জ্বলদর্চি

পাতি মানুষের পাঁচালি-৬/(উপন্যাস)/(উৎসব ১৪২৮)/পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়


পাতি মানুষের  পাঁচালি :: ৬

উদ্ভব শাসমলের কথা
--------------------------------
কী করবেন কী করবেন না এসব সাতপাঁচ কথা ভাবতে ভাবতে সেই ছাব্বিশে জানুয়ারি সন্ধে সাতটা নাগাদ সূর্যোদয় চিটফান্ডের মালিক’ জয়ন্ত ধাড়ার হাত থেকে আড়াই কোটি টাকার চেকটি নিয়ে ‘রাতপুর’ গ্রামের গ্রাম প্রধান উদ্ভব শাসমল আদর্শবাদী মুখােশটা খুলেই ফেলল।  এরকম একটা কথা বহুদিন ধরেই শােনা যাচ্ছিল উদ্ভবের সম্বন্ধে, যে লােকটা নাকি একনম্বর চালিয়াৎ ও জালিয়াত। আইন আইনের পথে চললে নিশ্চিত এতদিনে জেল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। হিসাব মােতাবেক তা হয়নি। বরং  তার দুর্নীতির বহর যত বেড়েছে, অর্থের লােভ যত বেড়েছে , তত এ পাড়ায় বেপাড়ায় গিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতিতে তার ব্যাংক ব্যালেন্সও বেড়েছে চড়চড় করে। প্রতিপত্তির  এমনই মহিমা যে, সেদিন ঘটা করে ব্লক সভাপতি রঙ্গলাল গুণ উদ্ভবকে ‘ব্ল্করত্ন’ উপাধি দিয়ে ধন্য হয়েছেন। উত্তরে উদ্ভব পাঁচটা গ্রামের গ্রামবাসীর সামনে, কি ভাবে গ্রামগুলিকে ইউরোপের আদর্শ গ্রামের মতো সাজিয়ে তােলা যায় তার পরিকল্পনার কথা সগর্বে সবিস্তারে জানিয়েছে। মানুষকে সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে এ সাফল্যের এক একজন অংশীদার হতে অনুরােধ করেছে। এ উদ্ভব অবশ্য বছর দশেক আগেকার সে উদ্ভব নয়। তখনকার সে এবং এখনকার সে'র মধ্যে মিল খুঁজতে গিয়ে অনেকেই  হতাশায় মাথা নেড়েছেন, আঙুল কামড়েছেন। বহুদিন পর গ্রাম বা দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষেরা গ্রামে ফিরে তাদের প্রিয় ‘উদু’র সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে  দু-একদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছেন যে মােবাইলের ফেসিয়া'টা এক আছে ঠিকই কিন্তু কোনাে জাদুবলে বা কোনাে গোপন চক্রান্তে  তার ভিতরের খােলনােলচেটা আমূল বদলে গেছে এই দশ বছরে। উদ্ভব শাসমল ছেনাে বাউল আর লক্ষ্মী শাসমলের একমাত্র সন্তান। ছেনাে বাউলের ভালাে নাম সােনালাল শাসমল। সে না ছিল সােনাদানার মালিক, না ছিল তার সােনার টুকরাে’-ইমেজ। গায়ের রং-ও ছিল কুচকুচে কালাে। তবুও এ হেন মানুষের নাম সােনালাল হওয়াতে বিদ্রুপ করে তাকে লােকে ‘ছেনাে’ বলে ডাকতে শুরু করল কি না তা আমাদের এ কাহিনির আলোচ্য বিষয় নয়, তবে গানের গলা যে তার ভালাে ছিল এ বিষয়ে কারোরই কোনাে সংশয় ছিল না। পড়াশােনা  বিশেষ হয়নি। জাতিদাঙ্গায় বাংলাদেশ থেকে এ দেশে পালিয়ে এসে পুরুলিয়ার এ গ্রামে তিনি কি ভাবে ঢুকলেন, কি ভাবেই বা বাস ট্রেনে গান গাইতে গাইতে লক্ষ্মী বৈরাগির সঙ্গে তার পরিচয় আর বিয়ে হল, আর কবেই বা উদ্ভব নামে এই বস্তুটির জন্ম দিয়ে তার জন্য একটা কুঁড়েঘর আর অজস্র ধারদেনার বােঝা রেখে আচমকা পটল তুললেন তিনি তা নিজেই টের পেলেন না। পেলেও যে বিশেষ কিছু করতে পারতেন না তা আশপাশের লােকেরাই বলে। 
যাই হােক, মধ্যবয়সী মা’কে নিয়ে উদ্ভব তাে পড়ল মহা আতান্তরে। তখন তার বয়স চোদ্দ বছর। সংসার সম্বন্ধে কোনাে ধারণা নেই । জীবিকা অর্জনের কিছু শেখেনি সে। তার উপর দিন রাত মায়ের ভােগান্তি আর মধ্যবয়স সুলভ প্যানপ্যাননিতে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠল তার। ঠিক এই সময়টাতে সে গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার ,মহিম চৌধুরীর আশ্রয় পেল সে।  

ছোটবেলায় অসম্ভব দারিদ্র্যে বড় হয়েছিলেন মহিম। কিন্তু সেই গরিবির কাছে বশ্যতা স্বীকার না করে নাগাড়ে বড় হওয়ার লড়াই চালিয়ে নিজের চেষ্টায় সমাজের একজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি।  অর্থাৎ একজন সেল্ফমেড মানুষ ছিলেন তিনি।  বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষাবিদ হিসেবে সাত গ্রামের মানুষ তাঁকে চিনত। এ হেন মানুষের হাতে পড়ে রাতারাতি না হলেও বছরখানেক পর থেকেই উদ্ভব আস্তে আস্তে পালটে যেতে শুরু করল। পড়াশােনাতে, দেখা গেল, সে খারাপ ছিল না। সুতরাং গ্রামের অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এক চান্সে স্কুল কলেজের গণ্ডি সব উতরে মানবাজার কলেজের দোরগােড়ায়  যখন সে পা দিলো, তখন তার বয়স সবে মাত্র উনিশ বছর।
কিছু মানুষের জন্ম হয় গােটা জীবন ভালােমানুষি করে প্রথমে বাবা মায়ের ন্যাওটা, পরে স্কুল টিচারদের সুবােধ ছাত্র তার পর বউয়ের বাধ্য বর, অফিসের বড় কর্তার বিশ্বস্ত অধস্তন ইত্যাদি হিসেবে পরিচিত হওয়ার জন্য।  শেষে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে  নিস্তরঙ্গ শান্তির জীবন কাটিয়ে অপদার্থ  মানুষ হিসেবে পৃথিবী থেকে তারা বিদায় নেয় একদিন। আর কিছু মানুষ এর ঠিক উল্টো। ছােট থেকেই তাদের মধ্যে একটা উশৃঙ্খল, উড়নচণ্ডী ভাব । কোনাে নিয়মকেই তারা কেয়ার করে না। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন জায়গায় গোঁত্তা আর  খেতে খেতে নিজের খেয়াল খুশিতে  বড় হয়ে, হয় তারা সমাজ ও পৃথিবীর জন্য বহু কিছু করে, বা  সামাজিক ত্রাস হয়ে মানুষের ঘুম কাড়ে।

উদ্ভব এই দুইয়ের অদ্ভুত এক মিশেল ছিল, অর্থাৎ না ঘরকা, না ঘটকা। তাতে করে তার সুবিধে এবং অসুবিধে দুটোই হয়েছিল। সুবিধেটা হলো, শিক্ষার অভাবের কারণে জীবনের চলার পথে যেখানে  মানুষ ঠোক্কর খায় অর্থাৎ  জীবিকা অনুসন্ধান, তার হ্যাপা তাকে পােহাতে হয়নি আর অসুবিধে হলো স্ববিরােধী চরিত্রের কারণে কাছে আসা মানুষগুলাে, যারা তাঁকে ভরসা করত, বন্ধু ভাবত তারা একদিন বিশ্বাসভঙ্গের কারণে হতাশ হয়ে দূরে চলে গিয়ে নির্বান্ধব করে দিয়ে দিয়েছিল তাকে।  মহিম চৌধুরীর সুপারিশ এবং কিছুটা তার নিজের যােগ্যতায় পাশের গ্রাম পালকপুর হাইস্কুলের শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার পর সুতরাং, সে বুঝতে পারল যে, এভাবে কিছু হবে না। তার জেদ ও সততাকে ভিত্তি করে এমন কিছু তাকে করতে হবে যাতে আগামী পৃথিবী তাকে মনে রাখে। সে সেটা উত্তাল নকশাল আন্দোলনের যুগ। রাস্তাঘাটে পুড়ছে সরকারি সম্পত্তি। পুলিশের গুলিতে মরছে অসংখ্য তরুণ, তরুণী। রাস্তাঘাট ছেয়ে গেছে বিপ্লবের ডাক দেওয়া ছােট ছােট সস্তা লিফলেটে। কোনাে ব্যপারে কোনাে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিশা  না পেয়ে অসহায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তের মতাে এদিক ওদিক দৌড়চ্ছে। উদ্ভব এ সময় তার কাজের হাতিয়ার হিসেবে গ্রামের উন্নয়নকেই বেছে নিলো। সেটা অনুন্নয়নের যুগ। আর্থিক অনটনের যুগ। গ্রামের মানুষের হাতে কাঁচা টাকা নেই। জমি-জিরেত চাষ করে ক্ষেতের চাল-ডাল, আলু-মূলাে, আর পুকুরের মাছ, গােয়ালের গােরুর দুধে স্বচ্ছল জোড়াতালি দিয়ে সংসার চলে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা নেই। সাধ আহ্লাদ সহ বেঁচে থাকার আকাঙ্খা নেই। তারা  ভাবে, এভাবেই বাঁচতে হয়। অভাব, আহ্লাদ, স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে নেই । বললে সুরাহা হয় না। লজ্জা বাড়ে। সুতরাং অপ্রাপ্তির কারণে তাদের কোনাে অপরাধবােধ বা অভিযােগ ছিল না। অনেকটা সংস্কারহীন মজা পুকুরের মতাে,  যা একটু পরিস্কার করলেই মাছের ফলনে  ভরে উঠবে, পদ্ম-শালুক  ফুটবে তাতে, অথচ অগভীরতার কারণে সে  পুকুরে শুধু খেলে বেড়ায় তেচোখা মাছ।
আজকের মতো কমপিউটার বা ইন্টারনেটের কারণে পৃথিবী ছােট হয়ে আসার যুগ সেটা ছিল না। বরং  ছিল এক বিপন্নতার সময়। এমন একটা সময়ে দেশ বিদেশের বহু অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই লাইব্রেরি থেকে জোগাড় করে পড়ে ফেলেছিল উদ্ভব এবং এ কথা সার বুঝেছিল যে অজ্ঞতা অনুন্নয়নের মূল কারণ। তার থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় মানুষের চেতনাকে জাগানাে। তারাও যে এ সমাজের  অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তার উন্নয়ন বা অবনয়নের সমান অংশীদার তা অজ্ঞ মানুষদের বােঝাতে হবে। তার জন্য দরকার পঠনপাঠন। জ্ঞান অর্জন। ষোল জন সমমনস্ক শিক্ষিত প্রগতিশীল ছেলেমেয়েকে নিয়ে যে সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়নের দল গড়েছিল উদ্ভব তা ছােট ছােট ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রতিটি বাড়ির দরজায় গিয়ে তাদের বােঝাতে শুরু করল ,সমাজ তাদের কাছে কি আশা করে, সমাজের কাছেই বা তাদের কী প্রাপ্য। কি কি প্রাপ্তি থেকে রাষ্ট্রের কাছে তারা লাগাতার বঞ্চিত হচ্ছে শুধুমাত্র অজ্ঞতার কারণে। পক্ষান্তরে রাষ্ট্রকে  তাদের কি কি দেওয়া উচিত অথচ তারা দিচ্ছে না।

সাধারণ মানুষ অসাধারণ বা নতুন ধারণা নিতে ভয় পায় । ফলে, অনিশ্চয়তার কারণে  কোনাে মতবাদ বা ধারণা গ্রহণ করার আগে হাজারবার তার সারবত্তা যাচাই করে তারা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উদ্ভবের সততা অথবা বােঝানাের সহজবােধ্যতা যা'ই হােক না কেন, মানুষ তাঁর কথা সহজেই  অনুধাবন করতে পারল। আস্তে আস্তে  ছোট স্বেচ্ছাসেবকের দল শতাধিক মানুষের দলে পরিণত হলো।

লােকবলের  কারণে  কাজকর্মে সুবিধা হলো তাদের। আরো সঙ্গবদ্ধ হয়ে ও তথ্য দিয়ে তারা সরকারি স্তরে মানুষের অভাব, অভিযােগ ও চাহিদার কথা গুছিয়ে বলতে শুরু করল । এমনকি খবরের কাগজ কিংবা রেডিওর অফিস পর্যন্ত পৌছে গেল তাদের দাবি দাওয়া। ফলে অচিরেই ফল ফলতে শুরু করল এ প্রচেষ্টার। সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে তাদের উন্নয়নের জন্য অনুদান আসতে শুর করল ক্রমশ। গ্রামে গ্রামে ভালাে স্কুল হল, পাকারাস্তা হল, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি হল। সরকারি আনুকূল্যে হাসপাতাল, ব্যাংক পােস্ট অফিস হল। রাতপুর গ্রাম ও তার আশপাশটা ক্রমে বিখ্যাত হয়ে উঠল দৃষ্টান্ত স্থাপনের কারণে। আর ঠিক এই সময়টাতেই ঘটল বিপত্তি।

পৃথিবীর সব দেশে, সব পরিস্থিতিতে শাসকের গানে একই সুর। 'আমিই সব, আমার হাত দিয়েই সব হবে। সব কৃতিত্ব আমার। সব ব্যার্থতার দায় বিরােধীদের।' একক প্রচেষ্টায় অর্জিত উদ্ভবদের সাফল্য, সুতরাং সরকার ও প্রশাসনের নজর এড়াল না। তার সাফল্য, তার  তৈরি করা সমষ্টির শক্তিকে নিজেদের কৃতিত্ব বলে জাহির করার জন্য প্রশাসন বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিতে শুরু করল। প্রাথমিকভাবে উদ্ভবদের মটো ছিল, 'কিছু হওয়ার চেষ্টা করাে না। কিছু কর!' হওয়ার স্বপ্নে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে হতাশ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা, কিন্তু করার স্বপ্ন একটা নেশার মতাে। একশাে বারের চেষ্টায় যদি দশ ভাগও করা যায় কোনাে কাজের, তাতে পৃথিবী ও মানুষের মঙ্গল এবং নিজের সন্তুষ্টি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার দলীয় সদস্যদের বােঝানো শুরু হলো,  এ যাবৎ কাল পর্যন্ত যে কাজ তারা করেছে, সরকারি তরফে তার স্বীকৃতি পাওয়ার যােগ্য তারা এবং সেইসঙ্গে সরকারি স্বাচ্ছন্দ্য, আনুকূল্য এবং আর্থিক সহায়তাও। চাকরির সমতুল্য সরকারি পদও পেতে পারে চাইলে।
ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ এবং স্বচ্ছলতার লােভ আচ্ছা আচ্ছা আদর্শবান চরিত্রবান মানুষকেও বিপথে নিয়ে গেছে । এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না । বিদ্বান, বুদ্ধিমান ও সংস্কৃতিমনস্ক মানুষের একটা অহং থাকে, যে কারণে তাঁরা সবার সঙ্গে মিশতে পারেন না। কিন্তু সম মানের মানুষেরা তাঁরা নীতিবাগিশ বা দুর্নীতিগ্রস্ত যাই হন না কেন, তাঁদের সঙ্গে সহজেই মিশে গিয়ে বন্ধু হয়ে তাঁদের আদর্শচ্যূত অমানুষ বানিয়ে দিতে পারেন । প্রশাসন তােষামোদী ও সুবিধাভােগী বুদ্ধিজীবীদের কৌশলে তাদের পক্ষে নিয়ে এসে উন্নয়নের গতিকে শ্লথ করে স্থানীয় উন্নয়নের গতিকে  শ্লথ করে দিলো। রাজা চান রাজ্যের বিস্তার । তাঁর নামে ঢাক পেটানাে। কোন প্রজা কী যন্ত্রণায় কোথায় গড়াগড়ি খাচ্ছে তাতে তার কী এল গেল?  ফলত সে রামও গেল সে অযােধ্যাও গেল ধীরে ধীরে। কাজের মানুষেরা বাজে মানুষ হয়ে কাজ ছেড়ে বাগাড়ম্বরে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

অঢেল প্রতিশ্রুতি দেওয়া মডেল গ্রাম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে চলতে রসদের অভাবে থমকে দাঁড়িয়ে গেল  অন্ধকার রাস্তার ধারে।

নীতি থেকে বিচ্যুত সদস্যেরা টাকা তােলে, কিন্তু তা পৌঁছয় না জায়গা মতাে । 'সমাজসেবী'দের পেল্লাই সব বাড়ি হয়। চামড়া চকচকে হয়। গায়ে ভালাে জামা। পেটে ভালাে খাবার। গাড়ি চড়ে ঘুড়ে বেড়ায় তারা। মুখােশের আড়াল থেকে ঘুম ঘুম পিটপিটে চোখে সব দেখে চক্রান্তকারীর দল।

ইউরোপের মডেলে আদর্শ গ্রাম আর হয়ে ওঠা হয়নি রাতপুর গ্রামের। অর্জিত জীবনের মানকে ধরে রাখতেই তাদের হিমসিম অবস্থা এখন। রাজা আছে। রাজার আশ্রিতরা আছে। সরকারি প্রতিশ্রুতি, তা'ও আছে, এবং তা যে পূরণ হওয়ার নয় সে ধারণাও আছে গ্রামবাসীদের।


আসলে সবকিছু মিলেই তাে ইতিহাস, তা সে গর্বের বা কলঙ্কের যাই হােক না কেন। মাদার টেরেসা, চার্লস শােভরাজ, দুজনেই এই পৃথিবীর সন্তান। দুজনেরই খ্যাতি আকাশচুম্বি। এক জনের সু’, আর এক জনের কু’। খ্যাতিই যদি যােগ্যতা বিচারের মাপকাঠি হয় তাহলে তাে বলতে হয় এক্ষেত্রে দুজনেই সমান সফল। আজীবন আদর্শবান থেকে যাওয়া মানুষদের চলতি কথায় বলা হয় নির্বোধ । তাঁরা গুছােতে পারেন না। তা দেখে অসৎ বুদ্ধিমানেরা হাসে । এরকম ভাবেই চলে।  চলবে। সৎ আদর্শবাদী নামে পরিচিত বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর একদিন সত্যিই মুছে যাবে এ পৃথিবী থেকে। তাদের ইতিহাসও হয়তাে হেলায় ছিঁড়ে ফেলবে ভবিষ্যতের বাস্তববাদীরা , কিন্তু একদিন মানুষ ও পৃথিবীর ভালাের জন্য যে অসম লড়াইটা তাঁরা করেছিলেন তা কি আর এত সহজে মুছে ফেলা যাবে মুষ্টিমেয় হলেও কিছু মানুষের স্মৃতি থেকে?  চিটফান্ডের মালিক রিয়েল এস্টেটের স্রষ্টা, এরা নিতান্তই দুর্ভাগা, যারা অহরহ মানুষের লােভ ও লালসার স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে অস্ত্র করে ধ্বংস করে চলেছে মানব সভ্যতাকে। দুর্বলচিত্ত মানুষ আদর্শকে জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য করছে,   তাদের ছদ্মসুখে থাকার  হীন প্রবৃত্তিকে চাগিয়ে ফিয়ে।  আর এসব চলছে কালাে পর্দার আড়ালে থেকে। বড় লজ্জা। বড় লজ্জা। এ খেলার, এ পথের শেষ কোথায় ?

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments