জ্বলদর্চি

মৌসিনরাম ভ্রমন করতে চান?/কল্যাণ মাইতি

মৌসিনরাম ভ্রমন করতে চান ?

কল্যাণ মাইতি

 মৌসিনরাম নামটা শোনা মাত্রই যেমন চোখের সামনে ভেসে ওঠে নীল আকাশ, সাদা মেঘ, সুদূর সবুজ প্রান্তর, ঢেউ খেলানো পাহাড়, স্ব‌চ্ছ নদী, পাহাড় বেয়ে বয়ে আসা জলপ্রপাত, হ্রদ, অর্কিডের বাগান আর উপজাতি। এই সব কিছুই আপনি উপভোগ করতে পারবেন মৌসিনরামের রাস্তায়। তাছাড়া এখানে দর্শনীয় স্থান হিসাবে রয়েছে মাওজুমবুঁই কেভ ও জাকরেম। পাহাড়ের রাস্তা ধরে হেঁটেই পৌঁছে যেতে পারেন মাওজুমবুঁই গুহার একদম সামনে। রহস্যে ঘেরা প্রাচীন এক প্রাকৃতিক গুহা। যদিও এখানের স্ট্যালাগমাইটে তৈরি শিবলিঙ্গটি মূল আকর্ষণ।

পাহাড়ের কোলে যেখানে মেঘ করে সেই স্থানটির নাম মেঘালয়। যার নাম রেখেছিল শিবপ্রসাদ চ্যাটার্জি । চেরাপুঞ্জি সবচাইতে বেশি বৃষ্টিপাতের স্থান হলেও বর্তমানে সেই স্থানটি মৌসিনরামের দখলে।  বৃষ্টিকে উপভোগ করতে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে অবশ্যই যেতে হবে মৌসিনরাম। 

আপনি কি জানেন? পৃথিবীর সবচেয়ে আদ্র স্থান। ভারতে মেঘালয় হচ্ছে মেঘেদের বাড়ি। কবিদের অনুপ্রেরনার ও চিত্রকরদের ক্যানভাস। বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। ২১ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে রাজ্য হিসাবে ঘোষনা হয়। মেঘালয় ছবির মত সুন্দর একটি রাজ্য। ক্যালচার ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, মেঘের সমাবেশ, জীবনের কিছু রঙ্গিন মুহূর্ত কাটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা। মেঘালয় সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর পূর্ব অঞ্চলে অত্যতম একটি সুন্দর রাজ্য। মেঘালয় পাঁচটি প্রশাসনিক জেলায় ভাগ হয়েছে- জয়িন্তা পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম গারো পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম খাসি পাহাড় অবস্থিত। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড়ে অবস্থিত মৌসিনরাম। যেখানে ৭০০ মিলিলিটারপর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। যদিও শিলং এই জায়গা থেকে ৮০ কিমি দূরে যেখানে মাত্র ৯০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়। 

কেন মৌসিনরাম পৃথিবীর সবচেয়ে আদ্র স্থান? 
পূর্ব খাসি পাহাড়ের দক্ষিন অংশে রয়েছে উত্তর দক্ষিন ওরিয়েন্টের উপত্যাকা। বাতাস বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে পূর্ব খাসি পাহাড়ের দিকে উড়ে যাওয়ার সময় প্রচুর আদ্রতা নিয়ে যায় সঙ্গে করে। এই আদ্রতা খাসি পাহাড়ের পৌঁছাবার সঙ্গে সঙ্গে ঘনীভূত হয় এবং ভারী মেঘ তৈরী করে যার ফলে এই ঢালগুলিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়। 
মৌসিনরামে বৃষ্টি শুরু হয় এপ্রিল বা মে মাসে চলতে থাকে অক্টোবর পর্যন্ত। 
এখানে এতো পরিমান বৃষ্টি হয় যে রেইন কোট বা ছাতা ☂️ কাজ করে না। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করলে প্রথমেই চোখে পড়বে ঐতিহ্যবাহী ছাতা " অনূপ"। আসলে এটা ☂️ আর টুপি মাঝখানে বাঁশের চটি আর কলাপাতা দিয়ে বানানো নৌকার মতো আকৃতির। ওপরের দিকটা মাথায় আটকে থাকে , পেছনের লেপ্টে থাকে পিঠে। কোন হাতল নেই। ছোটবেলায় আমরা অনেকটা এই রকম একটা জিনিষ ব্যবহার করতাম তালগাছের পাতা দিয়ে তৈরী করা হতো। 

এখানে এত পরিমান বৃষ্টি হয় যে বাড়ীর ছাদে বৃষ্টির শব্দ এতো বেশি হয় যে ভেতরে নিজেদের কথা শুনতে পায় না। তাই এখান কার লোকেরা ঘাস দিয়ে বাড়ীর ছাদ ঢেকে রাখে। 

সবচে হাস্যকর হলো পৃথিবীর সবচে আদ্র ও বৃষ্টিপাতের অঞ্চল হলেও তীব্র জলের কষ্ট রয়েছে । তাই ভ্রমন কালে অনেক টাকা খরচ করতে হয় জলের জন্য।  এখানে বৃষ্টির জন্য ভূমিধস ও বিচ্ছিন্ন হওয়া খুবই সাধারন ঘটনা । এখানে স্কুলের বাচ্চারা দুধরনের ছুটি পায় অবিরাম বৃষ্টির জন্য আর মনোরম পরিবেশ উপভোগ করার জন্য। 

এই অঞ্চলে সবচে চমকপ্রদ দ্রষ্টব্য হলো " জ্যন্তসেতু"।  ছোটো ছোটো খাদ পাহাড়ী ঝর্নাধারা সযুক্ত করা এই সেতুগুলো গাছের শিকড় আর ঝুলন্ত লতাদিয়ে বানানো। প্রথমে দুই পাড়ের দুই তিনটে রাবার গাছ বরাবর একটা বাঁশের কাঠামো বানানো হয়। পরে বাঁশের বাঁশের কাঠামোর উপর গাছের শিকড় পেঁচিয়ে দেওয়া হয় । জ্যান্ত শিকড়গুলো ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আর সেতুটা দিন দিন আরো শক্তিশালী হতে থাকে। খাবার জায়গা দেদার। রকমফেরও অঢেল। বার্গার, পিৎজা, মিল্কশেক, স্যাণ্ডউইচের দোকান রাস্তার মোড়ে হামেশাই পাওয়া যায়। চীনে খাবার ও তিব্বতি মোমো-থুকপাও পাওয়া যায় বেশ কিছু রেস্তরায়। স্থানীয় খাবারের দোকান তেমন না থাকায় খোজ নিতে পারেন ট্যুরিস্ট লজের ক্যান্টিনে। মনে রাখা দরকার, ভারতের এই অংশে সাধারণত আমিষ খাদ্যের প্রচলন আছে। নিরামিষ খাবারের সন্ধান পাওয়া যাবে মারওয়াড়ি ভোজনালয়ে ও  কিছু বাঙালি রেস্তরায়।

বেড়ানো শেষে কেনাকাটা করতে হলে  রাস্তারধারে দোকানগুলোয় যাওয়া যায়। এখানে দরদাম করাটাই দস্তুর। এ ছাড়া শহরে আছে বেশ কিছু অত্যাধুনিক শপিং মল। স্থানীয় উপজাতির মানুষের হাতে তৈরি জিনিসপত্রের সম্ভার পাওয়া যায় এখানে।

নানা সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা আছে। অনেক দোকান ও হোটেলেই ক্রেডিট কার্ডে পেনেন্ট করার সুবিধে পাওয়া যায়। শিলং শহরে পুলিশের সদর দফতরের ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২২৪৪০০/ ১০০।

আরও তথ্য পেতে হলে যোগাযোগ করতে হবে ‘মেঘালয় পর্যটন দফতরে, ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২৬২২০।
তথ্য পাওয়া যাবে ভারতীয় পর্যটন দফতরেও, ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২৫৬৩২।

মৌসিনরাম তার মুষলধারে বৃষ্টির অনন্য অভিঞ্জতার জন্য বিখ্যাত। ভ্রমনের সেরা সময় হল সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের মধ্যে ‌ । এই দুই মাসে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় এবং আবহাওয়া একেবারেই মনোরম থাকে।  আপনি যদি বৃষ্টি উপভোগ করতে চান এবং প্রাকৃতিক নিষ্ঠুর সাক্ষী হতে চান , তাহলে বর্ষাকাল হল মৌসিনরাম দেখার সেরা সময়।  

" সবাইকে ভারতের এই আশ্চর্যজনক পর্যটন স্থান সম্পর্কে জানতে দিন । এই তথ্য আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন " ।
ধন্যবাদ।

লেখক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। নেশা- ভ্রমণ। 

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments