জ্বলদর্চি

এক পুনর্জন্ম ও ফল্গুনদীর কথা/শ্যামাশ্রী চৌধুরী মজুমদার

এক পুনর্জন্ম ও ফল্গুনদীর কথা

শ্যামাশ্রী চৌধুরী মজুমদার

 ১৯১৩ সাল বাঙালি জীবনকে আন্তর্জাতিকতার আলোয় নিয়ে এল কবিগুরুর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদে আর এই বছরেরই মে মাসে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর হাতে বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য ভিত্তি স্থাপিত হল "সন্দেশ" পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে তাঁর সুযোগ্য পুত্র সুকুমার রায় গুরুপ্রসন্ন  বৃত্তি লাভ করে বিলেত গেছেন ফটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং টেকনোলজি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করতে। যে পিতামহ লেখালেখির সূচনা কাল থেকেই ক্রমাগত ভেবেছেন উন্নততর শিশুসাহিত্যের কথা, তাদের চিত্তাকর্ষনের জন্য ছবি আঁকার কথা আর যে পিতা স্বল্প জীবনকালে শিশুসাহিত্যেকে যা দিয়ে গেছেন তা আপামর পাঠকের হৃদয় জুড়ে আছে শুধু নয় সমঝদার পাঠককে রীতিমত ভরিয়ে রেখেছে আপাত হাস্যরসের অন্তরালে জীবনের নানা খামতি,সীমা আর ভ্রান্তির আশ্চর্য রূপায়নে তাদের পরিবারেই যে আসবে অসীম প্রতিভাধর বিস্ময় শিশু তা যেন পূর্ব নির্ধারিত। ঠিক যেমন এই মে মাস। ১৯২১ সালের ২রা মে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম। উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সুকুমার রায় তখন "সন্দেশ" এর দায়িত্বে। তবে পুত্রের মাত্র আড়াই বছর বয়সে পাড়ি দিলেন তিনি অনন্তলোকে। ভাই সুবিনয় রায়ের হাত ধরে চলল "সন্দেশ"। তিনি জার্মানি থেকে আসা কাগজের নমুনা দেখিয়ে তিন-চার বছরের সত্যজিৎকে জিজ্ঞেস করতেন, " দেখতো এর মধ্যে কোনটা চলবে?"
শিশুটিও একটি কাগজে হাত বুলিয়ে দিত। মাত্র পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ছিলেন গড়পার রোডে। ঐ বয়সেই দুপুরবেলা ছাপাখানার আলো আঁধারির রহস্যময় হাতছানিতে ঘুরে বেড়াতেন। দেখতেন কিভাবে কাজ করছেন কম্পোজিটরের দল। তিনি প্রেসকর্মী রামদহিনের কাছে গিয়ে একটা কাগজে হিজিবিজি লিখে দিয়ে বলতেন," রামদহিন,এটা সন্দেশে বেরোবে?"

  সেই সন্দেশ বন্ধ হয়ে গেল ১৯২৫ সালে। ঠিক যেভাবে ঝরে যাওয়া বীজ মাটির গভীরে অপেক্ষায় থাকে বসন্তের। গড়পার রোডের মানুষগুলো ছড়িয়ে গেল নানা দিকে। তবে ভবিষ্যত হয়ত অলক্ষ্যে প্রস্তুত হয়েই থাকে না হলে ১৯৬১ সালে যখন সত্যজিৎ রায়ের বয়স চল্লিশ আর অপুট্রিলজির মতো ছবিগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতির শীর্ষে তখন একদিন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হল যুগ্ম সম্পাদনায় "সন্দেশ" প্রকাশের কথা আর বাংলা সাহিত্য পেয়ে গেল এক অনন্য গল্পকারকে। এই পত্রিকার জন্যই জীবনে প্রথম তিনি লিখতে শুরু করলেন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা। উত্তরাধিকার জন্ম দিল‌ এমন এক কথাকারের যে পরবর্তী কয়েক দশক বিস্ময়াভিভূত বাঙালি পাঠকের ঝুলি ভরে উঠতে লাগল একজন বিজ্ঞানী, এক গোয়েন্দা ও তার দুই সহকারী এবং অযুত জ্ঞান ও তথ্য ভান্ডারের অধিকারী এক অশীতিপর বৃদ্ধ, এক গল্প বলিয়ে খুড়োর আশ্চর্য সব ঘটনায়। সত্যজিৎ রায় নিজেই বলেছেন তাঁর শঙ্কুর উৎস ছিল সুকুমার রায়ের 'হেশোরাম হুঁশিয়ারের ডায়েরী'। আর নায়ক গোয়েন্দা প্রদোষ মিত্র ওরফে ফেলুদার বুদ্ধিদীপ্ত, ঝকঝকে চেহারা,মগজাস্ত্রের অসম্ভব ঝলকানির সঙ্গে ক্যারাটে, যোগব্যায়াম, গ্রীক ভাষা থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য কোথাও তার স্রষ্টাকেই মনে করায় সসম্মানে। সঙ্গে তোপসে আর লাল মোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ুর অদ্ভুত রসায়ন। খুব কম বাঙালিই অস্বীকার করবে যে আজ তথ্যানুসন্ধানে গুগুল সার্চে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে একবারও সিধু জ্যাঠার ভাবনা তাদের মাথায় আসেনি। 
  নির্মেদ ঝরঝরে গদ্য ভাষায় এমন সব কাহিনী তিনি নির্মাণ করলেন যা কেবল শিশুমনের পরিতৃপ্তি নয় বরং যেকোনো মানুষকে মুহূর্তে ডুবিয়ে দিতে পারে তারা পাঠের মগ্নতায়। শুধুমাত্র তাঁর নানা স্বাদের ছোটগল্পগুলিকে নিয়েই স্বতন্ত্র একটি বই লেখা যেতে পারে। তাই এই স্বল্প পরিসরের আলোচনায় তাদের প্রতি যথেষ্ট ন্যায়বিচার করা কঠিন। তাঁর 'ক্লাসফ্রেন্ড', 'দুই বন্ধু', 'জুটি', 'ধাপ্পা', 'সহযাত্রী' 'প্রসন্ন স্যার' গল্পগুলোর মানবিক আবেদন আর স্কুলজীবনের টুকরো টুকরো ভালোলাগাকে এমনভাবে ছড়িয়ে রাখে যা সদ্য স্কুল পড়ুয়া কিশোর কিশোরী থেকে স্কুল, বন্ধু, সহপাঠীদের ভুলে থাকা বড়দেরও মন ছুঁয়ে যায় অজান্তেই। আবার 'ফ্রিৎস', 'ব্রাউন সাহেবের বাড়ি', 'গগন চৌধুরীর স্টুডিও', 'অনাথবাবুর ভয়', 'মিঃ শাসমলের শেষরাত্রি','বাদুড় বিভীষিকা','নীল আতঙ্ক' 'কাগ্ তাড়ুয়া' র মতো গল্পে ভৌতিক আবহ তৈরি হয়েছে যে অনায়াস দক্ষতায় তা বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলতাকে  কয়েক মুহূর্ত থামিয়ে রাখতে পারে। 'মিঃ শাসমলের শেষরাত্রি' আর 'কাগ্ তাড়ুয়া' মানব মনের গহনে জমা অপরাধবোধকেই যেন মনে করিয়ে দেয় আর তখনই সেই ভয়টা অলৌকিকতা পেরিয়ে মূর্ত হয় যাপিত জীবনের নানা অবিচারের চেনা ছবিতে। মনে পড়ে 'ভক্ত', 'শিশুসাহিত্যিক', 'অক্ষয়বাবুর শিক্ষা' র কথা। আপাত সহজ গল্পের অন্তরালে চলে সৃজন জগতের স্বপ্নময়তাকে ভাঙার প্রয়াস। 'পুরস্কার', 'বর্ণান্ধ','শিল্পী' গল্প তথাকথিত শিল্পচেতনাকে খানিক ভাবায়। 'সুজন হরবোলা', 'রতন আর লক্ষ্মী' যেন নতুন আঙ্গিকে রূপকথা। আবার 'পটলবাবু ফিল্মস্টার', 'টেরোড্যাকটিলের ডিম' এ কেবল অর্থের বিনিময়ে পাওয়া স্বাচ্ছন্দ্য কিংবা আনন্দের বাইরেও মানুষের অন্য এক সত্তার ইঙ্গিত রয়ে যায় তাই মানিব্যাগ হারিয়েও এক অতিসাধারণ চাকুরিজীবী বাবার ভাবনায় কথক বলেন,
"সত্যি বলতে কী, বিল্টুর খুশির খোরাক আজ একদিনে যত পেয়েছেন তিনি, তার দাম কি অন্তত পঞ্চান্ন টাকা বত্রিশ নয়া পয়সাও হবে না?"

  একেবারে নির্ভেজাল হাসির গল্পও যে তিনি লিখেছেন অসামান্য দক্ষতায় তার প্রমাণ 'অসমঞ্জবাবুর কুকুর' , 'লোডশেডিং' 'সাধনবাবুর সন্দেহ' নামক গল্পগুলি। অদ্ভুত মনস্তত্ত্বও উপেক্ষিত হয়নি তাঁর লেখায়। ম্যাজিকের প্রতি শিশুকালে প্রবল আকর্ষণ ছিল। তিনি শিখেওছিলেন কিছুকাল। তাই তাঁর গল্পে ম্যাজিশিয়ানরা আসেন।  প্রফেসর শঙ্কুর গল্পগুলো ছাড়াও 'বঙ্কুবাবুর বন্ধু', 'সেপ্টোপাসের খিদে' 'বৃহচ্চঞ্চু' তে বিজ্ঞানের সঙ্গে কল্পনার মিশেলে অনবদ্য সব কাহিনী নির্মাণ করলেন। নিরীহ, অবহেলিত প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক বঙ্কুবাবু অসাধারণ কাজ করে ফেললেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর । তিনি সমাজের উপরতলার মানুষদের ভন্ডামি আর অন্যায়ের চরম জবাব দিলেন। ছোটগল্পগুলোর মধ্যে তারিণীখুড়োকে নিয়ে লেখা প্রতিটি কাহিনীই  ভিন্ন ভিন্ন রসে সিক্ত। মুগ্ধ করে গল্পবলিয়ের চমকপ্রদ ব্যক্তিত্বটিও। কথকের বর্ণনায় গল্পের চরিত্রগুলো রক্তমাংসের মানুষ হয়ে উঠতে বেশি সময় নেয় না। যে দুটি গল্প আলাদা করে উল্লেখ না করলেই নয় তা হল 'রতনবাবু আর সেই লোকটা' ও 'খগম'। প্রথমটির এক আশ্চর্য মনস্তাত্ত্বিক রূপ পাঠককে দ্বিধায়  ফেলে। মণিলালবাবু বলে সত্যিই কেউ ছিল না তা কেবল রতনবাবুর কল্পনা? রতনবাবু কি খুনী নাকি নিজেই আত্মহত্যা করলেন ?গল্পটি বেশ কয়েকবার পড়েও পাঠক সিদ্ধান্তে আসতে পারে না।
 
  দ্বিতীয়টি 'খগম' । মহাভারতের এক আখ্যান থেকে উঠে আসা এই গল্পে ধূর্জটিবাবু ইমলিবাবার পোষা সাপকে মেরে ফেলায় সাধুর অভিশাপে ধীরে ধীরে সাপের মতো হয়ে যেতে থাকেন...বরফের মতো ঠান্ডা শরীর, জিভের ডগা থেকে মাঝখান বরাবর সরু লাল দাগ, বুকে হেঁটে খাটের তলায় চলে যাওয়া সব মিলিয়ে এক ভয়ঙ্কর রাতের বর্ণনায় হৃৎস্পন্দন থমকে যায় যেন। রাতারাতি নিঁখোজ হওয়া ধূর্জটিবাবুই কি তবে নতুন বালকিষণ? 

  "সাপের খোলস কী? না, তা নয়। সাপের শরীর কি এত চওড়া হয়? আর তার দু'পাশ দিয়ে কি দুটো হাত, আর তলা দিয়ে কি একজোড়া পা বেরোয়?....ওই যে তার শিস শুরু হল।ওই যে সূর্য ডুবল।ওই যে ইমলিবাবা ডাকছে...বালকিষণ...বালকিষণ...বালকিষণ...'
এমনই এক বাস্তব পরাবাস্তবের মাঝে এসে শেষ হয় এই গল্প।

  মনে প্রশ্ন আসতেই পারে এই গল্প কি শিশু কিশোরদের জন্য লেখা? আসলে সত্যজিৎ রায় ছোটদেরকে বড়দের সঙ্গে সমান করেই দেখতেন। কেবলমাত্র ছোটদের জন্যই এই গল্পগুলো নয় ঠিক যেমন "গুপি গাইন বাঘা বাইন" এর পরের ছবি "হীরক রাজার দেশে"। 

  এইসব কাহিনী নারী চরিত্র বর্জিত। অথচ তাতে তাদের বাস্তব রূপের এতটুকু হানি হয় না।
'সন্দেশ' এর সঙ্গে  লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর শুধু 'সন্দেশ' নয়  'আনন্দমেলা', 'দেশ' এর মতো সমসাময়িক পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা। পুরস্কারও এসেছে বহু তবে সময়ের হাতেই থাকে সেরা পুরস্কারটি আর জন্মের শতবর্ষে সেটিও তিনি অর্জন করেছেন পাঠকের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন গ্রহণ করে। শুধু লেখক নয় সম্পাদক হিসেবে তিনি লেখককে দিশা দেখাচ্ছেন সার্থক সৃজনের। এই প্রসঙ্গে অজেয় রায়ের কথা উল্লেখ করা যায়। মৌলিক কোনো রচনায় বিদেশী গল্পের সামান্য ছায়া থাকলেও সেটিকে স্বীকার করার কথা বলছেন। কোনো তথ্যগত ভুলও যেন না থাকে সে বিষয়ে বারবার সতর্ক করছেন লেখককে। এমনকি গল্প কোন দিকে যাবে 'সেটার একটু ইঙ্গিত আগে থেকে দিতে পারলে পাঠকের মনে একটা কৌতূহল জাগিয়ে তাকে speculate করার একটা সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তা না হলে গল্প গল্প না হয়ে রোজনামচার বা দিনলিপির চেহারা নেয়'। ভালো লেখা কেমন হবে তার এমনই অজস্র ইঙ্গিত ছড়িয়ে রয়েছে লেখককে পাঠানো চিঠিতে।

  একজন ব্যস্ত চিত্রপরিচালক একটি শিশু সাহিত্য পত্রিকার প্রতিটি লেখার বিষয়ে এতখানি যত্নশীল ছিলেন। যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে লীলা মজুমদার, নলিনী দাশের সঙ্গে যথেষ্ট মনোযোগ ও গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন তাঁর দায়িত্ব।
আবার লেখক হিসেবেও তিনি এতটাই সাবলীল ছিলেন যে একদিনে একটি গল্প শেষ হয়ে যেত। উপন্যাস লিখতে সময় লাগত পনেরো দিন।একটি চিত্রনাট্য লিখতেও তাই। ফেলুদা ও শঙ্কুর কাহিনীগুলো ছাড়াও প্রায় একশটি গল্প, অনুবাদ,ছড়া, প্রবন্ধ, চিত্রনাট্য নিয়ে তার সৃজন সম্ভার নিতান্ত কম নয়। তবে 'সন্দেশ' যেমন তার অন্তঃসলিলা সৃজন শক্তিকে জাগিয়ে দিয়েছে তেমন আজীবন তিনি মমতায় জড়িয়ে রেখেছিলেন পিতৃপুরুষের এই উত্তরাধিকার। ১৯৭৪ সালে অজেয় রায়কে একটি চিঠিতে তিনি লিখছেন,
"সন্দেশ বন্ধ হয়ে গেলে শুধু তুমিই বেকার হয়ে পড়বে না, আমিও পড়ব। সন্দেশ বেরোল বলেই আমার লেখা শুরু। ওটাকে জীইয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব..."
বিজয়া রায় 'আমাদের কথা'য় লিখছেন, "...বাপঠাকুর্দার আমলের কাগজ উনি বাঁচিয়ে রাখতে পারছেন, তাতেই আনন্দ।"
সেই আনন্দের অংশীদার ভাবীকালও। আর সত্যজিৎ রায় একক একটি প্রতিষ্ঠান হলেও তাঁর কথা বলতে গেলেই এসে দাঁড়ান তাঁর দুই প্রবল পূর্বপুরুষ তাঁদের সৃজন ভাবনার ঐশ্বর্য নিয়ে। নশ্বর দেহ বিলীন হলেও আগামীর জন্য যা রেখে গিয়েছিলেন তার এক আপাত ক্ষুদ্র রূপ শিশু সাহিত্য পত্রিকার আদলে অঙ্কুরিত হয়ে কালে কালে হয়ে দাঁড়াল মহীরুহ। আমরা, চিরকালীন পাঠক যার ছায়ায় জুড়িয়ে নিচ্ছি আমাদের জটিল জীবনের ক্লান্তি আর অবসন্নতা... বাঙালির আদি অকৃত্রিম বৈঠকখানায় তারিণী খুড়ো ততক্ষণে জমিয়ে বসেছেন তাঁর গল্পের আসরে.... 

তথ্যসূত্র: সত্যজিৎ ও দুই পূর্বপুরুষ : দীপক রায়।
সত্যজিৎ রায়ের পত্রাবলি , শারদীয় দেশ।
 
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments