জ্বলদর্চি

পৃথিবী ২০৭৭ /পর্ব-৩/রাজ অধিকারী

পৃথিবী  ২০৭৭
রাজ অধিকারী 

পর্ব ৩

প্রায় ঘন্টা দুয়েক অজ্ঞান থাকার পর চোখ পিটপিট করে তাকালো পাপান। ষণ্ডামার্কা যমদূত এবং ফিনফিনে আঙ্কেল ওর মুখের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। চোখ খুলে ওই দৃশ্য দেখতেই পাপান ভয়ে লাফিয়ে উঠলো এবং লাফালেই ফিনফিনে আঙ্কেলের সাথে মাথা ঠোকাঠুকি হয়ে গেল। "উরে বাবারে! মেরে ফেললো রে!" বলে চেঁচাতে লাগলো সেই ফিনফিনে আঙ্কেল। যমদূত এদিকে খুশিতে নেচে নেচে গাইতে আরম্ভ করলো বাচ্চা ছেলেদের মতো, "উঠেছে! উঠেছে! খোকা আমাদের মরেনি! উঠেছে!"
কাছেই একটা পাথরের ওপর বৃদ্ধা বসেছিলেন। উঠে এলেন হট্টগোলের আওয়াজে। 
- আহ! তোরা থামলি!
বৃদ্ধা মহিলার গলা এতক্ষণে শোনা গেল। পাড়ায় ঝামেলা লাগলে কলতলায় সে মহিলা সবথেকে উঁচু গলায় ঝগড়া করেন, এই মহিলা আলবাত তাদের একজন। পাপানের কাছে এলেন বৃদ্ধা। পাপান মাথায় হাত বোলাচ্ছিল। বেশ জোরেই লেগেছে ঠোকাঠুকি। পাপানের মাথায় আলতো করে হাত রাখতেই, সে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো
- আপনি কে? ওরা কারা? আর আমরা আছিই বা কোথায়?
- ওরে বাবারে! এত প্রশ্ন একসাথে? বেশ। আমি গজনলিনী তালুকদার। তুমি আমাকে গজাদিদা বলে ডাকতে পারো। সবাই তাই ডাকে। আর ওই বুড়ো খোকা, যে লাফাচ্ছিল, সে হল পান্তু। একটাই নাম। আর যার সাথে মাথা ঠুকলো তোমার, সে হলো সংকল্প শিকদার। ওরফে শঙ্কা!
- কিন্তু আমরা কোথায় এখন?
- সেসব পরে হবে, তোমার নাম কি খোকা?
- পাপান!
- বাহ! সুন্দর নাম। এটাই থাক। ভালোনাম জেনে কাজ নেই। 

(থ্যাংকিউ গজাদিদা। বাঁচালে! এতগুলো ভালোনাম পরপর ভাবা খুব কঠিন। যাই হোক, গল্প পড়ুন।)

- পান্তু! শঙ্কা! এইদিকে আয় তোরা।
গজাদিদা হাঁক দিতেই দু'জনে বাধ্য স্টুডেন্টের মতো এগিয়ে এলো। 

(এই এক সেকেন্ড! লাস্ট টাইম ইন্টারাপ্ট করছি। এরপর থেকে গল্পটা পাপানের গলায় পড়ুন। মানে ধরে নিন, আমিই পাপান, অথবা আপনি পাপান। হ্যাঁ, এইবার পড়ুন।)

উফঃ! এতক্ষণে আমাকে হাল ধরতে দিল লেখক ব্যাটাচ্ছেলে। আধাকথা বলেইনি। আমি কিভাবে সব দেখছি, কতটা ভয় রয়েছি, সে ব্যাটা বুঝবে কি করে এসব! উটকো দু'টো লোক, একটা অদ্ভুত মহিলা। উঃ বাবারে! কোথায় এসে পড়লাম আমি। একটু চাপাচাপি মা-বাবাদের গাড়িতে বসে গেলে আজকে এই দুর্দশা হতো না। আর ঐরকম একটা ষণ্ডামার্কা, পিলারের মতো দণ্ডায়মান লোকের নাম কিনা পান্তু! কোথায় ভীম, কুম্ভকর্ণ টাইপের নাম হবে তা না। যাগগে, নাম নিয়ে অত কাজ নেই। কিন্তু এদের মতলবটা করি। জিজ্ঞেস করে দেখি,

- গজাদিদা!
- হ্যাঁ পাপান, বল! জল খাবি? 

এতক্ষণ খেয়াল করিনি। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। জলের কথা শুনতেই সেটা টের পেলাম। সত্যিই, কিছু জিনিস মাঝে মাঝে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে আমরা বুঝতেই পারি না। এইজন্যে আঁচিলকে ফোঁড়া ভেবে অনেকে খুঁটে খুঁটে রক্তারক্তি করে ফেলে। জলের কথা যখন উঠলোই, চেয়েও দেখি একবার।

- হ্যাঁ, মানে, তেষ্টা তো পেয়েছে।
- আহারে! সোনা ছেলেটা। এই পান্তু, জল নিয়ে আয় তো পাপানের জন্যে। 
পান্তু মাথা চুলকে বললো,
- এই জঙ্গলে জল কোথায় পাই দিদা!

সত্যিই তো! এ'যে গভীর জঙ্গল। এত গভীর জঙ্গলে এলাম কি করে। লেখক তো বললো ঘন্টাদুয়েক অজ্ঞান ছিলাম, এত তাড়াতাড়ি এই ঘন বনে কি করে এলাম! আশেপাশে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছি দেখে গজাদিদা জিজ্ঞেস করলো,

- জঙ্গলে কি করে এলি, সেটাই ভাবছিস তো?

এই মহিলার অবসার্ভেশন শক্তি মারাত্মক। 

- হ্যাঁ, মানে..আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে তো আশেপাশে কোনও জঙ্গল ছিল না। 
- হ্যাঁ, ছিল না। পুরো রাস্তা এই পান্তু তোমাকে কাঁধে করে নিয়ে এসেছে চোখের জল ফেলতে ফেলতে। ভেবেছিল কয়েদি ভ্যানে ওর কীর্তিকলাপ দেখে তুমি টেঁসে গেছ। 

শঙ্কা লোকটা এতক্ষণে মুখ খুললো। গজাদিদার হয়ে জবাবটা ওই দিল। খুবই মিহি গলার আওয়াজ। সুদখোরদের বা দালালদের এরকম আওয়াজ হয় সাধারণত। ভিজিয়ে ভিজিয়ে কথা বলে। এদের থেকে কখনও পজিটিভ ভাইবস্ পাইনা আমি। কাজেই লোকটাকে অগ্রাহ্য করে আমি গজাদিদাকে জিজ্ঞেস করলাম আবার,

- সবই তো বুঝলাম। কিন্তু সাউথ দমদম থেকে নিউ আলিপুরের রাস্তায় তো এরকম কোনও জঙ্গল নেই। আমরা আছি কোথায়? কতদিন অজ্ঞান ছিলাম আমি? আর আপনারা কয়েদিভ্যান থেকেই বা পালালেন কেন?

গজাদিদা কিছক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলেন,

- আমরা এখন আলিপুর চিড়িয়াখানায়। 
- অ্যাঃ!

(ক্রমশ)

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments