জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৩২


ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা- ৩২

সম্পাদকীয়
ছোট্ট বন্ধুরা, মুখে মাস্ক পরে থাকা আর খাবার আগে হাত ধোবার কথাটা ভোলনি তো? হ্যাঁ, খেলার সময়ও মুখে মাস্ক পরে থাকবে।  কারণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোভিড ১৯ বায়ুবাহিত ভাইরাস। এই দেখনা প্রচ্ছদের ছবির ছোটো বন্ধু শারণ্যা তার প্রিয় লাল টেডির সাথে মুখে মাস্ক পরে খেলছে। শুধু টেডি নিয়ে কেন, তোমরা খাতা কলম নিয়ে স্কুলের দিদিমণি বা মাস্টারমশাই সেজে পড়া পড়া খেলতে পারো। তোমার প্রিয় স্ফট টয়েজগুলোকে ছাত্র ছাত্রী সাজিয়ে নাও না। এবারের প্রচ্ছদের ছবিটি উপহার দেবার জন্য মৃণাল ঘোষকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর মাত্র কটাদিন তারপর তো স্কুল খুলে যাবে। এবারের সংখ্যায় বিশ্বনাথ চৌধুরী আর তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় দুটো সুন্দর  ছড়া লিখেছেন।  দুই ছড়াকার কেই ধন্যবাদ।  তাছাড়া বাড়ির ছাদে চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে খেলতে পারো পেঁচির মতো। পেঁচি কে? জানতে হলে গল্পকার ধ্রুব মুখোপাধ্যায়ের গল্প পড়তে হবে। বাড়ির পোষা কুকুর বিড়াল নিয়ে খেলতে পারো। কিন্তু বাড়িতে খাঁচায় একদম পাখি ধরে রেখো না। হ্যাঁ এবারেও পাখির সাথে তাতানের বন্ধুত্বের গল্প লিখেছেন তপশ্রী পাল। দুইটি গল্প উপহার দেবার জন্য দুই গল্পকার ধ্রুব মুখোপাধ্যায় ও তপশ্রী পালকে ধন্যবাদ। তবে মনে রেখো খেলার সময় ঝগড়া হতেই পারে।  পড়লে না ইচ্ছেদাদু আর অনিচ্ছেঠাকুমার ঝগড়া। এবারেও রতনতনু ঘাটী মহাশয়ের গল্পে রাধাগোবিন্দকে নিয়ে ঝগড়ার গল্প তো আছেই। রাধাগোবিন্দ কে মনে পরছে না?  ঠিক আছে আগের চারটে পর্ব আমি তোমাদের আবার মনে করিয়ে দেবখন। চুপি চুপি বলে রাখি তোমরা রাধাগোবিন্দ কে জিজ্ঞেস করাতে ও কিন্তু খুব রেগে গেছে। আর সেই রেগে যাওয়া রাধাগোবিন্দর ছবি এঁকেছে তোমাদের আর এক বন্ধু ইমন। কিশোর ঔপন্যাসিক রতনতনু ঘাটী মহাশয়কে শ্রদ্ধা।   এবারের সংখ্যায় তোমাদের বন্ধু অনন্যা একটি ছড়া লিখেছে ছোটোবেলার খেলাগুলো নিয়ে। আমাদের সময় বড়োরা অনেকে ভীষণ ভালোবাসত লটারীর টিকিট কাটতে। আর তারপর? তারপর অপেক্ষা করত খেলা হবার জন্য। এ খেলায় জিতলেই কিন্তু টাকা। এবারের সংখ্যায় লটারী খেলা নিয়ে গল্প লিখেছে তোমাদের বন্ধু প্রীতি জ্যোতি। কি তাহলে বাড়িতে বসে বসেই খেলছো তো? খেলো, খেললে মন ভালো থাকে। ভাই বোনে মিলে মিশে খেলো কিন্তু। তবে মুখে মাস্ক পরে। মৌলিসা ঠিক যেমন এঁকে পাঠিয়েছে তেমন করে। মনে থাকবে তো? এবার খেলার গল্প আর ছড়াগুলো কেমন লাগল লিখে পাঠিয়ে দাও।   - মৌসুমী ঘোষ।


ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস 
ফুলকুসুমপুর খুব কাছে || পর্ব-৫
রতনতনু ঘাটী

[ সংক্ষিপ্তসার (১ - ৪)

ফুলকুসুমপুর গ্রামের ইচ্ছে প্রসন্ন ত্রিপাঠী অর্থাৎ ইচ্ছেদাদুর বাড়িতে বড়োদের মিটিং বসেছিল। সেই মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয় অনিচ্ছে ঠাকুমার পোষা হীরামন পাখিটাকে শিকল খুলে নতুন কেনা খাঁচায় রাখা হবে। তাই শুনে বাড়ির ছোটোদের অর্থাৎ তিন্নি, বিন্নি আর বুম্বার ব্যস্ততার অন্ত নেই। তারপর.... ]
এমন সময় নীচ থেকে তিন্নির মা’র গলা শোনা গেল, ‘তিন্নি, বিন্নি, বুম্বা, তোমরা স্নান করে এসো। আর ঠাকুরমাকে বলো, উনিও যেন স্নান করে নেন। অনেক বেলা হয়ে গেছে। দাদুকেও আসতে বলো।’ 
   বুম্বা গলা তুলে বলল, ‘যাই মাধুরীজেম্মা!’ 
   তিন্নির মাকে বিন্নি আর বুম্বা ‘মাধুরীজেম্মা’ বলে ডাকে।
   বিন্নি আগেই স্নানে গিয়ে ঢুকেছিল। স্নান করতে-করতে চেঁচিয়ে বলল, ‘মাধুরীজেম্মা, আমার চান হয়ে গেল বলতে।’
   একতলায় পাশাপাশি তিনটে স্নানঘর। এ ছাড়া পিছনের খিড়কি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলে একটা পুকুরঘাটও আছে। পুকুরটা ইচ্ছেকুমার ত্রিপাঠীর মানে ইচ্ছেদাদুর বাবার আমলের। গরমের দুপুরে এক-এক সময় তিনজনকে পুকুরে ডুবসাঁতার থেকে তোলা যায় না। ইচ্ছেঠাকুরমা অমন দেখলে বলেন, ‘অ্যাই, তোরা পুকুর থেকে এবার ওঠ। সব ক’টা এবার না জ্বর বাধিয়ে বসে! কতক্ষণ ধরে জলে পড়ে আছে।’
   এ কথা শুনলে দাদু বলেন, ‘একটু ডুবসাঁতার শিখছে ওরা, তা শিখুক না! দ্যাখো না, শহরের ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাদের বাবা-মা সাঁতার শেখাতে কী হিমশিম খান? শহরের ওই একটুকুনি এক-একটা সুইমিংপুলে সাঁতার শেখানোর জন্যে বসে থাকেন, অপেক্ষা করেন। আর আমার বাড়ির ছেলেমেয়েদের দ্যাখো, সক্কলে কেমন সাঁতার জানে! ডুবসাঁতার দিয়ে পুকুরের এপার-ওপার করে! ভাবলে গর্ব হয়!’
   ইচ্ছেঠাকুরমা বললেন, ‘তুমি ওই গর্ব নিয়েই থাকো। তোমার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে, বড় হয়ে তোমার এক নাতনি সাঁতারু আরতি সাহার মতো সাঁতরে ইংলিশ চ্যানেল পার হবে! আর-এক নাতনি সাঁতারে ‘পদ্মশ্রী’ বুলা চৌধুরী হবেই হবে!’ 
   ইচ্ছেদাদু হাত তুলে ঠাকুরমাকে থামানোর ভঙ্গি করে বললেন, ‘আহা-হা, ওসব যদি না-ও হয়, সাঁতার কাটলে শরীর ভাল থাকে, একথা বিজ্ঞানে বলা হয়েছে, তা জানো তো? তুমি তো মদনপুরের মেয়ে হয়ে জীবনে সাঁতারটাই শিখতে পারোনি? তুমি যে কত কিছু পারো না, সে বললে ‘মহাভারত’ হয়ে যাবে। যাও, যাও, খাওয়ার ব্যবস্থা করো গিয়ে।’
   দাদুর কথায় ঠাকুরমার রাগ প্রখর হয়ে গেল। মুখ দেখে তিন্নি আর বুম্বার সে কথা বুঝতে বাকি থাকল না। তারা ঝটাকসে স্নান করার জন্যে কেটে পড়ল একতলায়। 
   ঠাকুরমা ধরা-ধরা গলায় বললেন, ‘নাঃ, আমি কিছুই পারি না! এমনি এমনি তোমার সংসারটাকে এতদিন আগলে রাখলাম? ছেলেমেয়েদের বড় করলাম? সব ছেলেমেয়ের বিয়ে দিলাম। যাও, যাও। মেলা বকিও না। আমি এখন রাধাগোবিন্দকে না খেতে দিয়ে নীচে যেতে পারব না, বলে দিলাম। বউমারা আছে, তারাই খেতে দেবে। রাধাগোবিন্দর দিকে একবার তাকিয়ে দ্যাখো, ওর মুখটুকু খিদেয় কইটুকুনি হয়ে গেছে!’
   ইচ্ছেদাদু গলায় রাগ ফুটিয়ে বললেন, ‘এই জন্যেই প্রথম থেকে আমার ওপিনিয়ন ছিল, মানুষের বাড়িতে মানুষই থাকবে। নো জন্তুজানোয়ার, নো পাখি-পতঙ্গ।  তা হলে মানুষের ভালোবাসা পুরোটা মানুষই পাবে। তা, আমার কথা বাড়িসুদ্ধ কেউ শুনল কি? তা হলে মানুষের ভালবাসা এমন করে ভাগ হত না?’
   গজগজ করতে-করতে দাদু স্নান করতে নীচে চলে গেলেন। ইচ্ছেঠাকুরমা আপন মনে রাধাগোবিন্দর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন, ‘বাবা রাধাগোবিন্দ, তুমি নিজের কানে সব কথা শুনলে তো? তুমি তো বোকা নও! তুমি বুদ্ধিমান পাখি! এখন বুঝতে পারছ তো, এই বাড়িতে তোমাকে নিয়ে আমার কত রকমের হ্যাপা। তুমি বাবা, শিগগির অন্তত দু’-চারটে কথা বলতে শিখে আমার মুখ রাখো বাবা! তোমার বয়স তো এক বছর হতে চলল। ঢের বয়স হল। তোমার চেয়ে ছোট, মাত্র তিন-চার মাস বয়সের পাখিরাও কত সুন্দর কথা বলতে পারে। আমার উপর তোমার কিসের অভিমান বাবা রাধাগোবিন্দ? কথা দিচ্ছি, এ বছর রথের মেলায় গিয়ে আমি নিজে শ্যামসুন্দরপুর বাজারে ‘সোনার কাঁকন’ দোকান থেকে তোমার জন্যে বাইশ ক্যারাটের সোনার শিকল গড়িয়ে দেব বাবা। নিশ্চয়ই দেব!’
   রাধাগোবিন্দ ইচ্ছেঠাকুরমার কথায় কী বুঝল কে জানে? ঠোঁট দিয়ে খাঁচার বাঁশের গ্রিল কামড়াতে লাগল। কোনও সাড়াই করল না। ঠাকুরমা ব্যস্ত পায়ে ঠাকুরঘরের পুজোর রেকাবি থেকে ভেজানো ছোলা নিয়ে এসে রাধাগোবিন্দকে খেতে দিলেন। একটা কাগজ নিয়ে ফর্দ লিখতে বসে গেলেন, আজ বিকেলে দোকান থেকে বিলম্বদাদুকে পাঠিয়ে রাধাগোবিন্দর জন্যে কী কী আনাতে হবে। 
  গোটা ত্রিপাঠি বাড়ির আউটডোর কাজের লোক বিলম্বদাদু। সে খুব ছোটবেলা থেকে কাজের লোক হিসেবে এ বাড়িতে আছে। আজ পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে, তবু তার কাজের প্রোমোশন হয়নি। এখনও সে কাজের লোকই। তাকে যে-কোনও কাজে পাঠানো হোক না কেন, অনেক দেরি করে ফিরে আসে। তাই ইচ্ছেদাদুই তার নাম রেখেছেন ‘বিলম্বকুমার’। ছোটরা বলে ‘বিলম্বদাদু’। বড়রাও ছোটদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে তাকে বিলম্বদাদুই বলে। 
   বিলম্বদাদুর একটা বড় দোষ হল, কোনও কথা মনে রাখতে পারে না। তাই ফর্দ না লিখে দিলে লঙ্কার বদলে হলুদ নিয়ে চলে আসে, ছুরির বদলে কাটারি কিনে আনে, রসগোল্লা আনতে বললে নিয়ে আসে মিহিদানা। বাড়ির যাঁরাই তাকে বাজারে পাঠান না কেন, সকলেই নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্যে ফর্দ লিখে তার হাতে ধরিয়ে দেন।
   ইচ্ছেদাদু মজা করে বাড়ির সকলকে বলেন, ‘দ্যাখো, আমাদের বিলম্বকুমারের খারাপ দিক হল, সে বাজার করতে গিয়ে কী কিনতে হবে যদি না লিখে দেওয়া হয়, তা হলে সব ভুলে যায়। আর ওর একটা গুণের দিক হল, বিলম্বকে যতই বকাঝকা করা হোক না কেন, সেটাও সে একটু পরে বেমালুম ভুলে যায়, মনে রাখতে পারে না। আমাদের বিলম্বকুমার কী ভালো মানুষ!’
(এর পর আগামী রোববার)


পেঁচির চিলেকোঠা
ধ্রুব মুখোপাধ্যায়

সকালে চিলেকোঠার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ইস্কুল মাস্টারদের কথা-ই ভাবছিল পেঁচি আর ঠিক সেই সময়ই আওয়াজটা এল, “এদিকে শোনো তো একবার।“ চিলেকোঠার দরজাটাকে বরাবর বন্ধই দেখে এসেছে পেঁচি কিন্তু সেদিন খোলা ছিল। আওয়াজটাও যেন ভিতর থেকেই আসছিল। কৌতূহলের বসে তাই ঢুকেই পড়ল। ভিতরে সাদা দাড়ি-চুল, পাট করা সাদা পাঞ্জাবি আর বেশ সুন্দর করে কোঁচা করা ধুতি পরে একজন দাদু। পেঁচিকে দেখতেই বেশ সুন্দর করে হেসে কাছে ডেকে বললেন, “তোমাকে নাকি ইস্কুলে মাস্টাররা রোজ বকেন?”
পেঁচিও বেশি কিছু না ভেবেই সোজা সাপটা হ্যাঁ বলে দিল।
“তা কেন বকেন?”
“আমি পড়া পারি না।“
“কেন পারো না?”
“ধুর! পড়তে আমার একদম ভালো লাগে না।“
“তাহলে কী ভালো লাগে”
“এই চারপাশটাকে দেখতে ভালো লাগে।“    
“বাঃ, সে তো দারুণ জিনিস। কিন্তু শুধু দেখলে হবে? বুঝতেও তো হবে!”
দাদুর এই শেষের কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারল না পেঁচি। তাই কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করেছিল, “মানে?”
“মানে এই যে রোজ সূর্যদেব ওঠেন, সেটা দেখতে তো ভালোই লাগে কিন্তু কেন ওঠেন জানো?”
পেঁচি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না উত্তরটা। তাই মাথা খাটিয়ে জবাব দিল, “জানি। সূর্যদেব রোজ অস্ত যান, তাই না উঠে ওঁর উপায় নেই।“
পেঁচির কথাটাতে দাদু বেশ কিছুক্ষণ হেসে বেশ সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেন, “আসলে পৃথিবী সূর্যদেবের চারপাশে ঘোরে। তাছারাও নিজের অক্ষের উপরেও লাট্টুর মত ঘোরে।“ তারপরেই ভেন্টিলেটর থেকে আসা আলোর ছটাটাকে সূর্যদেব বানিয়ে বেশ সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। বেশ লেগেছিল পেঁচির। এরপর থেকে রোজ সকালে পেঁচি চিলেকোঠাতেই পড়তে বসত। আস্তে আস্তে ইস্কুলের মার খাওয়ার অভ্যাসটাও যেন ঘুচে গেল পেঁচির। এমনকি সেবারের রেজাল্টে যখন পেঁচি ইস্কুলে ফার্স্ট হল তখন এক প্রকার ছুটেই এসেছিল চিলেকোঠার দাদুর কাছে। কিন্তু কোথায় দাদু! চারিপাশে শুধু ধুলো আর ঝুল। পেঁচি বার কয়েক ডাকতেও যখন কেউ সাড়া দিল না, তখন বাধ্য হয়েই বাবার কাছে গিয়ে ঘটনাটা বলেছিল পেঁচি। আর বাবা মুহূর্তের মধ্যে অ্যালবাম থেকে একেবার সেই দাদুর মত দেখতে নিজের প্রপিতামহের ছবিটা দেখাতেই পেঁচি বুঝে গিয়েছিল, পৃথিবীর মতই এই দুনিয়ার মানুষগুলোও ঘোরে। তাই মাঝে মধ্যেই প্রয়োজন পরলে তাঁদের দেখা যায়। তবে পেঁচি ভয় কক্ষনো পায়নি। উল্টে রোজ সকালে একবার চিলেকোঠায় গিয়ে আগের দিনে শেখা সমস্ত পড়াটা বলে আসত। যদি একবারের জন্য হলেও দাদু দেখা দেন।


ভূতের বর
বিশ্বনাথ চৌধুরী

একটু দাঁড়া,একটু দাঁড়া
 একটু অপেক্ষা কর,
খুলবে স্কুল আর কিছুদিন 
আর কিছুদিন পর।

বন্ধুদের মুখ দেখবি,
 খেলবি ওদের সাথে,
সব টিফিন ভাগ হবে
থাকবে সবার পাতে।

পেন্সিল বক্স, বই নিয়ে 
যতই মারামারি,
সব বন্ধুরা আপন হয়
ভাব কিংবা আড়ি।

স্কুলে যাওয়া ভারী মজা
বলিস মাঝে মাঝে,
ছটফটানি দুষ্টুমিটা
তোদেরকেই সাজে।

তোরা দেখিস খোলা আকাশ
পাখিগুলো উড়ছে,
মাছেরা জলের মধ্যে
ঘুরছে আর ফিরছে।

নাচ গান যা পারিস 
এখন কর ঘরে,
স্টেজে উঠে কবিতা
বলবি সেটা পরে।

আর কিছুদিন আর কিছুদিন
অপেক্ষা তুই কর,
স্কুলটা খুলবে জানি
পাবি ভূতের বর।

মুক্তির আকাশ
তপশ্রী পাল

আমার ছেলে তাতান ভীষণ পশুপাখীর ভক্ত। কোন ছোট্টবেলায় ফ্ল্যাটে থাকতে একটা বেড়ালছানাকে বন্ধুরা মিলে লুকিয়ে  সিঁড়ির নীচে জুতোর বাক্সে রেখে দিয়েছিলো। চুপিচুপি দুধ নিয়ে খাওয়াতো। ছোট ফ্ল্যাটে পশুপাখী রাখা সম্ভব নয় বলে পোষ্য আনতে দিইনি। তারপর দোতলা বাড়ি করে চলে এলাম। পুজোর সময় রাস্তার ধারে বিরাট মেলা বসেছে। সেখানে  রঙ্গীন পাখী দেখে তাতান উতসাহে প্রায় গাড়ী থেকে নেমে পড়ে। ঝুলোঝুলি করে নীল, সবুজ, সাদার ওপর কালো দাগ, আর খয়েরী রঙের চারটে পাখী কিনলো খাঁচাসুদ্ধ! এগুলোকে বলে বদ্রী পাখী। ওদের স্পেশাল দানাও কেনা হলো।  কিচমিচ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠলো চারিদিক। দোতলায় দক্ষিণের বারান্দায় রাখা হলো ওদের খাঁচা। খুড়িতে দানা আর জল দেওয়া হলো। তাতান সুন্দর করে একটা বাঁকা ডাল আটকে দিলো খাঁচার এদিক ওদিকে। পাখীদের দাঁড় হলো। 
স্কুল থেকে ফিরেই তাতান খাঁচার সামনে বসে পড়তো। সারাদিন ওদের প্রতিটি নড়াচড়া, কথাবার্তা, খাওয়াদাওয়া অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করতো ও। কার সাধ্য খাঁচার সামনে থেকে সরায়?  কিন্তু কিছুদিন বাদে হঠাত একদিন সকালে দৌড়ে এলো! প্রায় কাঁদো কাঁদো! বললো “শীগগিরি দেখে যাও!” গিয়ে দেখি খয়েরী পাখীটা খাঁচার মধ্যেই মরে পড়ে আছে! খুব খারাপ লাগলো! এমন তো হওয়ার কথা নয়! তাতান চোখের জল মুছে পাখীটাকে মাটিতে কবর দিলো। রইলো দুটো ছেলে পাখী আর একটা মেয়ে পাখী। সবুজ পাখীটা মেয়ে। দুই পুরুষ এক নারী। একজন ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে গভীর চুমু খায় তো অন্যজন মুখ হাঁড়ি করে দাঁড়ে বসে থাকে! পারলেই দুজন তুমুল চেঁচামেচি, ঠোকরাঠুকরি লাগিয়ে দেয়! তাতান তো খুব মজা পায় এ সব দেখে। আমাদের কান ঝালাপালা! তাতানের আয়ামাসী বললো “বৌদি একটা ডিম পাড়ার হাঁড়ি নিয়ে এসো দিকি! কটা ছানা হলে দেখবে এ সব বিবাদ মিটে যাবে!” 
পাখীর দোকানে একটা পেঁপের মতো গড়নের কলসী দিলো। একটা ঢোকা বেরোনোর গর্ত। মাসী তুলো আর খড়কুটো পেতে দিলো ডিম পাড়ার জন্য। হাঁড়িটা খাঁচায় ঝোলাতেই তাতানের কী উতসাহ! রোজ ভোরে উঠেই দেখে পাখী ডিম দিলো কিনা।
দিন পনেরো পর থেকে মেয়ে পাখীটি দীর্ঘ সময় কাটাতে লাগলো হাঁড়ির ভিতর আর ছেলে পাখীদুটো পালা করে ঢোকে আর বেরোয়। একদিন তাতান লাফাতে শুরু করলো! হাঁড়ির ভিতরে সাত আটটা সাদা ছোট ডিম! যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখছে, এমনভাবে ডিমগুলো দেখে তাতান। 
তারপর আশ্চর্যভাবে ডিমগুলি উধাও হতে লাগলো হাঁড়ি থেকে! একদিন দেখা গেলো দুটো ডিম ভেঙ্গে নীচে পড়ে আছে! তাতান রীতিমতো শকড! এক সকালে মাসী ঝাঁট দিতে দিতে চিৎকার করে উঠলো! দোতলার বারান্দায় সাপ! ডিম আর ছানা খাওয়ার লোভে উঠে এসেছে!          
সেদিন তাতানের ছুটির দিন। সাপটাকে তাড়ানোর পর আমরাও মনমরা  আর তাতান তো সারাদিন কিচ্ছুটি খেলো না। সন্ধ্যায় আয়ামাসী ছুটে এলো। বললো “বৌদি! খাঁচা খালি!” ছুটে গিয়ে দেখি – তাই তো! তাতান চুপচাপ ঘরে বসেছিলো। বললাম “খাঁচা খালি! তুই কিছু জানিস?” গম্ভীরভাবে বললো “আমি সব পাখী আকাশে উড়িয়ে দিয়েছি! ওদের কতো কষ্ট হয়েছে বলো তো! অতোগুলো ডিম নষ্ট হলো! ছানাগুলো হলো না!” আর কিছু বলতে পারলাম না তাতানকে । সত্যি তো! ওরা মুক্তি পাক দূর নীল আকাশে আর সবুজ অরণ্যে।
দিন দুয়েক পরে, রবিবার। ভোরে তাতানের ঘর থেকে কথার আওয়াজ পেয়ে অবাক হয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি জানালায় বসে আছে তাতান আর ওর হাতের ওপর একটা ছোট্ট পাখী। দুজনে মন দিয়ে কথা বলছে। কাছে গেলাম নিঃশব্দে! আরে! সেই সবুজ মেয়ে পাখীটা! হাত থেকে দানা খাচ্ছে আর মনের সুখে কিচমিচ করছে! স্বাধীন হয়েও ভালোবাসার নিগড়ে বাঁধা পড়ে গেছে।

কিশলয়ের কুণ্ঠা
তথাগত ব্যানার্জী

জীবন বিষাদ বিষে জিজীবিষা দাত্রী
হাওয়া বদলের পথে ট্রেনে সহযাত্রী।
উল্টোদিকেই দাদু-ঠাম্মার সঙ্গে
কিশলয় দোলে গতিময় গীতি-রঙ্গে।
আমাকে দেখেই খুশি গালভরা হাসি তার,
ভেবেছে বন্ধু তাই শুরু কথাবার্তার।
এইভাবে বয়সের ব্যবধান শূন্য,
স্বেচ্ছায় স্বচ্ছতা প্রশ্বাস পুণ্য।
অচেতনে শীতঘুমে আমার সে শৈশব 
জেগে উঠে খোঁজ- স্মৃতিগুলো গেলো কই সব?
খেয়ালী শব্দ চাঁপা-চামেলির গন্ধে,
ব্যাকরণ ভুলে অকারণ মহানন্দে।
নিখাদ আলাপে এলো অদ্ভুৎ বিঘ্ন,
দাদুর প্রশ্নতীর হঠাৎই যে তিগ্ন!
রাজনৈতিক আলোচনা; চেনা চর্চা,
চাইছেনা মন তবু মিছে ভাষা খরচা।
তুলতুলে মনে ঠাসা সবুজের অর্বুদ,
ফুটফুটে চোখে তার এনে দেয় বুদ্বুদ।

বেশ বুঝি কচিমুখে বিরক্তি চোখে জল,
 ‘ফিরে এসো ছোটোবেলা’ -এ কাকুতি প্রজ্জ্বল।
বারেবার দৃষ্টিতে আসবার তেষ্টায়,
অসহায় আসে হায়! হাহুতাশ চেষ্টায়।
কিশলয় কুণ্ঠিত -হল উপলব্ধি,
দুঃখিত; ভুলে থাকা ভুলে এই অব্দি।


ছোট্টবেলা
অনন্যা মৈত্র 
বেথুয়াডহরি মাতঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয়, দ্বাদশ শ্রেণী

এক যে ছিল ছোট্টবেলা
বিকেলবেলা ছুটির মাঠে
বিজন আকাশ দিঘির ঘাটে
করত সারাদিনটি খেলা৷

বুনত গানের নকশিকাঁথা
মাঠ পেরিয়ে আমন ধানে
নদীর পাড়ে ঠিক যেখানে
অমলতাসের শয্যা পাতা৷

দুলত শুধু বকুলডালে
দোয়েলপাখি ফুলটুসিরা
মৌটুসিদের দিলখুশিরা
গান শোনাত সাঁঝসকালে৷

বাজত সে সুর প্রাণের তারে
ঝিলিক ঝিলিক রোদের টুকি
পাতার ফাঁকে দিচ্ছে উঁকি
যখন সবুজ বনের পারে৷

আজকে সে দিন স্বপ্ন লাগে
কখন যেন ছোট্টবেলা
হারিয়ে গেছে ভাসিয়ে ভেলা
উধাও উতল হাওয়ার আগে৷৷

ভীমের লটারি
প্রীতি জ‍্যোতি
কোমধাড়া মথুরকুড় উচ্চ বিদ‍্যালয়,অষ্টম শ্রেণি,মথুরকুড়

আদড়া গ্রামের বাসিন্দা ভীম বাগাল ছিল এক দিনমজুর।খুবই অভাবের সংসার তার। বউ তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পাঁচটি পেট চালাতে হিমসিম খেতে হয়।কোনদিন কাজ পায় আবার কোনদিন পায় না।কিন্ত ভীমের একটাই নেশা।তা হল লটারির টিকিট কাটা।এই অভাবের সংসারেও তাকে লটারি কাটার জন‍্য কিছু টাকা সরিয়ে রেখে দিতে হয়।প্রতিদিন বিকেলবেলায় চলে যায় হিমাদ্রি কেমিক‍্যাল কারখানার কাছে।লটারি কাটার দোকানের পাশে একটা বেঞ্চিতে বসে দেখতে থাকে কে কতগুলো লটারির টিকিট কাটছে।আবার কার কি পড়েছে নানা কিছু।সপ্তাহে একদিন ভীম লটারির টিকিট কাটবেই অন্তত বারোটি।মাঝেমাঝে লটারিতে পড়েছে কিন্তু সেগুলোতে ভীম সন্তুষ্ট নয়।এই নেশার জন্য বউ অনেক বকাবকি করে কিন্তু কার কথা কে শোনে।
        
   সকালবেলায়  একটা লোক ডাকতে লাগল   " ভীম দা...... ও...ভীমদা...... বাড়ি আছো?"  বেরিয়ে এসে দেখল কার্তিক দাস। " হ‍্যাঁ দাদা বলো " লোকটি বলল আজ ধান রোয়া আছে দশজন কিষাণ চাই। আট জনকে পেয়েছি  আর দুজন হলেই হয়ে  যাবে। তা তুমি আর একজনকে নিয়ে চলে আস দেখি।ভীম তো হাসি মুখে বলল " হ‍্যাঁ  হ‍্যাঁ হয়ে যাবে আমি আর আমার বউ হলে হবে তো। লোকটি বলল খুব হবে। ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চলে এসো।

     ভীমও তার বউ তাড়াতাড়ি পান্তাভাত খেয়ে ছেলেমেয়েদের খাইয়ে রেখে চলে গেল।দুজনে মিলে ভালো উপার্জন করে দুপুরে বাড়ি ফিরল। আরও কাজের অগ্রিমও পেল। কিছু টাকাও পেল। আষাঢ় - শ্রাবণ মাসে ভীমের রোজগার ভালোই হল। রোজগার ভালো হলে কী হবে অভাব - অনটন একই রকম ঐ একটি কারণে যত বেশি উপার্জন তত বেশি টিকিট কাটার ধূম। এবারে একটু বেশি করেই লটারির টিকিট কিনবে বলে ঠাকুর প্রণাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল।সেখানে গিয়ে দেখে বেশ ভিড়।ভাবল আজ সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেল নাকি ঠিক তাই শেষে ছয়টি টিকিট ছিল তাও দুই জনার মধ্যে বচসা।শেষে ঐ দুই ব‍্যক্তি টিকিট গুলি নিতে অস্বীকার করল।ভীম ঐ দৃশ্য দেখে বলল দূর আজ ভাগ্য টাই খারাপ।চলে আসার সময় পিছন থেকে একজন ডাকল ও ভীমদা চলে যাচ্ছ যে এমন তো দেখিনি তোমাকে টিকিট না কেটে চলে যেতে।ভীম বলল হ‍্যাঁ আজ মনটা বড়ই খারাপ লাগছে তাই।লোকটি বলল ছাড়ো ছাড়ো টিকিট কেটে বাড়ি যাও।ভীম কত কী ভাবল শেষে ঐ উচ্ছিষ্ট টিকিট ছয়টি কেটেই ফেলল।
    সকাল হতে না হতেই সারাগ্রাম ঢি ঢি পড়ে গেল আদড়ার ভীম বাগাল এক কোটি টাকা লটারিতে জিতেছে।রাতেই ভীমকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।বাড়ির চারপাশে পুলিশ টহল দিচ্ছে।সে এক হুলুস্থূল কান্ড।
      মাস খানেকের মধ্যেই ভীম বাগাল বেশ কিছু জমি জায়গা কিনেছে সাথে একটি মোটর বাইকও।বেশ সুখেই সংসার চলছে।কিন্ত এখনের চিন্তা আগের তুলনায় বরং বেড়ে গেছে।সে কিভাবে অতগুলো টাকা হ‍্যান্ডেল করবে।
    ইদানীং শুনতে পারছি কয়েকজন দালাল ভীম বাগালের নাম নিয়ে জমির দাম চড়াচ্ছে। সরল সাদাসিদে ভীম এ বিষয়ে কিছুই জানে না।সবাই জেনে  গেছে জমি  জায়গা কিনে অনেক সম্পত্তি করেছে ভীম। চড়া দামে জমি কিনতে একমাএ ভীমের পক্ষেই সম্ভব।তাইএই অঞ্চলের মানুষ জমি ক্রয়ের ব‍্যাপারে ভীমের নাম শুনলেই চুপ হয়ে যায়।

পাঠ প্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চির ৩১ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে গল্পকার সিক্তা গোস্বামী যা লিখলেন)

মৌসুমী ঘোষের সম্পাদনায় 'জ্বলদর্চি' পত্রিকা ইতিমধ্যে ই তোমাদের বেশ ভালো লাগছে তাই না? তোমাদের জন্য এমনভাবে কে ভাবে বল?
মলাটটি আমার চমৎকার লেগেছে। পৃথিবীর ভীষন অসুখের কথা তোমরা তো এখন জেনে গেছ। ওই যে পাখিটা চুপটি করে বসে আছে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব একা। অসুখটা যেন ওকে ঘিরে ধরেছে। কিন্তু তার চারপাশে যে সবুজ ঘাস আর সোনালী আলো ওরা বলছে ভয় নেই ভাই। আমরা আবার সুস্থ হয়ে উঠব। আমাদের অনেক খেলাধুলা যে বাকি আছে। তোমাদের জন্য অমিয় বিশ্বাস কাকু এমনই কথা বলেছেন।
আর ওই মৌসুমী দিদি তার সম্পাদকীয় তে বলেছেন পশু পাখিদের ভালবাসতে। তোমরা সবাই ভালবাসো জানি। কিন্তু অন্যদের একথা বোঝাতে হবে তো। 
ছোট্ট ছোট্ট বন্ধুরা কি সুন্দর সুন্দর ছবি এঁকেছে গো। সাঁঝবাতি তার ছবিতে পৃথিবীকে সুস্থ করে তোলার প্রার্থনা জানিয়েছে । আবার তুষার দাস, সায়ন্তনী আদিত্য, শিবরাজ ভক্ত, সুদীপ্ত চ্যাটার্জি সুস্থ পৃথিবীকে ঘিরে নিজেদের স্বপ্নকে সাজিয়েছে। যেখানে সবাই খুব আনন্দে আছে। আমার তো খুব ভালো লেগেছে তোমাদের ছবি। 

রামতনু ঘাঁটি"র লেখা 'ফুলকুসুমপুর খুব কাছে' পড়ে খুব আনন্দ  পেলে না ? আমি ও পেলাম। কেমন সবাই মিলে মা বাবা, দাদু ঠাকুমা মিলে হিরামন পাখি নিয়ে হুলুস্থুল কান্ড। 'রাধাগোবিন্দ' কিন্তু নাটের গুরু। আর সায়নী কুন্ডু ছবিগুলো দারুন এঁকেছে। ওর আঁকা আর লেখা দুটোই কিন্তু মনে রাখার মত।
দীপান্বিতা দিদি পায়রার ছানা নিয়ে একদম তোমাদের কথা লিখেছেন। ঠিক ঐরকম হয় না? স্কুল গিয়েও মন পরে থাকে ওই পাখির বাসায়। নাওয়া খাওয়া ভুলে সর্বক্ষণ ওদের দেখতে ইচ্ছে করে। ওরা কিন্তু ভালোবাসা বোঝে। ঠিক ফিরে ফিরে আসে তোমার কাছে।
উপাসনা দিদির 'ইচ্ছে'র অঙ্গে সবার ইচ্ছে মিলে যাচ্ছে না? আমারও যাচ্চে। আসলে আমরা  বড় হলেও তোমাদের মত একটা  করে শিশু সবসময় আমাদের মধ্যে বাস করে। তাই তো তোমাদের সঙ্গে আমাদের এত মিল। 
দিলীপ জেঠু কেমন করে তাঁর ছোট্টবেলার কথা বলেছেন । ডাক ঘরকেও তার বন্ধু করে নিয়েছেন। তোমরা কি কেউ এরকম ভাবো? আমি অবশ্য এমন করে কোনোদিন ভাবিনি। তবে আজ মনে হচ্চে সত্যি ই তো। ডাকঘর তো  বন্ধুদের একসঙ্গে মিলিয়ে দেয়। 
সুস্মিতা দিদি লিখলেন "নবীন বরণ"। বসন্ত কালে আমাদের চারপাশে কত রঙ, কত সুবাস।  তবে তার মধ্যে শিশু রাই সবচেয়ে সুন্দর। ভালোবাসার রঙে রঙীন। তাই তোমরাই পারবে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়ে ভেদাভেদ ভুলে সকলকে এক করে বেঁধে রাখতে। সব মানুষ যে সমান একথা তোমরা বোঝাবে। দিদি কি সুন্দর করে বলেছেন। আমার তো ভাল লেগেইছে, জানি তোমাদের ও ভাল লাগবে।
শতভিষা 'কালবৈশাখী'র ছন্দে ছন্দে এমন ছবি আঁকল আমি তা চোখের সামনে স্পষ্ট যেন দেখতে পেলাম। আরো লেখ শতভিষা । 
সন্দীপ বিশ্বাসের 'অপেক্ষা' পড়ে বড় কষ্ট পেলাম। ছোটবেলার এইসব আঘাত সহ্য করা খুব কষ্টের। আমি জানি। আমারও ঠিক এমন ঘটনা ঘটেছিল যে। ওকে সান্ত্বনা কিভাবে দেব? তবে তুমি যেমন সুন্দর করে এই কষ্টের কথা লিখেছ তাতে তোমার কষ্ট হয়ত একটু কমবে। এভাবেই নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে থাকো দেখবে এতে দুঃখগুলো ছোট হয়ে আসবে আর আনন্দ বড় হয়ে দেখা দেবে।

সব ছোট্ট বন্ধুদের বলছি খুব ভালো থেকো। সাবধানে থেকো। মাস্ক পরতে আর হাত বারবার ধুতে ভুলো না যেন। একদিন আমরা জিতবই এই করোনা অসুরকে হারিয়ে। 

'জ্বলদর্চি'র প্রতিটি সংখ্যাই খুব মনোগ্রাহী। এই পত্রিকা যেমন ছোটদের অনুভূতি প্রকাশ করার তেমনি বড়দের শৈশব ছুঁয়ে যাওয়ার।চলতে থাকুক এই মেলবন্ধনের যোগসূত্র। অনেক শুভ কামনা রইল পত্রিকার সঙ্গে আর ভালোবাসা রইল সম্পাদিকার জন্য। এই পত্রিকার শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।


পাঠ প্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চির ৩১ তম সংখ্যা পড়ে দশম শ্রেণীর সুশ্রী কোলে যা লিখল) 

এই সংখ্যার ছবিগুলো এক শব্দে 'অপূর্ব'।

রতনতনু ঘাটী মহাশয়ের লেখা "ফুলকুসুমপুর খুব কাছে (পর্ব ৪)" তে আমরা ঠাকুমাকে তার হীরামন পাখি রাধাগোবিন্দকে খাঁচার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে দেখতে পাই। এরপর তার দোলনা, খাওয়া, তাকে পড়ানো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলে। অনিচ্ছেঠাকুমার বড় ইচ্ছে এবং বিশ্বাসও যে তার আদরের রাধাগোবিন্দ একদিন মানুষের মত কথা বলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে। পড়ে বেশ ভাল লাগছে। এরপর কি হবে তা জানতে অনেক আগ্রহ ও অপেক্ষা নিয়ে রইলাম।

দীপান্বিতা রায় এর লেখা "পায়রার ছানা" গল্পে মিষ্টতার কোনো খামতি নেই। পায়রার ডিমদুটি ফোটার আগে যেদিন আবিষ্কার করেন গিন্নি, সেদিন থেকে পায়রা মাকে ভয় না দেখানোর যথাসম্ভব চেষ্টা করে এবং খুবই পরিচর্যার মাধ্যমে বাড়ীর ছোট মেয়ে তাদেরকে বড় করেছে, তার পরিবার ও এবিষয়ে যত্নবান ছিল। এরপর স্কুল থেকে গ্রীষ্ম-এর ছুটি শেষ হলে মেয়েটি স্কুলে গেল। ফিরে এসে দেখল যে পায়রা তিনটি তাদের জানলাতে নেই, প্রচন্ড দুঃখ পায় সে। কিন্তু পরের দিন সকালে যেই ও স্কুল যাবে বলে খেতে বসেছে, ওমনি পায়রা এর ডাক শুনতে পায়ে সে। জানলার কার্নিশে বসে থাকতে দেখে সেই তিন পায়রাকে। মা কৃতগতা এবং ছানাদুটি তাদের দ্বিতীয় মাকে ভোলেনি। খুবই ভাল লাগল গল্পটি পড়ে।

"ইচ্ছে" কবিতাটিতে উপাসনা সরকার খুব সুন্দরভাবে নানান ইচ্ছে এর না শেষ হওয়া এবং যারা বড় হয়ে গেছেন তাদের ছোটবেলায় ফিরে যাওয়ার যে ইচ্ছা, যে স্বপ তাকে প্রকাশ করেছেন। 

বাল্যকালের কত এমন স্মৃতি থাকে মানুষের যা তার পক্ষে ভোলা অসম্ভব হয়। এমনই এক স্মৃতি আমাদের সঙ্গে ভাগ করেছেন শিশিরকুমার মিস্ত্রি তার "শৈশবের বন্ধু - ডাকঘর" গল্পটিতে। তিনি নিজের গ্রাম, স্কুল, দুর্গাপূজার এক অপরূপ বর্ণনা দিয়েছেন। দশমীর দিন বড়দের চিঠি লেখা দেখে তারও ইচ্ছা করত চিঠি লিখতে। তারপরে আমরা দেখি তার ডাকঘরকে চিঠি লেখা, সেটাকে ডাকঘরে ফেলতে গিয়ে এক লোকের সঙ্গে পরিচয় ইত্যাদি ঘটনা ঘটতে। ছোটবেলার সেই প্রথম চিঠি আর আমাদের আজকের 'পোস্ট অফিস' অর্থাৎ লেখকের শৈশবের বন্ধু 'ডাকঘর' -কে ভুলতে পারেননি আজও।

সুস্মিতা সাহা 'নবীন বরণ' কবিতাতে জাতিভেদ ভুলে সবাইকে এক হতে এবং নতুনভাবে মিলিতভাবে জীবনকে বরণ করার কথা বলেছেন যা সত্যি খুবই প্রয়োজন।

ছন্দ দ্বারা পূর্ণ "কালবৈশাখী" কবিতাতে কবি শতভিষা মিশ্র একেবারে চোখের সামনে কালবৈশাখীর ঝোড়ো ও তার ফলে পাওয়া শান্তির ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।

'কুকুর' প্রাণীটি আমাদের প্রাণের খুব কাছে অবস্থান করে। "অপেক্ষা" কবিতায় সন্দীপ বিশ্বাস তার ভালবাসার ও আদরের 'টমী' -র জন্য এক বছর অপেক্ষার পর জানতে পারেন সে আর নেই। তাকে হারানোর দুঃখ সাত বছর পর আবার জেগে ওঠে যখন তিনি রাস্তায় এক কুকুরকে পড়ে থাকতে দেখে। গল্পটি আবেগ এবং মমতায় পূর্ণ।

এই সংখ্যাটি পড়ে সত্যি খুব ভাল লেগেছে।


আজকের বিষয়: আমাদের দেশ ভারতবর্ষের কিছু সীমান্তরেখা

১. আফগানিস্তান ও ভারতের মধ্যে কোন সীমান্তরেখা উপস্থিত আছে?
২. ম্যাকমোহন সীমান্তরেখা ভারত আর কোন দেশকে বিভক্ত করে?
৩. ভারত আর পাকিস্তানকে কোন সীমান্তরেখা আলাদা কোরেছে?
৪. লাইন অফ কনট্রোল কোথায় অবস্থিত?
৫. ২৪ তম প্যারালাল সীমান্তরেখাটি কোথায় রয়েছে?
৬. ২৮ তম প্যারালাল কোন দুটি স্থানকে আলাদা করছে?
৭. এল এ সি সীমান্তরেখা কত সালে স্থাপিত হয়?
৮. ওয়াকিং বাউন্ডারি ভারতের কোন রাজ্যের মধ্যে পড়ে?
৯. ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তরেখার দৈঘ্য কত?
১০. ভারত আর চীন সীমান্তরেখার দৈঘ্য কত?

গত সপ্তাহের উত্তর:
১.ভিন্ট সার্ফ ২.জর্জ বুল ৩. মার্টিন কুপার ৪. বিল মরগিজ ৫. চার্লস বেবেজ ৬. রে টমলীনসন ৭. এলেন টিউরিং ৮.হিপোক্রেটস ৯.সিগমুন্ড ফ্রয়েড ১০. ধন্বন্তরি।
 
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments