জ্বলদর্চি

খপ্পর-১১ (উপন্যাস) /(উৎসব ১৪২৮) অনিন্দ্য পাল

উপন্যাস: খপ্পর 
লেখক: অনিন্দ্য পাল 
পর্ব: এগারো


=============
সোম জিজ্ঞাসা করল, 
--আপনি, মানে তুমি কি দীপু? 
-- হ্যাঁ, আমি দীপু। তপুর ভাই। তপু কোথায়? 
-- এস, ভিতরে এস। 
দীপু দরজাটা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, 
-- তপু, বিজু পিসি ওরা কোথায়? 
তারপর একটু সন্দিগ্ধ হয়ে সোমের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, 
-- কিন্তু তুমি কে? 
সোম দরজাটা বন্ধ করছিল, এই প্রশ্ন শুনে একটু হেসে বললো, 
-- আমি, আমি কেউ নই। 
-- মানে? 
একটু অবাক হয়ে সোমের দিকে তাকালো দীপু। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তখনই ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন বিজয়া। 
-- কেমন আছিস? তুই তো এমুখো হলিই না আর, তাও ভালো যে আজ এসেছিস। বস। 
বিজয়া এগিয়ে এসে দীপুর একটা হাত ধরে বললেন, 
-- আয়, তপু একটু বেরিয়েছে, এখুনি চলে আসবে। 
তারপর সোমের দিকে তাকিয়ে বললেন, 
-- ওকে চিনিস দীপু? 
-- না। 
-- কেন তপু কিছু বলে নি তোকে? 
-- কি? 
-- তপু তো বলে, ও সব কিছুই তোর সঙ্গে আলোচনা করে, আর সোমের কথা বলে নি তোকে? 
-- সোম? ওহ্ এই তাহলে সোম! দীপু এবার একটু ভালো করে দেখলো সোমের দিকে। আদ্যোপান্ত শহুরে সোমকে দেখে দীপু একটু দোলাচলে পড়ে গেল। শহরের এই সব আতুপুতু, ধবধবে ছেলে গুলোকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারে না দীপু। তপু যে কি করে এই ম্যান্তামারা পান্তাভাতের মত ছেলেটাকে জড়ালো, বুঝতে পারে না দীপু। কে যে কাকে ফাঁদে ফেলেছে বুঝতে পারে না দীপু। সে নিজেও এখানে কোন খপ্পরে এসে পড়েছে বুঝতে পারছে না। 
    বিজয়া তাকে একটা সোফায় বসিয়ে ভিতরের দিকে চলে গেলেন। ছোট্ট ফ্ল্যাট, তাই জায়গাও বেশ কম, কিন্তু খুব সুন্দর করে সাজানো। প্রত্যেকটা দেওয়ালে পুট্টির উপর আলাদা আলাদা রং। দেওয়ালে টাঙানো পেন্টিং গুলো নজর কাড়ে। মেঝেতে যে টাইলস গুলো বসানো হয়েছে, হঠাৎ করে দেখলে সেগুলোকে মার্বেল বলেই মনে হয়। ভাদ্র মাসের গরমে সিদ্ধ হতে হতে যখন ঢুকেছিল, দীপুর গায়ের জামাটা ঘামে ভিজে জবজব করছিল। এখানে সোফায় বসে এসির ঠান্ডায় সেই ঘামও ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো। গায়ের জামাটা এবার দীপুকে ছ্যাঁকা দিতে লাগলো। 
এদিক ওদিক দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা জিনিসের দিকে চোখ পড়লো দীপুর। একটা অদ্ভুত দর্শন মূর্তি। একটা খুব সুন্দর কাবার্ডের রাখা মূর্তিটা যেন একটা হিংস্র দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মূর্তিটা থেকে চোখ সরাতে পারছিল না দীপু। কয়েক মুহূর্তের জন্য দীপু যেন সমস্ত পারিপার্শ্বিক জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। 
-- ওই মূর্তিটা আমার দাদা গতবছর এনে দিয়েছিল। উত্তর ভারতের কোন একটা আদিবাসী গ্রামের এক পুরোহিত দিয়েছিল দাদাকে। 
     বিজয়া কখন এসে দাঁড়িয়েছেন বুঝতেই পারেনি দীপু। একটু চমকে চোখ সরিয়ে নিল দীপু। 
বিজয়া এক কাপ গরম কফি টেবিলের উপর রেখে, বললেন, 
-- আমার দাদাকে দেখেছিস তুই? 
দীপু একবার মাথা নেড়ে বললো, 
-- তোমার দাদা আছে সেটাই তো জানতাম না। আজ এই জানলাম। কোথায় থাকেন? 
দীপুর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বিজয়া বললেন, 
-- কোথাও না। 
-- কোথাও না মানে? 
-- মানে দাদা নিজেও জানে না বোধহয় কোথায় আছেন! সেই তিরিশ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়েছে, এখন প্রায় সত্তর, এখনও ঘুরে চলেছে। কোন যায়গায় একবছরের বেশি দাদাকে কেউ দেখেনি। 
কথাগুলো বলতে বলতে সোফায় এসে বসলেন বিজয়া। অবাক দীপুর হাতে কফির কাপটা তুলে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, 
-- তারপর তোর চাকরির প্রিপারেশন কেমন চলছে বল? তপুর কাছে শুনলাম অনেক টিউশন করছিস। 
-- তা করছি। খেয়ে পরে বাঁচতে হবে তো। চাকরি যে পাবোই তেমন গ্যারান্টি কোথায়! 
-- তা ঠিক। টিউশন করা খারাপ নয়। তারপর একটু চুপ করে কিছু ভেবে আবার বললেন, 
-- পলিটিক্স করছিস না তো? বাবার মত নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে জনগনের কল্যাণ করতে ছুটিস না যেন আবার। কি পেল বলতো মানুষটা? এই ব্যাপারে কিছু বললেই বলতো, "আমি কোন লাভের জন্য, কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করছি না।" প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেল মানুষটা। কোথায় গেল তখন আদর্শবাদী পার্টির লোকেরা? আসলে তখন তো সব সুবিধাবাদী, ধান্দাবাজ, দু-নম্বরি লোকগুলো পার্টিতে ধামাধারী হয়েছে। চেয়ার আর টাকাই তখন পার্টিতে রাজত্ব করছে। 
বিজয়া থেমে গেলেন। তার সুন্দর ফর্সা মুখের উপর একটা অন্ধকার খেলা করে বেড়াচ্ছে। বুকের ভিতরে হঠাৎ করে বয়ে যাওয়া ঝড়টা শুধু যে ভিতরে আটকে নেই, সেটা মুখ দেখে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। 
   দীপু কথাগুলো শুনলো, কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। সংসারের প্রতি চরম উদাসীন মানুষটাকে যখন দেখতো দলের জন্য দিন-রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছে, সংগঠন এর জন্য জীবন সঁপে দিচ্ছে, তখন মেনে নিতে কষ্ট হত। ক্লাস সিক্সে বাবা মারা গেল। দারিদ্র একটা পরিবারকে কি করে গলা টিপে মেরে ফেলতে পারে, সেটা দীপু সেই বারো বছর বয়সেই দেখেছে। ক্লাস এইটে ওঠার পর একটা সময় খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল, দীপু রোজ রাতে পাড়ার মুদিখানা দোকানের জানালার ধারে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে হাফ কিলো আটা আর পঞ্চাশ গ্রাম গুড় নিয়ে আসতো। বাকিতে কয়েক মাস দেওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই দোকানদার একদিন টাকা চাইলো। দিতে না পারায় সে রাতে আর আটা-গুড় জুটলো না। মা, মায়া জ্যোঠিমাকে হাতে পায়ে ধরে একবাটি খুদ আর কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা নিয়ে এসেছিল। কোন মতে রাত্তিরটা কাটিয়ে উমা গেছিলেন রাজীবের মার কাছে। অনেক দিন ধরেই রাজীবের মা উমাকে বলছিল, "এভাবে শুধু ঠোঙা গড়ে তিনটে পেট চলবে? বাচ্চাদের পড়াশুনো করাবে কি করে? আমার সঙ্গে চল, আয়ার কাজ করলে অন্তত দু-বেলা খাবারটাতো জুটবে।" 
    উমা গেছিলেন। দীপুর পরিস্কার মনে পড়ে, কালীপুজোর রাতে মা প্রথম নাইট ডিউটিতে, খুব কেঁদেছিল দুই ভাই বোন। উমা ডিউটিতে যাওয়ার আগে কয়েকটা লুচি আর আলুর তরকারি করে রেখে গেছিলেন, কিন্তু তপু আর দীপু খেতে পারে নি। 
  তবু বাবার বিচার দীপু করতে পারে না। মাকেও কখনো বাবার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে শোনেনি তারা। বরং অনেক সময়ই বাবার আদর্শ, সততার কথাই বলতে শুনেছে। বড় হবার পর যতটুকু শুনেছে, পার্টির থেকে কখনো কোন সুযোগ সুবিধা আদায় করেনি বাবা, চিরকাল শুধু দিয়ে গেছে। শ্রম, অর্থ, সব কিছু দিয়ে দলের জন্য সংগঠন তৈরি করাই ছিল জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। 
    তবে, সেই ভয়ঙ্কর দিনটার কথা মনে পড়লে এই আদর্শবাদ আর দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ মানুষটার পরিণতিতে খুব কষ্ট হয় দীপুর। সেদিন ছিল পয়লা বৈশাখ। বাবা সেদিন কিছু টাকা যোগাড় করেছিল, তাতে সামান্য হলেও মুরগীর মাংস, একটু মাছ আর মিষ্টি ও এনেছিল মা। 
    বেলা তখন প্রায় একটা বাজে। দীপু একটা কাঁচা মাটির পুতুলে চোখ আঁকছিল। তপু নিম পাতা আনতে গেছিল। হঠাৎ বাড়ির সামনে প্রচন্ড চেঁচামেচি শুনে ছুটে বেরিয়ে যে ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা দেখেছিল দীপু, সেটা আজও তার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে। 
     পাড়ার দুই মাতালের সঙ্গে বাবার ঝামেলা বরাবরের, দীপু অনেক ছোট থেকে এসব দেখেছে। কিন্তু সেই দিনটা ছিল একটু অন্যরকম। পয়লা বৈশাখের উৎসব পালন করতে পেটপুরে মদ গিলেছিল জীবন আর মোধো। মাঠের ঠিক পাশেই বটতলায় বসেছিল বোতলের আসর। সঙ্গে চলছিল উদোম খিস্তি-খেউড়। গণনাথ গেছিলেন কৃষক সভার বিল কাটতে। মোধোর নেশা তখন তুঙ্গে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর থেকে শুরু করে আর প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সবার গুষ্ঠি উদ্ধার চলছিল নাগাড়ে। গণনাথ সেসব এড়িয়েই আসছিলেন বাড়ির দিকে। মোধো গণনাথকে দেখেই এক মহিলা নেত্রীর নাম করে অত্যন্ত খারাপ ইঙ্গিত করতে গণনাথ আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেন নি। এমনিতেই একটু বদরাগী মানুষটা সেই মুহুর্তে একেবারে আগুনের মতো হয়ে উঠেছিলেন। ছ-ফুট লম্বা পেটানো শরীরে ভয়ের কোন জায়গা ছিল না। মোধোর কথাগুলো কানে যেতেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেদিন। তারপর আর কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না নিজের উপর। চড়-চাপড় থেকে শুরু করে লাথি,ঘুষি সবই চলেছিল নাগাড়ে। মারের ঘায়ে দুই মাতালের মুখ বন্ধ হতে সময় লাগেনি, কিন্তু ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। পাড়ার গুণ্ডা এবং বিরোধী নেতা ঘন্টা খেপিয়ে তুলেছিল পড়ার অশিক্ষিত আর গরীব মানুষদের। সবাই কে নিয়ে চলে এসেছিল দীপুদের বাড়ির সামনে। দরজায় লাথি মারতে মারতে প্রায় ভেঙে ফেলেছিল দরজা। সেই তাণ্ডব আজও দীপুর মাঝরাতের ঘুম কেড়ে নেয়। কি করে যে সেদিন তারা কয়েকশ খ্যাপা মানুষের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে গেছিল এখনো সেই মিরাক্যালটা ঝাপসা হয়েই আছে। 
পার্টির নেতারা গণনাথকেই ভর্ৎসনা করেছিলেন, এমনকি তার হাত থেকে সংগঠনের দায়িত্বও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। দীপু এই ব্যাপারটা জেনেছে অনেক পরে, ততদিনে গণনাথ মারা গেছেন। শেষ দিকে গণনাথ দলের কাজকর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। বানের জলে ঢোকা দূষিত পোকা-মাকড়ে ততদিনে প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে পার্টি। দেওয়া নেওয়ার রাজনীতিতে চাপা পড়ে গেছে আদর্শের কচকচানি। 
-- কি রে দীপু? কোথায় হারিয়ে গেলি? দেখ তোর সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে! 
চমকে ওঠে দীপু। মনের ভিতরে চলতে থাকা ঝড়ের দাপটে বেশ কয়েক বছর পিছনে ফিরে গেছিল, বিজয়ার ডাকে আবার ক্যালেন্ডারের বর্তমানে ফিরে আসে। সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় দীপু। এ কাকে দেখছে! নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। 
বিস্ময়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে, 
--তপু! 
একটা নীল-হলুদ শাড়ী পরে দাঁড়িয়ে আছে তপু। এত সুন্দর করে কখনো সাজতে দেখেনি তপুকে কখনও। জিনস-টপ ছাড়া বাইরে তপুকে কেউ দেখেনি কখনও। ছেলেদের মত ছোট করে ছাঁটা চুল আর কব্জিতে রুপোর ব্রেসলেটটাই তপুর সিগনেচার। অথচ এখন যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে, সেই শাড়ী পরা, পার্লার থেকে সুন্দর করে সেজে আসা আদ্যোপান্ত চিকন সুন্দরী মেয়েটাকে একদিকে তার দিদি তপু বলে মানতে কষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে একটা অদ্ভুত আনন্দে বুকটা ভরে উঠছে দীপুর। 
তপুর দিকে তাকিয়ে ছিল দীপু! তার হতবাক অবস্থা দেখে স্বভাব-সিদ্ধ ভঙ্গিতে হো হো করে হেসে উঠে তপু বললো, 
-- কি রে ভাই? ভিরমি খেলি নাকি? চিমটি কাটবো একটা! 
এবার একটু স্বাভাবিক হয় দীপু। হেসে উঠে মজা করে বললো, 
-- নাহ্! ভিরমি খাইনি, ভাবছি তোর কি মিউটেশন ঘটলো? এই কদিন কি কোন রিসার্চ ল্যাবে জিনের উপর কারিকুরি করলি নাকি? হঠাৎ এত ভোল বদল?  মা কে একবার দেখাতে পারলে ভালো হত। একটু শান্তি পেত। 
-- কেন? আমি কী এমন কাজ করি যাতে মা সব সময়  অশান্তিতে থাকে? তপু একটু ছদ্মরাগ দেখালো। 
-- সেটা মার কাছেই জিজ্ঞাসা করিস। এখন বল কেন ডেকেছিস? 
তপু এবার নিজেকে দেখিয়ে বললো, 
-- এই কারণে-- বুঝলি ঘোঁচু! 
-- মানে? দীপু অবুঝের মত প্রশ্ন করে। 
বিজয়া এবার হেসে বলেন, 
-- হ্যাঁ, তপু আজ সত্যিই ভোল বদলাচ্ছে--আর সেই ভোল বদল দেখতেই দেখতে তোকে। তবে আর একটু গভীরে একটা সারপ্রাইজও আছে। সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য। 
দীপু এসব কথার গলিঘুঁজিতে একটু বেসামাল হয়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো। তার ওই অবস্থা দেখে বিজয়া বললেন, 
-- তপুর আজ বিয়ে, বুঝলি! 
দীপুর মাথায় যেন বজ্রাঘাত হল। সটান দাঁড়িয়ে উঠে বিজয়ার চোখে চোখ রেখে প্রচন্ড অবিশ্বাসের সুরে বললো, 
-- দূর! কি যে বল পিসি? মা জানলো না, কেউ জানলো না, আর তপুর বিয়ে? তাই আবার হয় নাকি? 
--হয়! একশোবার হয়। এই তো তিরিশ বছর বয়স হয়ে গেল মেয়েটার। আর কবে হবে ওর ঘর সংসার? সময়ের, শরীরের ও একটা চাহিদা থাকে দীপু। আর তোর ও তো আঠাশ হয়ে গেল। 
একটু থেমে বিজয়া আবার বললেন, 
-- আজ এখানে যদি সোমের সঙ্গে ওর রেজিস্ট্রি হয়ে যায় ক্ষতিটা কী? তোর আপত্তি আছে কোনও? 
কিছুটা সময় হতচকিত হয়ে বিজয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে দীপু দু-হাতে নিজের মাথাটা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়লো ধপ করে। 
সুন্দর করে সেজেছে তপু। সোনা রুপোর বাহুল্য না থাকলেও কস্টিউম জুয়েলারিতে বেশ মোহময়ী হয়ে উঠেছে। এদিকে বিজয়া সোমকে নিজের শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে কিছু একটা বোঝাচ্ছেন। সেদিন যখন বিজয়া সোমকে বেডরুমে নিয়ে গিয়ে ল্যাপটপের কিছু কাজকর্ম শিখে নিচ্ছিলেন, তপু সেটা বুঝতে না পেরে রেগেমেগে যখন দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকলো, তার উদভ্রান্ত অবস্থা দেখে দুজনেই হেসে উঠেছিল। তপুও নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে গেছিল। 
বিজয়া ব্যাপারটা লঘু করার জন্য হেসে একটু মজা করে বলেছিলেন, 
-- কি রে? কি ভাবলি? তোর শিকার অন্য কেউ নিয়ে গেল? না রে বাবা না! এই নে তোর জিনিস। 
একথা বলে বিজয়া তপুকে আদর করে ধরে এনে বিছানায় ঠেলে দিয়েছিলেন। তারপর দরজাটা বাইরে থেকে টেনে দিয়ে চলে গেছিলেন রান্না ঘরে। 
--তপু একবার এদিকে আয়। 
বিজয়ার ডাকে তপুর ভাবনাটা লুকিয়ে পড়লো। 
ড্রয়িং-এ জনা পনেরো লোক এসে গেছে ততক্ষণে। সবাই খোশ গল্পে ব্যস্ত। খাদ্য-পানীয়ের অঢেল ব্যবস্থা করেছেন বিজয়া। তপু ড্রয়িংর দিকে উঁকি দিয়ে দেখলো দীপু একজন হ্যান্ডসাম যুবকের সঙ্গে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। তপু চিনতে পারলো, ইনি বিজয়ার স্বামী সৌমেনের কলিগের ছেলে রাজেন। পুলিশের খুব উঁচু পদে আছে। 

সন্ধ্যার পর থেকে অনেকটা সময় কেটে গেছে। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চলছে। খোশ-গল্পও চলছে। ব্লুটুথ বক্সে হাল্কা একটা ইন্সট্রুমেন্টাল বাজছে। বিজয়া আর তপু খাবার সার্ভ করছে। সোম দুটো সফট্ ড্রিঙ্কসের বড় বোতল এনে টেবিলের উপর রাখলো। তখনি রাজেন সোম কে ডেকে নিয়ে কিছু একটা বোঝাতে লাগলো। 
সবাই এই আয়োজন বেশ উপভোগ করছিল, কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা উদ্বেগ, একটা তেরছা চাউনি সবার চোখে মুখে লেগে রয়েছে। 
  রাত বাড়ছে। প্রায় দশটা। খাওয়া-দাওয়ার পাট শেষ। ড্রয়িং-এর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকটা জটলা, মৃদু স্বরে কোন সিরিয়াস আলোচনা চলছে। দীপু, তপু আর সোম বিজয়ার সঙ্গে তার বেডরুমে, সোম একমনে তার স্মার্টফোনটা ঘাঁটছে। দীপু কথা বলছিল ফোনে। হঠাৎ তখনি বেজে উঠলো বিজয়ার মোবাইলটা। কলটা রিসিভ করে কয়েক সেকেন্ড কথা বলার পরেই মোবাইলটা রেখে বেডরুম থেকে বেরিয়ে সোজা এগিয়ে গেলেন ড্রয়িং-এর দিকে।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments