জ্বলদর্চি

রিকিসুমের পিশাচ(পর্ব-৩)/আবীর গুপ্ত

রিকিসুমের পিশাচ
পর্ব-৩
আবীর গুপ্ত

(পাঁচ)
গুহার ভিতরে ঢুকে রাজেশ অবাক হয়ে গেল - এতোটুকু ছোট্ট গুহা! মাত্র দশ ফুট বাই দশ ফুট হবে। মেয়ে তিনটিও রাজেশের সঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়েছে। যে মেয়েটি রাজেশের সঙ্গে কথা বলছিল সেই মেয়েটি মুখ দিয়ে অদ্ভূত একটা শব্দ করলো আর তারপর রাজেশের হাত এক হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো। কি শক্ত মুঠি! রাজেশের মনে হচ্ছিল যেখানে ধরেছে সেইখানকার হাড়-গোড় সব ভেঙে যাবে। তারপরই ধরার কারণটা বুঝতে পারলো, মেঝে অতি দ্রুত নিচের দিকে নামছে। না ধরলে রাজেশ পড়ে যেত। নামছে তো নামছেই, থামার লক্ষণ নেই। এত নিচে নামছে, ক্রমশ গরম বাড়ার কথা, হচ্ছে উল্টো! বেশ ঠান্ডাই লাগছে। অবশেষে, এক জায়গায় এসে থেমে গিয়ে পাশের দিকে চলতে শুরু করলো। এবারে অবশ্য আস্তে। একটা বিশাল হল ঘরের মতো জায়গায় এসে থেমে গেল। হলঘর? নাকি কোন গুহা! মেয়ে তিনটির সঙ্গে রাজেশ এগোতেই আবার সেই মেটালিক ভয়েস –
  ওয়েলকাম টু আওয়ার হোম। আপনাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। পথে যদি কোনো রকম অসুবিধা হয়ে থাকে তার জন্য দুঃখিত। বসুন। আপনার খিদে পেয়েছে, কিছু খাবার খেয়ে নিন, তারপর কথা বলা যাবে।
   রাজেশের সামনেই হঠাৎ ধারের দেওয়াল থেকে একটা অংশ সরে গিয়ে একটা চেয়ার আর একটা টেবিল ওর সামনে এসে হাজির হল। টেবিলের ওপর একটা অদ্ভুত আকৃতির প্লেট জাতীয় কিছু যার উপর বেশ কিছু ফল আর খাবার রাখা, যে খাবারগুলো ও জীবনে দেখে নি। পাশে, রাজেশের দেখে মনে হল জলের বোতল। ও সেটাই আগে তুললো। কোন ঢাকনা নেই,  ভিতরে মনে হল জলই আছে, ভয়ে ভয়ে একটা চুমুক লাগালো। মিনারেল ওয়াটারের স্বাদ। সেই মেটালিক ভয়েস –
   ভয় নেই, ওটা পিওর মিনারেল ওয়াটার। ফল তো আপনার চেনা, যেগুলো অচেনা সেগুলো হল জাঙ্গল ফাউলের মাংসের রোস্ট। লম্বা লম্বা করে কাটা বলে চিনতে পারছেন না। নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
রাজেশ একটু অবাক হল - ও কী ভাবছে তা ওরা বুঝতে পারল কীভাবে! উত্তরটা সঙ্গে সঙ্গে পেল –
আমরা থট রিডিং জানি। অন্যের ভাবনা বুঝতে পারি। 
   রাজেশের সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্নটা এল - এঁরা কাঁরা? একটা হাসির শব্দ, তারপর মেটালিক ভয়েস উত্তর দিল –
   আমরা কারা সে সমস্ত পরে আলোচনা হবে। আগে খেয়ে নিন।
     রাজেশের খাওয়া শেষ হল। রাজেশ যখন ফল খাচ্ছে দেখলো মেয়ে তিনটি ঘরে এসে ঢুকলো। এরা কোথায় গিয়েছিল কে জানে! মেয়ে তিনটির পড়ণের  পোশাক একই আছে তবে লাল রঙের আর প্রত্যেকের চোখে একটা করে সানগ্লাস জাতীয় কিছু যার কাঁচের রং সম্পূর্ণ সবুজ। মেটালিক ভয়েস  বলল –
আপনার কাঁধের ব্যাগটা একটু খুলে দেবেন। ওরা একটু চেক করে দেখবে। আপত্তিজনক কিছু থাকলে সেটা ওরা বার করে নেবে। এখানে সবকিছু নিয়ে সর্বত্র যাওয়া যায় না। 

(ছয়)
ব্যাগের ভিতর কোন জিনিস কিন্তু বার করার দরকার পড়ল না, মেয়ে তিনটির চোখের চশমা বোধ হয় ওদের সাহায্য করছিল ব্যাগের ভিতর কী কী আছে তা দেখার জন্য। ভালো করে দেখার পর ওকে তিনটি জিনিস বার করতে বলা হল। প্রথমটি হলো অ্যালকোহল বেসড্ স্যানিটাইজার, দ্বিতীয়টি এন নাইনটি নাইন মাস্ক আর তৃতীয়টি সিগারেট লাইটার। সারা পৃথিবীতে কোভিড ভাইরাসের থেকে বাঁচার জন্য মানুষ স্যানিটাইজার আর মাস্ক ব্যবহার করছে। রাজেশও ব্যতিক্রম নয়। রাজেশকে বলা হল ওই তিনটিকে ঘরের এক কোণে রাখতে। রাজেশ ঘরের কোণে রাখার সময় জিজ্ঞাসা করল –
   গুহার বাইরে এই তিনটির মধ্যে মাস্ক আর স্যানিটাইজার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কারণ কোভিড-নাইনটিন ভাইরাস ইনফেকশন আটকাতে গেলে এদুটো সবসময় দরকার। আর লাইটার আমার দরকার হয় আগুন জ্বালানোর জন্য। মাঝে মধ্যে স্মোক করি ঠিকই, তবে বেশি দরকার রাতে ক্যাম্প করে কোথাও রাত কাটালে আগুন জ্বালানোর জন্য। 
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এল –
   ওই দুটো থেকে যেকোনও সময় এক্সপ্লোশন হতে পারে, তাই এখানে ওদুটোর ব্যবহার নিষিদ্ধ। মাস্কের বাইরের আবরণে কোনরকম ভাইরাস থাকলে তা আমাদের এখানে স্প্রেড করতে পারে। এ কারণে, এটা এক ধরণের সাবধানতা। 
  রাজেশ কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো, মন থেকে সব রকমের ভাবনা-চিন্তাও দূরে সরিয়ে রাখলো কারণ ও যা ভাববে তা ওরা বুঝে যাবে, থট রিডিং ব্যবহার করে। সেটা ও চায় না। মেয়ে তিনটি ওকে ইশারায় ওদের সঙ্গে যেতে বললো। রাজেশ ব্যাগটা পিঠে নিয়ে নিল। মেয়ে তিনটি দেওয়ালের সামনে দাঁড়াতেই দেওয়াল খুলে গেল, একটা সোজা টানেল চলে গেছে। দেওয়াল সোনালী রঙের, আলো ঠিকরে পড়ছে। আলোর উৎস কী, বুঝতে পারলো না। টানেল দিয়ে বেশিক্ষণ যেতে হল না, সামনেই একটা ঘরের মতন। ওরা ওই ঘরে ঢুকতেই ঘরটা চলতে শুরু করলো। রাজেশের যেটা অদ্ভুত লাগছিল সেটা হল এত নিচে, ওর হিসাব মত অন্তত ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই থেকে তিন কিলোমিটার নিচে, গরম হওয়ার কথা, অথচ বেশ ঠান্ডা লাগছে! অর্থাৎ, পুরোটা সেন্ট্রালি এয়ার কন্ডিশনড্। জোর করে মন থেকে চিন্তা দূর করলো কারণ ও কী ভাবছে সেটা ওদেরকে বুঝতে দিতে চায় না। 

  অবশেষে, ঘরটা এক জায়গায় স্থির হল। মেয়েগুলো রাজেশকে একটা ঘরে ঢুকতে বলে কোথায় চলে গেল। রাজেশ ঘরে ঢোকা মাত্র সেই মেটালিক ভয়েস রাজেশকে বসতে বললো। একটাই চেয়ার রাখা। চেয়ারটা অদ্ভুত ডিম্বাকৃতি দেখতে। রাজেশ চেয়ারে বসে খেয়াল করলো সামনে একটা অদ্ভুত দেখতে যন্ত্রের মতন, দেখে মনে হচ্ছে অনেকটা মানুষের মতো দেখতে একটা অক্টোপাস, পুরো সোনালী রঙের। অজস্র শুড়, যেগুলো নড়ছে। একটা শুড়, বাঁদিকের দেওয়ালের উপর থাকা অজস্র ছোট্ট বোতামের মতো উঁচু উঁচু অংশের কাছে গিয়ে একটা বোতাম টিপে দিল। রাজেশের  চারপাশে স্বচ্ছ কাঁচের মতো সিলিন্ড্রিক্যাল একটা আবরণ নেমে এল। রাজেশ এখন ওই আবরণের ভিতরে সম্পূর্ণ বন্দী। এইবারে রাজেশ ভয় পেল।

আরও পড়ুন 




Post a Comment

0 Comments