জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য


গুচ্ছ কবিতা 

তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য 

বৈরাগ‍্য
     
আসক্তি নেই  রক্তের প্রতি  নেই   তেমন ভক্তি 
জানিনা রঙের ব‍্যবহার। 
তবুও  জানি ভগবান  আর ভক্তের অবারিত  দ্বার
ডানা ভাঙা পাখি যৌবন বেঁধে রাখি।
বিষয় ভোগের ঘরে রেখে দিই শূন‍্য হাওয়া ভ'রে।
মন্দিরে দেবতাকে দেখিনা, দেখি মানুষের  পুতুলনাচ। 
একা একা বিজনে দেবতার সঙ্গে আমার  খেলা
 প্রশ্ন উত্তরের পালা।
অনেক  বিবাদের পরে জোর করে তুলে আনি 
ভগবান  কে আপন ঘরে।
মুদ্রা দোষে দুজনেই  ব‍্যস্ত হয়ে পড়ি।
হাত ধরে এসে বৈরাগ‍্য হেসে।
অন্ধকার  হাতড়ে গভীর  ক্ষতের মলম খুঁজি।
না আছে জীবনে বৈরাগ‍্য না আছে নিরাময়।
মানব জীবনে  পকেট ভরা আছে  ভালো  কিছু সময়। 
এ জীবন রসুই ঘরের অম্ল মধুর রসনাময়।


যে ভাবে মানুষ  ঠকে

 সরল টলটলে জল  যেন ভালোবাসা  আঁচল। 
কত রং গুলে দেয় মানুষ  জলে ভুল ছড়িয়ে দিতে ।
জলের বুকে সিঁড়ি আছে,  দাগ আছে, কান্না আছে 
জীবনের  সব অভিমান  l
ধুয়ে মুছে সব কালি আপন বন্ধু  মিতালি। 
 পৃথিবীর ক্ষত চাপা থাকে মেঘ কালো খোলা চুলেতে।
তবু সে ছোটে সবার পিপাসা মেটাতে।
কেউ পেরেক ঠোকে কেউবা  বিষ মেশায় তাতে।
যে জানেনা সৌন্দর্যের  সম্মান  
ভুল করে বিদ‍্যুৎ ছুঁয়ে  নিজের মৃত্যুর  
কাছে কে যেন বসে আছে মাথা নুয়ে !

কে করে কার ক্ষতি জলের সরল মতি?
ঠকতে ঠকতে শেষ বিকেলের দেশে 
একদিন জলও পাথর হবে। 
 মাথার উপর যখন সূর্য  দাঁড়াবে
তৃষ্ণার্ত  চাতক তখন কী পাথর খাবে?
জেনে রেখ কবির লেখা থামেনা 
জীবন মৃত্যুর  আগে পরে হৃদয় কলম তো ভাঙেনা।


  
বাতায়ন প্রেম 
              
জানালা খোলা তোমার  দিকে 
বরং  উত্তরে হাওয়া  দিয়ো ঢেকে।
উন্মুখ সুখ হাঁপিয়ে উঠুক হিমঘরে।
নিউজার্সি থেকে পহেলগাঁও
ভুলে গেছি কোন পথে বরফ রথে ম‍্যাপেলের রঙ ঢাকে?
আমার  নিষেধ  মানবে তুমি  বরফ না মরুভূমি  ?
চোখের পর চোখ জমাই চোখের জল , সজল।
নই সমুদ্রের মতো অতল।
গম্ভীর   জানালার  কাঁচ 
কুয়াশার  সাথে বিবাদ ভোর রাতে।
বাতায়ন  প্রেম জাগে ক্লান্ত চোখে।
ঢাকা পড়েগেছে সংকেত  তার অদৃশ‍্য কোন পর্দা তে !


স্বপ্ন 
              
স্বপ্ন আমার  সাথ দেয়না কখনো 
করাত এসে দুভাগ  করে দেয় এখনো।
বিষণ্ণ দুপুরে গান ফেরি করে যান এলভিস প্রেসলি।
ছিলনা  পয়সা আমার,  তিনি উষ্ণতা  নিয়ে স্নান সেরে যান।
যেতে যেতে  পথে দেখা জীবনানন্দের সাথে 
কবিতার বদলে একফালি চাঁদ দিয়ে যান।
আমি  তো চেয়েছি পূর্ণ  শশী আর ষোলোকলা।
অবহেলে এ দিন আমার  বৃথা গেল সারাবেলা।

 
গল্প 
                      
কিছু  নাম জানা পাখি আর অজানা গল্প 
কাকভোরে উঠে দুচার কিশোরী যেন বাসন্তী রঙের নক্ষত্র।
বুকের ভেতর মোচড় , কাঁথা সেলাই  সেই  প্রাচীন  গল্প ।
ধান মেলেছে ওরা পিচ রাস্তায় 
বুলবুলি একছুটে মাঠে ওরা গল্পের নেশায়।
আজ যাদের হাতে খড়ি  
স্লেটের হৃদয়  জুড়ে অ, আ ক্ষণিক বিভোর।

আজ না হয় তুমি  অজ্ঞাতবাস।
বসন্ত আমার  মন কেমন বেলা 
পলাশ অশোক শিমূল  আর আবির 
রঙের খেলা আবহাওয়াবিদ বিশদ জানেন।
আমি  তো ভরা শ্রাবণের কলমিলতা।


 চলো ঘরটা খুঁজে ফিরি
      
ঘরটা খুঁজতে  গিয়ে ঝোলা ভরে ঝড় নিয়ে ফিরি। 
কী দুরন্ত গতিতে প্রাতঃরাশ সারি।
খড়কুটো উড়ে আসে ঝড়ের দাপটে।
কে যে আমার  অদৃশ্য  ঘর টাকে শূন‍্যে তুলে নাচায় !
সৃজন ছন্দে ভালো  মন্দে আত্মার তালে দিই তালি। 
দেখি নিহত পাখি পড়ে আছে পথের চৌমাথায়।
 কিছু  কথা আছে আঢাকা কিছু হয়ে গেছে মালা গাঁথা। 
কোন ঘর খুজি কোন ঘরে ফেলে রাখি পুঁজি?
 শুধুমাত্র  শিড়দাঁড়া সোজা সেই  বাহনে 
ভর দিয়ে ঘর টুকু  খোঁজা। 
কে যেন আছে পরবাসে? 
সেই  আদিম  চিঠির প্রাচীন  গন্ধ ভেসে আসে ,
এ বসন্তে ঘর খোঁজার অভিলাষে  



আঘাত 
     
এই তো দেখিয়েছি আমার  ক্ষত চিহ্ন দুর্বল স্থান 
মায়াবী আলো নিভৃত অভিমান।
তোমাদেরও আছে অধিকার কুঠারের ব‍্যবহার।
মস্তিষ্কে পাকস্থলির  খিদের কারবার।
জানোনা মন জানোনা যতন 
সযত্নে রাখো দেরাজে রতন।
ও ভাবে প্রেম চোখে দেখোনা,  সে  সাধনার পথ
আমার  দু চোখ কাজলরেখা নদী 
পাথরের ঘুম ভাঙিয়ে বইছি নিরবধি।



 মন উড়োজাহাজ 
                      
হৃদয়ের ককপিঠে বসে এঁটেসেটে বেঁধে এনেছি  
খোঁপাতে   শত্রুদের  বাঁচাতে ।
রোজ কেটে যারা ছড়িয়ে  দেয় আমার  মাংস  ।
সেই  তো আমার  সুখের আশার ভগ্নাংশ ।
মৃত‍্যুর পর থাকে জন্মের অধিকার।
 আমি  শত্রুদের  চাইনা তাড়াতে  ।
ওরা ভয় পেলে জায়গা করে দিই স্তনের আড়ালে।
উড়োজাহাজ  মন মেঘের  ফাঁকে 
বিদ‍্যুৎ হয়ে উড়ে গেছে কখন !
 তবুও  ভালো  মানুষ  আলো মানুষ  আছে  
আর আছে সুর্য সহায় ক্লান্তিহীন আলো দিয়ে যায় ।
ও হে মন্দ  মানুষ তুমি বেঁচে  থাকো 
পৃথিবীর  অভিধানে নেচে থাকো। 
পৃথিবীর  তিনভাগ জল আছে  জীবনের  জন‍্যে 
সাদা কালো ধুয়ে নেওয়ার পাঠ জল ভালো  করে জানে।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments