জ্বলদর্চি

বব বিশ্বাস : বব পরিবর্তনে আসে বিশ্বাসে প্রশ্ন/ রাকেশ সিংহ দেব

বব বিশ্বাস : বব পরিবর্তনে আসে বিশ্বাসে প্রশ্ন
 
পরিচালক – দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষ
অভিনয় – অভিষেক বচ্চন, চিত্রাঙ্গদা সিং, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, রজতাভ দত্ত প্রমুখ।
মুক্তি – ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ । জি ফাইভ।
রেটিং -  3/5
 
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া পরিচালক সুজয় ঘোষের ব্লকবাস্টার থ্রিলার ‘কাহানি’-তে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল বব বিশ্বাসের। ‘নমস্কার।......... এক মিনিট।’ - সামনের মানুষের উদ্দেশ্যে আপাত নিরীহ এই কয়েকটি কথা বলবার পরেই তার কালো অফিস ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল আর তার এক গুলিতেই টার্গেটের কাহানি খতম করত বব। কাহানি সিনেমায় সাধারণ এক ইন্সিওরেন্স এজেন্টের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ঠান্ডা মাথার কন্ট্রাক্ট কিলার বব বিশ্বাসের চরিত্রে বাঙালি অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অসাধারণ অভিনয় ভয়ের এক শীতল স্রোত বইয়ে দিয়েছিল দর্শকদের শিরদাঁড়ায়। স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই চরিত্রটি দর্শকদের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে এত বছর পরেও দর্শকদের মধ্যে বব বিশ্বাসকে নিয়ে সমান আগ্রহ রয়েছে তার প্রমাণ মেলে ইন্টারনেটের দরবারে। চরিত্রটির জনপ্রিয়তা অচিরেই নেটমাধ্যমে বিভিন্ন মিমে, রিল ভিডিয়োয় ছড়িয়ে পড়ে।

 একটি ‘ক্যামিও’ চরিত্রের এই বিপুল জনপ্রিয়তা ভারতীয় সিনেমায় খুব বেশি নেই। যদিও ‘কাহানি’ মুভিতে বব বিশ্বাসের ব্যক্তিগত জীবন বা পরিচয় সম্পর্কে বিশেষ কিছুই দেখানো হয়নি। সম্ভবত তাই বব বিশ্বাসকে ফিরে আসতে হল পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবিতে মুখ্য চরিত্র হয়ে। তবে এবার পরিচালকের আসনে না থাকলেও, বব বিশ্বাস-এর কাহিনি লিখেছেন সুজয় ঘোষ। 'কাহানি' মুভিতে দেখা গিয়েছিল বিদ্যা বাগচীকে মারতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার বব বিশ্বাস। দীর্ঘ আট বছর পর কোমা থেকে উঠবে এই সুপারি কিলার বব (অভিষেক বচ্চন)। কিন্তু অতীতের স্মৃতি কিছুই মনে নেই তার। অ্যামনেসিয়া আক্রান্ত বব বিশ্বাস-এর কাহিনি এই ছবি। কাহানির এই স্পিন অফ-এর শুরুটা এক গোডাউন দিয়ে। সেখানে মজুত রয়েছে ব্লু ড্রাগ, যার টার্গেট পড়ুয়ারা। আর সেই ব্যবসার সর্বেসর্বা, ওস্তাদ নামের এক ব্যক্তি। যে এই গল্পের ভিলেন।

 কেমনভাবে এই ড্রাগচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে বব বিশ্বাস? সেই তারেই বাঁধা ছবির কাহিনি। নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকা স্মৃতিভ্রষ্ট ববকে আচমকাই একদিন তুলে নিয়ে যায় দুই পুলিশ কর্মী। ফের একবার অন্ধকার জগতে ফেরার নির্দেশ পায় বব। আবারও হাসিমুখে খুন করতে হবে ববকে। নিরীহ বিমা এজেন্টের আড়ালে লুকানো ভাড়াটে শ্যুটার বব বিশ্বাস যখন অন্ধকার জগতে ফেরে তখন আস্তে আস্তে নিজের ভিতরের স্পার্ক গুলো নতুন করে আবিষ্কার করে সে। কিন্তু তাকে ঘিরে ধরে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন, যাদের খুন করবার নির্দেশ পেয়েছে সে, যদি তারা খারাপ মানুষ না হয়! তাহলে কি শুধু বেঁচে থাকবার জন্য মানুষ খুনের ব্যবসায় জড়িত থাকা উচিত তার? ছবির একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এই দ্বন্দ্ব। 

এই ছবির চিত্রনাট্য ‘কাহিনি’র মতো টানটান নয়, এখানে মোচড় খুব বেশি নেই। এক কথায়, গতে বাঁধা থ্রিলার ছবি 'বব বিশ্বাস'। একবাক্যে বলা যায় ‘কাহিনি’-র মতো এক্সট্রাঅর্ডিনারি থ্রিলার হয়ে উঠবার ক্ষমতা নেই এই ছবির। তবে এর দায় পরিচালক, গল্পকার এবং চিত্রনাট্যকারের। সুজয় ঘোষ পরিচালিত ছবি ‘কাহানি’তে আট মিনিটের উপস্থিতিতে ‘বব’ যে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আলোড়ন তৈরি করতে পেরেছিল, দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষ পরিচালিত ‘বব বিশ্বাস’ একটা গোটা মুভিতে সেটা পারেনি বলাই বাহুল্য। বব বিশ্বাসকে নিয়ে সিকুয়েল তৈরি করতে গেলে আরও যত্ন প্রয়োজন ছিল। অভিষেক বচ্চন নিঃসন্দেহে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন। হিরোসুলভ অ্যাটিটিউড সরিয়ে ফেলে তিনি বব বিশ্বাস হয়ে উঠতে চেয়েছেন। তবে এই ছবি দেখতে দেখতে 'বব বিশ্বাস' হিসেবে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি আপনার মনে উঁকি দিতে বাধ্য। অতএব তুলনা আসবেই।  শ্বাশ্বতর ‘বব’ সরল মুখের এক ক্রুর খুনি আর অভিষেকের ‘বব’ এক বিভ্রান্ত, ভোম্বল। এই ছবিতে উল্লেখযোগ্য পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি। কালীদার চরিত্রে খুব কম জায়গাতেও তিনি নজর কাড়েন। 

বব বিশ্বাস কাহানি মুভির প্রিকুয়াল না সিকুয়াল এই নিয়ে ছবির শেষ দৃশ্যে অনেক দর্শকের মনে ঘোঁট পাকিয়ে যায়। কিন্তু সিনেমাটি মন দিয়ে দেখে যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্লেষণ করলে দেখে যায় এই ছবির গল্প কাহানি এর গল্পের পরবর্তী সময়ে। নতুন ভাবে আবার কন্ট্রাক্ট কিলিং এর দুনিয়ায় ফিরে আসা ববের কাছে যে বিদ্যা বাগচীকে মারার যে আবার সুপারি আসতে পারে এটাই তো স্বাভাবিক। এর দুটি কারণ , এক বিদ্যা বাগচী ববের একমাত্র টার্গেট যে এখনও বেঁচে আছে। দুই কাহানি তে বিদ্যা বাগচি যেভাবে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর চীফকে গ্রেফতার করিয়েছিল তাতে সিস্টেমে যে তার আরও অনেক শত্রু থাকবে সেটাই স্বাভাবিক আর তাদের কাছে পথে কাঁটা সরানোর একমাত্র মাধ্যম বব। বিদ্যা বালানের ছবি দেখবার পরে তাই বব রূপী অভিষেকের চোখ এক অজানা খুশীতে চকচক করে ওঠে। ঠিক যেমন শিকারের সন্ধান পেয়ে চকচক করে হায়নার চোখ। মুভিতে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এর পরবর্তে বব বিশ্বাস চরিত্রে অভিষের বচ্চনের নির্বাচন নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন, শুধুমাত্র বব চরিত্রের প্রতি ভালোবাসার জন্যই একবার দেখে ফেলতে পারেন নতুন এই ‘বব বিশ্বাস’। সেদিক থেকে একটি মুভির ক্যামিও চরিত্রকে কেন্দ্র করে একটি সম্পূর্ণ মুভি বানানো অবশ্যই ব্যতিক্রমী।
 

রেটিং
5 – অসাধারণ
4 – বেশ ভালো
3 – ভালো
2- দেখতে পারেন
1 – না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments