জ্বলদর্চি

রথযাত্রা লোকারণ্য মহাধুমধাম/মুক্তি দাশ

রথযাত্রা লোকারণ্য মহাধুমধাম
মুক্তি দাশ


চিরন্তন গতির প্রতীক রথ। আবহমানকাল ধরে যে অবিরাম গতিশক্তির দ্বারা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ড আবর্তিত, যে গতির তাড়নায় নদী ছুটে চলেছে সাগরের পানে, অনুপল ছুটে চলেছে পলের দিকে, পল সেকেন্ডের দিকে, সেকেন্ড ঘন্টার দিকে, ঘন্টা দিনের অভিমুখে, আবার দিন মাসের দিকে, মাস বছরের দিকে… -এ হলো সেই গতি। এই গতিপথ ধরেই ঘটেছে মানব-সমাজের ক্রমবিবর্তন, সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমবিকাশ।

  ভারতীয় সংস্কৃতির মূল মন্ত্রই হলো - চরৈবেতি। অর্থাৎ এগিয়ে চল। দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে চল। গতি জীবনের লক্ষণ। গতিই জীবন। জীবনই গতি। আর এই গতিরূপ চালিকাশক্তির প্রথম প্রতীকী অবয়ব হলো, রথ। কিংবা সহজভাবে বলা যেতে পারে, রথই মানবসমাজের অগ্রগতির প্রথম সোপান।

  রথোৎসবের পেছনে যেমন একটি গূঢ় ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবনার অন্তর্নিহিত শক্তি কার্যকরী, তেমনি এর সুগভীর দার্শনিক তত্ত্ব এবং তাৎপর্যটিও পরিলক্ষণীয়। কঠোপনিষদের প্রথম অধ্যায়ে তৃতীয় বল্লরীর তৃতীয় মন্ত্রে বলা হয়েছে –

আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেব তু।
বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি মনঃ প্রগ্রহমেব চ।।
ইন্দ্রিয়ানি হয়ানাহুর্বিষয়াংস্তেষু গোচরান্।

  অর্থাৎ, আমাদের এই শরীররূপ রথের রথী হলেন আত্মা। বুদ্ধি তার সারথি। আর সেই রথ জীবনের ভোগ্যবিষয়রূপ গমানপথের ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে চলেছে ইন্দ্রিয়রূপ অশ্বসমূহ–যারা আবার মনরূপ বল্গা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

  রথের দার্শনিক ব্যাখ্যায় মানব-দেহানুপুঙ্খের এমন প্রতীকী বিন্যাস ভারতীয় কৃষ্টি তথা সভ্যতা ও সংস্কৃতির তাত্ত্বিক গরিমাকে যে কতখানি সমুজ্জ্বল করেছে, উপরি-উদ্ধৃত শ্লোকটি তার একটি সামান্য নমুনা মাত্র।

  বর্তমানে আমাদের দেশে ‘রথ’ বা ‘রথোৎসব’ শব্দগুলির সংগে কালক্রমে শ্রীজগন্নাথদেবের একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক অনিবার্যভাবে গড়ে উঠলেও এমন মনে করার কোনো কারণ নেই যে, কেবলমাত্র শ্রীজগন্নাথদেবের পরিভ্রমণ-জনিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রেই ‘রথ’ নামক যানটি শ্বাশ্বতকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রথের প্রচলন কবে কোনসময় প্রথম সূচিত হয়েছিল তার সঠিক কালনির্ণয় অবশ্য আজও গবেষকদের অনুসন্ধিৎসু প্রয়াসসীমার বাইরে থেকে গেছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম শাস্ত্র যে বেদ, তাতেও রথের উল্লেখ রয়েছে। কঠোপনিষদে তো আছেই, সেকথা আগেই বলা হয়েছে। প্রাচীন পুরাণগ্রন্থগুলির মধ্যেও রথের হদিশ পাওয়া যাবে। ভবিষ্যপুরাণে স্পষ্ট করে বলা আছে, সূর্যদেব সম্বৎসরকাল ধরে আকাশপথ পরিভ্রমণের জন্যে যে যানযন্ত্রটি ব্যবহার করেছেন, তা-ই বিশ্বের প্রথম রথ –

পূর্বমেব সহস্রাংশোর্যানহেতোর্মহাত্মনঃ
সম্বৎসরাবয়বৌ চ কল্পিতস্য রথো ময়া
সর্বেষান্তু রথানাং বৈ স রথঃ প্রথমস্মৃতঃ।

  কোনারকের বিখ্যাত সূর্যমন্দির তো পুরোদস্তুর রথের আদলে গঠিত একটি কালজয়ী স্থাপত্যকর্ম। এর সাতটি ঘোড়া সূর্যের সপ্তাশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়। দু’পাশে বারোটি করে মোট চব্বিশটি চাকা। বারোমাসে চব্বিশটি পক্ষ নিয়ে যে একটি বৎসর পূর্ণ হয়, এ তারই প্রতীক। প্রতিটি চাকায় আবার আটটি করে শলাকা। এগুলি অষ্টপ্রহরকে সূচিত করে।

  এ তো গেল সূর্যদেবের রথ। ভবিষ্যপুরাণে মহাবিষ্ণুর  রথের বর্ণনাও আছে। বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদ নাকি সেই রথের রশি প্রথম টেনেছিলেন। এবং তা বুদ্ধদেবের জন্মের হাজার হাজার বছর পূর্বে। আসলে সূর্যদেবই পরবর্তীকালে বিষ্ণুরূপে পূজিত হতে থাকেন। সুশীল মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘রহস্যঘেরা পুরীর জগন্নাথ’ গ্রন্থের ৫২ পৃষ্ঠায় পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন – 

  “সূর্য যে দ্বাদশ মুর্তিতে জগৎ ব্যাপ্ত করে থাকেন, বিষ্ণু হলেন তার নবম মূর্তি। এই মূর্তিরূপে তিনি অসুর নিধন করার জন্য প্রাদুর্ভূত হন। স্থানচ্যুত হবার ফলেই বোধহয় কোণার্ক মন্দিরের পর আর কোনো সূর্যমন্দির ভারতবর্ষে স্থাপিত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে না। সূর্য হয়ে গেছেন সূর্য-নারায়ণ।”

  কেবল ভবিষ্যপুরাণ কেন, স্কন্দপুরাণ, কূর্মপুরাণ, পদ্মপুরাণ, বরাহপুরাণ, মৎসপুরাণ প্রভৃতি প্রাচীন পুঁথিগুলিতেও রথের বিস্তৃত উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন, পদ্ম ও বরাহপুরাণে কার্তিকমাসে শ্রীকৃষ্ণের রথযাত্রার কথা বর্ণিত হয়েছে। আবার মৎসপুরাণে বর্ণিত হয়েছে চৈত্রমাসে কৈলাসপতি শিবের রথযাত্রার প্রসংগ। এছাড়া মহাবীর ও পার্শ্বনাথের সাড়ম্বর রথযাত্রার বিবরণ পাওয়া যাবে জৈনপুরাণে।

  প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও রথযাত্রার প্রচলন ছিল, এ-কথার সমর্থন পাওয়া যাবে স্বয়ম্ভুপুরাণে। চৈত্রমাসে মহাসমারোহে তথাগত বুদ্ধের রথযাত্রা উৎসবের রীতি বহুকাল যাবৎ চালু ছিল। চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েনের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, পঞ্চমশতাব্দীতে বুদ্ধদেবের জন্মতিথি উপলক্ষে রথোৎসব পালনের রেওয়াজ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে বুদ্ধের এই রথযাত্রা উৎসবই জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে কিনা, এ-বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিস্তর মতদ্বৈধতা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধধর্মের আধিপত্য ক্রমশ হ্রাস পাওয়ার ফলে হিন্দুধর্ম মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এবং ধীরে ধীরে বুদ্ধের জায়গা দখল করে নেয় হিন্দু দেবদেবীরা। তাঁরা এ-ও দাবী করেন যে, পুরীর জগন্নাথমন্দির পূর্বে বৌদ্ধমন্দিরই ছিল এবং জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম আসলে বৌদ্ধধর্মের প্রধান তিন উপাস্য-বুদ্ধ, ধর্ম ও সঙ্ঘ ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁদের এমন দাবী কতখানি যুক্তিগ্রাহ্য তা এখনও গবেষণার বিষয়। তবে এ-ও সত্যি যে, যথেষ্ট প্রমাণ ও তথ্যের অভাবে তাঁদের এহেন দাবী বা সিদ্ধান্ত তেমন স্বীকৃতিলাভ করতে পারেনি। বরং ‘Oldfield’s Sketches from Nepal’ গ্রন্থে সম্পূর্ণ অন্য কথা বলা হয়েছে –

“The Buddhist festival is evidently opted from the Hindu festival of Jagannath in  honour of Jagannath and his brother Balaram and the Kumari representing their sister Subhadra.” 
   এখন তো রথযাত্রা বলতে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের রথোৎসবকেই বোঝায়। ভারতবর্ষের বহু জায়গাতেই এই ঐতিহ্যময় উৎসব পালিত হলেও এর কেন্দ্রীয় উৎসবস্থল উড়িষ্যার পুরী। আষাঢ়মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব শাস্ত্রনির্দিষ্ট –

আষাঢ়স্য দ্বিতীয়ায়াং রথং কুর্যাদ বিশেষতঃ।
আষাঢ় শুক্লৈকাদশ্যাং জপ-হোম-মহোৎসবম্।।

  তবে উইলিয়াম ব্রুটন তাঁর ‘Bruton’s Visit to Lord Jagannatha’ পুস্তকে পুরীতে অনুষ্ঠিত ১৬৩৩ খ্রীষ্টাব্দে জগন্নাথদেবের যে রথযাত্রা উৎসবের বিবরণ দিয়েছেন, তা রীতিমতো চমকপ্রদ। তিনি সেইসময় জগন্নাথদেবের যে মূর্তি দেখেছিলেন তার সংগে তথাকথিত জগন্নাথমূর্তির কোনো মিল নেই। তিনি রথে উপবিষ্ট এক বিশালকায় সর্পমূর্তি দেখেছিলেন-যার সাতটি মাথা। জগন্নাথদেবের এরকম আকৃতি কল্পনাতেও আনা সম্ভব? আর এহেন জগন্নাথদেবের রথটি ছিল নাকি উচ্চতায় প্রায় তিরিশফুট এবং ষোলোটি চাকাবিশিষ্ট। ব্রুটন সাহেব কি দেখতে কী দেখেছিলেন, তিনিই জানেন। তবে তিনি, আর যা-ই হোক, জগন্নাথদেবের মূর্তি যে দেখেননি, একথা সুনিশ্চিত। কারণ প্রথমত, জগন্নাথদেবের এরকম মূর্তির কথা আদৌ পুরাণ-সমর্থিত নয়। এবং দ্বিতীয়ত, তিনি নাকি এই অদ্ভুত-দর্শন জগন্নাথের রথযাত্রা দেখেছিলেন নভেম্বর মাসে। অথচ জগন্নাথদেবের রথযাত্রা হওয়ার কথা জুন-জুলাই মাসে। একথা সর্বজনবিদিত। তা্হলে? ব্রুটন সাহেবের বক্তব্যকে যুক্তিগ্রাহ্য বলে মেনে নেওয়া যায়?

  যাইহোক, জগন্নাথদেবের রথোৎসব এখন ভারতীয় জীবনাদর্শের সংগে একীভূত হয়ে গেছে। একে ভারতীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অন্যতম ধারকও বলা যেতে পারে। প্রেমের ঠাকুর শ্রীচৈতন্যদেবও নাকি একসময় পুরীতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন এবং নৃত্যগীতাদির দ্বারা মাতোয়ারা করে দিয়েছিলেন ধর্মোন্মাদ তাবৎ ভক্তকুলকে। যা দেখে নাকি বিস্ময়াবিষ্ট হয়েছিলেন স্বয়ং জগন্নাথও। এ বিষয়ে কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর ‘শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে মধ্যলীলার ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদে কী বলেছেন একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক –

স জীয়াৎ কৃষ্ণচৈতন্যঃ শ্রীরথাগ্রে নর্তন যঃ।
যেনাসীর্জগতাং চিত্রং জগন্নাথোহপি বিস্মিতঃ।।

    ঊনবিংশ শতাব্দীর পরম যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকেও বিমোহিত করেছিল জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব। তবে পুরীতে নয়। কলকাতার বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতে। এখানে জগন্নাথ বিগ্রহের জাঁকজমকপূর্ণ রথযাত্রা দেখে ঠাকুর রামকৃষ্ণ যে ভক্তিরসে আপ্লুত হয়েছিলেন তার জীবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা পাই ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত’-তে –

“অপরাহ্ণ হইয়াছে। ইতিমধ্যে বারান্দায় শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের সেই ছোট রথখানি ধ্বজা পতাকা দিয়া সুসজ্জিত করিয়া আনা হইয়াছে। শ্রীশ্রীজগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম চন্দনচর্চিত ও বসনভূষণ ও পুষ্পমালা দ্বারা সুশোভিত হইয়াছেন। ঠাকুর বারান্দায় রথাগ্রে গমন করিলেন। ভক্তেরাও সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। রথের রজ্জু ধরিয়া একটু টানিলেন। তৎপরে রথাগ্রে ভক্তসঙ্গে নৃত্য ও কীর্তন করিতেছেন। অন্যান্য গানের সঙ্গে ঠাকুর পদ ধরিলেন – 

যাদের হরি বলতে নয়ন ঝরে,
তারা তারা দু’ভাই এসেছে রে!
আবার-নদে টলমল করে,
গৌরপ্রেমের হিল্লোলে রে!

  ছোট বারান্দাতে রথের সঙ্গে কীর্তন ও নৃত্য হইতেছে। উচ্চ সঙ্কীর্তন ও খোলের শব্দ শুনিয়া বাহিরের লোক অনেকে বারান্দা মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে। ঠাকুর হরিপ্রেমে মাতোয়ারা। ভক্তেরাও সঙ্গে সঙ্গে প্রেমোন্মত্ত হইয়া নাচিতেছেন।”

কী চমৎকার ঘরোয়া বর্ণনা! যেন পুরো দৃশ্যখানি একেবারে চোখের সামনে ভেসে উঠলো!

এতক্ষণ মূলত রথযাত্রার কথাই আলোচিত হলো। এবার রথ সম্পর্কে দু-চার কথা বলেই এই নিবন্ধে ইতি টানবো।

  ব্যুৎপত্তিগত বিচারে ‘রথ’ শব্দের অর্থ হলো, আনন্দ উৎসবে ব্যবহৃত একপ্রকার যান বিশেষ। কেন না, ‘রথ’ শব্দের মূলে আছে ‘রম্’ ধাতু। ‘রম্’ অর্থে আনন্দ করা। ‘রম্’ ধাতুর উত্তরপদে করণ বাচ্যে ‘কথন্’ প্রত্যয় যোগ করে নিষ্পন্ন হয়েছে ‘রথ’ শব্দটি। সুতরাং একে আনন্দ-যানও বলা যেতে পারে। কিন্তু সত্যিই কি কেবল আনন্দোৎসবের জন্যেই রথ ব্যবহৃত হয়ে এসেছে? আর কোনও উদ্দেশ্যে নয়? আমাদের পুরাণ ও মহাকাব্যগুলি কিন্তু সেকথা বলে না। দেখা গেছে, আনন্দোৎসব তো বটেই, রাজকার্যে শিকার বা নিছক ভ্রমণে-এমনকি, যুদ্ধক্ষেত্রেও কার্যত রথযানকে ব্যবহার করা হয়েছে। বাল্মীকি রামায়ণের অযোধ্যাকান্ডে রামচন্দ্রের বনবাসযাত্রাকালে সারথি সুমন্ত্র রথ নিয়ে প্রস্তুত। তিনি রামকে বলছেন –

রথমারোহ ভদ্রং তে রাজপুত্র মহাযশঃ।
ক্ষিপ্রং ত্বাং প্রাপয়িষ্যামি যত্র মাং রাম বক্ষ্যসে।।

  অর্থ দাঁড়ায়, হে প্রথিতযশা রাজকুমার, আপনি রথে আরোহণ করুন। আমি আপনাকে যথাসম্ভব শীঘ্র সেখানেই পৌঁছৈ দেব, যেখানে যাবার জন্যে আমাকে আদেশ করবেন।

  মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তো রথের ছড়াছড়ি। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রথী-মহারথীরা সব রথে চড়ে যুদ্ধ করছেন। তবে মহাভারতের রথগুলির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রথ হলো কপিধ্বজ। অর্জুন যার রথী এবং শ্রীকৃষ্ণ যার সারথি। এই রথে দাঁড়িয়েই সারথি শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধবিমুখ সখা অর্জুনকে যুদ্ধমনস্ক করতে উপদেশ দিয়েছিলেন ও বিশ্বব্রহ্মান্ড অবলোকন করিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতি হিসেবে জন্ম নিয়েছিল হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘গীতা’।

ভাগবতেও দেখি, কৃষ্ণ আর বলরাম-দু’ভাই রথে চড়ে মথুরায় চলেছেন কংসবধের উদ্দেশ্যে। রথ চালাচ্ছেন সারথি অক্রুর।

  সুতরাং দেখা যাচ্ছে, রথ শুধু আনন্দ-যানই নয়। সামাজিক, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যেও অবিসংবাদিতভাবে রথযান ব্যবহৃত হয়ে আসছে সেই কোন পৌরাণিক যুগ থেকে। বর্তমানে, এই প্রযুক্তিবিজ্ঞানের যুগেও রথের অন্তিম অস্তিত্বটুকু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই যাই করেও কোনোক্রমে টিকে আছে শুধুমাত্র জগগন্নাথদেবের কৃপায়।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments