জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /(উৎসব ১৪২৮)/শ্রীতনু চৌধুরী

গুচ্ছ কবিতা 
শ্রীতনু চৌধুরী


প্রাকৃতিক ঋণ

প্রথম লেবুপাতার লাবণ‍্যে
ভোরের বিভাবরী
পৃথিবীর তান ধরে কোন অলক্ষে
আখড়া পেতেছে বসন্ত বাউল ?
শুধু গাছগুলি ভরে গেল হরিতে হরিৎ
শুধু বাতাসে হলুদের শ্বাস
গমন অসম্ভব সুশ্রুত তবু অসহায়
বন্দিনী কপোত ক্রমশ বিবর্ণ নীল
কি হবে নিয়ে এই সবুজায়ন ?
যদি মেটাতে না পারি তার
প্রাকৃতিক ঋণ !


সুতীব্র নিষাদ

বার্তা বিভাজ্য মাঝে দুর্মূল্য
না বলা পংক্তি গুলি
আহুত দহন বিপ্রতীপ
আয়ুধও জানে না তাই 
বাষ্পদগ্ধ ইতিকথন ।
মেঘবতী সময় নিশুতি নিরঞ্জন
মাঝে মাঝে ঢেকে দেয় উলম্ব মেঘ
বিচ্ছিন্ন কথাঝারী অন্য প্রতিশব্দ-
ডেকে আনে বজ্র নিনাদ
বৃন্ত ও বিভাজ্য মাঝে চাতকের 
বুক-চোখে শুধুই সুতীব্র নিষাদ ।



ভুবন মাঝি 

বহুধা বৃন্ত থেকে
একক পতনের নৈঃশব্দ শুধু
ফুলজন্মের একরৈখিক নিবেদন
বাউল হে
ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার রাস্তায়
যা রেখে যাচ্ছ
একতারার গর্ভে সে'ই চতুর্বেদ । 
তার কেশরে আঙুল ছুঁইয়ে 
দিগন্ত সরাতে সরাতে
যেখানে ভেঙে যায় সব বৃত্তচাপ
ঘাটের পাথরে সেইখানে,
কান পেতে বসে আছে
ভুবন মাঝি ।



ঘুমহীন শৃঙ্গার

অদীপ্ত উসর ছেড়ে
চলো দরিয়া দোয়াব
ভাঙা মাস্তুলে এখনো
বসে আছে দাঁড়কাক।

জলের শব্দ থাক
আগুনে আগুন ঢেলে 
নক্ষত্র দেখুক - বালির বিছানায়
শান্ত হয়ে শুয়ে আছে ক্ষুধার্ত গাঙচিল ।

আকাশ,কি হবে আর অত বড় হয়ে?
তারার চোখ দিয়ে দেখো
দেহ কমলে কত ব্রহ্মাণ্ড 
এসো, অবশিষ্ট রাতগুলি 
তোমার নভোমন্ডল রমণে
ভরে দিই ঘুমহীন শৃঙ্গার ।



সমুদ্র বিরহ

আমার নির্জনের পাশে এসে বসা দোয়েল উড়ে যাবে সামান্য ব্যবধানে।নৈঃশব্দ মুর্ছিত বাতাস ঢেকে দেবে চরাচর, তবুও তা কেবল একান্ত একক।এই অপ্রাপ্তি কারো কৃপণতা নয়।আমিই আমাকে চির বঞ্চিত করি সুখে।
   কেও কি জানে সে কী চায়? আত্মপ্রেমের ভিক্ষুবিহার বিগ্রহহীন।জানি না এই মাধুকরি তবুও কার জন্য ? শুন্য ভ্রমণ শেষে খালি হাত সাধনসঙ্গীও। দেওয়া নেওয়ার মাঝে যে আজন্ম শ্রমণ - তাকে কেউ চেনে না। শুধু তার স্বাসমূলে এক সমুদ্র বিরহ রোজ চুমু দিয়ে যায়।

আরও পড়ুন 

Post a Comment

2 Comments