জ্বলদর্চি

ওপেন সোর্স ইন এডুকেশন /শোভা পাল বেরা

ওপেন সোর্স ইন এডুকেশন

শোভা পাল বেরা

বর্তমান দিনে ইনফরমেশন টেকনোলজির যুগে ওপেন সোর্সের বিস্ময়কর ব্যবহার একে প্রচুর জনপ্রিয় করেছে। কম্পিউটারে নানান ধরণের কাজ যেমন লেখালেখি থেকে শুরু করে ছবি দেখা, গান শোনা প্রভৃতির জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ারের প্রয়োজন। এছাড়াও কম্পিউটার চালাতেও সফটওয়ারের দরকার। কম্পিউটার চালাতে উইন্ডোজের ব্যবহার অন্যান্য প্লাটফর্মের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু তা সংগ্রহ করতে হয় অর্থের বিনিময়ে। তবে  পাইরেটেড কপি দিয়েও চালানো যায় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। শুধু অপারেটিং সিস্টেম নয় আরও অন্যান্য সফটওয়ারেরও পাইরেটেড কপি ব্যবহার করা হয়। এই সমস্যার সমাধানই হচ্ছে ওপেন সোর্স  বা ওপেন সোর্স সফটওয়্যার।

  ওপেন সোর্স হল কম্পিউটার সফটওয়্যার যার সোর্স কোড লাইসেন্স সহ কপিরাইটার অন্যকে পড়তে, পরিবর্তন করতে এবং যে কোন উদ্দেশ্যে একজন অন্যদের দিতেও পারেন। যেকোন ব্যক্তি সফটওয়্যারের ত্রুটি নির্ণয় করতে এবং  নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন। সফটওয়্যারগুলো প্রাথমিকভাবে লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি হলেও পরবর্তী সময়ে উইন্ডোজ প্লাটফর্মের জন্যও এসব সফ্টওয়্যারের পৃথক সংস্করণ তৈরি হয়েছে। এর ফলে উইন্ডোজের জন্যও পাওয়া যায় প্রায় সব ধরনের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। ওপেন সোর্স সহজে আক্সেস করা  গেলেও এর ডিস্ট্রিবিউশনের কিছু নিয়ম আছে। ওপেন সোর্স ইনিসিয়েটিভ (ওএসআই) হল ওপেন সোর্সের লিভিং অথরিটি। ও এস আই ওপেন সোর্সের কতকগুলি লাইসেন্স অনুমোদন করেছেন। যখন সফটওয়্যারের সোর্স কোড  এই লাইসেন্সের কোন একটিকে মেনে ব্যবহার করা হয় তখন তাকে ওপেন সোর্স বলে। সোর্স কোড হল কম্পিউটারের হাইলেভেল ল্যাঙ্গুয়েজে লেখা প্রোগ্রাম যা ইংরাজী শব্দ ব্যবহার করে লেখা হয়, তা আমরা বুঝতে পারলেও কিন্তু  কম্পিউটার পারে না।

প্রযুক্তিকে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারকে সকলের মধ্যে বিনামূল্যে ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে ওপেন সোর্স সফটওয়ারের  আবির্ভাব এবং এগুলি লাইসেন্সের ঝামেলা মুক্ত। ডেভেলপার স্তরে কেউ চাইলে সফটওয়্যারকে নিজের মতো পরিবর্তন করে নিতে পারে। ওপেন সোর্স ব্যবহারে অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের ব্যয় প্রায় শূন্য।

বর্তমান দিনে শিক্ষা ব্যবস্থায় ওপেন সোর্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রধান উপকরণগুলি হল খাতা, পেন, পেনসিল শিক্ষক ইত্যাদি। কিন্তু শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণের সাথে ওপেন সোর্সের ভূমিকাও অগ্রাহ্য করা যা না। শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সহজলভ্য সফটওয়্যার টুলগুলি হল ইমেল, ফেসবুক, টুইটার, গুগল, এনপিটেল ইতালি এনপিটেল হল বেশির ভাগ IIT দ্বারা তৈরি ভিডিও ভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার জন্য ওপেন সোর্স লানিং। এছাড়াও  ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের বিভিন্ন লেকচার জ্ঞান দর্শন এবং একলব্য চ্যানেলে টেলিকাস্ট করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা ওপেন সোর্সকে গ্রহণ করার কারণগুলি হল – স্বল্প ব্যয়, উন্নত গুণমান, বিক্রেতার অনুপস্থিতি, নিরাপত্তা ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ওপেন সোর্সের কতকগুলি ওয়েবসাইটের উদাহরণ হল

openoffice.org/ (word processor, spreadsheet and presentation software)

php.net/(web development)

mysql.com/ (database)

mozilla.com/en-us/firefox/(web browser based on Mozilia)

modle.org/ (virtual learning system)

apache.org (web server) ইত্যাদি

  বেশিরভাগ সফটওয়্যারের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকলেও কিছু ওয়েব সাইট রয়েছে যেগুলোকে বলা যায় সফটওয়্যার  ভাণ্ডার। এসব ওয়েবসাইটে গেলে সেখান থেকেই পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের সফটওয়্যার। এই ধরনের সাইট হল download.cnel.com, brothersoft.com, linux.com, softonic.com ইত্যাদি। সিনেট সাইটে রয়েছে বিভিন্ন সফটওয়্যারের বিশাল সংগ্রহ। ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে সাইটটি সফটওয়্যার ডাইনলোডের একটি নির্ভরশীল স্থানে পরিণত হয়েছে। এতে রয়েছে ৪ লাখেরও বেশি সফটওয়্যার। বিভিন্ন ধরনের ক্যাটাগরি থেকে বেছে নেওয়া যায় প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার। এর মধ্যে রয়েছে সিকিউরিটি সফটওয়্যার, ব্রাউজার, এনহ্যান্সমেন্ট, ডিজিটাল ফটো সফটওয়্যার, ড্রাইভার, এডুকেশন্যাল, এন্টারটেইনমেন্ট, গেমস, ভিডিও অডিও, গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রভৃতি ক্যাটাগরি। যেকোনো ক্যাটাগরিতে ক্লিক করলেই সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের তালিকা পাওয়া যায়।সেখান থেকে যেকোন নির্দিষ্ট  সফটওয়্যারে ক্লিক করলেই পাওয়া যাবে সফটওয়ার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। এছাড়াও কোনো নির্দিষ্ট সফটওয়্যার খুঁজতে চাইলে সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করলেই নির্দিষ্ট সফটওয়্যার পাওয়া যাবে। 

শিক্ষাক্ষেত্রে ওপেন সোর্সের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এল এম এস) টুলস। e-learning professionalsদের কাছে এটি একটি প্রয়োজনীয় টুলস। কিছু বহুল ব্যবহৃত এই ধরনের টুলস হল Moodle, LRN, (dot) LRN A Tutor ইত্যাদি। এই টুলস-  এর উদ্দেশ্য হল শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং প্রক্রিয়া উন্নত করা। মূলত এটি ওয়েব ভিত্তিক। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানী এই টুলস ব্যবহার করে ক্লাসরুম টিচিং ও শিক্ষা প্রণালী উন্নত করে। এটি বিভিন্ন ট্রেনিং, অনলাইন মূল্যায়ন, যৌথ শিক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। এটি কোর্স রেজিস্ট্রেশন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং রিপোর্টিং করতেও সাহায্য করে। এতে সময় ও খরচ দুইই কম লাগে। এবং যে কোন সময় যেকোন স্থান থেকেই অ্যাকসেস্ করা সম্ভব হয়। এল এম এস এর মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্স ও ডিসকাসন ফোরামের মতো ব্যবস্থাও  সম্ভব।

  অন্যদিকে ওয়েব ২.০ এর সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, ভিডিও ও ফটো শেয়ারিং সাইট, ব্লগস্ও গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান প্রদান দুইই করা যায়। ওয়েব ২.০ টেকনলজি শুধুমাত্র ডিজিট্যাল শিক্ষার জন্যই নয়। শিক্ষিত সম্প্রদায় ইন্টার অ্যাকটিভ মডেলের জন্য এর প্রয়োজনীয়তা বোধ করে। প্রথাগত শিক্ষায় যেখানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষকের ভূমিকাই প্রধান ছিল কিন্তু এখন এই টেকনলজির ফলে ডিজিট্যাল শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। ফলে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাও অগ্রাহ্য করা যায় না। ওয়েব ২.০ উপস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রী কেন্দ্রিক শিক্ষার ধারণায় এক নতুন মাত্রা সংযোগ হয়েছে। এটি এমন এক পদ্ধতি অবলম্বন করে, যার দ্বারা যৌথ ও মৌলিক বুদ্ধির বিকাশ সুসংহত করা যায়। ওয়েব ২.০ টুলস- এর মধ্যে ব্লগই সবথেকে বেশী ব্যবহৃত হয়। সমগ্র বিশ্বে শিক্ষকরা তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষের মধ্যে ও বাহিরে মুক্ত যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন ব্লগ তৈরিতে উৎসাহ প্রদান করেন। ওপেন অ্যাকসেস্ এবং ক্রমবর্ধমান অ্যাকাডেমিক ব্লগ -এর ধারণা শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধাকে অতিক্রম করেছে। উদাহরণস্বরূপ অনেকে বিশ্বাস করে যে শিক্ষায় ডিজিট্যালকরণ তথাগত শিক্ষায় আমলাতান্ত্রিক পরিকাঠামোকে হারিয়ে দিয়েছে।

  সুতরাং বলা যায় ওপেন সোর্স শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই ছাত্রদের স্বার্থে সেমিনার, সিমপোসিয়াম, ওয়ার্কশপ প্রভৃতির দ্বারা তাদেরকে এর প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা সম্পর্কে বোঝানো উচিত।তবে  প্রত্যেকের উচিত ওপেন সোর্স নির্বাচন সম্পর্কে যত্নবান হওয়া। ওপেন সোর্স, ডিজিট্যাল এডুকেশন এবং লারনিং  পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে উদ্দেশ্য হল প্রত্যেকের কাছে পৌঁছানো। এর জন্য প্রয়োজন ওপেন সোর্স টেকনোলজি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৃহত্তর সমন্বয়। তা সত্ত্বেও বলা যায় শিক্ষার রূপ পরিবর্তনে ওপেন সোর্সের ভূমিকা অপরিসীম।

তথ্যসূত্র:

1. ICT in Education Open Source Software and its Impact on Teachers and Students, S. Bandyopadhyay, S Thakur; International Journal of Computer Application (0975-8887) vol 151 No 6, Oct2016. 2. Open Source  Software in Education, Shaheen E. Lakhan and Kavita Jhunjhunwala; Educause Quarterly No 2, 2008. 3. http://o watch.ac.uk/resources/softwareexamples. 4. Discovering Learning Management Systems: Basic Functions Benefits. Ashok Sharma, Oct 22, 2015.

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇




Post a Comment

0 Comments