জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ আবীর ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা 

আবীর ভট্টাচার্য 

জন্মদিনে

কখনও কখনও অকস্মাৎ কলাপ-আকাঙ্খায়
কন্যাজন্মে লতা-ভ্রম হয়।মনেমনে কোরকোদ্গম।
রাত্রির জঠরে জাগে রৌদ্রপায়ী প্রত্যূষের ভ্রুণ অকালবন্যায় ভাসে বেহুলার ডিঙি,নদীতীর-তৃণ
জীর্ণমন্দিরে পড়ে অশথের ছায়া, দেবতা বিভ্রম!
ভালোবেসে মৃত্যু হয়,ভালোবেসে পুণর্জন্ম লাভ
তবু কি যন্ত্রনায়,অন্তরে উন্মন যে উজাগর,
আমায় কাঁদায় আর আমায় জাগায়... 
তার স্পর্শে প্রেম নয়, ক্রমাগত জাগেন ঈশ্বর,
ডানা মুড়ে বসে পাখি, গড়ে তার বিশ্বজোড়া ঘর
নারীজন্ম ধন্য মানি, নৈঋতের আলোর আকর!
                        
        

পরবাস

যে পরবাসে বিরহ দোলে মাধবীলতা-শাখে
অঝোর শ্রাবণ ব্যতিরেকেও সুতীব্র বৈশাখে
বোধি কিংবা মনন ক্ষুধার পরিতৃপ্তি সুখ 
চিরভিখারী মনটি আমার, শুভাঙ্গী উৎসূক...

প্রাত্যহিকী দায়ে-অদায়ে বিব্রত যে ঘর
সেই খানেতেই নতজানু আমার এ অন্তর
তবুও কখন তোমার চিঠি আসে আমার মনে
বিনিসুতোর জলছবি-টান হৃদি বৃন্দাবনে...

যে শুভক্ষণ হেলায় হারায়, মুহুর্তেরই কাছে
ফেলে আসা স্মৃতির দানে মুখ ফিরিয়ে পিছে
কবেকার সে বকুল কথায়,বিলাবলের গতে
বিরহবাস মিলন-সুবাস সমান্তরাল পথে
যে পরবাস আঁধারে জ্বালে অন্তর্লীন আলো
ও বিরহী! চাতকমনে  সঙ্গসুধা ঢালো...
                         


কথার কথা

আমি যখন দিন পেরিয়ে বিকেল হয়ে যাই, 
কন্যে দেখা মেদুর-আলো পড়ে আমার মুখে, 
তুমি না হ'য় তোমার ঐ উজল সকাল-আলো
খুব গোপনে আলতো হেসে ফেলো খেয়াল-সুখে।

রাখতে গিয়ে দিন-প্রতিদিন অযুত হিসেব-পাতি
 তুমি বা আমি,কে যে কোথায় কেমনভাবে থাকি
ছেলেমানুষী দুজন-কুজন, সকাল-বিকেল খেলা
ও বিরহী!সেসব তুমি ভুলেই গেলে নাকি!

যুগ পেরিয়ে এসব কথা যুগান্তরেরও পরে
রয়েই যাবে; কারণ মন নিয়ত 
তোমার সকাল যদি না লেখে আমার সন্ধ্যা-কথা
হয়ত কোন অন্য কবি,রঙ ধরাবে তাতে।


আকাঙ্ক্ষা

সাতটি সাগর উথলে ওঠে কোন সে ভীষন ঝড়ে 
আখর জুড়ে বাসনা আমার পাখিডানায় ওড়ে,
পুষ্প যেমন শিশিরচুমে কোরক-জীবন ভোলে 
 অযুত প্রহরযাপন আমার, ভালোবাসবো বলে...

তৃষার্ত মন কোন সাধনায় চাতক-আদর খোঁজে
কার হৃদয়ের প্রিয়-আসনে কে বসে রাজসাজে
দোতারা আমার দূরগামিনী, আবিষ্ট হিন্দোলে
সুরক্লিষ্ট প্রহরযাপন, ভালোবাসবো বলে...
                             
                  
প্রাপ্তি

কুয়াশালীন নদীদেহে ওঠলো যদি বেখেয়ালী ঝড়
হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগে কেন,অসময়েই জ্বর!

আঁধার-স্রোত ঘনায় পাড়ে, নুড়ি-কাঁপন শোনে,
জলের বুকে শারদ চাঁদ কি ঢেউ-কাহন গোনে!

বৃষ্টিযাপন হলে সারা,সন্ধ্যাতারা উঠলো ফুটে দিব্য
দহনজ্বালায় অর্ঘ্যদীপ জ্বালা,সাঁঝফুলেরই কাব্য।

রীতিবিহীন মোহ মেশে সুখাশ্রয়ী, যতিবিহীন গানে
অজানা সুরে ডাকে আমায় পথ, দুর্জ্ঞেয় আহ্বানে

অনাগত  কি শীতের ভয়ে আমলকীর বনের মর্মর
উথলে ওঠে পরমদানেও চরমতম প্রাপ্তি সাড়ম্বর।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments