গুচ্ছ কবিতা
বাবলু গিরি
খুঁজে যাই - ১৫
তোমরা কেউ এলেনা এই আগুনের উৎসবে
এতো অন্ধকার
আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছিনা,
একবার জড়িয়ে ধর
আমি তোমার মুখে আগুনের চুম্বন দিতে চাই।
তোমরা কেউ এলেনা ওপারে
আমার নতুন ঘরে ;
আমি অসীম অজ্ঞতা নিয়ে লিখে গেছি
অজানাকে ।
জানিনা কেনইবা জন্ম কেনইবা ফিরে যাওয়া
শুধু এইটুকু জেনেছি,
জানিনা বলে ঘেঁটেছি চটকেছি,
অন্বেষণে পর্যেষণে অবাক হয়েছি খুঁজে খুঁজে
কি বিশাল তোমার মহাসৃষ্টি,
ক্ষুদ্র অথচ আশ্চর্য এই মানুষ এর জন্ম।
তবুও লিখেছি,কেউ কি তেমন করে পড়েছে?
বিশাল জনস্রোতে,হয়তো ফিরে আসব, অন্য জন্মে ; আর পড়বো আমারই অতীত জন্মের কবিতা।
এ এক অনন্ত অজ্ঞানতার,অনন্ত জ্ঞানের জীবন।
এই পৃথিবীও হরমোন আছে,
পূর্ণিমায় সমূদ্র কেমন ঋতুবতীর মতো জোয়ার ভাটা খেলে।
বসন্তে কেমন ঋতুমতী হয়ে ওঠে প্রকৃতি ।
গ্রীষ্মে কেমন ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে যায়।
যেমন আমার শরীরে হিংসা, প্রেম,কাম, জেগে ওঠে।
যেমন শব্দের রোগগ্রস্ত আমি এক কবি,
করঙ্ক হাতে শব্দ ভিক্ষা করেছি।
শব্দের উৎসবে নিঃশব্দ হয়েছি বার্ধক্যে এসে।
তোমরা কেউ অসনি আগুনের উৎসবে।
কেননা হাজার হাজার মিছিলে-
খুজে পাইনি আমার প্রিয়তম মুখেদের।
ছন্দবাসর
শব্দের ঘরে বসে আছি
শব্দ সব বসে আছে উচ্চারণ হবে, না
আমের মঞ্জরীর মতো ঘ্রাণময় হবে।
লিপি হওয়ার সময় অক্ষর সব লাইন লাগিয়েছিলো কবির ঘরে।
কে আগে বসবে বর্ণ সয়ম্ভর সভায় ?
শেষে 'অ' বসে গেল অগ্রভাগে।
তারপর যে যাই উচ্চারণ করে,'অ' এসে পড়ে।
শব্দের মুকুল ফুটে ওঠে
সৌরভ ছড়িয়ে বিছিয়ে কবিতা হয় ।
আমি কবি হয়েও বুঝতে পরিনি,
কখন সয়ম্ভর সভা থেকে -
বাসর ঘরে ছন্দ হয়ে গেছি।
আমি ও আমার শরীর
ভাবি এ শরীরটাতো আমি নই।
এ খালি খায় দায় ঘুমায় মৈথুন করে।
আমিই খাওয়াই বুদ্ধিজীবী হয়ে
আমিই খুঁজে আনি সুন্দরী কন্যে।
আমিই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখি।
এ শরীরটা একটা কর্মক্ষেত্র।
আর আমি ক্ষেত্রজ্ঞানী, সম্রাট।
শরীর আমার প্রজা।
প্রজাই আমায় প্রকাশিত করে,
ক্রমশ কবি হয়ে উঠি -
অক্ষরের প্রতিমা কবিতা রচনা করি।
শরীর আমার ঘর।
আমার চব্বিশ তত্ত্বের রাইটার্স বিল্ডিং ।
মহাপ্রস্থানের যাত্রা -৫
নিযুত বছর আগে কোনো এক অবলুপ্ত সভ্যতার রমনীর সাথে -
আমার হৃদয় কেঁদেছিলো।
সেইসব ঐশ্বর্য রূপ
আজও বিষ্ময়ে জেগে আছে।
সেইসব ক্লান্ত রূপবতী -
অযুত নিযুত বছরের যন্ত্রণার প্রেম খেলেখেলে মগ্ন হয়ে আছে,
ক্লিয়পেট্রার মতো।
আমি সেইসব প্রেম বুকে ভরে
অজস্রবার জ্বলেছি চিতায় ।
পুড়ে গেছি চন্দন কাঠের হৃদয়ের সুগন্ধ নিয়ে
সেইসব যন্ত্রণা,
হিম অন্ধকারের মতো,
পাশমিনা শালের ভিতরে,
জমাট বেঁধে আছে।
এইভাবে যন্ত্রণার দূরন্ত আশ্চর্য প্রেম -
উড়ে চলে,বায়াংশির মতো,
নক্ষত্রের দিকে ।
পৃথিবীর সভ্যতাকে ছিঁড়ে ।
এইভাবে অনেক যুদ্ধ হয়ে গেছে -
রক্তাক্ত হয়েছে মানুষের স্বপ্নমাখা হৃদয় ।
অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে আছে,
নক্ষত্রের সাথে, মকরে বৃশ্চিকে কুম্ভে ।
0 Comments