রম্য কবিতা
পর্ব-২
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়
গবেষকের বিয়ে
চুলগুলো ফাঁক ফাঁক, টেনে টেনে গুছিয়ে,
শালীদের রসালাপে নীরবতা ঘুচিয়ে;
গাণিতিক পরিবারে জাগতিক চর্চা,
একাকার হতে গিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি খরচা!
কি যে প্রথা জানা নেই যা করায় তা করে,
বরফি দেখলে বর, বড়ো করে হাঁ করে।
কতো লোকে গিলে ছুট্, উপহার না দিয়েই-
ফাজিলেরা ধুতি টানে অনুমতি না নিয়েই!
অযথা আসেনা ঠোঁটে তাপসের হাসিরা,
আপসেয় পোষ মানে রাঙাপিসি-মাসিরা।
ভুল করে হাত যায় গোলাপের ছত্রে,
ভোলা মন তবু যায় গবেষণা পত্রে।
কনেয় কনুই মারে বৃথা গেলে লাস্য,
“দুঃখিত”- বলে ক্ষ্যাপা শোনে ধারাভাষ্য।
পাত্রী নিখোঁজ
পণ্ডিতে যা পড়ছিল কেউ বুঝছিলো কি ওরা!
আপদ হাজির, না হতে শেষ সপ্তপদীর ঘোরা।
বিদ্যুৎ-বিভ্রাটেই হলো বিয়ে-বাড়ি পণ্ড,
সময় বাড়ে, শব্দ বাড়ে, কমেইনা একদণ্ড।
ফিসফিসানি শুনছি নাকি পাত্রী গেছে উবে,
এপাশ-ওপাশ খুঁজে নিয়ে পুলিশ ডাকা হবে।
কনের বোধহয় মাথার ভিতর যন্ত্রপাতি ঢিলে,
ছ-লাখ টাকার ভালোবাসা চব্ব করে দিলে!
বর ভাবে-“ও কাউকে আগে বোধহয় ভালবাসত,
পাকাদেখার সময় যদি একটু ঝেড়ে কাশতো!”
বেহান-বেহাই ভাবেন- “মেয়ে এক্কেবারে পাগলা,
ভালই হল, তোদের খেঁদি তোরাই এবার আগলা।”
পড়শি তাকায় গাছের ডালে, দেখায় আলো গর্তে,
ঘটকমশাই ভাবতে বসেন- কি ভুল হল শর্তে!
গয়লা খোঁজে গোয়ালঘরে, দারুণ ডাকাডাকি,
ভিড়ের সুযোগ নিয়েই মেয়ে বেশ দিয়েছে ফাঁকি।
মনের মত ভাবার সুযোগ কে আর এমন পাবে?
যে যার মত কারণ বানায়, যে যার মত ভাবে।
সবাই দেখে অবাক যখন ফিরলো কনে হেঁটে,
বললে, “দারুণ সুর বেঁধেছে সকাল থেকেই পেটে।”
যোগ্য পাত্রী
বোঁচা হোক, ওঁচা হোক, ত্রুটিহীন পাত্র-
হাতে পাবে মা’র সম্মতি যন্মাত্র,
বিয়ের পিঁড়িতে টেনে বসাবেই নিশ্চিৎ-
সুন্দরী নারীকে- সে এমনই বিপশ্চিৎ।
বড় খুঁতখুঁতে নিজ বিবাহের ব্যাপারে,
সুযোগ্য পাত্রীকে ভেবে নিতে সে পারে।
নদীর নামেতে নাম নাকি নক্ষত্রের,
নাম শুনে রায় দেয় সে নারী চরিত্রের।
পদ্মিনী, চিত্রিণী নাকি নারী শঙ্খিনী,
হস্তিনী চিনে নেন - বিজ্ঞ এতই তিনি।
সমবেত সঙ্গীতে দোহার- সে গায়িকা?
না তুচ্ছ সংলাপে বাঁচা সহ-নায়িকা!
ফোকলা দাঁতের ফাঁকে কথারা কি ফসকায়?
নাকের শ্লেষ্মা যতো সদাই কি ধসকায়?
ট্যারা, নখী, মারমুখী, শুকনাস, শুটকি,
রূপকথা বোঝে কি? না বাচালতা, চুটকি?
রান্না কেমন পারে, ভেটকির পাতুরি?
নাকি অকর্মা শুধু আছে বাকচাতুরী,
বারফট্টাই করা গেছো, মেছো, ধিঙ্গি,
লোমশ কন্যে, দাড়ি-গোঁফওলা শৃঙ্গি,
বিড়ি-মদ-গাঁজা, বাকি কোন্ দুষ্কর্ম?
দুর্মতি, অপয়া কি দুমড়ায় মর্ম?
পীনপয়োধর নাকি আগাগোড়া ধুমড়ি!
উল্কামুখী সে নাকি লাগে মুখ চুমরি?
নিখাকি, আগুনখাকি-কোন্ দলভুক্ত?
খাণ্ডারী, পাড়া-কুঁদুলি অনুপযুক্ত।
তার মতে-‘ভালো’-নীচে বর্ণিত পাত্রী-
সুদতী যে দিন আনে ভ্রূলতায় রাত্রি;
পটোলচেরা নয়না, গালে টোল পড়ে যার,
হারালে যেখানে কারো ফেরা হয়নাকো আর।
হেমাঙ্গী, কেশবতী, সুবিনীতা, সুচেতা-
বাগালে তবেই নাকি সার্থক বিজেতা!
কলহান্তরিতাকে বিয়ে করে ভুগবার-
জেনেছি এমন কোনো ইচ্ছেই নেই তার।
কতো রোগে, দুর্ভোগে পাত্রী ভোগেন তা-
জেনেই এগোবে তার বিবাহের চিন্তা।
তার ওপর জাত-পাত, হাভাতে না বজ্জাত,
কোষ্ঠী মিলিয়ে তবে এক হবে চার হাত।
বলেছে সে, “পাত্রীকে হতে হবে সুনাভ,
তবেইনা কোলে রোজ মাথা রেখে ঘুমাবো।”
একাধারে বামাক্ষী, রম্ভোরু, বিদুষী-
সুকণ্ঠী, সুতন্বী- না হলে সে অখুশি।
পাত্রীটি তার চেয়ে কমা হবে শিক্ষায়,
কম কম পাওয়া চাই বিগত পরীক্ষায়।
গুণময়ী স্ত্রীরও গন্তব্য রান্নাঘর,
নয়তো সে যাবে থেকে অনূঢ় জীবনভর;
দোষৈকদৃক্ হবে, ফুঁসবে ব্যর্থ রোষে,
অন্যের বৌ দেখে দেখে মহা আফসোসে!
কাপুরুষ, কুপুরুষ বানায় যে তালিকা,
শর্তয় ছেঁড়ে তা’তে সুযোগ্য মালিকা!
নিজে কি বা কত গুণী, কতখানি সাধ্য,
সে প্রমিতি ভোলে ক্ষ্যাপা আকাট, অবাধ্য।
0 Comments