জ্বলদর্চি

সনাতন ঋষি-মুনি, বেদ-উপনিষদ এবং এক মহৌষধী - "সোমরস"(উৎসব১৪২৮)/ প্রসূন কাঞ্জিলাল

সনাতন ঋষি-মুনি, বেদ-উপনিষদ এবং এক মহৌষধী - "সোমরস" 

প্রসূন কাঞ্জিলাল


প্রাচীনকালে অনেক ধার্মিক লোক ছিলেন ৷ তাদের মধ্যে অনেকে অরণ্যে বসে ঈশ্বরের তপস্যা করতেন৷ তাদের কোনো লোভ লালসা ছিল না ৷ তারা তপস্যার দ্বারা লোভ লালসা জয় করেছিলেন৷ ধর্ম সম্পর্কেও তাদের অনেক জ্ঞান ছিল৷ তাদের বলা হতো মুনি৷ যেসব ঊচ্চস্তরের মুনি তপস্যাবলে বেদমন্ত্র প্রকাশ করতে পারতেন তাঁদের বলা হতো ঋষি ৷ বেদের কবিতাগুলোকে বলা হয় মন্ত্র ৷ মুনি-ঋষিরা ছিলেন সেকালের শিক্ষক , জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের উদ্ভাবক ৷ কয়েকজন বিখ্যাত মুনি-ঋষি হলেন ---অত্রি, কশ্যপ, গৌতম, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র , কণ্ব , মৈত্রেয়ী,গার্গী প্রভৃৃৃৃতি৷

প্রাচীন প্রার্থনাগাথা বেদ-এর প্রাচীন ঋক থেকে (বেদপংক্তির যজ্ঞীয় ব্যবহার-বিষয়ক ব্রাহ্মণ ও অরণ্যচারীদের প্রয়োজনীয় বেদপংক্তি-সংকলন আরণ্যক হয়ে ) জ্ঞানান্বেষী উপনিষদ পর্যন্ত বিস্তৃত হিন্দুশাস্ত্ররাশির রচয়িতা বা দ্রষ্টা সকলে ঋষি বা ঋষিকা ব'লে পরিচিত ছিলেন।

তৈত্তিরীয় আরণ্যক এ বলা হয়েছে :---

"তপ বা গভীর ধ্যানের সাহায্যে যারা বৈদিক মন্ত্রার্থ বুঝতে পারে তাদেরকে সর্বশক্তিমানের কৃপায় ঋষি বলা যায় ।"

বেদের শব্দসংকলক "যাস্ক" তার  "নিরুক্ত" গ্রন্থে বলেছেন যে :------

ধর্মজ্ঞানী ব্যক্তিরাই (মন্ত্র)দ্রষ্টা বা ঋষি বা বৈদিক মন্ত্র যারা অনুধাবন করতে সক্ষম তারাই ঋষি।

ঋষিদের মননশীল সুদীর্ঘ জ্ঞানযাত্রা :----

প্রায় ছ'সহস্রাধিক বছরের সুদীর্ঘ যাত্রাটির শুরু হয়েছিল নক্ষত্রাদির প্রতি অগ্নিকে বাহক কʼরে ঋষিদের গোত্র বা বংশ-পরম্পরা অনুসরিত অজস্র পূরণমূলক আকাঙ্খা ও ধারণাশ্রয়ী অভিজ্ঞতার যৌথায়নে নির্মিত সূক্তমালা দিয়ে ।

অতঃপর সকল বৈপরীতাদিকে সমন্বয় এর গোলকধাঁধার মায়াবী চমকাদির সাহচর্য্যেই অবশেষে জ্ঞানান্বেষী উপনিষদসমূহের মননশীল চলমানতায় প্রাপ্ত একেশ্বরমুখী গন্তব্যে এসে একীভূত ও স্থিত । ঋষিদের মধ্যে প্রাচীনতম হচ্ছেন ঋগ্বেদীয় ঋষিরা । 

এদেরই একজন "সংবনন ঋষি" বলছেন :----

"আকূতিসব একই হোক
হৃদয়াদি একই হোক
মনেরা সব একই হোক।"

'ঋষ্’ ধাতুর অনেকগুলি অর্থের মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে ঊধর্বগতি অর্থাৎ ওপরের দিকে ওঠা ৷ কোন বাড়ীর একতলা থেকে ওপরে ওঠার জন্যে এই ‘ঋষ্’ ধাতু ব্যবহৃত হয়৷ ‘ঋষ্’ ধাতুূ ‘ইন্’ করে ‘ঋষি’ শব্দ পাচ্ছি যার ভাবারূূরার্থ হচ্ছে যিনি ওপরের দিকে ওঠেন আর যোগারূূরার্থ হচ্ছে উন্নতমানস.....উন্নতধী...উন্নত ভাবনার পুরুষ৷ ‘ঋষি’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ ‘ঋষ্যা’ হলেও অভিন্নলিঙ্গ ‘ঋষি’ শব্দটিও চলতে পারে৷ অর্থাৎ কোন পুরুষকে যেমন ‘ঋষি’ বলা যায় কোন নারীকেও তেমনি ‘ঋষি’ বলা যেতে পারে আবার ‘ঋষ্যা’ তো চলতেই পারে। উন্নত চেতনার মানুষদের ঋগ্বেদীয় যুগ থেকে ‘ঋষি’ বলে আসা হয়েছে৷ প্রতিটি মন্ত্র যেমন একটি ছন্দে রচিত, অধিকাংশ মন্ত্র যেমন পরমপুরুষের একটি বিশেষ নামে সম্বোধিত, তেমনি প্রতিটি মন্ত্রেরই একজন করে দ্রষ্টা–ঋষি থাকতেন যিনি তাঁর সাধনায় বা ধ্যানধারণায় সত্যকে উপলব্ধি করে তা শিষ্যকে কানে কানে শুনিয়ে দিতেন (গোড়ার দিকে অক্ষর ছিল না৷ তাই লিখে শেখানো সম্ভব ছিল না৷ যেহেতু লিপি ছিল না তাই ‘লেখক–ঋষি’ বলা হত না–বলা হত দ্রষ্টা–ঋষি, অর্থাৎ যে ঋষি ধ্যানে সত্যকে দেখেছেন)৷

ঋগ্বেদীয় যুগ থেকে ঋষিদের মুখ্যতঃ  সাতটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে ৷ 

এই সাতটি শ্রেণি হলো -- ব্রহ্মর্ষি,দেবর্ষি,মহর্ষি,পরমর্ষি, কান্ডর্ষি, শ্রুতর্ষি,রাজর্ষি৷

১-ব্রহ্মর্ষি----ব্রহ্ম বা ঈশ্বর সম্পর্কে যাঁদের বিশেষ জ্ঞান আছে তাদেরকে বলা হয় ব্রহ্মর্ষি ৷এমন এক ঋষির নাম হলো বশিষ্ঠ৷ যাঁরা আজীবন আধ্যাত্মিক এষণাতে জীবন অতিবাহিত করে দিতেন তাঁদের বলা হত ব্রহ্মর্ষি (যেমন ব্রহ্মর্ষি কণ্ব, অথর্বা প্রভৃতি)৷ অথর্ববেদের সময় অথর্ববেদের প্রবক্তা বা আদি পুরুষ (বৈদিক ভাষায় ‘আদর্শ পুরুষ’) অথর্বাকে ব্রহ্মর্ষি বলে মর্যাদা দেওয়া হ’ত৷ আর মহর্ষির মর্যাদায় সম্মানিত হতেন বেশ কয়েকজন ঋষি৷ তাঁদের মধ্যে আট জনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য৷ তাঁরা হলেন–মহর্ষি অত্রি, অঙ্গিরা, অঙ্গিরস, পুলহ, পুলস্ত, সত্যবাহ, বশিষ্ঠ ও বৈদর্ভি৷ যাঁরা ভাবেন বেদ সামগ্রিকভাবে বহির্ভারতে রচিত তাঁদের এই ভাবনা নিরঙ্কুশ হতে পারে না৷ অন্ততঃ অথর্ববেদের ক্ষেত্রে তো নয়–ই৷ বৈদর্ভি নামটিতেই প্রমাণিত হয় যে তিনি ছিলেন বিদর্ভের অর্থাৎ নাগপুর–মরাবতী অঞ্চলের মানুষ৷ মহর্ষি বৈদর্ভি মধ্য এশিয়ায় গিয়ে সেখানে বসে বসে অথর্ববেদ তৈরী করেছিলেন এমন কথা বলা কিছুটা কষ্টকল্পিত৷ তবে হ্যাঁ, সামগ্রিকভাবে অথর্ববেদ এদেশে রচিত নাও হয়ে থাকতে পারে৷ মহর্ষি অথর্বা অথর্ববেদের আদর্শ পুরুষ ছিলেন৷ তাঁকে প্রাচীন পুরুষ হিসেবেও শ্রদ্ধা করা হত৷ এখনও আমরা অধিক বয়স্ক্ মানুষের সম্বন্ধে বলে থাকি, ‘‘তিনি অথর্ব হয়ে পড়েছেন’’৷

২--দেবর্ষি --যিনি দেবতা হয়েও ঋষি তাকে বলা হয় দেবর্ষি৷ দেবর্ষি স্বর্গে বাস করেন৷ যাঁরা দেবকুলে (নর্ডিক, এ্যলপাইন অথবা মেডিটারেনিয়ান উপবর্গীয় ও ককেশীয় বর্গীয় কুলে) জন্মগ্রহণ করে সাধনার দ্বারা আধ্যাত্মিক চেতনায় অধিষ্ঠিত হতেন তাঁদের বলা হত দেবর্ষি (যেমন, দেবর্ষি নারদ) । 

৩--মহর্ষি- ঋষিদের মধ্যে যারা প্রধান ও মহান তাদের বলা হয় মহর্ষি৷এমন এক ঋষির নাম হলো ব্যাসদেব৷ যে সকল মানুষ তাঁদের জাগতিক কর্ত্তব্য যথাবিধি সম্পাদন করার সঙ্গে সঙ্গে ঊধর্বতর জগতের খোঁজে ধ্যান–ধারণা–সাধনা (আরণ্যক ও উপনিষদ) প্রভৃতি করতেন ও তৎসহ সেই অধ্যাত্ম মার্গে সিদ্ধিলাভ করে জগতের সেবা করতেন তাঁদের বলা হত মহর্ষি (যেমন, মহর্ষি বিশ্বামিত্র)৷

৪--পরমর্ষি--পরম ব্রহ্মকে যিনি দর্শন করেছেন তিনি পরমর্ষি৷এমন এক  ঋষির নাম হোলো পৈল৷

৫-কান্ডর্ষি-- বেদের দুটি কান্ড৷ কর্মকান্ড ও জ্ঞানকান্ড৷ কর্মকান্ডে আছে যাগযজ্ঞের কথা ৷আর জ্ঞানকান্ডে আছে জ্ঞানের কথা ও ব্রহ্মের কথা ৷বেদের কোনো কান্ড সম্পর্কে  জ্ঞানী ঋষিদের বলা হয় কান্ডর্ষি ৷যেমন--জৈমিনি, বেদের কর্মকান্ডের ব্যখ্যা করেছেন৷

৬-শ্রুতর্ষি--বেদ ঈশ্বরের বাণী ৷ঋষিরা তপস্যা করে বেদমন্ত্র লাভ করেছেন৷কিন্তু এভাবে সকল ঋষি বেদমন্ত্র লাভ করেন নি৷ কেউ কেউ অন্য ঋষির কাছ থেকে শুনেছেন৷ যারা শুনে শুনে বেদমন্ত্র লাভ করেছেন তাদের বলা হয় শ্রুতর্ষি ৷এমন এক ঋষির নাম হলো সুশ্রুত ৷

৭-রাজর্ষি--রাজা হয়েও  যিনি ঋষি তাকে বলা হয় রাজর্ষি৷ তিনি ঋষির মতো জ্ঞানী৷ ঋষির মতো আচরণ করেন৷ যাঁরা জাগতিক কর্তব্যের অতিরিক্ত সামাজিক কর্তব্য (যেমন, রাজা) প্রতিপালনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের হৃদয়বৃত্তিকে...মনীষাকে আধ্যাত্মিক চেতনায় অভিক্লপ্ত করতেন ( হৃদামনীষা মনসাহভিক্লপ্তঃ ) তাঁদের বলা হত রাজর্ষি  (যেমন, রাজর্ষি জনক) । এমন এক ঋষির নাম রাজা জনক। 

মনে রাখা দরকার, ‘ঋষি’ আর ‘মুনি’ এক জিনিস নয়৷  ‘মুনি’ শব্দ মুখ্যতঃ দু’টি অর্থে ব্যবহূত হয়ে থাকে৷ ‘মুনি’–র একটা মানে হচ্ছে ‘মননশীল সত্তা’৷ অর্থাৎ  intellectual ‘মুনি’–র দ্বিতীয় মানে হচ্ছে যিনি তাঁর মনকে পরমপুরুষে সংলীন করে রেখেছেন–
‘‘ন মুনির্দুগ্ধৰালকঃ মুনিঃ সংলীনমানসঃ৷’ ( ‘‘ শব্দ চয়নিকা’’ দ্বিতীয় খণ্ড। )

হিন্দু মতে- যিনি জ্ঞানমার্গ অবলম্বনে সংসার ত্যাগ করতে পারেন তিনিই ঋষি। অথবা পরমার্থ তত্ত্বে যিনি সম্যক দৃষ্টি রাখেন তিনিই ঋষি। তবে মন্ত্রদ্রষ্টা মুনি, বেদমন্ত্র-রচয়িতা, তাপস, জ্ঞানী, সাধু, তন্ত্রোক্ত মন্ত্রের উপাসনায় সিদ্ধ ইত্যাদি গুণের অধিকারীরাই ঋষি নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। হিন্দু শাস্ত্রমতে ঋষি সাত প্রকার। যথা- শ্রুতর্ষি, কাণ্ডর্ষি, পরমর্ষি, মহর্ষি, রাজর্ষি, ব্রহ্মর্ষি ও দেবর্ষি।

আদি  রামায়ণে উক্ত সাত প্রকার ঋষি ছাড়াও আরও প্রায় ২০ প্রকার ঋষির নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন-

১। বৈখানস : যাঁরা ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপন্ন।

২। বালখিল্য : যাঁরা ব্রহ্মার লোম থেকে উৎপন্ন।

৩। মরীচিপ : যাঁরা সূর্যকিরণ পান করে জীবনধারণ করেন।

৪। সংপ্রক্ষাল : যাঁরা বিষ্ণুর পাদপ্রক্ষালন জল থেকে উৎপন্ন।

৫। অশ্মকুট্ট : যাঁরা অপক্বকুট্টিতান্ন ভোজনে জীবনধারণ করেন।

৬। আকাশনিলয় : যাঁরা সবসময় অনাবৃত স্থানে বাস করেন।

৭। অনবকাশিক : যাঁরা কোন পা পরিবর্তন না করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।

৮। দন্তোলূখল : যাঁরা আহারের সকল দ্রব্য দাঁত দ্বারা পেষণ করে ভক্ষণ করেন।

৯। অশয্যা : যাঁর কখনো শয়ন করেন না বা ঘুমান না।

১০। পত্রাহার : যাঁরা গাছের পাতা ছাড়া আর কিছু খান না।

১১। উন্মজক : যাঁরা আকণ্ঠ জলে দাঁড়িয়ে থেকে ভগবানের ধ্যান করেন।

১২। গাত্রশয্যা : যাঁরা মাটিতে শয়ন  করেন।

১৩। বায়ুভক্ষক : যাঁরা বাতাস ভক্ষণ  করে জীবনধারণ করেন।

১৪। জলাহার : যাঁরা জল গ্রহণ করে  জীবনধারণ করেন।

১৫। আদ্রপট্টবাস : যাঁরা ভেজা কাপড়ে অবস্থান করেন।

১৬। স্থণ্ডিলশায়ী : যাঁরা যজ্ঞস্থলের মাটিতে শয়ন করে রাত্রি যাপন করেন।

১৭। উধ্ববাস : যাঁরা গিরি শিখরে অবস্থান করেন।

১৮। তপোনিষ্ঠ : যাঁরা সকল সময় তপে নিযুক্ত থাকেন।

১৯। পঞ্চতাপান্বিত : যাঁরা গ্রীষ্মকালে পঞ্চতাপের মধ্যে তপস্যা করেন।

২০। সজপ : যাঁরা সর্বদা জপ করেন। ইত্যাদি। 

এছাড়া মহাভারতে বানপ্রস্থ, ফলাহারী, মূলাহারী প্রভৃতি আরো কয়েক প্রকার ঋষির নাম পাওয়া যায়।

শৌণক তাঁর "বৃহদ্দেবতা" নামক গ্রন্থে ঋগ্বেদ রচয়িতৃ ঋষি/ঋষিকাদেরকে তাদের রচিত ঋক ও সূক্তের ভাব ও বিষয় অনুযায়ী দেবোপাসক , ঋষি-দেববাচী ও আত্মস্তুতক - এ তিন শ্রেণীতে বিন্যস্ত করেছেন ।

ক) দেবোপাসক -----
খ) দেব-ঋষিবাচী ------
গ) আত্মস্তুতক ------

মুনি ঋষিদের অনেক গুণ ৷ তারা সব সময় সকলের মঙ্গল কামনা করেন৷ জগতের মঙ্গল কামনা করেন৷ জগতের মঙ্গলের জন্য  তারা নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দান করতে পারেন৷  তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক জ্ঞানের কথা জানতে জানতে পাই৷ বিশ্বের সকলের মঙ্গলের কথা পাই৷ আমরাও তাদের মতো জ্ঞানী হবো৷ তারা যেমন  সকলের মঙ্গল করেছেন আমরাও তেমনি সকলের মঙ্গল করবো ৷ তাদের মতো ধর্মীয় হবো আমরা ৷ তাদের মতো জ্ঞানী হবার চেষ্টা চালিয়ে যাব।


নশ্বর এই পৃথিবীতে মানুষের চিরকালের আকাঙ্ক্ষা ছিল অমর হওয়ার। শুধুমাত্র এই অমরত্ব লাভের উপায় খুঁজতে অনেকেই নিজের জীবন অতিবাহিত করেছেন। প্রাচীন যুগের যোগীদের থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের গবেষকরা পর্যন্ত সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত পাড়ি দিয়েছেন অমরত্ব লাভের খোঁজে। সন্ধান করেছেন অমৃত সুধা। যা পারে নিজের অস্তিত্বকে সমগ্র মহাজগতের সঙ্গে এক করে ফেলতে, নিয়ে যেতে পারে জাগতিক দর্শনের ঊর্ধ্বে। মানুষকে করতে পারে সর্বশক্তিধর, নিরোগ, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং ধনরত্নপ্রদায়ক।

সোমলতা বা সোমরস তেমনি এক উপাদান। হাজার হাজার বছর ধরে চলছে অনুসন্ধান। গবেষণা চলছে এখনো। কারণ ধারণা করা হয় এই সোমলতা থেকে নির্গত সোমরস মানুষকে এনে দিতে পারে অমরত্ব! সোমরস বৈদিক চিন্তার একধরনের মহাজাগতিক শক্তি। একধরনের আধ্যাত্মিক নীতি। উদ্ভিদ জগতের প্রতিরূপ হলো এই সোমরস।

মূলত সোম হলো গুল্ম বা লতা। এই লতার রস ছিল আর্য এবং প্রাগবৈদিক যুগের ঋষিদের অতি প্রিয় পানীয়। সোমরস বিন্দু বিন্দু করে ক্ষরিত হতো বলে এর নাম দেয়া হয়েছিল "ইন্দু"। এই রস হতে একধরনের উত্তেজক তরল প্রস্তুত হতো। প্রাচীন মুনি-ঋষিদের বিশ্বাস ছিল সোমরস পান শুধু তাদের শক্তি এবং সাহস দেবে তাই নয়; বরং এটি পান করলে ধনার্জনে পারঙ্গমতা লাভ করবে এবং বেড়ে যাবে সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা। সোমরস ছিল যজ্ঞের প্রধান আহুতি।

সোমলতা থেকে সোমরস তৈরি হতো। দেবতাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ করে ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে সোমরস অগ্নিতে আহুতি দেয়া হতো। ঋগ্বেদের নবম মণ্ডলে সোম দেবতা নামে সোমের স্তুতি করা হয়েছে। বলা হয় বহুকাল আগেই সোমলতা বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু তা কতটা ঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। এত জনপ্রিয় পানীয় সত্যিই  কি হারিয়ে গেছে?

লতা অর্থে শুধু পেচিয়ে গাছে জড়ানো উদ্ভিদ নয় বরং শীর্ণ কাণ্ড বিশিষ্ট উদ্ভিদও হতে পারে। বৈদিক যুগে হয়তো তেমনটাই বোঝাত। কেননা বেদে সোমলতার যে গাঠনিক বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার সাথে কাণ্ডবিশিষ্ট উদ্ধিদের মিল পাওয়া যায়।

যেমন:---

১. সোমলতার পাতা বিচিত্রকুশযুক্ত।
 (ঋগ্বেদ, ১/২৩/১৩,১৪) 

২. হে সোম! তোমার যে দুটি পাতা বক্রভাবে অবস্থিত ছিল তদ্বারা তোমার সর্বাপেক্ষা চমৎকার শোভা হয়েছিল।
 (ঋগ্বেদ, ৯/৬৬/২) 

৩. হে সোম, তোমার চতুর্দিকে লতা অবস্থায় যে সকল পত্র বিদ্যমান ছিল তদ্বারা তুমি সকল ঋতুতে সুশোভিত ছিলে। 
(ঋগ্বেদ, ৯/৬৬/৩) 

৪. এ সোম, শৃঙ্গ যূথপতি বৃষভের ন্যায় তীক্ষ্ম।
 (ঋগ্বেদ, ৯/১৫/৪) 

উপরের বর্ণনাগুলিতে বর্তমানের ইক্ষু তথা আখ গাছের সাথে হুবহু মিলে যায়। আখের দুটি পাতা বাকা, আখ একবর্ষজীবী ৩নং. মন্ত্রে তা বলা হয়েছে। আবার এর পাতা ষাড়ের শিং এর ন্যায় ৪নং. এ বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় ইক্ষু যেভাবে কান্ডের মাধ্যমে জন্মায় সোমের ক্ষেত্রেও তাই বলা হয়েছে।

৫. হে সোম, তোমার প্রধান উৎপত্তিস্থান স্বর্গের মধ্যে বিদ্যমান আছে, সেখান থেকে গ্রহণপূর্বক পৃথিবীর উন্নত প্রদেশে তোমার অবয়বগুলি নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, সে স্থানে তারা বৃক্ষরূপে জন্ম নিল।
( ঋগ্বেদ, ৯/৭৯/৪) 

আবার আখ জারিত করে গুড় তৈরির পদ্ধতিটি বর্তমানে যেমন ঠিক একই পদ্ধতির কথা ঋগ্বেদের ১ ও ৯ মণ্ডলের যথাক্রমে ক্রমিক ২৮ ও ৬৬ সূক্তে উল্লেখ করা হয়েছে সোমরসের ক্ষেত্রে।

অন্যদিকে সোমরসের রঙের বর্ণনাও রয়েছে বেদে :-----

৬. এর ধারা হরিৎবর্ণ। 
(ঋগ্বেদ, ৯/৬৬/২৬) 

৭. শুভ্রবর্ণ সোমরসগুলি ক্ষরিত হতে হতে এবং নানাবিধ স্তুতিবাক্য গ্রহণ করতে করতে উৎপাদিত হলেন। 
(ঋগ্বেদ, ৯/৬৩/২৫) 

৮. লেহিতবর্ণ সোমরসকে নিষ্পীড়নের দ্বারা প্রস্তুত করা হল। 
(ঋগ্বেদ, ৯/৮২/১) 

ইক্ষুরস লোহিত, পিঙ্গল কিংবা রস নিষ্কাশনের পর শুভ্র বর্ণ ধারণ করে। একারণে বলা যেতে পারে সোম হয়তো আখেরই অন্য নাম। পরবর্তী সময়ে এর নেশাজাতীয় যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে আখের আড়ালে সোম নামটি চাপা পড়েছে।

কিন্তু যারা সোমকে মদ বলে মনে করেন তাদের জেনে রাখা দরকার যে হিন্দুধর্মে মদ বা যেকোন নেশাকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

"নকী রেবন্তঃ সখ্যায়া বিন্দসে পীয়ন্তি তে সুরস্বঃ। / য়দা কুয়োসি নদানু সমূহস্যাদিত পিতেব হূয়সে"।।

( ঋগ্বেদ, ৮/২১/১৪) 

অনুবাদ:--
তোমার নেশাকারী সঙ্গী অথবা বন্ধু যদি সবচেয়ে বিদ্বান বা ধনীও হয় তারপরও বজ্রপাততূল্য এবং অবশ্য পরিত্যাজ্য।

"সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ্মা চ মলমুচ্যতে। / তস্মাদ্ ব্রাহ্মণরাজন্যৌ বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেৎ।।"

 (মনুসংহিতা, ১১/৯৪) 

অনুবাদ:--
সুরা হল অন্নের মলস্বরূপ, পাপরূপ তাই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় নির্বিশেষে সকলের জন্যই অবশ্য বর্জনীয়।

সোমকে মদ হিসেবে ব্যাপক প্রচলনের দরুণ হয়তো আখের সমার্থক শব্দ সোম হারিয়ে গেছে। আজকের আখই হয়তো বেদের সোম জাতীয় উদ্ভিদ। ঋগ্বেদে সমস্ত নবম মণ্ডল সোমের স্তবে পরিপূর্ণ। সোম বন্দনার সুক্ত সংখ্যা ১২০। এর বাইরে অন্য ছয়টি সুক্তে অগ্নি, ইন্দ্র, পূষা এবং রুদ্র দেবতার সঙ্গে সোমের স্তব করা হয়েছে।

পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাচীন আখ্যানে অমরত্ব প্রদানকারী রূপে কোনো না কোনো বনস্পতির উল্লেখ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এমনকি "প্লিনি" র রচনাতেও অমরত্ব প্রদানকারী "অ্যাম্ব্রোসিয়া" বা অমৃত শব্দ বিভিন্ন বনস্পতির প্রতি নির্দেশক। বনস্পতির দীর্ঘকালীন জীবন, প্রাচীন মানবদের নিকট চিত্রিত হয়েছিল - বনস্পতি মরণহীন রূপের প্রতিচ্ছবিতে। মানুষ সম্ভবত এ রকম দীর্ঘজীবী বৃক্ষগুলোকে দেখে প্রথম অমরত্ব লাভের কল্পনা করতেও শুরু করে।

পৃথিবীব্যাপী বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকায় বেশকিছু পাইন ও অলিভ বৃক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়। যেগুলোর বয়স কয়েক হাজার বছর। অদ্যাবধি প্রাপ্ত তথ্যের নিরিখে, পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবিত প্রাণের একটি হলো "স্প্রুস গোত্রের বৃক্ষ"। যার অবস্থান সুইডেনে। ওল্ড টিজেআইকেকেও নামে পরিচিত। এই বৃক্ষের বয়স আনুমানিক প্রায় ৯ হাজার ৫ শত ৫০ বছর বলে ধারণা করা হয়। গবেষণা চলছে, হতে পারে এই প্রাচীন কোনো বৃক্ষের মাঝেই লুকিয়ে আছে চীরাকাঙ্ক্ষিত অমরত্বের রহস্য !

উৎপত্তিস্থল:---

তবে আধুনিক ধারণায় সোম আসলে শুধু একটি উদ্ভিদ নয়। যদিও একসময় নির্দিষ্ট কোনো স্থানে প্রাথমিকভাবে সোম উদ্ভিদ বা সোমলতার অস্তিত্ব ছিল বলে প্রাচীন গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। ঋগ্বেদ অনুযায়ী বিভিন্ন বিশেষ উদ্ভিদের পরিমাণ মতো মিশ্রণেও তৈরি হয় সোমরস (ঋগ্বেদ ১০/৯৭/৭)। 

এ ছাড়াও ঋগ্বেদে সোমের আরো কিছু ধরনের কথাও উল্লেখ রয়েছে। যেমন, হিমালয় থেকে উৎপন্ন হিমবাহের জল। 
(ঋগ্বেদ ৬/৪৯/৪)। 

বেদ অনুসারে অগ্নি বা আগুনের প্রতিটি রূপের মধ্যেও রয়েছে সোম। এই ক্ষেত্রে মহাবিশ্বের সর্বত্রই সোমের উপস্থিতি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এমনকি অগ্নি এবং সোম, চীনা ‘ইন অ্যান্ড ইয়ং’ দর্শনের সমতুল্য।

প্রাচীন গ্রন্থে সোমরসের বর্ণনা অনুযায়ী, সোমরস শুভ্র-বর্ণ, ঈষৎ অম্ল ও মাদকতাজনক। যার জন্মস্থান মুজবান পর্বত কিংবা সরস্বতী নদী। বলা হয় স্বর্গ হতে শ্যানপক্ষী সোম আহরণ করে এনেছিলেন। এরপর সোমকে পর্বত হতে শকটে করে যজ্ঞ স্থানে আনা হতো। পরে পাথর বা লোহা দ্বারা ছেঁচে সোমরস নিষ্কাশন করা হতো। রস নিষ্কাশনের একটি পদ্ধতিও ছিল। দুই হাতের দশ আঙুল দিয়ে চেপে রস নিঙড়ানো হতো। পরে ‘তনা’ নামে মেষলোম - নির্মিত ছাঁকনি দ্বারা ছেঁকে দুগ্ধ মিশ্রিত করে সোমরস পান করা হতো। এটি ছিল অমরত্ব লাভের লুকায়িত জ্ঞান। যা যুগে যুগে মানুষেরা নিজেদের ভেতর ধারণ করে এসেছিলেন।

আধুনিক পণ্ডিতদের মতে "এফেড্রা" থেকে সোমরস তৈরি হয়। আফগানিস্তান এবং ইরানে এফেড্রা খুবই পরিচিত উদ্ভিদ। ফারসিদের কাছে এফেড্রাই ছিল সোম উদ্ভিদ। এমনটাই ধারণা করা হতো। বর্তমান যুগেও ভারতের কিছু অংশে এফেড্রা র অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। যা সোমলতা নামে পরিচিত। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু মতভেদ রয়েছে। সোম নিঙড়ালে দুধের মতো রস নির্গত হয়। কিন্তু এফেড্রা শুকনো উদ্ভিদ যা থেকে সামান্য পরিমাণে রস নির্গত হয়। তাই এফেড্রা থেকে সোম রস তৈরির যুক্তি খুব বেশি গ্রহণযোগ্যও হয়নি। 

প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে পৃথিবীব্যাপী সোমের সন্ধান খুঁজে চলেছেন গবেষকরা। তার মধ্যে বিগত আড়াইশ বছর ধরে বিশেষভাবে আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানদের মধ্যে চলছে সোম রস খোঁজার চেষ্টা।

চালর্স উইন্সকিনের মতে ,---  "সোম একপ্রকার লতাজাতীয় বনস্পতি। যা যজ্ঞ অনুষ্ঠানের অন্তিম পর্যায়ে পশুবলির পর সোম রস পান করা হয়।"

গ্রিক জেনারেল জেনোফেন ৪০১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তার গবেষণায়---- তিনি মধুকে সোমরস বলে ভুল করেন।

১৮৫৫ সালে ম্যাক্সমুলার একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক শ্লোক উদ্ধার করেন। সেই শ্লোক অনুযায়ী সোম কৃষ্ণ-বর্ণ, শুভ্র-বর্ণ, ঈষৎ অম্ল ও মাদকতাজনক। সোমরস নিয়ে এটিকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সঠিক বর্ণনা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। 

এছাড়া ড. ওয়াল্টার রক্সবার্গ, জর্জ স্টিফেনসন, ড. ডেভিড ফ্রোলে বিভিন্ন সময় সোমলতা এবং সোমরস আবিষ্কারে নিয়োজিত ছিলেন।

অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমরস "অ্যামানাইটা মাসকারি"  মাশরুম থেকে তৈরি হয়। যার উৎপত্তি স্থল সাইবেরিয়াতে। বেদে সোমকে ভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যার পাতা রয়েছে। কিন্তু মাশরুমের কোনো পাতা হয় না।

এছাড়া অথর্ব বেদে বলা হয় (অথর্ব বেদ ১১/৬/১৫) -- কিছু উদ্ভিদ যেমন মারিজুয়ানা বা গাঁজা, যব অথবা দূর্বা থেকে সোম অনেক উন্নত। কিন্তু ডারভা বা দূর্বার, মারিজুয়ানার মধ্যে সোমের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্যান্য উদ্ভিদ যেগুলো সোমের সাথে সংযুক্ত সেগুলো হলো পদ্ম এবং শাপলা। সোমের মতো এই উদ্ভিদগুলো পিষলে এদের থেকেও দুধের মতো রস নির্গত হয়। সোমরস সুমিষ্ট, এই রস যেমন পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো-তেমন দুধ, দধি ও ক্ষীরে দেয়া হতো মিষ্টতার জন্য। এই কারণেও হয়তো সোমকে মধুও বলা হয়ে থাকে।

আয়ুর্বেদে বিভিন্ন রোগনাশক ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদের নাম হিসাবে সোমকে বর্ণনা করা হয়েছে। বর্তমান আয়ুর্বেদে সোম উদ্ভিদ বলতে কোনো একটি বিশেষমাত্র উদ্ভিদকে চিহ্নিত করে না। 

সোম উদ্ভিদ মানে উদ্ভিদগোষ্ঠীর প্রায় ২৪ ধরনের বিভিন্ন উদ্ভিদের সমন্বয়। সোম গোষ্ঠীর উদ্ভিদগুলোর ভেষজ গুণাগুণ সম্পর্কে বৈদিক ঋষিরা খুব ভালোভাবে পরিচিত ছিলেন।

সোমলতা মস্তিষ্কের সঙ্গে দেহের আত্মিক এক সম্পর্ক তৈরি করে - যা যোগাসন, প্রাণায়াম অথবা ধ্যান করতে  সাহায্য করে।

সোমকে প্রাচীন এবং পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে ধরা হয়। যা আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধিকারী, অনুপ্রেরণাদায়ক এবং বুদ্ধিবৃত্তি উন্নয়নকারী। ধারণা করা হয় প্রতিটি সম্প্রদায়ে অথবা ভৌগলিক অঞ্চলে তাদের নিজস্ব সোমলতা রয়েছে।

ঋগ্বেদের ষষ্ঠ মণ্ডলের ৪৭ নম্বর সূক্ত:-- ‘এই সোম পীত হইয়া আমার বাক্যের স্ফূর্তি বিধান করিতেছে। ইহা অভিলষিত বুদ্ধি প্রদান করিতেছে।’ কী সহজসরল বাস্তব অনুভূতি!

কিন্তু সোমরস জিনিসটা ঠিক কী? সম্ভবত আফগানিস্থান, পাকিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে "এফিড্রা সিনিকা" নামের এক লতা। কিন্তু পণ্ডিতেরা এখনও নিশ্চিত নন। আপাতত, তাঁদের ওই ব্যর্থতার জন্যই আমরা যথার্থ সোমরস পান করতে পারিনি , রাম-হুইস্কি আর কালী মার্কাতেই তৃপ্ত থাকতে হয়।

চাঁদনি রাতে এই লতাটাকে মূলসুদ্ধু উপড়ে, ছাগলে-টানা গাড়িতে নিয়ে আসা হত যজ্ঞস্থানে। আমাদের চেনা ব্যা-ব্যা করা ছাগল নয়। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আফগানিস্থানের তাগড়াই পাহাড়ি ছাগল। যজ্ঞস্থলে আগে থেকেই ঘাস আর কাঠকুটো দিয়ে একটা জায়গা করা থাকত। সেখানে ওই সোমলতাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পাথরে পেষা হত। তার পর ওই পিষে-যাওয়া লতাগুল্মকে পশমের ছাঁকনিতে রেখে দশ আঙুলে চটকানো হত। আর্যরা যথার্থ ‘কনয়সিয়র’ ছিলেন।

 ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে ৯৪ নম্বর সূক্তে ---  সোমলতা পেষাই করার পাথরগুলির প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাঁরা, ‘এই অবিনাশী প্রস্তরদিগের গুণকীর্তন কর। দশ আঙুল যখন সোমরস নিষ্পীড়ন করার সময় এদের স্পর্শ করে, পাথরটাকে মনে হয় দ্রুতগামী ঘোড়া। দশটি রজ্জু তাদের টেনে নিয়ে চলেছে।’

পাথরে ছেঁচা, ঈষৎ হলুদরঙা ওই রস এ বার দুধে মিশিয়ে টানা ৯ দিন ধরে গাঁজানো বা জারিত করা হত। তার পরই তৈরি হত দেবভোগ্য সোমরস। আর কত যে সযত্নে রাখা হত তাকে! কাঠের পাত্রকে বলা হত ‘গ্রহ’। আর মাটির পাত্রকে ‘স্থালী’। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যা... তিন বার সোম নিষ্কাশন করা হত। কে ক’বার টানবেন, তারও নিয়ম ছিল। যজমানেরা শুধু সন্ধ্যাবেলায়, আর যজ্ঞের পুরোহিত বা ঋত্বিকেরা তিন বারই। ঋত্বিকদের কী আর দোষ? বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, ভরদ্বাজ প্রমুখ মুনিঋষিদের আশ্রমেও মদের ভাল যোগান ছিল। রামায়ণে ভরদ্বাজ ঋষির আশ্রমে অতিথিরা এসে হাজির হলে, ভরদ্বাজ বললেন, “আমি ইন্দ্রাদি তিন লোকপালকে আহ্বান করিতেছি, তাঁহারা আমার অতিথি সৎকারের ইচ্ছাপূরণ করুন। মৈরেয় মদ্য এবং সুসংস্কৃত সুরা প্রবাহিত করিতে থাকুন।”

মেয়েরাও কম যেতেন না। বনবাসকালে রামচন্দ্র সীতাকে নিয়েই মৈরেয় মদ্য পান করেছিলেন। ভরদ্বাজের আশ্রম থেকে বেরিয়ে রাম, লক্ষ্মণ, সীতা চিত্রকূট পর্বতের দিকে যখন যাচ্ছেন, মাঝে ভেলায় করে যমুনা নদী পেরোতে পেরোতে মা জানকী দিব্যি দিলেন, ১৪ বছর পর ভালোয় ভালোয় অযোধ্যা ফিরে এলেই পুজো দেবেন। ১০০ টি গরু আর হাজার ঘড়া মদ্য দিয়ে। "সুরাঘটসহস্রেণ"!

শুধু কী মাতা সীতা? মহাভারতে আদিপর্বের শেষ দিকে মদালসা দ্রৌপদী আর সুভদ্রার চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন ব্যাসদেব। কৃষ্ণ, অর্জুন, দ্রৌপদী, সুভদ্রা তাঁদের বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে এক বার যমুনার ধারে প্রমোদভ্রমনে গিয়েছেন। একটু পরে এখানেই অগ্নিদেব কৃষ্ণ আর অর্জুনের কাছে আসবেন, খাণ্ডবদাহন ঘটবে। কিন্তু দিনের শুরুতে, যমুনাতটে ? কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রায় নিরামিষ ঢঙে জানান, ‘দ্রৌপদী ও সুভদ্রা বিচিত্র বসন ও নানাবিধ অলঙ্কার কামিনীগণকে প্রদান করিলেন।’ কিন্তু সেটি  ঘটনা নয়, বিবেক দেবরায় সম্প্রতি মহাভারতের প্রামাণ্য সংস্করণের ইংরেজি অনুবাদে আসল ঘটনাটি ফাঁস করে দিয়েছেন, ‘...expensive food and drinks were spread out. In great intoxication, Droupadi and Subhadra gave away expensive garments and ornaments to the women.’ মত্ত মেয়েরা কেউ তখন গদগদ স্বরে কথা বলছে, কেউ বা নির্জন স্থানে সখীর সঙ্গে গোপন আলোচনা সারছে, কেউ বা অহেতুক ঝগড়া করছে। আর শুধু দ্রৌপদী, সুভদ্রা কেন? বিরাট রাজার পত্নী সুদেষ্ণা জলের বদলে মদ্যপান করতেই ভালবাসতেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষে অভিমন্যুর শবদেহ আঁকড়ে পড়ে আছেন তাঁর বালিকা স্ত্রী উত্তরা। সখেদে গান্ধারী বললেন, “মাধ্বীকের মত্ততায় মূর্চ্ছিত হয়েও যে উত্তরা স্বামীকে আলিঙ্গন করতে লজ্জা পেত, হায়, সে আজ সকলের চোখের সামনে পতির অঙ্গ পরিমার্জনা করছে।”
এখানেই প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্য। পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েরাও সমান তালে মদ্যপান করতেন। কোনও বিধিনিষেধ বা জড়তা ছিল না।

 ‘কুমারসম্ভব’- এ হরপার্বতীর বিয়ে দেখতে মেয়েরা জানলায় দাঁড়িয়ে আছে। ‘রঘুবংশম্’-এও অজ-ইন্দুমতীর বিয়ে দেখতে মেয়েরা জানলায়। দুটি কাব্যেই কালিদাস উপমা দেন ---- "ভাসাং মুখৈরাসব  গন্ধ-গর্ভৈব্যাপ্তান্তরাঃ।" গবাক্ষগুলি পুরসুন্দরীদের আসবগন্ধমধুর স্বাদ পরম্পরায় ভরিয়া গেল।


আরও পড়ুন 



কেন মেয়েদের মদ্যপানে ছিল না বিধিনিষেধ? এর উত্তর রয়েছে বাৎস্যায়নের ‘কামসূত্র’র দশম অধ্যায়ে। মুনিবরের বিধান :-  পুরুষ নারীকে আহ্বান করে মদ দেবেন। তারপর তার চুলে বিলি কেটে দেবেন, আলিঙ্গন করবেন। মদের যে কত গুণ!

মহাকাব্যে মদ যে কত! ‘ওয়াইন’কে বলা হত আসব। আঙুরের রস থেকে ‘দ্রাক্ষাসব’, ফুলের মধু থেকে ‘পুষ্পাসব’, কত বৈচিত্র্য ! মধু থেকে তৈরি হত ‘মাধ্বী’। গম বা যব থেকে হত বিয়ার জাতীয় ‘পৈষ্টী’ এবং ‘মেদক’। আর বিশেষ মশলাযোগে আজকের ‘ফর্টিফায়েড ওয়াইন’-এর মতো তৈরি হত ‘অরিষ্ট’ এবং ‘মৈরেয়’। মৈরেয় খাসা জিনিস, ভরদ্বাজ তাঁর অতিথিদের দিয়েছিলেন।

মদ কিন্তু শিবের অঙ্গজ হওয়ার সম্মান পায়নি! অমৃত নিয়ে সুর আর অসুরে তখন কাড়াকাড়ি। অবশেষে দেবতাদের কাছে অমৃত এল। শিব নিজের অঙ্গনিঃসৃত এক লতায় শোধন করে নিলেন সেই অমৃত। অথর্ববেদে তাই পাঁচটি পুণ্য উদ্ভিদের একটি হল গাঁজাগাছ। ঋগ্বেদের সোমলতা চেনা গেল না ঠিকই, কিন্তু অথর্ববেদের গাঁজাটুকু তো রয়েছে। 

আন্তর্জাতিক গবেষক এবং বিশিষ্ট চিন্তাবিদের মতে, সোম হলো ধ্যানের এমন এক পর্যায় যাওয়া- যে পর্যায়ে নিজের অস্তিত্বের সাথে পৃথিবীসহ পুরো জগৎকে এক করে ফেলা। প্রাচীন যুগের যোগীরা দীর্ঘ সাধনার মাধ্যমে এমন এক পর্যায় উপনীত হতে পারতেন, যে পর্যায়ে মস্তিষ্ক থেকে একধরনের মোমের মতো রস পুরো শরীরে নিঃসরণ করার সক্ষমতা রাখতেন। যে রস প্রতিটি কোষ-অনুকোষকে নতুনভাবে জন্ম দিতে পারত। প্রাচীন যোগীরা বারবার এই ধ্যানের মাধ্যমে দীর্ঘ জীবন লাভ করতেন। মূলত সোম থেকে সমুদ্র শব্দটি এসেছে। সোম মানে উপরে থেকে নীচে প্রবাহমান। সাধারণ মানুষকে এর মাহাত্ম্যকে উপলব্ধি করতে পারে না। প্রাচীন মুনী-ঋষিরা তাদের প্রাপ্ত বা গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে সহজভাবে পূজার মাধ্যমে জ্ঞানগুলো হস্তান্তর করেছেন।

বিদেশি বিজ্ঞানীদের সোমরস নিরসনের প্রচেষ্টা পরপর ব্যর্থ হয়ে আসছে। তবু ইউরোপ বা আমেরিকার বিশেষজ্ঞগণ আজও সোমরসের সন্ধান করে যাচ্ছেন। আজও সোমরস অনুসন্ধানে যে-পরিমাণ গবেষণা চলছে, তাতে বোঝা যায় সোমরসে হয়তো অমরত্বের সন্ধান থাকলেও থাকতে পারে। 

বিধর্মীরা মূলত “সোম” মানে কোনো মাদক পানীয় দ্রব্য হিসাবেই চেনে। অনেকে আবার সোমরস এর অর্থ হিসাবে সুরা বা মদ লেখে। এটা বর্তমান অনেক অভিধানে লিখেছে।

শ্রী গীতাতে সোম---
বাংলা ও সংস্কৃতে তে "সোম" এর সাধারণ মানে “চাঁদ”। কিন্তু সংস্কৃতে এর আনুমানিক ১৯ টি বিভিন্ন অর্থ আছে।
শ্রীগীতাতেও আছে-
“পুষ্ণামী চৌষধীঃ সর্ব্বাঃ সোমো ভূত্ত্বা রসাত্মকঃ”।

অর্থ-
(ঈশ্বর) রসাত্তক চন্দ্ররুপে ধান, যবাদি ঔষধী পুষ্টি করেন।
এখানে “সোম” মানে “চন্দ্র”

যোগ বিদ্যায় সোম----
আবার যোগবিদ্যায় যোগীরা শরীরের পিনিয়াল গ্রন্থি নিঃসৃত হর্মোনকে সোমরস বা অমৃত বলে থাকেন। আধ্যাত্মিক সাধনায় যাঁহারা দেহচক্র সম্বন্ধে ধারণা রাখেন তাহারা এই সোমরস সম্বন্ধে বুঝে থাকেন। হটযোগ প্রদিপিকা তে বহু স্থানে এর উল্লেখ আছে।

পবিত্র বেদে সোম---
বিধর্মীরা অপ্রচার করে বেরাচ্ছেন, আর্য ও বৈদিক দেব দেবীরা সোমরস খেয়ে মাতলামো করতো তা নাকি আবার বেদে উল্লেখ আছে।তাদের অভিযোগ বেদে সোম নামক নেশাজাতীয় পদার্থের কথা বলা হয়েছে।কিন্তু সত্য কি তাই ?

প্রথমে মনে রাখতে হবে পবিত্র বেদে যে "সোম" এর কথা বলা হয়েছে সেটা কোনো মাদক দ্রব্য নয়। কারণ পবিত্র বেদে মাদক পান নিষিদ্ধ।

১. ঋগবেদ (৮.২১.১৪) 

"নকী রেবন্তঃ সখ্যায়া বিন্দসে পীয়ন্তি তে সুরস্বঃ।
য়দা কুয়োসি নদানু সমূহস্যাদিত পিতেব হূয়সে।।"

তোমার নেশাকারী সঙ্গী/বন্ধু যদি সবচেয়ে বিদ্বান বা ধনীও হয় তারপরও বজ্রপাততূল্য এবং অবশ্য পরিত্যজ্য।

২. অথর্ববেদ (৭.৬০.১) 

“হে মনুষ্য, ইন্দ্রিয় কে সংযত কর। একমাত্র চরিত্রহীন লোকেরাই নেশা, নারীর দিকে আকৃষ্ট হয়।“

৩. মনুসংহিতা (১১.৯৪) 

"সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ্মা চ মলমুচ্যতে।
তস্মান ব্রাহ্মনরাজন্যো বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেত্‍।।"

অনুবাদ- 
সুরা হল অন্নের মলস্বরুপ,পাপরুপ তাই ব্রাহ্মন,ক্ষত্রিয় নির্বিশেষে সকলের জন্যই অবশ্য বর্জনীয়।

“সোম” এর প্রথম পরিচয় আমরা পাই ঋগ্বেদে। সেখানে একে “আয়ুবর্ধ অমৃত” বলা হয়েছে।

৪. (ঋগ্বেদ ৮.৪৮.৩) 

"অ অপামা সোমম অমৃত অভূমগ্নাম জ্যোতির অবিদাম দেবাম।
চ কি নুনম অস্মান কমবদ আরাতিহ কীম উ ধুরতির অমৃত মর্তস্য।।"

এই মন্ত্রের মহর্ষি দয়ানন্দ এর ভাষ্যটি দেয়া হল-

সোম(ভাল ফল/খাদ্য কোনো মাদক পানীয় নয় ), অপামা (আমরা তোমাকে পান করি),অমৃত অভূম (তুমি জীবনীবর্ধক), জ্যোতির অগ্ণম (শারীরিক শক্তি দানকারী),অবিদাম দেবাম (ইন্দ্রিয়ের সংযমকারী),কি নুনম অস্মান কমবদ আরাতিহ ( আভ্যন্তরীণ শত্রু বা কু বাসনাকারী ইন্দ্রিয় বা কু-বাসনা আমার কী ই বা করতে পারে)কিম উ ধুরতির অমৃত মর্তস্য (হে ঈশ্বর, এমনকি হিংস্র মানুষ ই বা আমার কি করতে পারে)

“হে সোম আমরা তোমাকে পান করি,তুমি জীবনীবর্ধক, শারীরিক শক্তি দানকারী, ইন্দ্রিয়ের সংযমকারী,এই পরিস্থিতিতে, আমার অভ্যন্তরীণ শত্রু(কু-বাসনা) আমার কী ই বা করতে পারে, হে ঈশ্বর,এমনকি হিংস্র মানুষ ই বা আমার কি করতে পারে”

এখানে “সোম” মানে ভেষজগুনসম্পন্ন পানীয় বিশেষ। নিচের অংশটুকু পড়ুন বুঝে যাবেন।

ঋগ্বেদ এর নবম মণ্ডল এর অপর নাম সোম পবমন মণ্ডল বা বিশুদ্ধ সোম মণ্ডল।এই মণ্ডলে “সোম” এর বিভিন্ন অর্থ ও তার প্রয়োগ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। 

একইভাব সামবেদ এর পূর্বারচীকে ও পবমন পর্বে সোমকে বর্ণনা করা হয়েছে এই রূপে-

১)আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধিকারী
২)অনুপ্রেরণাদায়ক
৩)বুদ্ধিবৃত্তি উন্নয়নকারী

৫. অথর্ববেদ ১৪.১.৩ তে বলা হয়েছে- “সাধারন ভাবে সোমকে তোমরা রোগনাশক হিসেবে জানো, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী দ্বেষ নাশক অমৃতরুপ সোম এর সন্ধান করেন”

আয়ুর্বেদে সোম--

আয়ুর্বেদে বিভিন্ন রোগনাশক ভেষজ ঔষধীয় উদ্ভিদের নাম হিসাবে “সোম” কে বর্ণনা করা হয়েছে।বর্তমান আয়ুর্বেদে “সোম” উদ্ভিদ বলতে কোনো একটি বিশেষ মাত্র উদ্ভিদ কে চিন্হিত করে না। “সোম” উদ্ভিদ মানে উদ্ভিদগোষ্ঠির ২৪ ধরণের ভিন্ন উদ্ভিদ সমূহ।

উদাহরণ-

Ephedra sp,
Saccharum sp ,
Desmostachya sp, 
Cannabis sp, 
Hordeum sp, 
Peganum sp, 
Nelumbo  sp, 
Papaver sp, 
Argyreia sp, 
Sarcostemma sp, 
Periploca sp , 
And
Some Different Species of Mushrooms Etc.

আর এই সমস্ত “সোম” গোষ্ঠীর উদ্ভিদগুলির ভেষজগুনা গুন সম্বন্ধে বৈদিক ঋষিরা খুব ভালো ভাবে পরিচিত ছিলেন। আর হবে নাই বা কেনো পবিত্র বেদের উপ-বেদগুলির একটি শাখা হলো এই “আয়ুর্বেদ”।

আবার হটযোগ প্রদিপিকা তে আমরা সঠিক “সোমরস” এর অর্থ খুঁজে পাই- সোমলতা নামক উদ্ভিদের নির্যাসিত রস, যা স্বাদে লবনাক্ত, বর্ণ সবুজাভ, দুদ্ধ, ঘি ও মধু মিশ্রিত এক ধরণের পানীয়। ইহা বিশেষ ভেষজ গুনাবলী যুক্ত এবং একজন যোগীর জন্য উত্তম পানীয়।

অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা পাই যে “সোম” শব্দটি্র একদিকে অর্থযুক্ত ও অপর দিকে রোগ নিরাময়কারী ঔষধ হিসেবে বিবেচিত হয় ও একটি উত্তেজক পানীয়।।

তথ্যঋণ ----
১. ঋগ্বেদ সংহিতা ,
 বাংলানুবাদ:রমেশচন্দ্র দত্ত 
(সায়ন , ম্যাক্সমুলার সহ অন্যান্যের ভাষ্যাদিকে টীকাকারে উল্লেখকৃত), 
হরফ প্রকাশনী 
(এ-১২৬ কলেজ স্ট্রীট মার্কেট 
কলকাতা ৭ ,১৯৭৬) 
২. শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার।
৩.  “ঋগ্বেদ ও নক্ষত্র” - বেলাবাসিনী ও অহনা গুহ , ১৯৬৯ , গোপা প্রকাশনী , কলকাতা ।
৪. ইন্টারনেট ও অন্যান্য।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

1 Comments

  1. সনাতন ভারতবর্ষের প্রাচীন এই ধর্মীয় তথ্য জানতে পারলাম, লেখক খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ওনাকে ধন্যবাদ।

    ReplyDelete