জ্বলদর্চি

শ্যামলকান্তি দাশ : অননুকরণীয় আশ্চর্য ক্ষমতা /ঋত্বিক ত্রিপাঠী

শ্যামলকান্তি দাশ : অননুকরণীয় আশ্চর্য ক্ষমতা
ঋত্বিক ত্রিপাঠী



শ্যামলকান্তি দাশ একই সঙ্গে কবি, শিশু সাহিত্যিক, সম্পাদক ও সংগঠক।

শব্দ ও অর্থের অলংকার চাতুর্য ও উভয়ের মেলবন্ধনে শ্যামলকান্তি দাশের কবিতা : চমৎকার। এই চমৎকারিত্ব তখনই পাঠকের কাছে মায়াময় ও আদরণীয় হয়ে ওঠে, যখন তাঁর ভাষা শব্দচিত্র ও বাচ্যচিত্র নির্ভর হয়েও বাঙ্গ্যার্থ প্রকাশে পূর্ণমাত্রায় শক্তিশালী। আসলে মোহ কিংবা আকর্ষণের জন্য শরীর সমান গুরুত্বপূর্ণ। কার সঙ্গে সমান! মেধা ও মনন, মেজাজ ও ব্যক্তিত্বের প্রাবল্যের সঙ্গে সমান। শ্যামলকান্তির মগ্ন পাঠক দ্রুত বাইরের খোলস তথা বাচ্যকে উপেক্ষা করে ব্যঙ্গ্য তথা রস সন্ধানে যাত্রা করেন। এই যে রসের দিকে যাত্রা ও যাত্রার জন্য অনুশীলন—তার জন্য চাই আকর্ষণীয় কাব্যশরীর। প্রচলিত শব্দের নতুন প্রয়োগ ও বলবার গুণে শ্যামলকান্তির কাব্যশরীর স্বাস্থ্যবান, বিশ্বাসযোগ্য।

কাব্যের আত্মা রস। আত্মাকে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে শ্যামলকান্তি দাশের মনন ও দর্শন থেকে আমরা অনেক দূরে চলে যাব। আত্মার শরীর অনুভবের জন্য চাই সহৃদয়বোধ। সেই বোধেই পাঠক আবিষ্কার করেন কাব্যের অন্তর্নিহিত রূপ। শরীর ও আত্মা উভয়কে সমানভাবে চমৎকৃত করে তোলার অননুকরণীয় আশ্চর্য ক্ষমতা- সে শুধু শ্যামলকান্তিরই।



অকারণ দুর্বোধ্যতা নয়, বিষয় অনুযায়ী তাঁর কবিতায় জন্ম নেয় আড়াল, বাঁক। তাঁর কবিতায় অনেক রূপকথা-লোকজ উপাদান, অনেক ভূত-রহস্য মজা, অনেক বাঘ-রাক্ষস-মনখারাপ, মনকেমন করা। এ সবই এসেছে সম্পূর্ণ নতুনভাবে—সহজ গল্প বলার ঢঙে, কখনওবা গূঢ় রহস্য রূপে। বৌদ্ধিক ভার নয়, সহজ স্বতঃস্ফূর্ত জীবন-আনন্দ ও শুদ্ধ দর্শনবোধের কারণে তিনি গল্প বলার ঢঙেই আমাদের বোধের গভীরে নিয়ে যেতে সক্ষম। যে গভীরতার সঙ্গে আনন্দবাদের বিরোধ নেই। এসব গুণেই তাঁর কবিতাপাঠে পাঠক হন মুগ্ধ।

তাঁর ছড়া একই সঙ্গে ছড়া ও ছোটদের কবিতা। ছন্দমায়া ঘোরে তাঁর ছড়াতে এসেছে রঙ্গ-ব্যঙ্গের পাশাপাশি শুদ্ধ মনন, সমাজমনস্কতা। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা সংখ্যা আটটি। বর্তমান তাঁর সম্পাদিত ‘কবিসম্মেলন' তো যথেষ্ট জনপ্রিয়। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা শতাধিক।

‘গোঁসাইবাগান’-এ কবি জয় গোস্বামী লিখেছেন “তখন আমার ‘দেশ’ বলতে শ্যামলকান্তি। সে নিজে দুর্দান্ত লেখে এবং তার কোনো পত্রিকা নেই। কিন্তু কাছে-দূরের লিখিয়েদের নিয়েই তার ঘর-সংসার। সে-ই সবার কাছ থেকে কবিতা নিয়ে নিয়ে এ-পত্রিকা ও পত্রিকায় ছাপিয়ে দেয়।” আসলে সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা ও দায়বদ্ধতাকে তিনি সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। এই স্বভাবগুণ সহজে চোখে পড়ে না।"

এই মুহূর্তে শ্যামলকান্তি দাশের সম্পূর্ণ মূল্যায়ন সম্ভব নয়। যেহেতু বর্তমান তিনি নতুন নতুন সৃষ্টিতে সমান কিংবা বেশি মাত্রাতেই যুক্ত। এইসব একান্তই ব্যক্তিগত অনুভূতি মাত্র। যার মাধ্যমে তাঁর সাহিত্য মূল্যায়নের এক প্রস্তুতিপর্বের সূচনা করা গেল।


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

3 Comments

  1. শ্যামল সম্বন্ধে খোলাখুলি কিছু কথা বলেছ , যা আজকের কোন কবিই অস্বীকার করতে পারবে না । ভালো লাগলো ।

    ReplyDelete
  2. আমার প্রিয় কবি। আপনারও। আপনাকে শুভেচ্ছা।

    ReplyDelete
  3. আমার প্রিয় কবি। তাঁর সম্পর্কে আরো আলোচনা হোক।

    ReplyDelete