জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা /পর্ব-১/ তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

রম্য কবিতা 
 পর্ব-১
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

(১)
রাশিয়ার জানালা

কাঠে গড়া আমাদের ভারতীয় জানালাকে-
ছবি এনে দেখালুম রাশিয়ার জানালার,
সমান্তরাল দুই স্তর ওতে করা থাকে,
কাঁচ দেওয়া চকচকে দেহ তার পাল্লার।

“তোমার গায়েতে ফুটো, গোবরাঠে ফাঁক ওই,
উইপোকা ডেকে আনো, পচে যেতে পারে কাঠ,
ঘরেতে এসেও সেই শীতকালে কাঁপবোই!
জৌলুস কই অতো? নেই অতো ঠাট-বাট।”

আমার জানালা বলে- “তুমি কূপমণ্ডূক,
কোথাও গরম বেশি, কোথাও গরম কম,
তা মেনেই রাঙে মুখ, তা জেনেই বাঁধে বুক, 
যে দেশ যেমন তার জানালাও সেরকম।

তাপের কুপরিবাহী দুটো যে কাঁচের স্তর,
তার মাঝে আবদ্ধ বাতাসও অন্তরক,
তাপ না বাইরে গিয়ে গরম রাখেই ঘর,
যেমন পাতলা দুটো জামায় গরম ত্বক।

বাইরে হিমশীতল আবহাওয়া থাকলেও,
ঘরের তাপের কথা বাইরে বলেনা সে,
এদিকে আমায় দেখো- কাঠে রঙ মাখলেও,
হাঁড়ির খবর পায় কান পেতে মানুষে।

আমায় লাগিয়ে তুমি খামোকাই পস্তাও,
রাশিয়ার কেউ কি তোমার ঘরে উঁকি দেয়?
আমায় সাজানো খুব সোজা আর সস্তাও,
আকাশ দেখে মাটিকে হেয় করা অন্যায়।”


(২)
ভ্লাদিমির্‌ স্মির্‌নভ্‌ ও তুষারিকা

“আরে! ছাদে ভ্লাদিমির্‌ স্মির্‌নভ্‌ নাকি হে?”
শুধালুম-“করো কি, ঘা খায় কেন নিরীহে?”
বললে- “আঁকশি দিয়ে ভাঙছি ‘সাসুলকা’,
যতোটা ভাবছো ততো নয় এরা পলকা।
অভিমান ভাঙে যেই সূর্যের তরফে,
গলে জল হতে থাকে ছাদে জমা বরফে।
তখনো হিমাংকের নীচে যে নিম্নবায়ু-
পড়ন্ত জলকণাদের করে অল্পায়ু।
হিমায়িত ফোঁটায় গা ছোঁয়ায় পরের পর,
তাতে অধিশায়িত যে চোয়ানো জলস্তর-
পার্শ্ববর্তী বায়ু যা কিনা বেশি শীতল,
তা’তে লীনতাপ ছেড়ে দিতে সে বড় উতল।
এভাবেই জমে জমে মোটা হতে থাকে সে,
সদ্য উষ্ণ হওয়া বায়ু তার গা ঘেঁষে –
উপরে উঠতে থাকে নীচে ভিড় কমিয়ে,
বেয়ে বেয়ে নীচে নামা আরও জল, জমিয়ে।
নিচে সরু, ওপরেতে মোটা সে বায়ুস্তর,
আগার প্রস্থ তাই বেশি হওয়া দুষ্কর ।
এভাবে ছুঁচলো হয় অভিস্যন্দী জল,
বেড়ে ওঠে সাসুলকা আর তার দলবল।
সারি বাঁধা বরফের ছুরির মতন হয়,
বিপজ্জনকভাবে কার্নিশে ঝুলে রয়।”
বুঝলুম ‘সাসুলকা’, তুষারিকা আসলে,
কতশত রূপ ভাবি লুক্কায়িত জলে।
শুধালুম আরো-“এর আর কি উপায় নাই!
প্রতি তুষারপাতেই ‘সাসুলকা’ ভাঙা চাই?”
সে বললে-“কার্নিশে তাপবিকিরক তার, 
লাগালেও হবো বিদ্যুৎ-বিলে জেরবার। 
নকশাদার বরফও নিয়ে নিতে পারে প্রাণ,  
সাবধানে যেও রেখে নিরাপদ ব্যবধান।”

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇




Post a Comment

0 Comments