গুচ্ছ কবিতা /পল্লব গোস্বামী
গুচ্ছ কবিতা
পল্লব গোস্বামী
১.
শিকার
কারা যেন পাড়ার ছেলেগুলিকে ডেকে নিয়ে গেছে আজ,এই অবেলায়।গভীর রাতে ঠিক যেন নিশির ডাক।গুলতি-বাঁটুল হাতে তারা পেরিয়ে গিয়েছে,
জলকাদা মাঠ,জলারণ্য ...
বিলের ধারে গজিয়ে উঠেছে
বিচিত্র সব
পাখি ধরার ফাঁদ।প্রাকৃতিক হুইসেল।
পোষা পাখি দিয়ে বুনো পাখি ধরে
কারা যেন একটি পাখিখামার বানিয়েছে।ডাকাতিয়া ছায়ার ভেতর সেজে উঠেছে খেজুর পাতার খাঁচামহল।খাঁচার ছায়া পড়ছে শিশুদের গালে।প্রতিটি শিশুর মুখে প্রাচীন মিশরের মতো অন্ধকার যেমন।
এ কোন পিরামিড দেখি,পাশের গাঁয়ে ?
ঝিলের গায়ে,ছোটো ছোটো দ্বীপে
এ কোন খাদ্যজাল?
ধীরে ধীরে সরাল,সারস শামুকখোল পাখিরা নেমে আসে।আকাশে জ্বলে ওঠে হলুদ হ্যাচারির আলো।সারা জঙ্গল জেগে,পাখিরা শিশু পাহারা দেয়।
প্রত্যেকটি পাখির ঠোঁটে
আমি ঠিক শুনতে পাই
এক একটি
শিকারি মানুষের হাসি ...
২.
উজ্জ্বলের গ্রাম
উপনিষদ ঝরা বিকেলে আমি উজ্জ্বলের গ্রামে যাই
টটকো নদীর জলে তখন ভাসতে থাকে
পলাশের ভাঙা ডানা
সন্ধ্যা নামে
ব্রহ্ম ও আত্মার মতো কাঁপতে থাকে আমাদের ভাগ্য
বেদমন্ত্র জানিনা;
তবু, পৃথিবীর সব দরজা খুলে দেয় বেবাক বাল্মীকি
কিছুক্ষণ, ওই সাঁওতাল গ্রামের সাথে
আমরা দু'জন একমনে জাগি
হাড়ভাঙা মানুষের মতো গড়াতে থাকে
পুরোনো
দুটি সাইকেল
হাড়জোড়া গাছে ঝুলে যেমন আমাদের হৃদয়
গভীর মাঠের ভেতর ভালুর ডুঙরি ,
সূর্যের লাল আলো-যেন অসম্ভব রকমের এক কারুকাজ
একদিন ,ওইসব টিলার ওপর
কথা ছিল
গাছ বসানোর
কথা মতো,এসেছিল বন দপ্তর
খুবলে গিয়েছিল
ভেতরের সমস্ত লাল
সেই কবে থেকে আমরা
একটি লাল সংগঠনের কথা
ভেবে আসছি
বিপ্লব আসেনি,বিশাখা নক্ষত্রের
রাতে শুধু চোখ ছুঁয়ে গেছে জল
উজ্জ্বল ও আমি একা
প্রতি কাকভোরে কেঁদে উঠে দেখি
ভালুর পাহাড়ে
ফুটে উঠেছে
চাপ চাপ,খননের লাল ...
৩.
নেফারতিতি
যে কবিতা ছোঁয়া হয়না কোনোদিন
সেইসব কবিতার ভেতর,
স্বপ্নের সুতিকাগৃহে
শবাসনে আমি শুয়ে পড়ি ....
ধ্যানের এক একটি স্তরে
এক একটি
মহাসন পাতা
পটভূমিতে রাখা:
একটি তিব্বতি গানের বাটি
বাটি হাতে এক শবর বালিকা
লাল পিঁপড়ের ডিম ধুতে আসে ...
তার হাতের গন্ধে লেগে থাকে
রামায়ণের
এঁটো কুলের ঘ্রাণ
বাঁশি ছেড়ে
এক নেটিভ আমেরিকান
মদনভেরি বাজান
তাঁর আঁতছেঁড়া সুরে
খুলে যায় অন্তিম দুয়ার
সেখানে আহত বাঘের মতো একা
এক শঙ্খচূড় সাপ
তিনি আমাকে ছোবল মারতে উদ্ধত
আমারও বেরিয়ে পড়ে দাঁত-নখ
আমাদের হৃদয়ে নীরবে সূর্যোদয়
নাভিপদ্মে মেশে,
নিযুত নেফারতিতি!
৪.
অর্জুন
একটি ধানসিদ্ধ করা ভোরে,আবার পুনর্জন্ম হয় আমার।একটি শাল পাতার জামা জড়িয়ে আবার আমি জেগে উঠি।শিমুল তুলোর থেকেও হালকা সমস্ত শরীর।পলকা হাওয়ায় ভেসে যাই।ভেসে ভেসে উড়ে বেড়াই গাছের নামের এক একটি গ্রাম।কাঁঠালটাঁড়ে ফলে কাঁঠাল।শালবনিতে ছায়া দেয় শাল গাছ।আমলাতোড়ায় ফিরে আসে আমলকি বন।সবকিছু ফিরে আসে।ভোরের মাড়ুলির মতো সবকিছু নতুন যেমন।আমিও বারবার ঘুরে ফিরে আসি।চোখের সামনে নতুন এক গ্রাম ,অর্জুনজোড়া।সেখানে সাপকাঠির পরও একটি লোক বেঁচে ওঠেন।
লোকটির নাম কি অর্জুন ?!
আমার সত্তায়,
লোকটির বাহাম বেজে ওঠে ...
৫.
গোসাপ খাওয়া জেলে
সেই গোসাপ খাওয়া জেলেটিকে ভালোলাগে : সারা গায়ে যার আঁশটে গন্ধ
ভোর হতেই কাঁধে তুলে নেয় -
ঘুগি
সিয়াড়া
ফাঁসজাল
সারাদিন গরু খোঁজা করে খুঁজে বেড়ায় -
মৃতপ্রায় সব ঝিল
পুকুর
ডোবা
খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হলে,ভাঁট ফুলের ছায়ায় চুটি ধরায়
আর ভাবে
একশো আট নদী
সেই গোসাপ খাওয়া জেলেটিকে ভালোলাগে :যে কখনও আকাশ ভাবেনি
মাটি ভাবেনি
গাছও ভাবেনি
শুধু ভেবে এসেছে ,
কখন কোন মাছের পেট কাটলে
পাওয়া যাবে
শকুন্তলার
মোহর আংটি!
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
সংগ্রহে রাখুন।
অপূর্ব
ReplyDelete