জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৩৭

ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যা -৩৭

সম্পাদকীয়,
'ছোটোবেলা'র বন্ধুরা, তোমরা তোমাদের চারা গাছে রোজ জল দিচ্ছ তো? দেখো চারাগাছ যেন ছাগলে বা গরুতে এসে খেয়ে না নেয়। দরকার হলে বেড়া দিয়ে দাও। হ্যাঁ, চারাগাছকে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখতে হয়। এই আমরা বড়রা তোমাদের যেমন বকে ঝোকে বারণ করে এটা ওটা শেখাই, এটাও তো এক ধরনের বেড়া দিয়ে রাখা। যত গাছ বড় হবে তত তোমরা বলতে পারবে আমার একটা পেয়ারা গাছ কিংবা জুঁই ফুলের গাছ কিংবা আম গাছ আছে। তোমাদের যেমন চারাগাছ আছে আমাদের বড়োদেরও তেমন তোমরা ছোটোরা আছো। গল্পকার বিশ্বদীপ দের টিটো আছে, মৌসুমী রায়ের ঋভু আছে, পীযুষ প্রতিহারের কাছে তাঁর মেয়ে আছে। তাই জন্যই তো তোমরা ছোটোরা তোমাদের অজানা বিষয় গুলো ঘোষ স্যারের গল্পে গল্পে ক্যুইজের মতো তোমাদের মা-বাবাদের জিজ্ঞেস করতে পারো। না, না শুধুই প্রশ্ন নয় তোমরা সুব্রত চৌধুরীর ছড়ার মতো বলবে, কবে মামার বাড়ি গিয়ে আম লিচু খাব মা! কিংবা সৌমী আচার্যের ছড়ার মতো বলবে নতুন জামা কবে পড়ব মামা! কিংবা রতনতনু জেঠুর ফুলকুসুমপুরের বুম্বার মতো বলবে বিড়ালের সঙ্গে বসে টিভিতে টম এন্ড জেরি দেখব দাদু। আরে আমি জানি তোমরা সবাই আবার বাগান করতে ভালোবাসোনা, কেউ পশু পাখি পুষতে, কেউ অপু পালের তোলা প্রচ্ছদের ছবিটার মতো পুকুরে সাঁতার কাটতে ভালোবাসো। তোমাদের যেটা ভালো লাগে সেটাই করো কিন্তু পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে করার চেষ্টা করো। তাহলেই দেখবে তোমার বা তোমার বন্ধুর লাগানো বাগানের গাছটা একদিন মহীরূহ হয়ে উঠবে। আর তুমি সকলকে বলতে পারবে, আমার বা আমার বন্ধুর একটা নিজস্ব গাছ আছে, যে সকলকে অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয়, পশু-পাখি-কীট-পতঙ্গদের আশ্রয় দেয়। কী তাহলে তোমরা রেডী তো?  চটপট পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠিয়ে দাও। তোমাদের বন্ধুদের ছড়া-আঁকা কেমন লাগল লিখে পাঠাও আর অবশ্যই ক্যুইজের উত্তর।  - মৌসুমী ঘোষ।


টিটো ও আয়নার গল্প
বিশ্বদীপ দে

গল্পটা শুরুতে টিটোর ছিল। পরে আমিও সেটায় ঢুকে পড়ি। 
এমনিতে আয়নার দেশে সবাইকে একাই যেতে হয়। তবে খুব বন্ধু কেউ থাকলে তখন ব্যাপারটা আলাদা। এইটুকু পড়েই যদি তোমাদের মনে হয় আমাদের টিটো আয়নার দেশে গেছিল তাহলে ভুল। আমরা কেবল সেদেশে যাওয়ার ঠিকানাটুকু পেয়েছি। যদিও ঠিকানাটাই আসল। যদিও এও ঠিক, চাইলেই সেখানে যাওয়া যায় না। কেন? বলছি। গল্পটা তো আগে শুরু হোক। 
প্রথমেই বলেছি, গল্পটা শুরুতে কেবল টিটোর ছিল। একদিন সকালে আয়নার সামনে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ টিটোর মনে হল আয়নায় ছায়াটা যেন একটু নড়ছে। অথচ ও তো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপারটা কী? এসব ভাবতে যেতেই আয়নার টিটো মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘‘ভালো আছ?’’ তারপরই আবার যে কে সেই। টিটো যেমন ভাবে রয়েছে, সেও তেমন ভাবেই দাঁড়িয়ে।  
এ আবার কী! মন থেকে ব্যাপারটা মুছতে পারল না টিটো। মোছা তো যায়ও না। সে অবাক হয়ে আয়নার ওপারে আরেক টিটোকে দেখছিল। তারই মতো লাল গেঞ্জি। ফুলছাপ হাফপ্যান্ট। ভুরুর উপরের কাটা দাগটা পর্যন্ত সেম। সেমই তো হওয়ার কথা। ওটা তো রিফ্লেকশন। কিন্তু...
  এপর্যন্ত মনে হতেই টিটো চলে এল পাশের ঘরে। আর তখন থেকেই গল্পটায় আমিও ঢুকে পড়লাম। ছুটির দিন বলে খাটের এককোণে কাগজটা মুখে করে বসেছিলাম। ঘুম ঘুম ভাব। টিটো কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে একটু আগের ঘটনাটা বলে বসল। ফিসফিস কেন? আসলে এই ঘরের লাগোয়া রান্নাঘরে যে ওর মা রয়েছে। শুনতে পেলেই ফিক ফিক করে হাসবে। এসব কথা কেবল বাবাকেই বলা যায়। হাজার হোক, বাবাই তো টিটোর বেস্ট ফ্রেন্ড। টিটোর খুব ইচ্ছে একদিন অ্যাডভেঞ্চারে যাবে। তখন বাবাই হবে তার পার্টনার। তবে একটাই কনফিউশন। বাবা কি মা’কে ছাড়া যাবে? 
- তোকে কি কখনও অ্যালিসের আয়নার দেশে যাওয়ার গপ্পোটা বলেছিলাম? 
- না তো। ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ জানি। কিন্তু এটা তো...
সেই গল্পটা আমারও মনে নেই। তবে এটা মনে আছে, সেই গল্পে আয়নার ওপারের দুনিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিল অ্যালিস। সেখানেই বলা হয়েছিল, আয়নায় যে ছায়াটা পড়ছে, সেটা যতই আমরা আমাদের ঘরের ছায়া ভাবি না কেন, আসলে তা ঘোর রহস্যময় একটা জায়গা। কিন্তু টিটো তো এসম্পর্কে কিস্যু জানত না। ওর কেন এমন মনে হল?
  টিটোর হাত ধরে আমিও বেডরুমে চলে গেলাম। তারপর আয়নার সামনে দু’জনে কিছুক্ষণ চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে আছে, অ্যালিসের গল্পটা পড়ার পরে আমিও কতদিন আয়নার দিকে তাকিয়ে থেকেছি। আর ভেবেছি ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা কি সত্যিই আমি? আয়নার ওপারে যে দেওয়াল, সেখানকার টিকটিকি, সেগুলোও কি আমাদের ঘরেরই প্রতিফলন? নাকি ওটা অন্য কোনও দুনিয়া? গল্পটা না পড়েই টিটোও সেরকম ভাবতে শিখে গেছে! বোধহয় আমার ছোটবেলাটা ওর মধ্যেও মিশে আছে বলেই। 
   ঠিক তক্ষুনি আমার একটা ফোন বাজল। অফিস থেকে করেছে। ব্যাস! সঙ্গে সঙ্গে আমাকে গল্পটা থেকে বেরিয়ে আসতেই হল। না চাইতেও।  
গল্পটায় আমি আবার ঢুকলাম রাত্তিরে। টিটো তো বরাবরই আগে শুয়ে পড়ে। সেদিনও তেমনটাই হয়েছে। আমি যখন শুতে এলাম, ওর মা পাশের ঘরে টিভি দেখছে। আমি মশারিটা গুঁজে নিয়ে আলতো করে শুতে যেতেই টিটো ডাকল, ‘‘বাবা!’’
- সে কী রে! তুই এখনও জেগে?
- ও ডাকছিল। 
- ও মানে?
- আয়নার বন্ধু। আয়নার ভেতর থেকে ডাকছিল। সত্যি বলছি। 
  ঘর অন্ধকার। হালকা হাওয়ায় পরদাটা উড়ছে। পরদার ফাঁক দিয়ে আসা বাইরের আলোয় ঘরটা কেমন নীলচে অন্ধকারের মধ্যে ভেসে রয়েছে যেন। বুঝলাম একবার আয়নার সামনে থেকে ঘুরিয়ে না আনলে ছেলে ঘুমোবে না। সেইমতো আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালাম দু’জনে। বলতে গেলাম, ‘‘কোথায় কী? ওই দ্যাখ...’’ কথা শেষ হল না। 
  আয়নার ওপারে টিটো ও আমার ছায়া। ছায়া? নাকি ওরা অন্য দু’জন? আমাদেরই মতো দেখতে। কেননা কাচের ওপারে ওদের দাঁড়ানোর ভঙ্গি যেন আলাদা! সেই মুহূর্তেই পরিষ্কার বুঝলাম ওটা একটা অন্য দুনিয়া। মাঝেমধ্যে আয়নার কাচ আর কাচ থাকে না। তখন সেটা দরজা হয়ে যায়। যার দু’দিকটাই খোলা। চাইলে ওরা এপারে আসতে পারে। চাইলে আমরাও ওপারে চলে যেতে পারি। যদিও সবই এক রকম। দেওয়ালের রং, জানলা, জানলার ওপারে ধোঁয়া ধোঁয়া আকাশ সব এক। কিন্তু আসলে মোটেই একই রকম নয়। আলাদা। 
  আমাদের মতোই ওরাও আছে। মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যায়। তবে সেটা অল্পক্ষণের জন্যই। সবে আলাপ করতে যাব, দেখি আবার ওটা আয়না হয়ে গেছে। বললাম, ‘‘চল শুয়ে পড়ি। পরের দিন তক্কে তক্কে থাকব। টুক করে ঘুরে আসব আয়নার দেশ থেকে।’’


মামার বাড়ির সুখ
সুব্রত চৌধুরী

 খুশির রেলে পাখা মেলে খোকা মামার বাড়ি 
মাথা তুলে ছন্দে দুলে লিচু আমের সারি।
কাঁঠাল গায়ে হলদে ছোপ আর সিঁদুর রংয়ে আম
থোকা থোকা ঝুলছে লিচু রসে ভরা জাম।

খোকার দুপুর ঝুমুর ঝুমুর  ঘুঙুর পায়ে নামে
খুশির গালা ভরে ডালা মধু মাখা আমে।
ঝিরি  ঝিরি হাওয়ার সিঁড়ি টসটসে জাম লাল
আঁচল ভরে মুখে পুরে  খোকার রঙীন গাল।

গাছের ডালে সুরের তালে মাতে পাখি গানে
মিষ্টি রসে সুরাবেশে ডাকে খুশির বানে।
গাছের তলে মিষ্টি   ফলে রঙীন হাসি মুখে
মনময়ূরী পেখম মেলে মামার বাড়ির সুখে।


মস্ত বড় অন্যায়
পীযূষ প্রতিহার

রবিবার ছুটির দিন। বড়দের ছুটি আর ছোটদের ছুটি আলাদা আলাদা ভাবে আসে এবং যায়। তো সেই ছুটির রবিবারের সকালে মেয়েকে বললাম - মা রে, একটু পড়তে বস। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিতান্তই আদেশ করতে না পেরে বই নিয়ে বসল। কিছুক্ষণ চলল ছড়া পাঠ। তো হঠাৎ বলে উঠল- বাবা আজ শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছড়াগুলোই পড়ব। বললাম তাই হোক। সেটাও চলল কিছুক্ষন। চলতে চলতে বলল- বাবা বিদ্যাসাগরের লেখা ছড়া নেই কেন? বললাম - বিদ্যাসাগর তো ছড়া টড়া খুব একটা লেখেননি, বরং তোমার বর্ণপরিচয় বইটাই তিনি লিখেছেন। এই যে অ, আ, ই, ই দেখছ এগুলো সবগুলোই বিদ্যাসাগর লিখেছেন এবং রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, যোগীন্দ্রনাথ এঁদের সব ছড়া গুলো ঐ আ-আ-ই-ঈ দিয়েই লেখা। 
  - আচ্ছা বাবা, তোমার কাছে বিদ্যাসাগরের নাম্বার আছে?
- কি নাম্বার? কেন?
- ফোন নাম্বার গো, একটু কথা বলতাম।
আমি তো হাসি চেপে রাখতে পারছি না, ওর মা হেসে গড়িয়ে পড়ার যোগাড়। তবুও অনেক কষ্টে হাসি চেপে জিজ্ঞাসা করলাম- ফোন নাম্বার থাকলে, তুমি কি কথা বলতে?
   আমাদের হাসির কারণ বুঝতে না পেরে এবং কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল- বলতাম।
-কি বলতে? 
   আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে  ফিসফিস করে বলল- বলতাম তুমি অ-আ-ক-খ কেন লিখেছ, যদি তুমি এগুলো না লিখতে তাহলে তো আমাকে পড়তে আর লিখতে হত না! কি মজা হতে, শুধু সবদিন ছুটি।
  আমি আবার হাসি চেপে রাখতে পারছি না, হাসতে হাসতে বললাম- সত্যিই তো, না লিখলে তো পড়তে হত না! খুব অন্যায় করেছেন বিদ্যাসাগর। আর কিছু বলার মুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। বলার চেষ্টা করলাম- বাংলা নাহয় পড়তে হত না, কিন্তু ইংরেজি তো অনেক বেশি পড়তে হত তখন। বলল- ইংরেজি তো অনেক সহজ, মাত্র ছাব্বিশ টা অক্ষর আছে, আর বাংলায় কতগুলো, আমি ভুলেই যাই। কতগুলোর মাত্রা আছে, কথাগুলোর নেই, কারো আবার একটু মাত্রা,কারো পুরোপুরি মাত্রা কত রকম!
   আমি বললাম- সে তো ইংরেজিতেও আছে, ছোট হাতের অক্ষর,বড় হাতের অক্ষর, টানা অক্ষর কত রকম! ওটা তো অনেক বেশি শিখতে হয়।
মেয়ে বলল- না না, ইংরেজি সহজ। দেখেছ আমার ইংরেজি ছড়ার বইয়ে কোথাও লেখা নেই ছড়াটা কে লিখেছে। আর বাংলা বই দেখো, সব ছড়াগুলোর নিচে নিচে লেখা আছে কে লিখেছে। তারমানে এই ইংরেজি ছড়াগুলো গুলো নিজে নিজে বলা যায় আর লেখা যায়, এগুলো কেউ লেখে না। 
  তুমি তাড়াতাড়ি বিদ্যাসাগরের ফোন নাম্বার নিয়ে আসবে, আমি জিজ্ঞেস করবই, কেন -অ-ই-ঈ এতগুলো লিখেছে, কম করেও তো লিখতে পারত, এত আ-কার, ও-কার,ই-কার, ঈ-কার রাখার কি দরকার ছিল?
  আর কথা বাড়ালাম না। বললাম আজ তোমার ছুটি।

আমার ঠাকুর
সৌমী আচার্য্য

রবি ঠাকুরের জন্মদিনে পড়বো আমি নতুন জামা
যেই না বলা ওমনি জোরে চমকে উঠলো মেজ মামা
ভুরু কুঁচকে রেগে গিয়ে হাসলে কেন যতই বলি
মামা ততই হেসে হেসে আমায় বলে 'আস্ত পাগলী'
রবি ঠাকুর আপন আমার যেমন খুশি করবো পালন
তার গানে আর কবিতায় পঁচিশে বৈশাখ করবো যাপন



ঋভুর কথা
মৌসুমী রায়

আর বোলো না গো, কবে থেকে ভাবছি তোমাদের সাথে আলাপ করতে আসবো, টাইমটাই ম্যানেজ করতে পারছিনা। আসলে আমি তো ভীষন বিজি থাকি।ওহো, তোমাদের তো আমার নামটাই বলা হয় নি!আমি ঋভু!
  আস্তে আস্তে তোমাদের সকলের নাম ও জেনে নেব।বুঝলে!আমার কাছে একটা মেমরিগ্রাম রেকর্ডার বলে গ্যাজেট আছে।ওখানে একবার কোন বন্ধুর নামটা এন্ট্রি করালেই হোলো। মেমরিগ্রাম নিজে নিজেই বাদবাকি সব ডেটা এন্ট্রি করে নেয়। তোমাদের শিওর খুব কিউরিওসিটি হচ্ছে, রেকর্ডার কোথায় পাওয়া যাবে?
  অ্যামাজন নাকি ফ্লিপকার্টে?
কানে কানে সিক্রেটটা বলি। কোত্থাও পাওয়া মযাবে না কারন ওটা আমিই বানিয়েছি তাই আমার কাছেই আছে।আমার সায়েন্স ল্যাবে এরকম অনেক গ্যাজেটস আছে ,জানোতো! সব ই আমার ইনভেন্ট করা। ভাঙা মোবাইল,পুরোনো ঘড়ি, ফাঁকা বটল,ফেলে দেওয়া টিফিন বক্স এসব দিয়ে বানাতে হয়। একদিন দেখাব তোমাদের।
  কবে? এখনতো সবার বাইরে বেরোনো বন্ধ,যেদিন আমরা আবার সবাই আগের মত ফ্রিলি ঘুরতে পারবো,তোমাদের সক্কলকে আমার সায়েন্স ল্যাব দেখাবো।ওক্কে?
   যাই হোক, তোমরা সবাই নিজের নিজের নাম পাঠিয়ে দিও। পুঁচকু এন্ট্রি করে নেবে।ও,তোমরা তো আবার পুঁচকুকে চেনোইনা।পুঁচকু আমার সেক্রেটারী কাম ফেভারিট পেট। আমার রোজকার ডায়েরি তো পুঁচকুই মেনটেন করে। আর বড় বড় ডায়েরি সব বল্টুর কাছে থাকে। বল্টু পুঁচকু আমাদের পাড়ার সব বিখ্যাত বেড়াল।এছাড়াও লালু,ভুলু ,কালু,টাইগার এরা সব ভি আই পি ডগি। তাছাড়া উঙ্গু বুঙ্গু ,সেপাই বুলবুল, দুগ্গা টুনটুন আরো অনেকে আছে।হে হে ,এরা সবাই আমার টীমের মেম্বার।সবাই ক্যাপ্টেন ঋভুকে মানে। এইজন্য ই স্কুলে আমি কখনো প্রিফেক্টশীপ নেই না জানো তো।সব জায়গাতেই আমি মনিটর হলে হবে? তাই ক্লাস মনিটরিংটা আমার সব অ্যাসিস্ট্যান্টদের দিয়ে দিয়েছি।
  অনুভব, অনমিত্র,অয়ন্তিক এরাই ক্লাস ম্যানেজ করে।বুঝলে? যখন খুব বড় ঝামেলা হয় তখন অবশ্য আমাকেই সামলাতে হয়। এই যেমন সেদিন,
একটা বিরাট ধেড়ে ইঁদূরের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।সঙ্গে সঙ্গে তাকে ফার্ষ্ট এড দেওয়া । ড্রাইভার আঙ্কেলদের ঘরের পিছনে পাতায় করে জল এনে এনে দেওয়া।তারপর একটু সুস্হ হলে বিস্কুটের গুঁড়ো খাওয়ানো এরকম গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব আমাকেই সামলাতে হয়। 
  তোমাদের সঙ্গে পরিচয় হয়ে ভালোই লাগছে।নেক্সট টাইম আমার আরো অনেক অ্যাডভেঞ্চারের কথা তোমাদের শেয়ার করব। স্টে টিউনড এন স্টে অ্যাট হোম। টাটা,বাই বাই।

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস
ফুলকুসুমপুর খুব কাছে ১০
রতনতনু ঘাটী

   তিন্নি-বিন্নি আর বুম্বা তখনও স্কুলড্রেস পরে আছে। সকলে একসঙ্গে গলা মেলাল, ‘না না। আমরা কখনও এই স্টোরিটা ভুলব না! বড়বাবু, তুমি বলো!’
   তিন্নিরবাবা বললেন, ‘তোদের একজন বিজ্ঞানীর গল্প বলি। তাঁর নাম নিকোলা টেলসা। তিনি ছিলেন একজন সাইবেরিয়ান বিজ্ঞানী এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ক্রোয়েশিয়ার স্মিলিয়ান নামে একটি গ্রামে জন্মেছিলেন ১৮৫৬ সালে এক ঝড়বৃষ্টির রাতে। ছেলেবেলায় তাঁর চার বছরের পড়াশুনো তিনি শেষ করেছিলেন তিন বছরে। তিনি প্রতিদিন ভোর তিনটে থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত পড়াশুনো করতেন। একটিও ক্লাস কখনও বাদ দেননি। সেবার ক্লাসের ন’টাতেই পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছিলেন। এর ফলে কিন্তু তাঁর শরীর খারাপ হচ্ছিল। বিজ্ঞান বিভাগের যিনি হেড, তিনি টেসলার বাবাকে চিঠি দিয়ে জানালেন, ‘আপনার ছেলে মেরিট লিস্টে ফার্স্ট হয়েছে।’ টেসলা বাবার কাছ থেকে কঠিন পরিশ্রমের প্রেরণা পেতেন। এক সময় তাঁর বাবা মারা গেলেন। তারপর প্রোফেসর একদিন টেসলাকে তাঁর বাবার কিছুদিন আগে লেখা একটা চিঠি দিলেন। তাতে টেসলার বাবা লিখেছিলেন: ‘স্যার, টেসলা এত পরিশ্রম করলে মারা যেতে পারে। টেসলা এত পরিশ্রম যদি না কমায়, তবে তাকে যেন স্কুল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়।’ 
   বড়বাবু একটু থামতে বুম্বা জিজ্ঞেস করল, ‘তারপর?’

   ইচ্ছেঠাকুরমা নাক সিঁটকে বললেন, ‘বিজ্ঞানীর বাবা কেমন লোক রে বাবা! পড়াশুনোয় অত ভাল ছেলেকে স্কুল থেকে বের করে দিতেন বললেন?’
   ‘আমার গল্পটা এখানেই শেষ নয় মা।’ হেসে বললেন বড়বাবু, ‘আমার গল্পে কিন্তু একটা বিড়াল আছে! বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার একটা পোষা বিড়াল ছিল। একদিন সন্ধেবেলা অন্ধকার ঘরে টেসলা বসেছিলেন। বিড়ালটা অন্ধকারে ঘোরাঘুরি করছিল। একসময় টেসলা অবাক গেলেন। তাঁর পোষা বিড়ালের গায়ের পশমের লোমে বিদ্যুতের ঝিলিক দেখতে পেলেন। তাঁর মাথায় আইডিয়া ঝিলিক দিয়ে উঠল। তার পরেই ইলেক্ট্রিক নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু করলেন। তারই ফল হল, তড়িৎ প্রবাহ এবং তারবিহীন তড়িৎ পাঠানোর যুগান্তকারী আবিষ্কার!’
   তিন্নি, বিন্নি আর বুম্বা অবাক চোখে একবার তাকাল মিঁউয়ের দিকে। ওদের দিকে তাকিয়ে বড়বাবু বললেন, ‘তাই আমার মিঁউকে কেউ কিছু বলবে না। দেখো, কিছু দিনের মধ্যেই সব ভাল আদবকায়দা শিখে নেবে। তখন ও বাড়িতে ছাড়া হয়েই থাকবে। স্বাধীনভাবে ঘরময় ঘুরে বেড়াবে।’
   বুম্বার মাথায় তখন রাজ্যের চিন্তা ভিড় করে এল। বড়বাবুকে জিজ্ঞেস করল, ‘মিঁউ যদি খাঁচায় না থাকে, তখন ওই খাঁচার জন্যে তো কিছু একটা কিনতে হবে? তা হলে আমার মাথায় একটা দারুণ আইডিয়া এসেছে।’
   তিন্নি মুখ বাঁকিয়ে বলল, ‘ভাই, তোর আইডিয়ার দৌড় আমার জানা আছে!’
   বড়বাবু হাসতে-হাসতে বললেন, ‘বলো বুম্বাবাবু, কী তোমার আইডিয়া?’
   বুম্বা বলল, ‘বড়বাবু, আমাদের বাড়ির ওই মিঁউয়ের বাতিল খাঁচাটার জন্যে না হয় একটা কাকাতুয়া কিনে আনা হল? সেটা হবে আমার কাকাতুয়া! কেমন, ভাল হবে না? বলো ঠাকুরমা?’
   ইচ্ছেঠাকুরমা দু’ দিকে ঘাড় নেড়ে বললেন, ‘না, ভাল হবে না রে! তোর কাকাতুয়া যদি তাড়াতাড়ি কথা বলতে শিখে যায়, তখন তোর কাকাতুয়ার কাছে আমার রাধাগোবিন্দর অপযশ হবে না?’
   ‘তা ছাড়া এক বাড়িতে দুটো কথা-বলা পাখি ভালও দেখাবে না! কথা বলতে শিখে গেলে--সময় নেই, অসময় নেই, দুটিতে বচসা বাধাবে। আর আমাদের ধারেকাছে তো কোথাও কথা-বলা পাখিদের নিয়ে কোনও প্রতিযোগিতাও হয় না, যে ওদের নিয়ে যাব? আর যে খাঁচাটা মিঁউয়ের নাম করে রাখা হয়েছে, সেটাতে মিঁউ থাকুক আর না থাকুক, ওটা মিঁউয়েরই। তা ছাড়া জানিস তো, প্রেসিডেন্ট লেনিনের চারটি পোষা বিড়াল ছিল। তিনি তাদের নিজের হাতে দোখাশোনা করতেন, খাবার দিতেন। মিঁউ যখন বড় হয়ে একা-একাই ঘরময় ঘুরতে শিখে যাবে, তখন দরকার হলে আমি আর-একটা বিড়ালছানা নিয়ে আসব না হয় বাড়িতে পোষার জন্যে।’
   ইচ্ছেঠাকুরমা তিন্নির বাবার কথায় হা-হা করে উঠলেন, ‘ও কাজটি করতে যেও না! তা হলে তোমার বাবা বাড়ি থেকে সব ক’টা পোষ্যকে বিতাড়ন করে দেবে!’
   বুম্বা হেসে বলল, ‘সন্ধেবেলা বরং পড়া শেষ হয়ে গেলে আমি মিঁউকে নিয়ে টিভিতে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ কার্টুন দেখব! কী বলো বড়বাবু?’ 
   বুম্বার প্রস্তাবে সকলে হাহা করে হেসে উঠলেন। 
(এর পর আগামী রোববার)

গল্পে গল্পে ক্যুইজ
রাজীব কুমার ঘোষ

পর্ব ২
কোভিড বিশ্ব, ক্যুইজ আর সম্পর্কের সেতু

এই কোভিড বিশ্বে, লকডাউন পরিস্থিতিতে সারা দুনিয়া জুড়ে তোমারা এবং তোমাদের মতোই যারা আছে তাদের অনেকেই  মোবাইল বা কম্পিউটারকে আঁকড়ে ধরে বিনোদনের স্রোতে যেমন গা ভাসিয়েছে, ঠিক তেমনি আবার অনেকেই আছে যারা ওই একই মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার করে নিজেদের জানার জগৎটা অনেক বাড়িয়ে নিয়েছে। 

  আসলে মোবাইল বা কম্পিউটার যেভাবে তুমি ব্যবহার করবে ফলটাও সেইভাবেই পাবে। এই ডিভাইসগুলো খারাপ বা ভালো কোনোটাই নয়। তুমি কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছ আর কতটা সময় ধরে ব্যবহার করছ সেটাই আসল কথা। বিনোদন অবশ্যই দরকার কিন্তু মনে রাখতে হবে, যে বিনোদন তুমি পছন্দ করবে তার ওপর তোমার জীবনেরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। কথাটা তোমাদের দরবারে রাখলাম, ভেবে দেখো।

  এই দুই দলের বাইরে কিন্তু আরো অনেক দল আছে। যেমন ধরো অনেকেই এই সময় ভেবেছে, আচ্ছা যখন স্মার্ট ফোন ছিল না, কম্পিউটার ছিল না, সেই সময় আমাদের মতো ছেলে মেয়েরা কী করত? বাড়িতে তাদের সময় কাটতো কী করে!! লকডাউনের অবসরে তারা কিন্তু বাবা-মা বা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রশ্ন করে করে পেয়েও যাচ্ছে তাদের উত্তর। পেয়ে যাচ্ছে ঘরে বসেই খেলা যায় এইরকম দুরন্ত দুরন্ত খেলার খোঁজ। সবচেয়ে বড় কথা, বড়দের তারা অন্যভাবে চেনার সুযোগ পাচ্ছে, সম্পর্কের সেতু আরো দৃঢ় হচ্ছে।

  এই সেতুকে আরো দৃঢ় করতে আমরা ক্যুইজকেও কাজে লাগাতে পারি। কে বলেছে ক্যুইজ কেবল মাত্র বিখ্যাত  লোকেদের নিয়েই হবে আর ক্যুইজ মানেই অনেক প্রতিযোগী আর হলভর্তি লোক। ক্যুইজ যেমন সবার জন্য ঠিক তেমনি ক্যুইজ শুধু নিজেদের জন্যেও হতে পারে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হতে পারে, এমনকি পরিবারের দু'জন সদস্যের মধ্যেও হতে পারে। দেখে নিও কোথা দিয়ে সময় কেটে যাবে।

  কী ভাবে? তাই ভাবছো তো? এবার সেই কথায় আসি। মানুষের জীবন যে বড় বড় ঘটনা দিয়েই তৈরি হয় তা কিন্তু নয়, অজস্র ছোটো ছোটো ঘটনা বা ব্যক্তিগত ছোটো ছোটো পছন্দ-অপছন্দ দিয়েও কিন্তু মানুষের জীবন তৈরি হয়। আর যখন আমরা কোনো মানুষের এই পছন্দ-অপছন্দগুলো জানতে পারি সেই মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও দৃঢ় হয়ে ওঠে। এমনকি তাকে দেখার দৃষ্টিও আমাদের বদলে যেতে পারে। যাকে তুমি ভাবছ কী গম্ভীর, রাগী মানুষ, যদি জানতে পারো চার্লি চ্যাপলিনের চলচ্চিত্র তার খুব প্রিয়, তাহলে তাকে তো অন্যভাবে দেখতেই হয়। তাই না?

  তোমরা কি জানো তোমার বাবা মা ভাই বোন  বা পরিবারের অন্যদের প্রিয় চলচ্চিত্র কি? প্রিয় গায়ক কে? প্রিয় হিরো বা হিরোইন কে? প্রিয় বই কি? প্রিয় খাবার কি? প্রিয় খেলা কি? আর বলবো না, তোমরা নিশ্চয়ই ধরতে পেরে গেছো ঘরোয়া ক্যুইজের বিষয়গুলো কী কী হতে পারে। এই ক্যুইজে যিনি প্রশ্ন করবেন তিনি প্রশ্নের সঙ্গে কিছু ক্লু দেবেন, অন্তত তিনটি। চলো আজকে এইরকম কিছু ঘরোয়া ক্যুইজের প্রশ্ন নিয়ে আমরা খেলি। যাতে ব্যাপারটা আরো পরিস্কার হয়ে ওঠে। 

১. প্রবাহনীল মাকে জিজ্ঞেস করল, মা তোমার প্রিয় কবি কে? প্রবাহনীলের মা তাকে নিচের তিনটে ক্লু দিলেন। দ্যাখো তোমরা পারো কিনা।
ক্লু এক - প্রিয় কবি বাঙালি। তিন অক্ষরে তার নাম। 
ক্লু দুই - ১৯৬৪ সালে তিনি সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার পেয়েছিলেন। রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এই কবি, জেলেও গেছেন। 
ক্লু তিন - ২০০৯ সালে শিয়ালদহ- নিউ জলপাইগুড়ি এক্সপ্রেসের নাম এই কবির প্রথম কবিতার বইয়ের নামে নাম রাখা হয়েছিল। তার নামে একটি স্টেশনও আছে কলকাতায়। 

২. সাঁঝবাতি তার মাকে বললো, মা বলো তো আমার প্রিয় নায়ক কে? সে মাকে তিনটে ক্লু দিল।
ক্লু এক - প্রিয় নায়ক ভারতীয় এবং চার অক্ষরে নাম।
 তার নামের সঙ্গে সুন্দরবনের একটা সম্পর্ক আছে।
ক্লু দুই - এই নায়কের বাবাও কিন্তু এক বিখ্যাত নায়ক। 
ক্লু তিন - এই হিরোর প্রথম চলচ্চিত্রেই হিরো শব্দটি আছে।

৩. বৈভবী তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা তোমার প্রিয় গায়ক কে? বাবা এই তিনটে ক্লু দিলেন।
ক্লু এক - প্রিয় গায়ক বাঙালি, নামটি ছদ্মনাম। এই ছদ্মনামের প্রথমে যে অক্ষর ছদ্ম পদবীর প্রথমেও সেই অক্ষর।
ক্লু দুই - শুধু বাংলা গান নয় হিন্দি গানের জগতেও ইনি বিখ্যাত। তিনি আটটি ফ্লিম ফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন বেস্ট প্লে ব্যাক গায়ক হিসাবে। এখনো পর্যন্ত এই বিভাগে তা সর্বোচ্চ। এক বছর বেস্ট প্লে ব্যাক বিভাগে তারই শুধু চারটে গান নমিনেটেড হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যে একটি গানের জন্য তিনি পুরস্কার পান। এটি একটি ব্যতিক্রমি ঘটনা।
ক্লু তিন - ইনি অভিনেতাও ছিলেন, পরিচালকও।

এবার আসি আজকের আলোচনা থেকে কিছু ক্যুইজে

৪. ডিভাইস আর মেশিন, এই দুটি শব্দই তোমরা শুনেছ। এই দুটির মধ্যে কি কোনো পার্থক্য আছে?

৫. ক্লু (clue) এই শব্দটি আজকে আমরা যে অর্থে ব্যবহার করি সেই অর্থটি ইংরাজি ভাষায় এই শব্দের সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে গেল?

৬. দরবার শব্দটি কোন ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে?

৭. উদ্দেশ্য আর উদ্দেশ এই দুটি শব্দের পার্থক্য কী?

৮. ফ্লিম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড কোন সাল থেকে শুরু হয়েছিল? 

৯. সেই বছর কোন চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছিল?

১০. এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কী সম্পর্ক ছিল?

পরের বার এই উত্তরগুলো নিয়ে আবার কিছু গল্প হবে। জানার আঁকশি দিয়ে আরো জানাকে আমরা টেনে আনব আমাদের আড্ডায়। আর হ্যাঁ পাঠ প্রতিক্রিয়াতে জানাতে ভুলবেনা তোমাদের কেমন লাগছে।

করোনা
বিশ্বক মল্লিক
অষ্টম শ্রেণী, দিল্লী পাবলিক স্কুল, কলকাতা

ও করোনা ও করোনা,
তোমাকে আমরা ভয় পাই না ।
করবো জয় তোমাকে আমরা,
দাড়িয়ে দেখবে সেদিন তোমরা। 
যতই তুমি হও অহংকারী,
যেন তুমি আমরা ও খুব ভয়ঙ্করী ।
সাবান দিয়ে বারবার  হাত ধোবো,
গরম ধোঁয়া নাকে মুখে নেব।
বেরব না ঘরের বাইরে আমরা,
কাবু হবে জানি এতেই তোমরা। 
এবার তো তুমি হার মানো ,
জিতব আমরা এটাই জেনো।


স্বপ্ন
শ্রিয়াংকা মিশ্র
ষষ্ঠ শ্রেণী, ভগবতী দেবী শিক্ষা নিকেতন

মিষ্টি তারা মুচকি হাসে,
জোনাকিরা উড়ছে গাছে,
চাঁদমামা রাঙিয়ে আলো,
বলছে তোমায় চোখটা মেলো,
বোনের পাখি উড়ছে বনে,
স্বপ্নের পরি স্বপনের খোঁজে।

পাঠ প্রতিক্রিয়া ১
(নদীয়া পাটিকাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সুখময় বিশ্বাস জ্বলদর্চির ৩৬ তম ছোটোবেলা সংখ্যা পড়ে যা লিখল)


এই লকডাউনে সম্পূর্ণ সময়টা ঘরে বসেই। পড়ার ব‌ইয়ের পাশাপাশি বাইরের জগতে কী হচ্ছে তা তো জানতে ইচ্ছে করেই, আর সেই জানার সঙ্গী হল মোবাইল। 
   জ্বলদর্চির নতুন সংখ্যা পড়তে গিয়েই সবার প্রথমেই চোখ আটকাল কল্যান সাহার তোলা চড়ুই টাতে। যদিও আমি গ্রামে থাকি তবুও এই চড়ুই পাখি চোখে পড়েই না প্রায়। বছর দশ আগেও কত চড়ুই দেখেছি, আজ ওরা হারিয়ে যাচ্ছে। কোথাও একবার শুনেছিলাম ওদের ডিমের খোলক টা অনেক পাতলা হয়ে গেছে তাই অল্প তাপেই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ডিম গুলো ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। ভবিষ্যতে ওদের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন। 
    প্রতিটা ব‌ই, পত্রিকার প্রথমেই সম্পাদকীয় লেখাটা থাকে সেখানেই ব‌ই অথবা পত্রিকার অভ্যন্তরীণ বিষয়বস্তুর আভাস পাওয়া যায় এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে মৌসুমী ম্যাম এই অংশটুকুতেই প্রতিবার মনে করিয়ে দেয় ছোটোবেলা, তাই ছুটে চলে গেলেও আবার ফিরে আসি এই পত্রিকার কাছে। 
    আমাদের জীবনে নিয়ম শৃঙ্খলা বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা সুন্দর স্বাভাবিক জীবন তৈরি করতে নিয়ম অত্যন্ত আবশ্যক। আদর্শ মানুষ ছাড়া নিয়ম শৃঙ্খলা লক্ষ করা যায় 
পিঁপড়ে ও মৌমাছির মধ্যে বিশেষভাবে। গৌর বৈরাগীর লেখায় শেষের দুটো লাইন- "মৌচাকে মধু থাকে। অবসরে সেই মধু খায় মৌমাছি।' অর্থাৎ তারা সঞ্চয় ও তার ব্যবহার দুইই জানে।
   আমরা যখন নিজের হাতে কোনো কিছু তৈরি করি তখন তার সঙ্গে মিশে থাকে আন্তরিকতা ভালোবাসা। তখন সেই বস্তুটি আমাদের নিজস্ব একটা অংশ হয়ে ওঠে। আর সেই বস্তু কেউ নষ্ট করলে বা নিতে চাইলে ভীষণ কষ্ট, রাগ হয়, হয় অভিমান। এই বিষয় গুলি উঠে এসেছে তারাপ্রসাদ সাঁতরার লেখায়। এছাড়াও লক্ষ করা যায় মো-টুসি সম্পর্কে তার মৌলিক আবেগ। 
  "জল‌ই জীবন" ছোটো বেলায় ব‌ইয়ের পাতা তোলপাড় করেও খুঁজে পাইনি জল কী করে জীবন  হতে পারে! কিন্ত আজ ভালো করেই বুঝতে পারছি জল কেন জীবন। একটা প্রশ্ন বারবার আমাকে ভাবিয়েছে যে পৃথিবীতে তিন ভাগ জল তবু জলের সমস্যা কেন ? পরে বুঝলাম তিন ভাগ জলের মধ্যে প্রায় সবটাই নোনা জল। (তিন ভাগকে একশো শতাংশ ধরলে সাতানব্বই শতাংশ) আমরা অকারণে অনেক জল অপচয় করি। ছোটোদের বলা তোমরা কখন‌ও অকারণে জল নষ্ট করো না। আমরা বেশিরভাগ ভৌম জল শেষ করে ফেলেছি। পারলে জল সংরক্ষণ করো। 
   উড়লে সত্যিই কি আকাশ পাওয়া যায়? আমাদের ডানা। আমরা কি সত্যি উড়তে পারিনা? পারি তো, উড়োজাহাজে, হেলিকপ্টার রকেট সবেতেই তো পারি। প্রত্যক্ষ নয় পরোক্ষ। আমরা চাইলে সব‌ই সম্ভব কখন‌ও কল্পনায় কখন‌ও বাস্তবে। হয়তো পরোক্ষ ভাবে কিন্তু সম্ভব। গৌতম বাড়‌ই এর লেখা থেকে এসব কিছুটা বলতেই পারি। 
  আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে হলে আমাদের লাগাতে হবে গাছ। কিন্ত আমরা করছি উল্টো ধ্বংস করছি তাদের। কখন‌ও তাদের দিকে দেখিনা। জগদীশ চন্দ্র বসু বলে গেছেন গাছের‌ও প্রাণ আছে, আমরা বোধহয় ভুলেই গেছি সেকথা। তবে তাদের জীবনের শারীরিক সমস্যার প্রতি মানুষের দৃষ্টি পড়েছে এটাই সবচেয়ে বড়ো কথা। ধন্যবাদ তথাগত বন্দোপাধ্যায়কে এরকম কবিতা উপহারের জন্য।
  মেঘেরা কি কান্না করে? বোধহয় করে। না হলে কি আর এত জল ধরে। বৃষ্টি যেমন অঝোরে ঝরে, আশা করব রেনেসাঁও অজস্র লেখা লিখবে। 
   সুহেনার দুষ্টু -মিষ্টি গল্পে রুমি দুষ্টু হলেও কিন্তু চোর ধরেছে। তবে সুহেনার চেষ্টা খুব সুন্দর। 
  গল্পে গল্পে ক্যুইজ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছি যা কখনো আমার কাজে লাগবে। প্রক্রিয়াটা বেশ সুন্দর। 
  রতনতনু ঘাটীর উপন্যাস ফুলকুসুমপুর খুব কাছেই, ইচ্ছেদাদু ও অনিচ্ছঠাকুমার সংসারের কথা বলেছেন তিনি। তিনটি পোষ্য নিয়ে আছেন তারা (কুকুর, বেড়াল ও একটি টিয়া)। বেশ আনন্দদায়ক। 
    ইতিহাস বলে আমায় খুঁজে দেখ, আমি তোর সব রহস্য জানি। আমার বুকে লেখা আছে তোর সমস্ত তথ্য। কথাটা একদম সত্যি। সেই কবে ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে হয়েছিল পানিপথের যুদ্ধ। তার প্রত্যক্ষদর্শী কবে হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। হারিয়ে গেছে মোঘল সাম্রাজ্য। আর‌ও কত কি হারিয়ে গেছে এই পৃথিবী থেকে কিন্তু রয়ে গেছে তাদের ইতিহাস। আর সেই ইতিহাস তুলে এনে আমাদের সামনে ধরেছেন রাজীব কুমার ঘোষ স্যার তার গল্পের আকারে। পুরোনো, কিছু জানা কিছু অজানা তথ্য দিয়েছেন হাতে যা কাজে লাগবে আমার।
  সব মিলিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে জ্বলদর্চি। সকলকে ধন্যবাদ জ্বলদর্চিকে পূর্ণতা পেতে সাহায্য করার জন্য। আর‌ও একটি সাজানো গোছানো সংকলনের অপেক্ষা।...

পাঠ প্রতিক্রিয়া ২
(সুমনা বিশ্বাস জ্বলদর্চির ৩৬ তম সংখ্যা পড়ে যা লিখলেন) 

জ্বলদর্চি -- এখন অনেকের কাছেই একটি পরিচিত নাম। আমার মত অনেকেই এর নিত্য সহচর। যদিও এই পত্রিকা ছোটোদের দ্বারা, ছোটোদের জন্যই কিন্তু তবুও এর সুচারু প্রকাশ সবার মনেই একরাশ টাটকা বাতাস নিয়ে আসে ।
ছোটবেলা র ৩৬ তম বিশেষ সংখ্যা পড়ে আবার ও নতুন করে উদ্দীপিত হলাম। 

গৌর বাবুর লেখায় মৌমাছি আর মৌচাক ভবিষ্যতে র সঞ্চয় এর বার্তা দিলো। তারাপ্রসাদ সাঁতরার মৌটুসী একরাশ ভালো লাগা এনে দিলো।খুব ভালো লাগলো স্মৃতি সাহার আঁকা। সত্যি কবে যে আবার এই  সহজ দিনগুলো ফিরবে।

সুদূর রাশিয়া থেকে পাঠানো তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় এর গাছের ফোঁড়া শঙ্কা জাগলো মনে।পরে আশ্বাস ও পেলাম।প্রার্থনা করি ভালো থাকে যেন সব গাছ। রেনেসাঁ র লেখার মত মেঘেরা কাঁদুক। তবেই তো গাছেরা হাসবে। আর গাছেরা হাসলে ছোটদের সাথে সাথে আমরাও ভালো থাকবো।
অপেক্ষা করে থাকি ফুলকুসুমপুরের ইচ্ছে ঠাকুমার জন্য। তার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলেছে মথু আর রুমির দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি। সুহেনা এই সবে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়লে কি হবে তার লেখা ভারী দুষ্টু মিষ্টি।

রূপক বাবুর লেখা জলের কথা অনেক নতুন কিছু জানালো। সচেতন করলো আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। প্রজ্ঞা আর শ্রেয়সীর আঁকা মনে দাগ কাটলো। তবে সব থেকে ভালো লাগলো রাজীব স্যারের গল্পে গল্পে ক্যুইজ। এত সুন্দর করে এত তথ্য জানানো র জন্য তাঁকে অনেক ধন্যবাদ। সামনের সংখ্যায় আবার অপেক্ষা য় থাকবো।

সবশেষে মনে হলো গৌতম বাবুর কথাই ঠিক। সব ছাড়িয়ে জ্বলদর্চির সাথে ডানা মেলে দিই এক মুক্ত পৃথিবীর সন্ধানে।
এই পত্রিকার অন্যতম আকর্ষণ মাননীয়া মৌসুমী ঘোষের লেখা সম্পাদকীয়। এত সুন্দর করে সেখানে বর্তমান সমাজের সমস্যা গুলিকে তুলে ধরে তার সমাধানের কথা বলা হয়েছে যে তা আমাদের ও গাছ লাগাতে উৎসাহ দেয়। ইচ্ছে হয় দু'হাতে এই অসুস্থ পৃথিবীকে সারিয়ে তুলি।
এই পত্রিকার দীর্ঘ শ্রী বৃদ্ধি কামনা করি।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 


Post a Comment

1 Comments

  1. ঋত্বিক ত্রিপাঠী মহাশয়ের 'জ্বলদর্চি' বহুচর্চিত একটি পত্রিকা। তাঁদের উদ্যোগে মৌসুমী ঘোষ সম্পাদিত 'ছোটবেলা' ওয়েবজিনটি প্রতি সপ্তাহে নিবিষ্ট যত্নে প্রকাশ পাচ্ছে দেখে খুশি হই খুব। কচিকাঁচাদের আত্মপ্রকাশে আজ আপনারা যে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন আমরা একদিন তার সুফল পাবোই। অনন্ত শুভেচ্ছা রইল সকলের প্রতি।

    ReplyDelete