গুচ্ছ কবিতা
তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য
অন্তর ঐশ্বর্যের ঘর
শিথানে জেগে আছে জ্যোৎস্নাময়
পৃথিবীর আলো।স্বপ্নের ভেতর ছুঁয়ে থাকি অসম্ভবের জানালা। ঘুণ পোকা নিশ্চিহ্ন করেছে যে অতীত পান্ডুলিপি , আমি ও ভুলেছি সেই কাব্য রূপ জন্ম।ভেসে আসে ছবি তার ।নিজেকে বেঁধে ফেলেছি সেই ঘাটে , যে জীবন আমার নয় তা আমাকেই বইতে হয়। কী অদ্ভুত সংলাপে দু ঠোঁট কেঁপে ওঠে।একই গাছে হয়তো তাই নানা রঙের ফুল ফোটে। ভ্রমরের বাণজ্যি পথ ,মধু কারবার।সব মানুষের কী থাকে নিজের ভেতর নিজেকে ঢেলে সাজাবার অধিকার? আমি যে ভাষায় কথা বলি সে ভাষা আমার নয়।অন্তর ঐশ্বর্যের ঘরে কথা বালি সে আমার আপন স্বর। যাকে শোনাই সে কী শোনে ? হৃদয় বেতার তরঙ্গ জানে নিস্তব্ধতার মানে।
জল দান
ভালোবাসা চাইলে আমি তোমাদের জল দিতে পারি। পিপাসা মিটে গেলে পথ কী খুঁজে পেলে?উপকূলে রেখেছি সমুদ্র মন্থনের গল্প তোমরা পড়ে নিয়ো। তারপর আমি চুরি হয়ে যাই....সেই থেকেই আমি হারিয়ে গেছি। হারাতে হারাতে আমি যে ভারশূন্য। শূন্যের ঘরে হাওয়া কেটে কেটে আমি অক্ষর শোধন করি। মায়া ভরা শব্দ কায়া আলপনা তার ।উড়ে যাই মেঘের বিন্যাসে ।আমি শুধু ছায়া তাপ তোমার ই আবেশে।
জানি আমি জানি নিশ্চয় হারিয়ে যাওয়ার থাকবে একটা দেশ একটা প্রাণ। বিলীন অস্তরাগে মেশে হেমন্তের শেষ দেখা।পথের গল্প খোলা পথ। বন্ধুত্বের জন্য বাড়িয়েছি বিরামহীন এগিয়ে যাওয়া একটি নীরব হাত।
স্মৃতি
অনুপম স্মৃতি চিহ্নের যে পথ
বিয়োগ চিহ্নের মতো শেষ হয়ে গেছে
খাটো হয়ে আসে পথের শরীর।
পথের প্রতিধ্বনি নিয়ে ফিরে গেছে অবসন্ন মানুষ
ধূসর পথ অনন্ত প্রশ্ন নিয়ে একা রাতের স্টেশন।
আমার আঁচলে এখনো সেই গিঁট বাঁধা নদী।
গিঁট খুললেই তোমরা বলবে আমি কাঁদছি।
কাকে বোঝাই এ যে শ্রাবণ ধারা!
যে শব্দ, যে কথা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
তার হাতে তুলে দিই নদীর বহতা।
আমাদের তালি দেওয়া জীবন
অনড় ইচ্ছে গুলো সরেওনা মরেও না।
মিথ্যা জমতে জমতে কখন যে সত্যি হয়ে যায়।
সহজ জিনিসপত্রের সঙ্গে ভালোবাসাও মানুষ কিনে নেয়।
জীবন কথা !
জীবন যতদিন অর্চিত হয়,ততটুকুই জীবন।
দেখি মুখ আরশিতে , মাছ ফাঁকি দেয়
বরশি কে। আমি কে ? কি বা তার দৃশ্য পট?
এই আছে এই নেই। বসন্তবৌরি যেমন অতিথি
পাখি , স্ফটিক জীবনে। জন্মদিনে পরমান্নের
সুগন্ধ।স্বাদে বিস্বাদে জীবন যেমন , সেই
আছিলায় সাতরঙে মিশে যাই।দূর নৈঃশব্দের সঙ্গতে ভুলে যাওয়া ঋণ
যৌবনে নারীর ছেলেখেলা।শ্রদ্ধার কারাবাসে
থাকো তুমি। অবশেষে দৃষ্টির মাসোহারা
দিতে আর যে পারিনা। সরে যাও অদৃশ্য হাওয়ায়।
দৃষ্টি তে আর দাবি নয়। মিলে যাবো শেষে।
ফাগুনের ডাক বাক্সে খুজে নিও চিঠি
ততক্ষণ না হয় বাস করি অন্য কোনো ঘরে।
গায়ে গতরে
নিজের ভাতের জন্য কিছুই করতে পারিনা।
হিংসার আগুন তাদের মুখের গোলা বারুদ
সেই সব কুড়িয়ে জ্বালানি করি ভোজবাজির আযোজন হয়। দারিদ্রতা ছাড়া আর কোনো অলংকার আমার নেই । তাই প্রতিটি অত্যাচার আমাকে সুসজ্জিত করে।জানিনা এত আঘাতের পাথর কীভাবে হজম করে পাকস্থলী? আবারো খিদে পায় মেঘ কালো হয়। তবুও ছিটেফোঁটা বৃষ্টি নেই চোখের কোণে। এভাবেই মানুষ একদিন স্ট্যাচু হয়ে যায়। অর্থকরী ফসলই মানুষের সংশাপত্র। নেই অর্থ যার সেই মানুষ অর্থহীন ব্যর্থতার।
দুহাতের শ্রম পরাধীন শ্রম করে
দীবা স্বপ্ন দেখে খিদে আগুনের ঘরে।
দুমুঠো ভাতের জন্য মানুষ পাথরও হতে পারে।
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments