জ্বলদর্চি

হাটের ভুল/বিশ্বরূপ ব্যানার্জী

কাহিনী কবিতা
হাটের ভুল

বিশ্বরূপ ব্যানার্জী 


হরিহরপাড়া মিঞার বাগান হাট,
প্রতি সপ্তাহে যেতাম তো দুই দিন,
কত লোকজন, কি তাদের ঠাটবাট,
দেখেছি তোমাকে দিন দুই নাকি তিন?

অতি সুন্দরী সুঠাম তোমার তনু,
ষোড়শী রূপসি বালিকাই বলা চলে,
ভ্রূ তোমার যেন ধানুকীর বাঁকা ধনু,
ললিত নৃত্য এ চলাকে বুঝি বলে ।

আমি তো ব্যাপারী কবিরাজী বড়ি বেচি,
হাত মুখ নেড়ে কত কথা বলে চলি,
খল-নুড়ি নিয়ে শেকড় বাকল ছেঁচি
আশে পাশে রাখি লতা পাতা আর কলি ।

এসেছিলে তুমি সামনে অনেক বার,
বসেও তো ছিলে হাঁটু মুড়ে বহু ক্ষণ,
অসুখ বিসুখ ছিলো না কিছু তোমার,
মধুর সুরেতে করেছিলে আলাপন।

সুঠাম,সুছাঁদ,সুগঠিত দেহ ঘিরে,
ছিলো তো শুধুই স্বাস্থ্যেরই দীপ্তি,
শ্রম ও ব্যায়াম সুডৌল দেহটিরে,
দিয়েছিলো এক দর্শনীয় তৃপ্তি।

সেই দিন বুঝি ছিলো মঙ্গল বার,
বসেছিলে তুমি সামনে অনেক ক্ষণ,
হঠাৎই যাওয়ার সময় হলো তোমার,
ভাবি কেন এতো? তুমি কি আপন জন?

দেখলাম চেয়ে সামনে সোনার দুল,
আনমনা হয়ে ফেলে চলে গেছো বুঝি,
দামি এ গহনা তবু কেন এই  ভুল?
ফিরবে এখনই, ভিড়েতে তোমায় খুঁজি।

ঘন্টা দুয়েক এই ভাবে গেলো বয়ে,
এলেনা তো তুমি খুঁজতে তোমার দুল,
বিক্রিবাট্টা সব গেলো মাটি হয়ে,
কি করি এখন পেলাম না ভেবে কুল।

জানলাম আমি পাশের পসারি থেকে,
কিশোরী মেয়েটি, নাম তার কেয়া রাণী,
'শিব অপেরা'য় নটি নর্তকী সে যে,
যাত্রা দলের 'আগামীদিনের' রাণী ।
 
থাকে সে পাশের বহরাণ নামে গ্রামে,
বাড়ির মালিক শিব বাবু তাঁর নাম,
কেয়ারাণী থাকে তাঁর বাড়ি 'শিবধামে',
চম্পানগর বিহারে কেয়ার ধাম ।

মা নাচ-ওয়ালি বিহারে দেহাতে সাকিন
নাচ আছে কেয়ার শরীরে মনে ও রক্তে,
দিন রাত তার চলে তো নাচের তালিম,
দূর হতে দেখে সে নাচ অনেক ভক্তে ।

দুরু দুরু বুকে গেলাম তো 'শিবধামে',
প্রাসাদের মত বাড়িখান দেখে অবাক,
দারোয়ান বলে এসেছি আমি কি কামে,
মুখে অবহেলা,  ভ্রূ কোঁচকানো নাক ।

তুমি ছুটে এলে যেন বিদ্যুৎ গতি,
মুখেতে তোমার শিশুর সরল হাসি,
প্রাণাবেগে ভরা উছ্বাস সম্মতি,
বললে কি তুমি,"তোমাকেই ভালোবাসি"?

শিব বাবু তিনি অভিজাত অবিচল ,
"আমাদের দলে আসতে তুমি কি চাও?
'শিব অপেরা'তো  কলকাতা সেরা দল
সুপুরুষ তুমি পাবে নামযশ,যদি তুমি মত দাও ।

আছে কেয়ারাণী বয়সটা খুবই কম,
করবো কেয়াকে  আমার ছেলের জায়া,
আমার ছেলে তো নট-সম্রাট কত তার সম্ভ্রম,
দুজনের মাঝে আছে ভালোবাসা মায়া।

এটা ঠিক, কিছু আছে বয়সের ফারাক,
তাও বেশি নয় হয়তো উনিশ , বিশ,
যাত্রা জগতে এটা নয় কোনও ফাঁক,
কিছু দিন পরে ঠিকই হবে মিল মিশ।"

সবই শুনলাম ভাবলেশ হয়ে কানে,
বুকের মধ্যে বাজলো হাজার ঢাক,
কি ভাবে সইবো এ হেন কষ্ট প্রাণে?
 কি ভাবে শুনবো দুঃস্বপ্নের ডাক?

আমি যেন এক বাজ পড়া চারা গাছ,
ব্যাগ হতে আনি ফেলে আসা সেই দুল,
জল উপচানো দুটি চোখ ঘষা কাঁচ,
ফেরত দিলাম, করবো না আর ভুল ।

ভুলের বাগানে ফুলের দেখা কি মেলে ?
ব্যথার কাঁটাই ফলে সেথা বারো মাস,
কিযে করতাম নাচিয়েকে কাছে পেলে?
চোখে শুধু জল,মনেতে সর্বনাশ ।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇




Post a Comment

1 Comments

  1. কি সুন্দর ছন্দে ছন্দে লেখা বিরহ বিধুর এক গল্প

    ReplyDelete