জ্বলদর্চি

অবান্তর কিছু কথা/(উৎসব ১৪২৮)/সুদেষ্ণা ভূঁইয়া

অবান্তর কিছু কথা
সুদেষ্ণা ভূঁইয়া 

অবান্তর

শব্দেরা বড়োই অবাধ্য। মনখারাপের দ্বন্দ্বে
ভাবনার সাথে বিরোধ জন্মান্তরের। 
কোন্ দুর্বোধ্য রসায়নে শব্দেরা অবরুদ্ধ ভাবনা জগতে ।
 একাকী রাতের গভীরতায় ক্রমশ জটিল জ্যামিতিক ভাবনা। 
বারংবার ছুঁতে গিয়ে হারিয়ে গেছে সমাধান পথ। 
আত্মমগ্ন কলম রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার স্বপ্নে বিভোর।
অথচ মনের ঘরে কালবৈশাখীর ঝঞ্ঝা নিরন্তর।
অনুপল  ভাঙছে জাহাজের মাস্তুল।

শব্দেরা বড়োই অবাধ্য।
শেষ বিকেলে আয়নার প্রতিফলনে অসহনীয় বিরহ যাপন।
পলাশের আলোয় বেরঙীন মিথ্যে শহর।
চলন্ত নাগরিকতায় ভালোবাসা নিরুদ্দেশ।
জলছবির যবণিকায়  ধূসর আলপনা।
ক্যানভাসের গোধূলি মায়ায় মরীচিকার হাতছানি।
নবীন মেঘের আলাপচারি  ভালোবাসার প্রলাপবুলি
 সমর্পণের আত্মসুখে প্রহর জুড়ে স্বপনবুনি।

                 ----- × -----

শব্দেরা অবাধ্য তো বটেই ! কথায় বলে, শব্দই নাকি ব্রহ্ম! তা ব্রহ্ম আবার কারো বাধ্য হয় বুঝি ? আসলে কেউ শুনতে চায় না ! তাই নির্বোধ অন্তর, শব্দের পর শব্দ নির্গত করে চলে --- কোন নির্যাতিত - নিপীড়িত নারী যেমন গোপনে গুমড়ে গুমড়ে মরে ! আসলে সে অনেক কথা বলে । সমাজ, শাসনতন্ত্র অথবা মানুষরূপী তথাকথিত পৃথিবীর প্রাণী-শ্রেষ্ঠ জীবগুলো  শুধু কিছুতেই শুনতে পায় না । তাই প্রথমে লেখনি নির্ভর হলাম । নিজেকেই দেখতে চাইলাম কবিতার আয়নায় ! অনেকে পড়ল, বাহবাও দিল । কিন্তু দিনের শেষে শূন্য, রিক্ত, নিঃস্ব, একা এই আমি । কিন্তু হেরে গেলে তো চলবে না ! নতুন উদ্যমে খুঁজত বেরোলাম, আমার মতন সমমনস্ক মানুষগুলোকে --- অল্প কজনকে পেয়েও গেলাম । একসাথে ওঠা, বসা, আলোচনা, কথা---- প্রতিবাদ চাই । আরও আরও সুন্দর, সাবলীল ও স্পষ্ট বক্তব্য যুক্ত প্রতিবাদ । ওই যে দূরে --- আবছা একটা পাটাতন দেখা যাচ্ছে  কি ? হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওইতো ! ওইটাই তো মঞ্চ আমাদের ! দৈনন্দিন জীবনের প্রতীকী রঙ্গমঞ্চ ---  গ্রুপ থিয়েটার ।

ঝাঁপিয়ে পড়লাম ! তিল তিল করে অধ্যাবসায় আর চারিদিক থেকে কাছিয়ে আনা সংসারের বেনোজল --- তাতে কত যে বিভিন্ন বীভৎসতার রূপ ! তবু তারই মাঝে যেন ফিরে পেলাম জীবনে নতুন করে বাঁচার আশ্বাস। ফুলেশ্বর উদ্দীপন নাট্য সংস্থা।

আজ যখন সেই নারীত্ব আর মানবতা প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে, তখন মৌলবাদী  আক্রমণে  বিপন্ন  নারীস্বাধীনতা ও  নারী-অধিকার সহ  সমগ্র  মানবাধিকারের সপক্ষে  ফুলেশ্বর উদ্দীপন  নাট্যসংস্থার  নতুন প্রযোজনা: বর্বর রাত্রি।  রচনা ও নির্দেশনা:   অনুপ চক্রবর্তী। সৃজনে :  রামানুজ চ্যাটার্জী,  সুদেষ্ণা ভুঞ্যা,    মৌসুমী সামন্ত,  সঞ্জীবনী দাশগুপ্ত,  তৃপ্তি দাস,  সুখময়  সিংহরায়,  হিমাদ্রি  সিংহ রায়,  পলাশ নাইকেল, ত্রিদিব ধাড়া, অংকন রায়,  দেবাশিস গাঙ্গুলী,  সুপ্রিয় রায়,  সুপ্রকাশ প্রামানিক,  অজয়  মন্ডল,  অমিতেশ মান্না,  শ্যামল দলুই, শান্তনু পণ্ডিত ও সৌরভ চক্রবর্তী।

আসুন না, এই অবান্তর কিছু কথাকে ভিত্তি করে আমরা সম্মিলিতভাবে খুঁজতে বেরই নতুন বাঁচার রসদ !

 [ সুদেষ্ণা ভূঞ্যা,  চন্ডীপুর অ. প্রা. বিদ্যালয়, উলুবেড়িয়া, হাওড়া ]

আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments