গুচ্ছ কবিতা
শ্যামাশ্রী চৌধুরী মজুমদার
অনিকেত
মনখারাপ আঁকড়ে ধরলেই
দৌড়তে থাকি প্রাণপনে।
চেনা পথঘাট,মাঠ পেরিয়ে থমকে দাঁড়াই এসে
প্রকান্ড পাহাড়ের সামনে।
তার অটল স্থবিরতায় ডুব দিলেই
জুড়িয়ে আসে সব উত্তাপ।
মেয়ের মাথার কাছে ঘুমিয়ে থাকা রুশ গল্পের
বইয়ে ঢুকে পড়ি।
ছোট্ট ফ্রোসিয়ার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকি তাদের বেড়ার ধারে।
ও আমার মন খারাপ,তোমায় আর ভয় করিনা জেনো।
জাতক
অবিরাম কাটাকুটি খেলতে খেলতে
কবিতা গড়ে ওঠে সম্পূর্ণ শরীরে
এত এত গ্রহণ, বর্জনের নীরব প্রশয়ে ঘিরে থাকে
নৈঃশব্দ্যের প্রগাঢ় মায়াজাল ।
একে একে জন্ম নেয় মন।
নাকি মন ছিল বহু আগে শব্দেরও শুরুতে?
মীমাংসাহীন উত্তর প্রত্যুত্তরে
মাটির মূর্তির মতো কাঁচা দেহ ক্রমশ নরম
থেকে কঠিন, কঠোর হয়ে ওঠে।
রোদে জলে ডুবে, পুড়ে খর জিহ্বা তুলে
ডাক দেয়, "কে তুই অভাগী?
অসম্ভব অসম্পূর্ণ খেদে গড়লি আমায়?"
সেই থেকে শাপগ্রস্ত আমি নিঃসাড়ে প্রহরা সাজাই। ভাস্কর্যেরা একে একে ঘিরে ধরে কাল নিদ্রায়।
শুয়ে থাকি ধুলো কাদা মাটি মেখে নিঃসাড়ে শব্দহীনতায়...আরো আরো সশব্দ প্রার্থনায়।
ছদ্মবেশ
পথের পাশের ঘাস জানতে চায়," আমার পরিচয়?"
পাটভাঙা আলো জানতে চায়, "আমি কোথায় ছিলাম?"
রসুলপুরের ছোট্ট বাঁশের সাঁকোও চিনতে চায় নিজেকে।
ছন্নছাড়া মেঘ, বিবাগী ঢেউ প্রতিদিন ফিরে ফিরে আসে!
কেবল ভিড়ের মাঝে গা ঢাকা দিয়ে থাকি আমি।
একা হলেই যদি দেখে ফেলি তাকে !
যে অন্ধকার ঘন রাতের চেয়েও প্রগাঢ়,
ধারালো অস্ত্রের চেয়েও শানিত, নির্মম
তাকে এড়িয়ে যাই প্রাণপণে।
সেও এক অসম, অনন্ত লড়াই ।
সন্ধে নামার আগে
মাঝে মাঝে তার হিলহিলে শরীরটা দেখা দেয় বাগানে।
মা বলে,"থাক,বাস্তু সাপ,আঘাত কোরো না।
সরসরিয়ে ঝোপে ঝাড়ে উধাও তক্ষুনি।
শেষ বিকেলে দোতলায় জেগে ওঠে সপ্তসুর।
পাখি উড়ে যায় চিলেকোঠা ছেড়ে দূর, বহুদূর...
বাদী, বিবাদী,সমবাদীরা ঘোরা ফেরা করে আনাচে কানাচে;
মেয়ে দেখে,শোনে চুপচাপ।
কেবল একদিন চ্যাটচ্যাটে ঠান্ডা শরীরটা চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই সিঁড়ি বেয়ে দুদ্দাড়...
শ্বাস আটকে দেখে মায়ের ঘরেও একটা হিলহিলে নোংরা সরীসৃপ
গিলে নিচ্ছে মাকে...
এপিলোগ
কেউ বলেছিল, দীর্ঘ শীতের পর বসন্ত উৎসবে দেখা হবে আমাদের।
কেউ বলেছিল, সমুদ্রের সামনে বিছিয়ে নেবো আসন।
কেউ বলেছিল, হাত ধরে পাশাপাশি হেঁটে যাব অনির্দিষ্ট গন্তব্যে।
অথচ,কেউ কোথাও যেতে পারেনি।
কালচক্রে আটকে রইল কতগুলো পরাজয়ের নাতিদীর্ঘ ছায়া।
আসলে আমাদের সব আগামীর গল্পগুলোয় অকাল হেমন্তের কুয়াশা নেমে আসে চুপিসারে...
আরও পড়ুন
0 Comments