জ্বলদর্চি

রিকিসুমের পিশাচ(পর্ব-৬)/আবীর গুপ্ত

রিকিসুমের পিশাচ
পর্ব-৬
আবীর গুপ্ত

(এগরো)
রাজেশের সামনে প্রায় কুড়ি ফুটের মতো ফাঁকা জায়গা আর তারপরই পাথরের দেওয়াল। হঠাৎ, সেই দেওয়াল সরে গিয়ে যে প্রাণীটি গুহার হল ঘরের মতো অংশে ঢুকলো তাকে দেখে রাজেশের প্রথমেই মনে হলো - বিশাল বড়ো একটা অক্টোপাশের মাথার জায়গায় মানুষের মতো দেখতে একটা মাথা বসানো। প্রাণীটি কিন্তু সামনে এল না, দূরেই দাঁড়িয়ে রইল। বললো –
এবারে আলোচনা শুরু করা যাক। আপনার দেহে যে করোনা ভাইরাস রয়েছে তার নাম আপনি কোভিড-২১ বলতে পারেন। আরো অনেক উন্নত আর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা সম্পন্ন। শুধুমাত্র ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়িয়ে এটাকে ঠেকানো যাবে না। আপনারা যে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাচ্ছেন, সেটাও এর ক্ষেত্রে অচল। এক বিশেষ ধরনের রে বা রশ্মি এর একমাত্র প্রতিষেধক ওষুধ। 

  করোনা ভাইরাস কি পৃথিবীর মানুষের উপর আপনারাই প্রয়োগ করেছেন? 

  ঠিক আমরা নই, তবে হ্যাঁ, আমরা আপনাদের ভাষায় পিছন থেকে কলকাঠি নেড়েছি। আসলে আমাদের নজরে আসে চীন দেশ আরো বেশ কয়েকটি দেশের মত লুকিয়ে নানারকম অস্ত্রশস্ত্র বানাচ্ছে। বায়োকেমিক্যাল ওয়েপন যে সমস্ত দেশ বানাবার চেষ্টা করছিল তা দেখে আমাদের হাসি হেসেছিল। এত শিশুসুলভ! চীন দেশের ইকোনমি আমাদের আকৃষ্ট করে। সমস্ত পৃথিবীর বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর কারখানা ওই দেশে। তাই ওই দেশটিকেই বেছে নেওয়া হয়। এই মেয়ে তিনটির সঙ্গে তিন জন পুরুষও বানানো হয়েছিল। চৈনিকদের মত দেখতে। ওদেরকে পাঠানো হল বৈজ্ঞানিক সাজিয়ে ওদের ল্যাবে। এই তিনজন করোনা ভাইরাসকে ওই দেশে ছড়িয়ে দিল। ব্যাস, বাকিটা আপনার জানা। এই মুহূর্তে, শুধু চীন নয়, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপান, রাশিয়া সহ পৃথিবীর সমস্ত দেশের ইকোনমি প্রায় ধ্বংসের মুখে। আর মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা? আমার থেকে আপনারা ভালো জানেন। পৃথিবীর যখন শেষ অবস্থা হবে তখন আমরা হাল ধরবো, আমরাই পৃথিবী শাসন করব। মঙ্গল গ্রহ নয়, পৃথিবী হবে আমাদের বাসভূমি। আর আপনার মতো যারা আমাকে সাহায্য করবেন, তারাই তো আমাদের মুখ হবেন, তাদের মাধ্যমেই তো শাসন করা হবে পৃথিবী। তাই, আপনাকে আমরা কতটা আদরে রাখবো সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। 
হ্যাঁ, যদি বেঁচে থাকি। কারণ, চীনের বেইজিংয়ে পৌঁছে, যান থেকে বেরিয়ে মাটিতে পা রাখার পর আমার মৃত্যু অবধারিত। তাই না?

  না। সেটার একটা ব্যবস্থা আমি করবো। আপনাকে অ্যান্টিডোট দিয়ে দেবো যা ওখানে নামার পর আপনি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন। আপনাকে আমার দরকার হবে ভবিষ্যতে। আপনি কি রাজি আছেন?
আগে অ্যান্টিডোট দেখবো তার পরে জানাবো। আমার তো এমনিতেই মৃত্যু হবে, যা দৈহিক অবস্থা, পরিষ্কার বুঝতে পারছি। তাই, কোন কিছুতেই এখন ভয় পাচ্ছি না। 

না-না, সেটা এখন সম্ভব নয়। মেয়ে তিনটির মৃত্যুর পর - নতুন করে বানানো প্রায় অসম্ভব। ঠিক আছে, আগে অ্যান্টিডোট দেখাবো। চলুন।
(বারো)
ওই অদ্ভূত প্রাণীটা রাজেশকে যে ঘরে নিয়ে গেল সেটার অস্তিত্ব আগে ছিলই না। কারণ ওদেরকে লিফ্টে নিচে নামতে হলো না! ওর মনের ভাব বুঝতে পেরে প্রাণীটি বললো –
ঠিকই ধরেছেন। নিচ থেকে সবকিছু উপরে নিয়ে আসা হয়েছে। 
এটা কি আপনাদের স্পেসশিপ? 
যে প্রশ্নটা মনে এল ও তা করেই ফেললো। না করলেও মনের ভাব বুঝে যাবে, তার জায়গায় করে ফেলাই ভালো। উত্তর এল –
হ্যাঁ। আমরা ঠিক করেছি এখান থেকে স্পেসশিপ নিয়ে চলে যাব।
 কোথায়?

চায়নায়। আপাতত, এই প্রসঙ্গ থাকুক। কোনায় যে মেশিনটা রাখা আছে ওটাই অ্যান্টিডোট। ওটা চালু হলে ওর থেকে যে বিকিরণ হবে তা আপনার দেহের ভাইরাস মেরে ফেলবে। 

তাহলে তো আপনাদেরও অসুবিধা হওয়ার কথা? 
না, এই ক্ষেত্রে আমাদের অসুবিধা হয় না কারণ এটা তো আমাদেরই সৃষ্টি। 

তাহলে আমার দেহের ভাইরাস মারবে কী করে! সেটাও তো আপনাদেরই সৃষ্টি। 

আসলে আমাদের সৃষ্ট ভাইরাস ঠিকই কিন্তু আপনার দেহে ঢোকার পর তার চরিত্র বদলে যাচ্ছে। আপনার দেহের ভিতরে থাকা উপকারী ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে চরিত্র বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। তাই, আপনার ক্ষেত্রে এটা একমাত্র মেডিসিন। অনেক আলোচনা হয়েছে, এবারে কাজের কথা। আপনি এখান থেকে সোজা কলকাতায় যাবেন। আমরা আপনাকে একটা মুখবন্ধ পাত্র দেব। কলকাতার হাওড়া স্টেশনে ওই পাত্রটি রেখে ঢাকনা খুলে চলে আসবেন এখানে। এই অ্যান্টিডোট-এর রে-তে জীবাণুমুক্ত হয়ে চলে যাবেন নিজের শহরে। ব্যাস, এই হল কাজ। আশা করি কাজটা করবেন। 
রাজেশ কোন কথা না বলে হাত বাড়িয়ে দিল। অক্টোপাশের একটা হাত দেওয়ালের উপর থাকা অজস্র বোতামের একটা টিপতেই দেওয়াল ভেদ করে একটা স্বচ্ছ সোনালী রঙের পাত্র বেরিয়ে এল। অন্য একটা হাত ওই পাত্রটা তুলে রাজেশকে দিল। রাজেশের মনে ভাব বুঝে প্রাণীটি বললো –

ঠিকই ধরেছেন, ওই সোনালী দন্ডটা ছোঁয়ালেই পাত্রটার ঢাকনা খুলে যাবে। ও-কে, বেস্ট অফ লাক। 
রাজেশ কাঁধের ব্যাগটা মেঝেতে নামালো, ব্যাগের চেইন খুলে পাত্রটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ভিতর থেকে যেটা বার করে আনল সেটা ওর ব্যবহার করতে থাকা অর্ধেক খালি হওয়া দ্বিতীয় স্যানিটাইজার এর বোতল। আগেরটি ছিল নতুন সদ্য কেনা বোতল, যেটা ছোট্ট যানটায় রেখে এসেছে প্রাণীটির নির্দেশে। বোতলের পুরো স্যানিটাইজার প্রাণীটির উপর স্প্রে করে শেষ করে দিল। এর যন্ত্রনায় কষ্ট পাওয়া মেয়ে তিনটির তুলনায় আরও অনেক বেশি - শুঁড়গুলো বারবার ওকে ধরতে গিয়েও যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে - একটু দূরে গিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলো সবটা। তারপর, অ্যান্টিডোট মেশিনটার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে সোনালী রডটা টাচ করে চালু করলো মেশিনটাকে। আশা করা যায়, প্রাণীটি এই ক্ষেত্রে সত্যি কথা বলেছে। প্রায় মিনিট দশেক মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। 

  তারপর, ব্যাগ খুলে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন- ১00 মিলিগ্রাম ক্যাপসুল একটা, ভার্মেকটিন- ১২ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট একটা, জিঙ্কোনিয়া ট্যাবলেট একটা আর ভিটামিন ডি ক্যাপসুল একটা খেয়ে নিল। ধীরে-সুস্থে গুহার বাইরে এসে রড ছুঁয়ে সোনালী বোতলের ঢাকনা খুলে জিপে থাকা স্যানিটাইজারের বোতলের পুরো স্যানিটাইজার সোনালী বোতলের ভিতর ঢেলে দিল। যানে উঠে যান চালিয়ে চলে এল নিচে, যেখানে প্রথম ভালুক আর লেপার্ডের দেখা পেয়েছিল। যান ছেড়ে হাঁটা লাগালো নিচে গ্রামের দিকে। না, কোন  দৈহিক সমস্যা নেই। যদি বিন্দুমাত্র দৈহিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ঠিক করেই ফেলেছে এই জঙ্গল থেকে বাইরে বেরোবে না।
রিকসুম গ্রামে একটা মাত্র কোভিড টেস্টিং সেন্টার। রিকসুমে পৌঁছে, সেন্টারে গিয়ে টেস্ট করিয়ে, আটচল্লিশ ঘন্টা বাদে যখন নেগেটিভ রিপোর্ট পেল তখন প্রথম ওর মুখে হাসি ফুটলো। এই যাত্রায় ও তাহলে মঙ্গল গ্রহীদের হারিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু, এই গল্প কাউকে বলা যাবে না, কারণ কেউ ওর কথা বিশ্বাস করবে না।( সমাপ্ত)

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 


Post a Comment

0 Comments