জ্বলদর্চি

দুটি কবিতা /বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

দুটি কবিতা   
  
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
       
শ্রী রাধার আবেদন


বাজিয়ে বাঁশরি, ডাকো গিরিধারী যাওয়ার সময় কই?
শাশুড়ি আমার কাজ দিয়ে গেছে,বাছতে বলেছে খই,
অল্প তা নয় বড়ো দুই ধামা,
ফুরসত নাই, নাই কোনো থামা
নইলে বাঁশির জবাব দেবো না সে প্রেয়সী  আমি
নই,
এতো টুকু যদি কাজটা থামাই শুরু হবে হৈ চৈ ।।

একটু ধৈর্য্য ধরো ওগো শ্যাম একটু সময় দাও,
অনাকুল হয়ে প্রতীক্ষা করো, শ্রীমতীকে যদি চাও,
কাজ গুলো সব একে একে সারি,
তার পরে নিয়ে কাঁখেতে গাগরি,
ধীর পায়ে যাবো যমুনা পুলিনে খানিক সেথা দাঁড়াও,
দাঁড়াতেই হবে তোমায় সেখানে যদি প্রেয়সীকে চাও।।

জেনো তুমি শ্যাম তোমার জন্য আমিতো আড়ালে কাঁদি,
সাজ গোজ কিছু করতে পারিনা, কেশপাশ নাহি বাঁধি,
শাশুড়ি ননদ সন্দেহ করে,
বারে বারে শুধু প্রশ্নই করে,
"কি হয়েছে তোর বল হতভাগী ?"তা শুনে কেবলই কাঁদি,
ওরা নিশ্চয় মনে ভেবে নেয় আমি এক অপরাধী।।

আমার যে স্বামী তোমার মাতুল তাহলে  কে হই আমি ?
সকলেই জানে, তুমিও তা জানো আমি তো তোমার
মামি,
মামির সঙ্গে এ হেন প্রণয়,
ঘোর পাপ এটা সকলেই কয়,
লোক লাজ ভয়ে প্রাণ আকুল হয় লজ্জায় মরি আমি ।
তবুও প্রেমকে কাটাতে পারি না এ যে তোমার অনুগামী।।

এ সমস্যার করো সমাধান ওগো জগতের পতি,
যেন কেউ আমায় কুলটা না বলে, বলে যেন রাধা সতী,
রাধা নাম যেন পবিত্র হয়,
ভক্তির রসে সিঞ্চিত রয়,
কৃষ্ণের আগে যেন রাধা থাকে,সকলে করে প্রণতি,
রাধা কৃষ্ণের নামেতেই যেন সকলের থাকে মতি।।

(রাধা  ও কৃষ্ণের এই মহান প্রেম কাহিনী আসলে
এক অপূর্ব লোক গাথা ।
পুরাণে যেটা উল্লেখ আছে সেটা হলো শিবের
প্রার্থনায় দেবী ভগবতীর ভদ্রকালী মূর্তিই দ্বাপরে
শ্রী কৃষ্ণ রূপে অবতীর্ণ হন এবং শিব স্বয়ং
স্ত্রী রূপে অবতীর্ণ হন। নন্দ গোপ ও যশোদা
যথাক্রমে  প্রজাপতি দক্ষ এবং তাঁর পত্নী
প্রসূতি ছিলেন । দক্ষ যজ্ঞে সতী দেহ ত্যাগ করেন
যখন তখন যক্ষ ও প্রসূতি সেই আদ্যা শক্তিকে
কন্যা রূপে পুনরায় পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা
করেন। তাঁদের এই কঠোর তপস্যার সুফল
স্বরূপ দেবী ভগবতী ও শিব যথাক্রমে শ্রীকৃষ্ণ
ও রাধা রূপে জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন।)



কবি মুক্তলাল

ছিলেন আমার মামা মুক্তলাল নাম,
খাগড়া শহরে তাঁর ছিল নিজ ধাম,
পাঁউরুটি, চানাচুর কেনা বেচা পেশা,
কবিতা লেখাটা তাঁর ছিল বড়ো নেশা।

রিম রিম কাগজেতে লেখেন কবিতা,
উই আর ইঁদুরেতে কাটে যে সবই তা,
গৃহিণী ছিলেন তাঁর কৃপণের রাণী,
অপচয়ে শোনাতেন কত কটু বাণী ।।

গোবেচারি মামা মোর রইতেন ভয়ে,
মারমুখী গৃহিনীর বকুনি প্রলয়ে,
কবিতা লেখার জ্বালা কবিরাই বোঝে,
পথে পথে ঘুরতেন কাগজের খোঁজে ।।

ছেঁড়া বই খাতা ঠোঙা আনতেন তুলে,
কাগজ কেনার কথা ভাবেন না ভুলে,
ছেঁড়া খাতা ফাঁকা পেলে চলে কবিপনা,
এ ভাবে মেটান তাঁর মনের বাসনা ।।

দোকানে আসতো যারা বেচা কেনা তরে,
শোনাতেন লেখা গুলি তাদেরকে ধরে ,
কবিতা শোনার জ্বালা বড়ো ই কঠিন ,
তবুও শুনতে হতো দিন প্রতি দিন ।

কবিতা লেখার নেশা ছাড়ানো না যায়,
কবিতা শোনার নেশা কম জনে পায় ,
শুনবে না ভালো কথা,পড়তে তো পারো,
ইচ্ছা মতো ধরো আর ইচ্ছা মতো ছাড়ো ।

বিশ্বরূপের কথা কিসের সমান ?
কি ভাবে বলি গো সেটা না পেলে প্রমাণ ।

                 ***   ***   ***   ***

**  পয়ার হলো চতুর্দশ-অক্ষর ছন্দ । এই ছন্দ
      বাঙলা পদ্যে সর্বাধিক প্রচলিত ছন্দ ।
      পয়ারের আবার কয়েকটি শ্রেণী বিভাগ আছে :
      যেমন -- 
    . প্রবহমান পয়ার
      সমিল প্রবহমান পয়ার
      অমিল প্রবহমান পয়ার
      বিশাখ পয়ার
      মহা পয়ার  ইত্যাদি

উদাহরণ :

(১)  রাজখন্ড ছাড়ি রাম যান বনবাসে,
       শিরে হাত দিয়া সবে কান্দে নিজ বাসে ।

                         --  কৃত্তিবাস ওঝা

(২)  আরুণী নামেতে ছিল শিষ্য একজন,
       ডাকি তারে গুরু আজ্ঞা করেন তখন।

                          -- কাশীরাম দাস

(৩)  নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
       তরু গণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল ।

                           -- রজনী কান্ত গুপ্ত

(৪)  আপনারে বড় বলে বড় সেই নয়,
       লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।

                           --  ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত 

(৫)  তুমি বোলো আছে প্রভু বিবাহের স্থলে,
       আমি দরশন পাই হৃদয় কমলে ।

                         সৈয়দ আলাওয়াল 

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


                            -

Post a Comment

0 Comments