জ্বলদর্চি

ভাতুকাম্মা উৎসব/(উৎসব ১৪২৮)/দেবলীনা চক্রবর্তী

ভাতুকাম্মা উৎসব
দেবলীনা চক্রবর্তী
      
      
পরিবেশ ও পরিস্থিতি যতই বিমুখ হোক বা হোক অন্যরকম কিন্তু প্রকৃতি তার রূপ রস গন্ধ নিয়ে সেজে ওঠে আদি অকৃত্তিম। আকাশে মেহগনি রোদ, শিউলি রঙা ভোর , বাতাসে দোদুল্যমান কাশের গুচ্ছ,এই বৃষ্টি ঝরছে অঝোর ধারায় আবার ঝলমল করে হেসে উঠছে চারদিক , মেঘ - বৃষ্টি  -রোদের এই আলোছায়ার খেলার মাঝে হঠাৎ হঠাৎই দেখা দেয় দিগন্ত জোড়া সাতরঙ্গাঁ রংধনু, দোলন চাঁপার মন আবেশ করা গন্ধের সাথে তার সিঁদুর লাল সাদা রূপরাজি , মাতাল করা স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না সব মিলিয়েই
 বুঝিয়ে দেয় পুজাবার্ষিকি এসেছে। প্রাণে মনে এক অদ্ভুত আনন্দ চুপি চুপি বলে যায় ..." মা আসছে "। 

এই বছরেও এক অতি সূক্ষ্ম জীবাণুর সংক্রমণ ও মহামারীর আতঙ্ক আমাদের শঙ্কিত করে রাখলেও প্রকৃতি জানিয়েছে যে শরৎ এসেছে ।আকাশে বাতাসে শুধুই আগমনীর সুর ভেসে যাচ্ছে ,চারিদিকে ‘মা’ ‘মা’ গন্ধ - ধূপধূনা - রকমারি ফুল আর দেবী বন্দনা। 
বঙ্গে যখন জোরকদমে চলে দুর্গা পূজা প্রস্তুতি , সারা উত্তর ভারত জুরে চলে যখন নবরাত্রি, সর্বত্রই শুধুমাত্র মাতৃ আরাধনার প্রস্তুতি তখন সূদূর দক্ষিণও এই আনন্দ ও উপাচার থেকে বিরত থাকে না । প্রতিবছরের মতো এই বছরও দেবীপক্ষের সূচনা থেকে টানা নয়দিন ধরে তেলেঙ্গানা রাজ্যে ও অন্ধ্র প্রদেশের কিছু অংশে চলে অন্যরকম মাতৃবন্দনা। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে এই উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়ছে কিন্তু পারিবারিক এই উৎসব এই বছরও চলবে আপন রীতি ও নিয়ম অনুযায়ী। 

“ভাতুকম্মা”(Bathukamma) উৎসব। অর্থাৎ ভাতুকু (জীবন)+ আম্মা ( মা)= জীবনদায়ী মা। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র রাজ্যের হিন্দু মহিলা ও মেয়েরা নিজের পরিবার ও স্বামীর মঙ্গলকামনায় এই পূজা অর্চনা করে বলে কথিত। আরো বলা হয় যে দেবী মাকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় এই পূজা রীতির মাধ্যমে এবং প্রার্থনা ও উপাসনা করা হয় শস্য ভান্ডারে আরো সমৃদ্ধি ও আর্থিক উন্নতি যেন অব্যহত থাকে সারা বছর জুড়ে।
এই উৎসব শুরু হয় মহালয়া অমাবস্যা বা পিতৃ অমাবস্যা থেকে দুর্গা অষ্টমী পর্যন্ত এবং বিজয়াদশমির বর্ণাঢ্য সমারোহের মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের সমাপ্তি হয়।" পেদ্দা ভাতুকম্মা " ( পেদ্দা অর্থাৎ বড় ) উৎসব নির্দেশ করে বর্ষা ঋতুর শেষ ও শরতের আগমনী।

 এই উৎসবের পূজাবিধি আর পূজাসামগ্রী বড়ই অভিনব। বিভিন্ন রকমারি ফুল - পাতা স্তরে স্তরে একটি পিরামিডের আকারে সাজানো হয়। এই ফুল ও পাতা বেশিরভাগই ভেষজ ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন যা সাতটি কেন্দ্রিয় স্তরে স্তরে সজ্জিত হয় এবং তা রূপ নেয় হিন্দু মন্দির গোপুরামএর আকৃতিতে।

 সেই ফুল সম্ভারকেই মাতৃরূপে বন্দনা করা হয়। দেবী গৌরী স্বয়ং আবির্ভূত হন এই ফুলসম্ভারের মধ্যে এবং প্রতিদিন সন্ধ্যাকালে হিন্দু মহিলা আর মেয়েরা তাদের পরম্পরাগত পোশাক ও অলঙ্কারে সেজে একত্রিত হয় কোন খোলা প্রাঙ্গণে বা খোলামেলা কোন স্থানে। প্রাঙ্গণের ঠিক মাঝে আবস্থান করে ঐ সুউচ্চ ফুলসম্ভার অর্থাৎ ভাতুকাম্মা দেবী। তাকে ঘিরে চলে তাদের অপূর্ব উৎসব ও পূজা বিধি।

 সকলে মিলে দেবীকে প্রদক্ষিণ করে এক অপূর্ব নৃত্য ভঙ্গিমায় এবং মুখে মুখে চলে অনবরত মাতৃ বন্দনাগীতি।প্রত্যহ মাতৃ আরাধনার পর দেবীরূপ বিসর্জন দেওয়াই প্রথা। দীর্ঘ নয় দিন এমনই ফুলসম্ভার গড়া ও বিসর্জন প্রক্রিয়া চলে।
 তবে ‘ ভাতুকাম্মা ’ উৎসব তেলেঙ্গানা রাজ্যের ফুলের উৎসব বলেও প্রসিদ্ধ। 

 এমন অভিনব এই উৎসব যাপনে নিজেকে সামিল করার সৌভাগ্য হয়েছিল তাই এই উৎসব সম্বন্ধে সকলকে অবগত করতেই আমার এই প্রতিবেদন।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments