জ্বলদর্চি

পত্রলেখা /সালেহা খাতুন

               

             

পত্রলেখা

সালেহা খাতুন


জীবনে অজস্র পত্র লিখেছি। দাদুকে, বন্ধুদের,অফিসে কর্মক্ষেত্রে অনেক অনেক পত্র লিখেছি। প্রেমপত্রও লিখেছি বহুবার। নিজের জন্য, অপরের জন্য। অপরের জন্য শুনে কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন নিশ্চয়ই। তখন এম.এ. পড়ছি। বাংলায় এম.এ. বলে কথা। আবেদনপত্র অনেক লিখে দিয়েছি, তা বলে প্রেমপত্র লিখে দেওয়ার আবেদন!! ভাবতেই পারছি না। কিন্তু অভিভাবক স্থানীয়ের কাছ থেকে অনুরোধ এসেছে। তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়ের জন্য প্রেমপত্র লিখে দিতে হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এর কাছে এ প্রেমপত্র যাবে। সে পাত্রের যোগ্য প্রেমপত্র মেয়ে লিখবে কী করে? বাড়ির যোগাযোগেই বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এতো ভালো পাত্র হাতছাড়া করা যায় না। নানান বিধি-নিষেধ আসছে। তাই ছেলে-মেয়ের মধ্যে যোগাযোগ হলে বিয়ে হবেই। হতে বাধ্য। শিক্ষাগত যোগ্যতা কম বলে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে!! হতেই পারে না। আমার সামনে পরীক্ষা। দিনরাত এক করে পড়াশোনা করছি। তার মাঝে এমন অনুরোধ। সময় নষ্ট হবে অনেকটাই। কী  আর করা যাবে!!

 একটা দিন পুরো ব্যয় করলাম। দারুন এক প্রেমপত্র লিখলাম। টেবিলে ‘সঞ্চয়িতা’ খোলা ছিল। রবীন্দ্রনাথের সাহায্য নিয়ে অজস্র কবিতা উদ্ধৃত করে দিলুম এক বিদুষী  মহিলার উপযোগী প্রেমপত্র লিখে।  আজ বড়ো আফশোস হয় পত্রখানির একটি নকল যদি রাখতাম। দেখাতে পারতাম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট তো এখন আত্মীয়। চাইব নাকি তাঁর  কাছ থেকে গোপন ঐ পত্রটি? না অতোখানি নির্লজ্জ হতে পারব না। 

বাড়ির মত না থাকলেও পাত্র এমন শিক্ষিতা, রবীন্দ্রানুরাগী, সুন্দর হাতের লেখার অধিকারিণীকে হাতছাড়া করতে চাইলেন না। ওরে বাবা চিঠিখানা কি মেয়েটি  নিজের হাতে কপি করে দেয়নি? আমার হাতের লেখাই পাঠিয়ে দিয়েছে। হা ভগবান!! কী  জানি পরে কীভাবে ম্যানেজ করেছে ব্যাপারটা। ঈশ্বরই জানেন।

 আমি অতোশতো না ভেবে নিজের পরীক্ষার পড়াশোনায় মন দিলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম ব্যাপারটা। হঠাৎ একদিন দেখলাম বরপক্ষের অভিভাবকের অমতেই মেয়ের মামার বাড়ি থেকে বিয়ে হয়ে গেল। জোড়ে দেখা করতে এসেছে আমাদের বাড়ি। সাদা-গোলাপী রঙের  একটা সালোয়ার-কামিজে সোফায় বসে আছি। বাবার সঙ্গে ডিডি বাংলায়  সন্ধে সাতটার খবর শুনছি। দিনের মধ্যে প্রিয় এই সময়টাও কেড়ে নিল মেয়েটি। যাঃ বাবা কী যে করি। কিন্তু পরিবার-পরিজন-আত্মীয় মহলে ভালো মেয়ে বলে বিশেষ পরিচিতি আছে। ভালোমানুষীর সাজা অনেক। বিরক্তি চেপে মুখে বললাম আসুন আসুন।

 মেয়েটি পরিচয় করিয়ে দিল। বরকে বলল আমার দিদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট  ক্যাম্পাসে রেগুলার যাতায়াত করে পড়াশোনা করে। মনে মনে বললাম ওরে গাধা! আমাকে কি ধরিয়ে দিতে এসেছিস। প্রমাদ গুণলাম সব্বোনাশ এই বুঝি অভিযোগ করে বসে বয়সে ছোট বোনকে এমন করে বুঝি প্ররোচিত করতে হয়।

সংকোচ বোধে  কোনোদিন জিজ্ঞাসা করতে পারিনি হ্যাঁরে তোর বর চিঠিখানা প্রসঙ্গে তোকে কী বললেন। বোন শুধু বলেছিল “দিদি ও বলছিল তোমার দিদি তো খুব বাচ্চা মেয়ে। আমি ভেবেছিলাম বেশ গুরুগম্ভীর মহিলা হবে”।

হায় রে! পাত্রটিকে তাঁর বন্ধু এবং সহপাঠিনী আর এক ফার্স্ট  ক্লাস ফার্স্ট পাত্তা দেয়নি। তাই বিদূষী মহিলা বিয়ে করে শোধ নিতে চেয়ে এ তিনি কোথায় এসে পড়লেন। জনান্তিকে বলে রাখি পরবর্তীকালে আমার সে বোন মেয়ে এবং মায়ের সঙ্গে তিন প্রজন্ম মিলে একসঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments