জ্বলদর্চি

বুদ্ধদা (বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত) /কে. জি. দাস

বুদ্ধদা (বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত) 
কে. জি. দাস 

সাল টা 1997, ত্রিবান্দমে  International Film Festival of India ' আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমার প্রথম তথ্য চিত্র, 'কর্মবীর গৌরীশঙ্কর রায়' দেখানো হচ্ছে। বুদ্ধদার ছবি 'লাল দরজা' এই উৎসবের একটি বিশেষ আকর্ষণ। Indian Panorama বিভাগে আমাদের ছবি নির্বাচিত হয়েছিল। এই ফেস্টিভেলে আমি একদম নতুন। যে দিন আমার ছবি দেখান হলো বুদ্ধদা একদল বিদেশী দর্শক ও বেশ কিছু বাঙালি বন্ধুদের নিয়ে আমার ছবি দেখতে এলেন। বুদ্ধদার সঙ্গে তখনো আমার পরিচয় হয়নি। আমি আনন্দে আত্মহারা। ছবির শেষ এ চা  এর আড্ডায় আমাদের আলাপ পরিচয়। এই ঘটনাটা আমি জীবনেও ভুলব না। একজন প্রতিষ্ঠিত পারিচালক এই ভাবে নতুন  অজানা একজন পরিচালককে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে বর্তমান সময়ে কল্পনাও করা যায় না। 

   শুরু হলো আমাদের বন্ধুত্ব। এর পরে  বহু চলচ্চিত্র উৎসবে একসঙ্গে গিয়েছি। কত তর্ক বিতর্ক মজার ঘটনা তাঁর অন্ত নেই। দিন পনেরো আগে ফোনে শেষ কথা হয়।

    সত্যজিৎ মৃণাল, ঋত্বিক পরবর্তী সময়ে আদুর গোপালকৃষ্ণন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গিরিশ কাঁসারবালি, গৌতম ঘোষ এবং শ্যাম বেনেগাল --এঁরাই বিশ্ব চলচ্চিত্রের আঙিনায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।একটি ফুল ঝরে গেল। আমরা সত্যিই খুব মর্মাহত।

    বুদ্ধদা তথ্যচিত্র দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন। প্রথম ছবি দূরত্ব।  তারপর নিম অন্নপূর্ণা, গৃহযুদ্ধ,ফেরা, চরাচর, বাঘ বাহাদুর, তাহাদের কথা, ওঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য কাজ বলে আমার মনে হয়। অসাধারণ বেশ কিছু তথ্যচিত্র বানিয়েছিলেন। তাঁর মধ্যে  "জোড়াসাঁকো র ঠাকুরবাড়ি" অতুলনীয়। 

    চমৎকার কবিতা লিখতেন। বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ আছে। ওঁর সিনেমার কবিতার সঙ্গে একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। বুদ্ধদা ছবি বানাতেন নিজস্ব আঙ্গিকে, সেখানে ক্যামেরা মধ্যে দিয়ে কবিতা লিখতেন। সাহিত্যের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল। দেশের বাইরে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে কি ধরনের ছবি হচ্ছে তার  বিস্তারিত খবর রাখতেন। এর জন্যই এক নুতন ধারার ছবি বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাণিজিক ভাবে ওঁর ছবি হয়তো খুব সার্থকতা লাভ করেনি। কিন্তু সিনেমার নান্দনিক  সৌন্দর্য ওঁর ছবির মূল সম্পদ ছিল।

   বুদ্ধদার শেষ ছবি "উড়োজাহাজ" একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র। এই ছবি প্রত্যেক মানুষকে স্বপ্ন দেখতে  শেখায়। অনবদ্য।

      দোষেগুণে মানুষ। কেউই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু একজন শিল্পী বেঁচে থাকেন তাঁর শিল্পকাজে।  বুদ্ধদা বহুকাল বেঁচে থাকবেন আমাদের কাছে তাঁর চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। 

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments