই রকম টাইমমেশিন দেখলে রিমির মতো সবারই কৌতূহল হবে।
     প্রভাত মিশ্র মহাশয়ের 'আমপাতা জামপাতা' ছড়াটি অতুলনীয়।আমাদের অবস্থা এখন এই ছড়াটির মতন।
      রীতা মজুমদারের 'হাসি' গল্প টি আমাদের আত্মরক্ষা ও সচেতনতা শেখায়। আর মিতুলের মতো বুদ্ধিমতী ও সাহসী তো হতেই হবে।
     বানীয়া দিদির আঁকাআঁকির টিপস গুলো অবশ‍্যই অনুসরণ করে চলব।
     প্রবাহনীল-এর বিতর্ক ছড়াটি অন‍্য ধরনের ছড়া।আমার ভালো লেগেছে।
    সাঁঝবাতি র লেখা ' খেলনা ' গল্প দুষ্টুমিতে ভরা।পিগলুর মতো আমারও একটা ছোট ভাই আছে। সেও গুবলুর মতো আমার সব জিনিস লুকিয়ে রেখে দেয়। কিছুতেই মানতে চায় না। ওর সরলতা দেখে মাও বিশ্বাস করে নেয়।
  অবসর সময়ে এমনকি ঘুমবার আগে গল্পের বই না পড়লে ঘুম আসে না। বাড়িতে থাকা সীমিত গল্প বই বারবার পড়তে হয়। এখন আর অসুবিধা হয় না যখন থেকে গৌতম বাড়ই এর 'সাঁতরাইচেঙ্গার রহস্যময় সাতকাহন' সপ্তাহে সপ্তাহে হাতে পেলাম। আমার রহস্য গল্প সবচেয়ে প্রিয়। ম‍্যাগনেটের মতো আকর্ষণ করে আগামী রবিবার কে।
     এবার লিখি ছোটবড়ো চিত্রশিল্পীদের রঙের মেলা। প্রথমেই 'জ্বলদর্চি 'পত্রিকায় আমি আগে তোমাদের ছবি আঁকা গুলি দেখি। ভেবো না শেষে দেখি! আকাশ পাড়ুই, সঞ্চিতা সাধুখাঁ, অনুভব বসু, প্রিয়ব্রত ঘোষ, সোমরাজ দাস, শতরূপ বসু তোমাদের প্রত‍্যেকেরই ছবি আমার খুব ভাল লেগেছে।
        সবশেষে, মনোজিৎ বাবুকে আমি 'জানো কি ' স‍্যার বলেই সম্বোধন করছি। কারণ অষ্টম  শ্রেণি পযর্ন্ত স্কুলে পড়াশোনা এখনও লকডাউন। স্কুলের পাঠ‍্যবই অনিচ্ছায় পড়তে হয় বাবা মায়ের চাপে। কিন্তু আপনার প্রশ্নগুলো এ বই সে বই খুঁজতে মোটেই চাপ লাগে না - কেন জানি না! বরং আরোও অজানা বিষয় জানতে ক্রমশ আগ্রহ বেড়েই চলেছে।

     ছোটদের প্রতি রইল বুকভরা স্নেহ ও ভালোবাসা, বড়োদের প্রতি নমস্কার ও শ্রদ্ধাঞ্জাপন। আর মৌসুমী আন্টির 'জ্বলদর্চি' পরবর্তী সংখ্যা আরও আকর্ষণীয় ও বিস্তার হয়ে উঠুক এই শুভকামনা করি।

 প্রীতি জ‍্যোতি
 অষ্টম শ্রেণি, কোমধাড়া মথুরকুড় উচ্চ বিদ‍্যালয়, হুগলী


পাঠ প্রতিক্রিয়া ৩
( বাংলার অধ্যাপিকা সুস্মিতা সাহা ২৬ তম সংখ্যা পড়ে যা লিখলেন) 

ছোটবেলা সংখ্যা ২৬ পড়তে পড়তে আমার খুব অপু হতে ইচ্ছে করলো। সেই বিস্ময় বালক - পথের পাঁচালী-র অপূর্ব কুমার রায়। সত্যি এই ছেলেবেলা বা ছোটবেলা একটি মজার রূপকথার দেশ।
যেখানে আচমকা টাইম মেশিনে চেপে সিস্টার নিবেদিতা ওরফে মার্গারেটের সঙ্গে দেখা করে আসা যায়। জানা যায় তাঁর মনের সেবা ব্রত নিয়ে ভাবনা চিন্তা গুলোকে। প্রবাসী শিশু সাহিত্যিক অনন্যা দাশের লেখা 'রিমি ও মার্গারেট' গল্পটি বেশ লাগলো। শিক্ষণীয় এবং সরস।
রীতা মজুমদারের 'হাসি' গল্পটি ভারি চমৎকার - মুখ দেখে মানুষের ভালো মন্দ বিচার করা যায় না এই সত্যটি আবার একবার প্রমাণ হয়ে যায় এই গল্পে। ট্রেনের মেয়েধরা খারাপ দেখতে লোকটির হাসিটা পরের দিকে অনেকটা মায়া মমতায় পরিপূর্ণ বলে মনে হয় মিতুল ও মিতুলের বোনের।
বানিয়া সাহা'র 'আঁকাআঁকি' নিবন্ধে এক শিক্ষানবিশী'র সাদা ক্যানভাসে প্রথম আঁচড় কাটার সুখ ও আনন্দ ধরা পড়েছে। ধীরে ধীরে সবকটি রঙের ব্যবহার শেখা এবং এই চলমান জগতকে ছবির ভাষায় ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা আন্তরিক ভাবে ফুটে উঠেছে। খুব সুন্দর লেখা - নিজের কথা মনে পড়ে যায়।

কি সুন্দর মিষ্টি একটা গল্প লিখেছে সাঁঝবাতি কুন্ডু, গার্ডেন হাই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। গুবলু ও পিকলুর মজার খুনসুটি উপভোগ করতে করতে খুব ইচ্ছে করে হাত বাড়িয়ে ওদের একটু আদর করে দিতে। সেই সঙ্গে সাঁঝবাতি' কে  আর প্রবাহনীলকে।
শেষ করি প্রভাত মিশ্র রচিত 'আমপাতা জামপাতা' ছড়াটির ছন্দে ছন্দে মন ভালো করে। সুন্দর ও অর্থবহ একটি ছড়া, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অপূর্ব সব ছবি এঁকেছে আকাশ পাড়ুই , সঞ্চিতা সাধুখাঁ ,অনুভব বসু শতরূপ বসু। এই সব কচিকাঁচাদের জন্য রইল অভিনন্দন। ওরা এমন ভাবেই সম্পাদক মৌসুমী এবং 'জ্বলদর্চি' - পত্রিকার পাতায় পাতায় সবুজের অভিযান চালিয়ে নিয়ে যাক্ এই আশায় প্রচ্ছদের ছবিটি দেখে বলি- বাহ্। সবাই থাকুক সুস্থ সবল/ সবাই থাকো ভালো/ এই পৃথিবীর জলে স্থলে/ 
তোমরা দেখাও আলো।
ধন্যবাদ জানাই মৌসুমী'কে  আরেকবার।


আজকের বিষয় :  কিছু খেলা ও সংশ্লিষ্ট ট্রপি (পর্ব -১)

১.ডুরান্ড কাপ কোন খেলার সঙ্গে যুক্ত?
২. ফেডারেশন কাপ কোন খেলার সঙ্গে যুক্ত?
৩. দিলীপ ট্রপি কোন খেলার সঙ্গে যুক্ত?
৪.নাইডু ট্রপি কোন খেলার সঙ্গে যুক্ত?
৫.কিংস কাপ কোন খেলায় দেওয়া হয়?
৬. থমাস কাপ কোন খেলার সাথে সম্পর্কিত?
৭.উইলিয়াম জোন্স ট্রপি কোন খেলায় দেওয়া হয়?
৮. মারডেক কাপ কোন খবর সাথে যুক্ত?
৯. সাহারা কাপ কোন খেলায় দেওয়া হয়?
১০.রাইডার কাপ কোন খেলার সাথে যুক্ত?

গত সপ্তাহের উত্তর:
১.ইংল্যান্ড ২. স্কটলেন্ড ৩. ইংল্যান্ড ৪. স্কটল্যান্ড ৫. ইংল্যান্ড ৬. রোম ৭.আমেরিকা ৮.ভারত ৯. জাপান ১০.চীন

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments