জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৬৩

সম্পাদকীয়,
ইংরেজি বছরটা শেষ হবার আগেই আসে বড়দিন। দিনটা বছরের সবচেয়ে বড়দিন তা কিন্তু নয়। ২৫ শে ডিসেম্বর থেকে দিন বড়ো আর রাত ছোটো হতে শুরু করে। শুধু তার জন্যও নয়। এই দিনটিতে জেশুয়া মেশিয়াহ এর জন্মদিন। জেশুয়া মেশিয়াহ কে? সেটা বলবেন মুক্তি জেঠু। সুব্রত আঙ্কেল ছড়ায় বলেছে, আসে ঐ বড়দিন, / গীর্জায় ঘন্টা। /দোরে দোরে উপহার / নিয়ে ঘোরে সান্টা। হ্যাঁ, একটা সময় ছিল যখন ঘরে ঘরে সবার ঘড়ি ছিল না, গীর্জায় ঘন্টা বাজিয়ে সময় জানানো হতো সকলকে, সেই সময়ের ঘড়ির গল্প বলেছে তোমাদের বন্ধু ভানুপ্রিয়া।  সান্টা যে বড়দিনে সকল ছোটোদের জন্য উপহার নিয়ে আসে সেকি আর আমি জানি না ভেবেছো। কিন্তু আমাদের ছোটোবেলায় সান্টা আসতো না। তবু আমাদের ছোটোবেলাতেও বড়দিনের মজা ছিল। সেটা কেমন ছিল তা তোমাদের বলেছেন সুব্রত জেঠু আও প্রগতি জেঠু। বড়দিনের উপহার, কেক, পিকনিক সব মজার থেকেও বেশি মজা হয় যদি আমরা কোথাও বেড়াতে যাই বাসবদত্তা আন্টির মতো। তাই না! তবে বেড়াতে যে কেবল আমরাই যাই তাই না। শীতকালে পাখিরাও বেড়াতে যায়। বিশেষ করে শীতের দেশের পাখিরা চলে আসে আমাদের গরমের দেশে। আবার শীত শেষ হলেই ফিরে যায় নিজের দেশে। এদের বলে পরিযায়ী পাখি। সোহম দাদা পরিযায়ী পাখির ছবি পাঠিয়েছে।  কি দারুণ না! আর ছোটো বন্ধুরা ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। ছোটো শিল্পীদের কথা ভেবে পীযূষ আঙ্কেল নন্দলাল বসুর জীবনী লিখে পাঠিয়েছে। খুদে শিল্পীরা ও পাঠক বন্ধুরা পড়ে জানিও কিন্তু কেমন কাটল তোমাদের বড়দিন। - মৌসুমী ঘোষ।

যীশুখৃষ্টের আসল নাম
মুক্তি দাশ


এসে গেল বড়দিন। হৈ হৈ করার দিন। প্রাণভরে কেক-প্যাস্ট্রি খাওয়ার দিন। পিকনিক করার দিন।  'বড়দিন' মানে যে দিনটাই বড়, তা কিন্তু মোটেই নয়। বরং উল্টো। আসলে এটি একটি মহৎ দিন। একজন শ্রেষ্ঠ মহান মানুষের পবিত্র জন্মদিন।  পরমপুরুষ মহান পরিত্রাতা মানবাবতার পূজারী যীশুর পবিত্র জন্মদিন। অন্তত আমরা এতাবধি তাই জেনে এসেছি। 

খৃষ্টধর্মের প্রবর্তক কে? অতি পরিচিত একটি প্রশ্ন। এবং এর উত্তরটিও সবারই জানা। কিন্তু উত্তরটা যদি একটু অন্যধরণের হয়? এর উত্তরে যদি কেউ বলে বসে, খৃষ্টধর্মের প্রবর্তক হলেন ‘জেশুয়া মেশিয়াহ্’-তাহলে? তাহলে অনেকের মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগবে, তিনি আবার কে? আমরা তো জন্মাবধি জেনে এসেছি যীশুখৃষ্টই খৃষ্টধর্মের অবিসংবাদিত প্রবর্তক। তাহলে?

ব্যাপারটা আর কিছু না, হিব্রুভাষায় এই মহান ধর্মপ্রচারক যীশুখৃষ্টেরই আদি এবং আসল নাম ‘জেশুয়া মেশিয়াহ্’। পরবর্তীকালে গ্রীকদের হাতে পড়ে এই নামটি ‘ইউসুস খৃস্তোস’-এ রূপান্তরিত হয় এবং উচ্চারিত হয়।

কিন্তু উচ্চারণের ক্ষেত্রে এই ‘ইউসুস খৃস্তোস’ আবার ইংরেজদের জিহ্বানুকূল হলো না। তারা আরও সহজ করে তাদের মতন করে উচ্চারণ করতে থাকলো ‘জেসাস ক্রাইস্ট’ (Jesus Christ)।

আর আমরা বাঙালিরা? আমাদের কাছে তো দুরুচ্চার্য বলে কিছুই নেই। আমরা এই ‘জেসাস ক্রাইস্ট’ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারতাম। ‘জেসাস ক্রাইস্ট’ আমাদের কাছে এমন কিছু দুরুচ্চার্যও নয়। তবে কিনা, বিভিন্ন জাতিই যখন তাদের নিজেদের পছন্দমাফিক উচ্চারণে এই যুগন্ধর মহামানবকে অভিহিত করছে, তখন বাঙালিদের নিজস্বতা বলতে আর রইলোটা কী? সুতরাং আমরাও আমাদের মতন করে নাম দিলাম, ‘যীশুখৃষ্ট’। 

আর ক্রমে সেই আসল নাম ‘জেশুয়া মেশিয়াহ্’ কালের নিয়মে কোন বিস্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে গেল!


শীতের কথা 

সুব্রত দেব

থুত্থুরে বুড়ো বুড়ি
    কনকনে শীত
মন্দিরে ধুনী জ্বেলে
    কারা গায় গীত।
ঝোপরিতে কাড়াকাড়ি
      একটি কাঁথায়
ভাগাভাগি করে শীত
         রাত যে কাটায়।
   রাত যায় আসে দিন
        রবি ওঠে ভোরে
  উত্তাপে ভরে দেয় 
          ওদের কুড়ে।
কুয়াশায় ভরে ওঠে
    শহরের মুখ
 ভোর বেলা লেপ মুড়ি
       কী দারুণ সুখ!
  আসে ওই বড় দিন
          গীর্জায়  ঘণ্টা
  দোরে দোরে উপহার
           নিয়ে ঘোরে সান্টা।
  উপহার নিয়ে যেও
         ঝোপড়ির ঘরেতে
    তবেই তো বড়দিন
            সকলের খুশিতে।।

 


ছোটদের বড়দিন

প্রগতি মাইতি 


এখন কলকাতায় বসবাস করলেও, আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পূর্ব মেদিনীপুরের এক গন্ড গ্রামে। যেখানে বছর বারো আগেও বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। গ্রামে থাকলেও ছেলে মেয়েদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ ছিল না। আমরা খুব অন্তরঙ্গ মেলামেশা করতাম। সালটা ঠিক মনে নেই। বয়স তখন ৯ বা ১০ বছর হবে। আমাদের মধ্যে কে যেন একজন ২৪ ডিসেম্বর প্রস্তাব দিয়েছিল, এ্যাই, কাল বড়দিন । স্কুল ছুটি। কী করা যায় বল দেখি। বনভোজন করবি ? আমাদের চেয়ে দু-তিন বছরের বড় একজন দিদি বিজ্ঞের মতো বলে উঠলো, পাগল নাকি? বাড়িতে পিটুনি দেবে। এই বয়সে বনভোজন? তাছাড়া রাঁধবে কে? টাকা কোথায়? ইত্যাদি নানা সমস্যা তুলে ধরলো। আমি চিরকালই উইনিং স্ট্রোক দিতে ভালোবাসি। আমি বললাম, বেশ তো, আজ প্রত্যেকে আমরা বাড়িতে করে কাল সকাল সকাল জড়ো হয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। সবাই আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।

            তখন আমাদের সকাল মানে ভোর ছ'টা সাড়ে ছ' টা। মাফলার আর চাদর জড়িয়ে পুকুর পাড়ে মিলিত হলাম। ন'জনের মধ্যে দু' জন এলোই না। বাকি সাতজন প্রত্যেকে তাদের বাড়িতে আলোচনার কথা বললো। নানা মুনির নানা মত। তবে একজনের বাবা কলকাতায় ভালো চাকরি করেন। সে বললো, সকালে কেক আর কলা আমার বাবা দেবে। আমরা তো মহাখুশি। ভালোই হলো। টিফিনের চিন্তা আর রইলো না।
এবার বিষয় হলো, দুপুরে কী রান্না হবে? কে রান্না করবে? কিভাবে হবে? কোথায় হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার চললো সাত-পাঁচ চিন্তা ভাবনা। মোটামুটি ঠিক হলো, পুকুর পাড়ে বাঁশবাগানে বনভোজন হবে। ইট পেতে শুকনো ডালপালা দিয়ে রান্না হবে। মেনু ঠিক হলো, ফুলকপি - আলু দিয়ে খিচুড়ি আর ওমলেট। আমাদের মধ্যে একজন মেয়ে তেল মশলার দায়িত্ব নিল। হাঁড়ি, কড়াই, খুন্তি, হাতা আমার মা দিতে রাজি হয়েছিল। থালা নয়, কলাপাতা কেটে খাওয়া হবে। আরও ঠিক হলো, প্রত্যেকে বাড়ি থেকে চাল, ডাল, আলু আনবে। আর ফুলকপি ? বাঁশবাগানের প্রায় লাগোয়া কপিক্ষেত। ঐ ক্ষেত থেকে দুটো ফুলকপি চুরি করা হবে। কে চুরি করবে তাও ঠিক হয়ে গেল।
হৈ হৈ রৈ রৈ করে আমরা আমরা বনভোজনের স্পটে পৌঁছে গেলাম। আমাদের পৌঁছনোর আগেই কপিচোর বড় সাইজের দুটো ফুলকপি ক্ষেত থেকে হাতিয়ে বাঁশপাতা ঢাকা দিয়ে রেখেছে। সবার চাল এক জায়গায় মেশানো হলো। আর ডাল ও আলু আলাদা করে রাখা হলো। যে দিদিটা আমাদের চেয়ে বড় ছিল, সে রান্না করবে ঠিক হলো। এবার খোঁজ পড়লো তার, যার বাবা কেক ও কলার দায়িত্ব নেবে বলেছিল। সে চাল ডাল আলু দিয়ে কেক কলা আনতে সে-ই যে গেল, তার আর দেখা নেই। তখন তো আমাদের খিদেতে পেটে ছুঁচোর কীর্তন শুরু হয়ে গেছে। অগত্যা আমরা দুজন তার বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। কিছুটা যেতেই দেখি সে আসছে। হাতে একটা ছোট্ট থলে। বললাম, কি রে, এ্যাত দেরি কেন? ও বললো, আর বলিস না। বাবা কলকাতা থেকে যে কেক এনেছিল সেটা গন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাবা সাইকেলে করে দোকান থেকে কেক আনলো। সে যাই হোক, ছোট কাগজে মোড়া একটা করে বাপুজি কেক আর দুটো করে কলা পেটে পড়তে শান্তি। ও বলতে ভুলে গেছি, একজনের বাড়িতে অনেক মুরগি ছিল। সে ডিম এনেছিল।

     রান্না বসাতে একটু দেরি হয়ে গেল। আমরা শুকনো ডালপালা যোগান দিতে ব্যস্ত। কেউ আবার আলু - ফুলকপি কাটতে। বেলা বাড়তে থাকে। গর্ত করে চারটে ইট বসিয়ে রান্না। দুজনের মা খোঁজ নিতে এসেছিল। আমরা তো দুঃখ দুঃখ মুখ করে বললাম, তোমরা এলে কেন ? তাদের উত্তর, কী করছিস দেখতে এলাম। ওই দুজন মা না এলে আমাদের কখন যে খাবার জুটতো তা বলা মুশকিল। আসলে যে দিদিটা রান্না করছিল, তার চোখে এ্যাত ধোঁয়া লাগছিল যে সে ভালোভাবে রান্নাই করতে পারছিল না। খালি চোখের জল মুছছিল। মায়েরা ডালপালা ঢোকানোর দিক পরিবর্তন করতেই দেখা গেল ধোঁয়া রাঁধুনির উল্টোদিকে চলে যাচ্ছে। যাই হোক, মায়েদের সাহায্যে খিচুড়ি রান্না হয়ে গেল। এরপর মায়েরা ওমলেট ভেজে চলে গেল। আর বলে গেল, দেরি করিস না। অনেক বেলা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে যে যার বাড়ি যা।

  কলাপাতায় খিচুড়ি আর ওমলেট। এই রসনার তৃপ্তিই আলাদা। কিন্তু যা দাঁড়িয়েছিল - সকলের বাড়ির চাল ও ডাল এক ছিল না। সত্যিই খিচুড়ি বটে ।এই স্মৃতি মনে পড়তে এক অন্য অনুভূতি হলো। জানি না অন্যদের বড়দিন ঘিরে কী মনে আছে।



বড়দিনের স্মৃতি

সুব্রত বসু

বড়দিনের স্মৃতি বলতে গেলে স্কুলে পড়াকালীন খ্রীষ্টমাস ইভ’এ  স্যান্টা ক্লজের মাধ্যমে  উপহার পাবার কোন প্রত্যাশা আমাদের  ছিল না। কারণ  স্যান্টা ক্লজ আমাদের কাছে একটি অপরিচিত নাম, শৈশবে তাঁর সঙ্গে আমাদের  কারোর   পরিচয় হয়নি। অনেক বড় হয়ে জেনেছি তাঁর বিষয়ে, তখন আর তিনি মোজার ভেতর উপহার সামগ্রী রেখে যান’না আমাদের জন্যে।  এসবের বদলে ছিল  বড়দিনের বেশ ক’দিন আগে  থেকেই চরম উৎকন্ঠা চব্বিশে ডিসেম্বর’কে ঘিরে, না জানি সে কোন বার্তা নিয়ে উপস্থিত হবে। কারণ স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা  ফল প্রকাশ হত ওইদিনে । দুর্গাপুজোর পর থেকেই ক্রিকেট মাঠে বল পিটিয়ে পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ক্ষীণ সম্পর্ক রেখে যখন  পরীক্ষা হলে ঢুকতাম প্রশ্নপত্র হাজির হত মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে। ফলে উদ্‌বেগ সংশয় আশঙ্কা থেকেই যেত  ফল প্রকাশের দিন পর্যন্ত। তার ওপর  প্রতিবারই প্রকাশিত ফল  অভিভাবকদের সন্তুষ্টি আদায় করতে ব্যর্থ হত।  আমি কোনদিনই বিশেষতঃ বাংলা ইংরিজিতে ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বর পাইনি, বেশ উঁচু ক্লাসেই ইংরিজিতে চুয়ান্ন পেয়ে বেশ আত্মতুষ্টিতে ভুগছি। রিপোর্ট কার্ডে একবার চোখ বুলিয়ে বাবা হেলাভরে সেটা বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে বলে ছিলেন , “ ধুর! হায়ার সেকেন্ডারীতে ওটা চার হবে”। ভাগ্যিস সত্যযুগ নয়, না হলে পিতৃ-ভবিষ্যদ্‌বাণী কি আর ব্যর্থ হত! যাইহোক  এইসব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে  বড়ুয়ার কেক আর দেদার কমলালেবুর মাধ্যমেই বড়দিন উদ্‌যাপিত হত মাত্রাতিরিক্ত আনন্দের সঙ্গে। কারণ তারপর থেকে  যতদিন না নতুন ক্লাসের নতুন বই কেনা হচ্ছে, ততদিন  পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।  

  নানান বিনোদনের মধ্যে   বড়দিনেই ক্রিকেটের নন্দন কানন ইডেন গার্ডেনে বসত টেস্ট ম্যাচের আসর কখনো অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংলন্ড, না ইংলন্ড নয় মেরিলিবোর্ণ ক্রিকেট ক্লাব – এম সি সি। মাঠে যাবার প্রশ্ন নেই রেডিওই সম্বল। বাংলা ধারাবিবরণীতে অজয় বসু, কমল ভট্টাচার্য, পুষ্পেন  সরকার রান্নাঘরে পৌঁছে  দিয়েছিলেন ক্রিকেট’কে। অজয় বসুর যেমন কন্ঠস্বর, তেমনি শব্দ চয়ন, কি সুললিত ভাষা- “ এ বলের যা প্রাপ্য ব্যাটস্‌ম্যান মিটিয়ে দিলেন তা সমুচিতভাবে বলটিকে সীমানার ওপারে পাঠিয়ে”। গুড লেন্থ বা শর্ট পিচ নয় সমীহ আদায় করা বল, - এসব শুনতে শুনতেই ক্রিকেটের সবুজ মাঠ  মনের পর্দায় ভাসত অবিকল টিভিতে দেখার মতন। সরাসরি দেখতে না পাওয়ার খেদ কখনো অনুভব করিনি।

  সেবার বড়দিনের আগের দিন আমার এক সম্পর্কিত কাকা, বাবার মাসতুতো ভাই, বিট্‌লেকাকা এসে বাবাকে বললেন- “ দাদা কাল ওদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরে আসব”। আপত্তির কোন প্রশ্ন নেই। তিনি ছিলেন এক বিশাল ব্যায়াম বীর, একবার বঙ্গশ্রী হয়েছিলেন। ভারোত্তোলনে দেশ জোড়া নাম। রোম অলিম্পিকে যাবার সম্ভবনাও তৈরী হয়েছিল, দুর্ঘটনাজনিত কারণে সেই সম্ভবনা বাতিল হয়ে যায়। বিট্‌লেকাকা সঙ্গে থাকা মানে তো বিপুল ভরসা, সুতরাং বাবার  মত না দেওয়ার কোন প্রশ্ন নেই। বড়দিনে  চিড়িয়াখানা মানে তো রূপকথা রাজ্য। সেবার চিড়িয়াখানায় সাদা বাঘ আর সাদা কাক আসার খবর বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই খবরের কাগজের মাধ্যমে জানা যাচ্ছিল। সেসব দেখার সাক্ষী হব ভেবেই পরীক্ষা আশানুরূপ ফল না হওয়ার গ্লানি নিমেষে উধাও হয়ে গিয়েছিল। মনে আছে  মেরুন বর্ডার দেওয়া হলুদ সোয়েটার পরে না জানি নিজেকে কি লাগছিল, তবে সেই আত্মশ্লাঘা বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কাকা আমাকে দেখেই বললেন –“ এভরি থিংক চকাচক হোয়াই সো জুতো ময়লা”। সত্যি জুতো জোড়া  ধূলিধূসরিত।  ভারী মজার মানুষ ছিলেন ওই বিট্‌লে কাকা, বললেন “শোন বিলাতি প্রবাদ  Man is known by his shoes”. সেসব যে মনে খুব একটা রেখাপাত করেছিল তা নয়, ছেঁড়া ন্যাকড়া দিয়ে বার দুয়েক মুছে নিয়েই তৈরী হয়ে গেলাম চিড়িয়াখানা যাবার জন্যে। তখন সেটাই মুখ্য। ওখানে গিয়ে শুনলাম   সাদা বাঘ দেখার জন্যে আলাদা টিকিট কাটতে হবে। বিরাট লাইন, কিন্তু কাকা যেকোন সম্যসার সমাধান, কিভাবে যে দ্রুত টিকিট কাটা হয়ে গেল জানিনা।  তৎকালীন রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু তাদের  নামকরণ করেছিলেন নীলাদ্রি ও হিমাদ্রি। হিমাদ্রি খাঁচার ভেতর ঘুমাচ্ছিল, বিরক্তিভরা মুখে নীলাদ্রি পাক খাচ্ছিল, তার শরীর থেকে একটা  নীলচে আভা বার হচ্ছিল। সাদা বাঘ যে অ্যালবিনো একথা জেনেছি অবশ্য অনেক পরে। সাদা কাককে কাক বলে চেনার কোন উপায় নেই। ধবধবে সাদা,হলুদ ঠোঁট, ঠুকরে ঠুকরে কিছু একটা খাচ্ছিল। কিন্তু সেটা যে কাক কে বলবে। সন্দেহ প্রকাশ করতেই চিড়িয়াখানার কোন কর্মচারী খাঁচার ওপর দুবার চাপড় মারতেই কা-কা করে ডেকে উঠল। সমবেত দর্শকের সেকী ব্যতিক্রমী  আনন্দ কা কা ডাক শুনে।

  যে কোন জায়গার কোন না কোন কান্ডের অংশীদার হয়ে থাকি, এ সুনাম আমার বরাবরে,  এখনো তা বহন করে চলেছি। সেবার শিম্পাঞ্জী খাঁচার সামনে অনেক লোকের ভিড়।   শিম্পাঞ্জী খাঁচার ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে দর্শকেদের দেওয়া কলা, ছোলা ভর্তি ঠোঙা নিয়ে মনে আনন্দে খাচ্ছে, সেইসময় কেউ একজন জলন্ত সিগারেট শিম্পাঞ্জীর হাতে  ধরিয়ে দিয়েছে,  সেও একবার টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে হাম কিসি সে কম নেহি।এবার জলন্ত সিগারেট’টা  দর্শকদের দিকে ছুড়ে দিলেও     আনন্দ কোন কমতি নেই । এইসব দেখতে দেখতে কখন যে দলছুট হয়ে গেছি জানি না। যখন খেয়াল হল বড়দিনের আনন্দ আতঙ্ক হয়ে মাথায় চেপে বসেছে। এমন একটা বয়স ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলব তা হয় না। অগনিত লোকের মাঝে এদিক ওদিক দেখছি, আমাদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। দুপুরের রোদ মরে আসছে। একলা একলা বাড়ি যে ফিরিতে পারব না, সে বিষয়ে নিশ্চিত। যত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে অসহায় ভাব চেপে বসছে। কতক্ষণ কেটেছে জানিনা। অবশেষে সেই  বিপদভঞ্জন কাকা পিছন থেকে এসে নড়া ধরে টানা – “অনেকদূর থেকেই তোর জুতো দেখে চিনেছি, Man is known by his shoes” চিড়িয়াখানার ধুলোয় মলিন  জুতো কল্যাণেই  সেদিন  বয়  থেকে ম্যান  হয়ে গিয়েছিলাম.  তারপর জীবনে তো কত না বিনোদন, কিন্তু আনন্দ কোথায়, সে তো হারিয়ে গেছে বড়দিনের শীতের দুপুরে।


নামটি আমার ভানুপ্রিয়া 

   শ্রেণী অষ্টম 8️⃣

বয়সটা চোদ্দ আমার
     রোল হচ্ছে নবম 
ঝাড়গ্ৰাম জেলা আমার 
     রামনগর গ্ৰাম🥳
জওহর নবোদয় বিদ্যালয়
    মোর স্কুলের নাম🏫
দিলাম লিখে ছড়ায় আমি 
    নিজের পরিচয় 🖊️
লাগলো কেমন গল্পখানা 
      বলবে অবশ্যই 😊

ভগবানের ঘড়ি
  

অনেক অনেক দিন আগের কথা ,তখন সারা ব্রহ্মান্ডে  একটি মাত্র ঘড়ি ছিল । যেটা ভগবানের কাছে থাকত । পরবর্তী কালে ভগবান সেটা মানুষকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেন । সেই ঘড়িটা আজকের আধুনিক ঘড়ির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল । শুধু একটাই মিল ছিল যে ভগবানের ঘড়িতেও তিনটা কাঁটা ছিল , আর এখনকার আধুনিক ঘড়িতে ও তিনটা কাঁটা থাকে । এবারকার ঘড়ি ব্যাটারিতে চলে কিন্তু ভগবানের ঘড়িটা মানুষ চালিত ছিল । এই ঘড়িটার কাঁটাগুলো মানুষ ঘোরাতো ।ভগবান তার এই ঘড়িটি চালানোর জন্য তিনটি লোক নিয়োগ করেছিলেন যারা হলো সেকেন্ড, মিনিট এবং ঘন্টা । ভগবানের ঘড়িটা ছিল বিশাল বড়ো ,তাই এই তিনজনের পক্ষে এতবড়ো একটা ঘড়ির কাঁটা সবসময় ঘোরানো  সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে সেকেন্ড তো রিতিমতো হাঁপিয়ে যেতো এই কাঁটাগুলো কে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ।তাই , সেকেন্ড, মিনিট এবং ঘন্টা কে কাজে সাহায্য করার জন্য উপযুক্ত লোক খুঁজে বার করার জন্য ভগবান তিন জনকে কাজে লাগিয়ে দেন যারা হলো সপ্তাহ , মাস এবং ঋতু । সপ্তাহ সেকেন্ড কে সাহায্য করার জন্য সাতজন উপযুক্ত ব্যাক্তিকে খুঁজে নিয়ে এলো । তাদের নাম হল রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র এবং শনি । তারা প্রতিদিন এক এক জন পালা করে করে সেকেন্ড কে সাহায্য করতো ।মাস ১২ জনকে  খুঁজে নিয়ে এলো মিনিটকে সাহায্য করার জন্য ।তারা প্রতি মাসে এক একজন করে মিনিটকে সাহায্য করতো। তাদের আগে থেকেই ভাগ করা থাকত কে কোন মাসে মিনিটকে সাহায্য করতে যাবে। তাদের নাম হল বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ , আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ন, পৌষ ,মাঘ,  ফ্লাগুন, এবং চৈত্র । আর ঋতু ৬ জনকে খুঁজে নিয়ে এলো । তাদের নাম হলো গ্ৰীষ্ম, বর্ষা,শরৎ , হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ।এরা সবাই প্রতেক ঋতুতে এক একজন করে ঘন্টাকে সাহায্য করতো।ভগবান তো তার ঘড়িটা মানুষদের উপহার দিয়ে দিলো , কিন্তু একটা বড় সমস্যা দেখা দিলো । সমস্যাটা হলো এই একটা মাত্র ঘড়ি আর এটা এমন ভাবে এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখান থেকে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ এই ঘড়িটা দেখতে পাবে । কি করা যায়?? কি করা যায় ?? ভগবান অনেক ভাবার পর একটা বুদ্ধি বার করল । পৃথিবীতে সমস্ত মানুষ সূর্য এবং চাঁদকে দেখতে পায় তাই ভগবান তার ঘড়িটাকে দিনের বেলায় সূর্যের উপর এবং রাতের বেলায় চাঁদের উপর রাখার সিদ্ধান্ত নিলো ।  ভগবান আরো দুজন কর্মচারী নিয়োগ করলো। তাদের নাম হল দিন ও রাত। এদের কাজ দেওয়া হলো যে সূর্য থেকে চাঁদ এবং চাঁদ থেকে সূর্য ভগবানের ঘড়িটাকে নিয়ে আসা এবং নিয়ে যাওয়া ।এভাবেই তখনকার মানুষ সূর্য এবং চাঁদ দেখে সময় নির্ণয় করতো । এখনো নাকি সেই ঘড়িটাকে দিন এবং রাত প্রতিদিন সূর্য থেকে চাঁদ এবং চাঁদ থেকে সূর্য নিয়ে আসে এবং নিয়ে যায় । সপ্তাহের নির্দেশে রবি, সোম, মঙ্গল ,বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র এবং শনি  এরা সেকেন্ড কে প্রতিদিন কাজে সাহায্য করে ।মাসের নির্দেশে বৈশাখ,জ্যৈষ্ঠ ,আষাঢ় ,শ্রাবণ, ভাদ্র,আশ্বিন, কার্তিক,অগ্রহায়ণ, পৌষ,মাঘ, ফাল্গুন এবং  চৈত্র এরা সবাই মিনিটকে প্রত্যেক মাসে তার কাঁটা ঘোরানোর  কাজে সাহায্য করে। এবং ঋতুর  নির্দেশে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত ,শীত ও বসন্ত এরা ঘণ্টা কে প্রত্যেক ঋতুতে তার কাটা ঘোরানোর  কাজে সাহায্য করে ।

  

স্মরণীয়
(নন্দলাল বসু)

কলমে - পীযূষ প্রতিহার

'সহজ পাঠ' পড়েছো তো সবাই, এখন বলতো সহজ পাঠ বইতে রবীন্দ্রনাথের লেখার সঙ্গে যে সাদাকালো ছবিগুলো রয়েছে সেগুলো কে এঁকেছেন? সকলেই জানো নিশ্চয়ই, তিনি হলেন নন্দলাল বসু। ১৮৮২ সালের ৩ডিসেম্বর অধুনা পূর্ব বিহারের মুঙ্গের জেলার হাভেলী-খড়্গপুরে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা পূর্ণচন্দ্র বসু কর্মসূত্রে দ্বারভাঙ্গা এস্টেটের কর্মচারী হিসেবে সেখানে বসবাস করতেন, মা ছিলেন ক্ষেত্রমণি দেবী। তাঁদের পৈতৃক নিবাস হুগলি জেলায়। তিনি প্রথমে দ্বারভাঙ্গা স্কুলে ও পরে কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন। ১৯০২ সালে তিনি এন্ট্রান্স পাস করে জেনারেল এসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশনে এবং পরে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। বারবার অকৃতকার্য হয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজর বানিজ্য শাখায় ভর্তি হন। এখানেও ব্যর্থতা তার পিছু ছাড়েনি। অঙ্কন ও শিল্পের প্রতি আগ্রহ থাকায় এবার ভর্তি হলেন কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে। এখানে তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহচর্য লাভ করলেন ও তাঁরই প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এই পর্যায়ে আঁকলেন একের পর এক বিখ্যাত ছবি- 'কর্ণের সূর্যস্তব', 'কৈকেয়ী-মন্থরা', 'সতী', 'শিব ও সতী', 'উমার তপস্যা' ইত্যাদি।
গুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সূত্রেই তাঁর আলাপ হয় ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে এবং তিনি পাশ্চাত্য শিল্পকলার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। এরপর চিত্রকর প্রিয়নাথ সিংহের সঙ্গে ভারতের প্রাচীন কলা-কেন্দ্রগুলি ভ্রমণ করেন। এইসময় কালীঘাটের পট শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পটুয়া নিবারণ ঘোষের কাছে কিছুদিন তালিম নেন। ভগিনী নিবেদিতা ও হেভেল সাহেবের অনুপ্রেরণায় তিন বিদেশিনী চিত্রশিল্পী ক্রিশ্চিয়ানা, কুমারী ডরোথি লারচার ও কুমারী লুক কে নিয়ে অজন্তার স্কেচগুলি আঁকতে শুরু করলেন। এগুলো খুবই প্রসংশিত হয়েছিল।

অজন্তার ছবিগুলো দেখে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দায়িত্ব দিলেন তাঁর 'চয়নিকা' কাব্য অলংকরণের। এরপর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে শিল্প চর্চা করতে থাকেন। সেইসময় সেই বাড়িতে থাকতেন জাপানি ওকাকুরা, টাইটান, হিসিদার মতো শিল্পীরা। তাঁদের থেকে জাপানি শিল্পরীতি শিখলেন। তারপর যোগ দেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির বিচিত্রা স্টুডিওতে। বিচিত্রা উঠে যাওয়ার পর গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্প সমিতিতে যোগ দেন। পরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরেধে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্টসের চিত্রবিদ্যা শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। গান্ধীজির স্বদেশী কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকারি কাজ ছাড়লেন ও ১৯২১ সালে ফিরে এলেন শান্তিনিকেতনের কলাভবনে। ১৯২২ থেকে কলাভবনের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করলেন প্রায় তিরিশ বছর। এই সময়ে তিনি ছাত্র হিসেবে পেয়েছেন বিনোদবিহারী, রামকিঙ্কর বেজ এর মতো শিল্পীকে।

শিল্পী হিসেবে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গেছেন জীবনভর। এঁকেছেন কাগজে, কাপড়ে, দেওয়ালে, কাঠে এমনকি জলে ভেজা ওয়াশ পদ্ধতি, চীনা ও জাপানি পদ্ধতি অবলম্বনে। ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবের খোঁজ পেয়ে গান্ধীজি দিয়েছিলেন হরিপুরা কংগ্রেস সম্মেলনের মন্ডপ সজ্জার দায়িত্ব। শান্তিনিকেতনের যেকোনো অনুষ্ঠানের মন্ডপ, আলো, পোষাক, পরিবেশ সৃষ্টি সহ নানা ধরনের নতুন নতুন মেটিরিয়াল ব্যবহার করে ছাত্রাবাসের দেওয়ালে মূর্তি তৈরি ও ভাষ্কর্য তৈরিতে তাঁর কৃতিত্ব অপরিসীম।

ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর অনুরোধে 'ভারতরত্ন', 'পদ্মশ্রী', 'পদ্মভূষণ' ও 'পদ্মবিভূষণ' সম্মাননা মানপত্রের চিত্র তাঁরই আঁকা। ভারতীয় সংবিধানের মূল পাণ্ডুলিপিটিও অলঙ্করণ করেছিলেন নন্দলাল ও তাঁর ছাত্র রামমনোহর সিংহ। তাঁর সৃষ্টি সমূহ Archeological survey of India, Department of Culture, Government of India দ্বারা সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

তিনি নানা সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৫২ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে 'দেশিকোত্তম' উপাধি দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে ভারত সরকার তাঁকে 'পদ্মবিভূষণ' সম্মান দেয়। ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি লিট দেয়। ১৯৬৫ তে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল তাঁকে রবীন্দ্রনাথ জন্মশতবার্ষিকী পদক দিয়ে সম্মানিত করে। 
১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল এই মহান শিল্পীর জীবনাবসান হয়।


ধারাবাহিক ভ্রমণ
চলো যাই (রাঁচি) || পর্ব ৪

কলমে - বাসবদত্তা কদম


টেগোর হিল নামের পাহাড় থেকে নামবার সময় সেই যে এক দৌড় দিয়েছি। সিঁড়ি সব পাথুরে মসে ভর্তি, তায় আবার এবড়ো খেবড়ো। তারপর আমি তো কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছি না। সবাই পিছনে, কেউ কিছু করতে পারবে না। বাবা শুধু পিছনের থেকে বলে যাচ্ছে -কন্ট্রোল, কন্ট্রোল। ধরতে সেও পারছে না। ধরবে কিভাবে? এমন সময়ে সামনে থেকে আসছিলেন এক আঙ্কেল তিনিই আমাকে ধরে ফেললেন। ভাগ্যিস্‌ ধরলেন! না হলে সাংঘাতিক কিছু একটা হতেই পারতো। নিদেনপক্ষে পড়ে গিয়ে সামনের দাঁত না নাক কোনটা যে আগে ভাঙতো কে জানে। 
বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার মাঝে কিছু হাঁস দেখেছি কিছু গ্রামে। মুরগিও তবে সেগুলো সবই গৃহপালিত। ওখানে কিন্তু অনেক সুন্দর সুন্দর পাখি আছে।  
রাঁচির সব জলপ্রপাত দেখে নেওয়া হোল এভাবেই। হুড্রু, জোনা, দশম সব জায়গায়ই অনেক অনেক সিঁড়ি নেমে তবে জলপ্রপাতের দেখা পাওয়া যেত। শুধুমাত্র রাজারাপ্পাতে সিঁড়ি ভাঙতে হয়নি বলেই আমার মনে পড়ছে। এই রাজরাপ্পাতেও আরেকটা নদী। ভারী অদ্ভুত নাম তার, ভেড়া নদী। সে দৌড়াচ্ছে ব্যস্তবাগীশ হয়ে, দামোদরে ঝাঁপাবে বলে। এই পাহাড়ি নদী লোকজন হেঁটেই পার হতে পারেন। আর যেখানে নদীর এই ঝাঁপ, সেই জায়গাটাই রাজরাপ্পা। 
এই সবকটা জলপ্রপাতের আশেপাশে কত রকমের যে পাখির ডাক। শুনেছি বাঘও নাকি আছে এই জঙ্গলের আশেপাশে। লেপার্ড তো বটেই। এখানকার জঙ্গলে আছে খরগোস, শেয়াল, বাইসন, বুনো শূয়োর, শজারু আর হ্যাঁ এখানে অজগর সাপও আছে কিন্তু। অন্যান্য সাপ তো আছেই। ভয় পাওয়ানোর জন্য মোটেই বলিনি, তবে জেনে তো রাখতেই হবে আর সাবধানও হতেই হবে তাই না? তবে আমাদের সাথে খরগোস, কাঠবেড়ালি, বেজি, অনেক রকমারি পাখি আর শেয়াল ছাড়া আর কারুরই দেখা হয়নি। 
রাজরাপ্পা থেকে ফেরার দিন, একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল, সেটা মনে রয়ে গেছে আজো পর্যন্ত। সন্ধে হয়ে গেছে তার অনেক আগেই। দেখছিলাম ঘরে ফিরছিলেন অনেক আদিবাসী মানুষ, পিঠে বোঁচকা। মা বলল সে বোঁচকায় আছে ওদের ছোট্ট বেবি। তাকে বেঁধে ওভাবেই কাজ করে ওরা।  তারা সবাই কাজ থেকে ফিরছিলেন। কিন্তু একজনকে দেখেছিলাম যার কথা এখনো ভুলিনি। পিঠের বোঁচকাটা বেশ বড়, হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। বাবা বলায়, ড্রাইভার কাকু গাড়ি থামালো, জিজ্ঞেস করলো। সেই মহিলা ওনার স্বামীকে পিঠে বেঁধে হেলথ্‌ সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। যা তখনও চার মাইল। এভাবেই নাকি ওনারা যান দরকার হলে। ভাবা যায় বলো? হেঁটে হেঁটে এভাবে মাইলের পর মাইল অসুস্থ মানুষকে পিঠে বেঁধে হাঁটছেন কেউ। শুধু একটু চিকিৎসা পাবেন বলে। 
এর দুদিন পরে আমরা ফিরে এলাম কলকাতা। নেতারহাট আমাদের যাওয়া হয় নি। শুনেছি ওখানে সূর্যোদয়ের দৃশ্য খুব সুন্দর। তোমরা যেও কিন্তু। আজকের মত টাটা। সবাই ভালো থেকো, আবার দেখা হবে হবেই।      ( শেষ)


পাঠপ্রতিক্রিয়া
( জ্বলদর্চি ছোটোবেলা ৬২ পড়ে জওহর নবোদয় বিদ্যালয় পশ্চিম মেদিনীপুরের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী স্নেহা দাস যা লিখল)

আজ আমি জ্বলদর্চি পত্রিকার ছোটবেলার সংখ্যা ৬২ পড়ে আমার অনুভূতির কথা তোময়াদের জানাবো।

প্রথমেই আসা যাক মৃণাল আঙ্কেলের তোলা ছবিতে যেখানে আমরা একটি ট্রামের ছবি দেখতে পাচ্ছি । আর ট্রামের কথা বললেই তো সবার প্রথমে কলকাতার কথা মনে পড়ে। মৃণাল আঙ্কেলের তোলা ছবিটি জেনো আমাদের অন্য এক‌ অজানা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।

এরপর আসা যাক মৌসুমী ম্যামের সম্পাদকীয়র কথায়।
যেখানে তিনি ছোটবেলায় আমাদের লেখা শীতকাল রচনা সহ শীতকালের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় এবং আরো অনেক কথা বর্ণনা করেছেন। আমি একবার শীতকালে আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম মৌসুমী ম্যামের লেখা পড়ে আমার সেসব কথা মনে পড়ে গেল।

এবার আসা যাক সুধাংশু আঙ্কেলের লেখা "ছাতার থেকে খরগোশ"গল্পে। এই গল্পে যখন ছাতার পাখি দুটো মরার কথা বলছিল তখন আমি খুব হতাশ বোধ করছিলাম বিশেষ করে যখন একটা ছাতার পাখি বারান্দায় পড়ে মারে গেল তখন। কিন্তু পরক্ষণেই যখন ছাতার পাখিটা খরগোশ হয়ে গেল তখন আমি  খুব আনন্দ পেলাম। কিন্তু আমার বাবলা ওপরে খুব রাগ হলো ও শুধুমাত্র নিজের কথাটাই ভাবছিল পাখি দুটোর কথা একটু ও ভাবেনি। তোমাদের বাবলার উপরে রাগ হয়নি?

আর অনুভব বোসের আঁকা সুন্দর ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে যেন সত্যি কোনো পাখি গাছের ডালে এসে বসেছে।

এরপর আসা যাক শ্রীপর্ণা আন্টির লেখা সহজ পাঠ কবিতায়। তাঁর লেখা এই কবিতাটা পড়ে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। করোনার জন্য এখন স্কুল-কলেজ , বন্ধুদের সাথে খেলা সব বন্ধ। কিন্তু শ্রীপর্ণা আন্টির লেখা আমায় সেই সব দিনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

করোনার জন্য এখন সবকিছু ডিজিটালি হচ্ছে আর আমাদের সবার প্রিয় বন্ধু শ্রীপর্ণা ঘোষ ডিজিটালি কি সুন্দর একটা ছবি এঁকে দিয়েছে।

এরপর আসা যাক প্রবাহনীল দাসের লেখা "বড়বাবুর মনের কথা" গল্পে। এই গল্পটা খুবই সুন্দর। এই গল্পটার প্রথম দিকে তো মনে হচ্ছিল বড়বাবু বিড়াল নন মানুষ। আর যখন বড়বাবুর দাদা ও তার বাবা মা তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল তখন আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল কে জানে বড়বাবুর দাদা আবার ফিরে এসেছিল কিনা। কিন্তু যখন শেষে পড়লাম যে বড়বাবু একটি বিড়াল তখন আমি খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
আর রাজদীপ দাস এর আঁকা ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই কোন কাঠবেড়ালি এসে গাছের উপরে বসেছে তাই না?

এবার আমরা আলোচনা করব পীযূষ আঙ্কেলের লেখা "স্মরণীয়" লেখাটি নিয়ে যেখানে তিনি শিবরাম চক্রবর্তীর আত্মজীবনী তুলে ধরেছেন। শিবরাম চক্রবর্তী আমাদের সকলের প্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম।
তার লেখা অনেক গল্প আমি পড়েছি । তোমরা কতগুলো পড়েছ?
তার লেখা এই লেখাটি পড়ে আমি শিবরাম চক্রবর্তী সম্বন্ধে অনেক জিনিস জানতে পারলাম। শিবরাম চক্রবর্তী কে আমার তরফ থেকে অনেক প্রণাম এবং শ্রদ্ধা জানাই🙏🏻।

এইবার চলো যাওয়া যাক বাসবদত্তা আন্টির লেখা " চলো যাই রাঁচি" ভ্রমণের লেখাটির তৃতীয় খন্ডে। এখানে ছোটনাগপুর মালভূমির নদীতে সোনা পাওয়ার গল্পটা আমার খুবই রহস্যজনক লাগিছে। তোমাদের কি মনে হয় ছোটনাগপুরের এই নদীতে সত্যি সোনা পাওয়া যায়?
আর তার লেখাটি থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারছি। যেমন সাধারনত শীতকালে কি কি চাষ হয় ইত্যাদি । আর লেখক দৌড়তে গিয়ে  কী বিপদ এনেছিলেন সেটা নিয়ে আমার খুব কৌতুহল এবং এর পরের অংশটা জানার জন্য আমি খুবই উদগ্রীব হয়ে আছি।
আর তার সাথে ঐশিকী দাসের আঁকা এই সুন্দর ছবিটা শীতের আমেজ টাকে আরো বেশি করে বাড়িয়েছে তুলছে।

এবার যাওয়া যাক ফুলকুসুমপুরে। রতনতনু ঘাটী আমাদের সকলেরই পরিচিত এবং প্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর গল্পের ২৮ তম অংশে তিনি বলেছেন যে ফুলকুসুমপুরে নাকি অনেক বড় করে কৃষি মেলা হচ্ছে।
আর সেখানে নাকি আমাদের সকলের পরিচিত ত্রিপাঠী বাড়ির হযবরল চিড়িয়াখানা আছে। আমার তো ভেবে খুবই মজা লাগছে যে কিভাবে একটা কুকুর একটা বিড়াল পাশাপাশি শান্তভাবে বসে আছে, আর সেই ভেজিটেরিয়ান বিড়ালটাই বা কেমন। এই ধারাবাহিকটির ২৯ তম অধ্যায়টি পড়ার জন্য আমি খুবই উৎসুক হয়ে আছি।

ছোটবেলার সংখ্যা ৬২ টি পড়ে আমরা বুঝতে পারছি মানুষের কল্পনা কোথায় কোথায় যেতে পারে যেমন সে একটি বিড়ালের চিন্তাভাবনা ধরতে পারে আবার একটি শিশুর মনে কি চলে সেসব বুঝতে পারে । তার টুকুন, মুকুট, ইচ্ছে দাদু , অনিচ্ছে ঠাকুরমা, তিন্নি, বিন্নি ইত্যাদি এরা সকলে তো আছেই।আর এভাবেই এদের সকলকে নিয়ে তোমাদের আঁকা লেখা ইত্যাদি কে নিয়ে জ্বলদর্চি পত্রিকা এগিয়ে যাক । আর আমি সকলকে বড়দিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

আরও পড়ুন 


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments