জ্বলদর্চি

২০২২ বিশ্বনাট্য দিবসের পিটার সেলার্সের বাণী/ভাবানুবাদ: চন্দন সেন

২০২২ বিশ্বনাট্য দিবসের পিটার সেলার্সের বাণী

ভাবানুবাদ: চন্দন সেন

বাণী দাতা: পিটার সেলার্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার সন্তান বিশ্বখ্যাত সংস্কৃতিজন পিটার সেলার্স একাধারে প্রতিভাবান অপেরা পরিচালক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উৎসব সংগঠক। বিশ শতকের উপান্ত থেকে নবীন সৃজন ভাবনায় যারাই এগিয়ে এসেছেন তাদের সামনে এক জীবন্ত আদর্শ হিসাবে পিটার সেলার্স এখনো এক উজ্জ্বল সহায়ক শক্তি।

সেলার্সের করোনা পূর্ববর্তী কাজগুলো যেমন ডক্টর এটমিক কিংবা কোপার্নিকাসের জীবনকেন্দ্রিক ফরাসি অপেরা অথবা সার্চ ব্রুক উৎসবের সংগঠক হিসেবে সিম্ফোনি গুরু মোজার্টকে নিয়ে নবীন ভাষ্য নির্মাণ যতখানি দৃশ্য নন্দিত ততখানি বা তার চাইতেও বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পিটার সেলার্সের প্যানডেমিক উত্তরকালের নবীন ভাবনা যুক্ত চলচ্চিত্র "কি ক্ষণস্থায়ী এই শরীর" (The Body is so impermanent)। যে সৃষ্টির উৎসে রয়েছে "বিমলাকীর্তি সূত্র"। ২০১৬ তে মোজার্টের 250 তম জন্মদিনের স্মারক আন্তর্জাতিক সঙ্গীত উৎসবে মুখ্য নির্দেশকের দায়িত্ব গৌরবের সঙ্গে পালন করেছেন পিটার সেলার্স। একের পর এক বহু কালজয়ী অপেরা নির্মাণে, চলচ্চিত্র ও নাটকের অভিনয়ে ও নির্দেশনায় এবং আন্তর্জাতিক মানের উৎসবের সফল সংগঠকের ভূমিকায় পিটার সেলার্স এখনও যেমন এক কালজয়ী নাম তেমনি ৬৫ বছরেও অধ্যাপক হিসেবে হাজার হাজার আগ্রহী শিক্ষার্থীকে অক্লান্তভাবে শিক্ষা দিয়ে চলেছেন পিটার সেলার্স। ইউনেস্কো'র উদ্যোগে আইটিআই নিয়ন্ত্রিত ২৭শে মার্চ বিশ্ব নাট্যদিবসের বাণীদাতা হিসেবে এই অস্থির কালব্যাধি দংশিত সময়ে বেছে নেওয়া হয়েছে এমন এক বিশ্ববন্দিত স্রষ্টাকে যার পরিচালিত কয়েকটি অবিস্মরণীয় নাটক অপেরার পাশাপাশি আধুনিক কিছু চলচ্চিত্র (যেমন Only The Sound Remain, Theodora, Nixon in China, King Lear) আমাদের এই অশান্ত ও অস্থির সময়কে নতুন ভাবে উপস্থাপিত করছে।

বিশ্বনাট্য দিবসের বাণী 2022 (পিটার সেলার্স)

প্রিয় বন্ধুগণ,

এখন এমন একটা সময় এসেছে যখন সারা পৃথিবীর অস্তিত্ব ঝুলছে ঘন্টায় কিংবা মিনিটে বা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়া কোনও খবরের বিবরণে হয়তবা।

স্রষ্টা হিসেবে যারা আমাদের এই নতুন ধ্রুপদি সময়ে অকুতোভয় কাজ করে চলেছেন তাদের সবার কাছে ডাক পাঠাই - নতুন ধ্রুবপদ রচনার ডাক। তবে কি বদলাতে হবে আজ সবকিছু ধ্রুপদি চেতনায়, ধ্রুপদি প্রতিবিম্বনে, ধ্রুপদি দর্শনে? আমরা মানব জাতির এক নবীন মহাকাব্যিক যুগে প্রবেশ করেছি আর তার ফলশ্রুতিতে এক নবীন গভীর ও বদলে যাওয়া সময়ের মুখোমুখি আমরা, যখন মানুষের পরস্পরের সম্পর্কগুলো প্রশ্নের মুখে, -এমনভাবে ভেঙে ফেলা পুরনো বুনিয়াদগুলোর সামনে আর মনুষ্যেতর এই অভাবিত জগতের সামনে আমরা বহু ক্ষেত্রেই দ্বিধা বিহ্বল, ভাষাহীন, ভাব প্রকাশে অসমর্থ। এখন কিন্তু আমরা ২৪ ঘন্টার একঘেয়ে খবর দেওয়া দুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আর নেই, আমরা পুরনো সময়ের হিসাব শাস্ত্রের বাইরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি, খবরের কাগজ বা মিডিয়া আমাদের এই অভিজ্ঞতাগুলোকে ধরতেই পারছে না।

কোথায় আমাদের এই নবীন ভাব প্রকাশের ভাষা, কোথায় নতুন পথের অন্বেষণ আর কী কী  হতে পারে আমাদের এইসব অভিনব অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি -  কেউ বলতে পারছে না এখন। থিয়েটার হচ্ছে অভিজ্ঞতানির্ভর শিল্পমাধ্যম। যা এতদিন পর্যন্ত বিনোদনী প্রেস মিডিয়ার প্রচার মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তাদের কৃত্তিম বা ভেজাল অভিজ্ঞতার বাণী নির্ভর ছিল, মিডিয়ার অদ্ভুত সব মিথ্যা ভবিষ্যৎ বাণীর বসে ছিলো - কোথায় গেল হারিয়ে সেইসব। নাট্যকর্মী হিসাবে আমরা এখন কিভাবে ঐসব পুনরাবৃত্তিসূলক সুলভ ও অন্তহীন নষ্ট সময়েকে ছাপিয়ে এক জীবনে যা কিছু পবিত্র ও অনন্ত তাকে স্পর্শ করতে পারব এই নতুন যুগান্তকারী সময়ে? কেমন করে অর্জন করব একটি অভিন্ন নবীন পরিবেশ বিদ্যা যা জরুরী এখন? জরুরী এক নতুন সখ্য, জরুরী অচেনা আশ্চর্য আকাশের কোনে জ্বলে ওঠা নতুন আলো, - তাকে কেমন করে স্পর্শ করব?

 কোভিদ-১৯ এর দু'দুটো বছর ভোঁতা করে দিয়েছে মানুষের ইন্দ্রিয়গুলোকে, সংকীর্ণ করে দিয়েছে মানুষের জীবনযাপনকে, ভেঙে দিয়েছে সব সম্পর্ককে এবং আমাদের টেনে নামিয়ে সে এক অদ্ভুত অবাসযোগ্য গ্রাউন্ড জিরোতে।

কী ধরনের বীজ বপন করতে হবে বা পুনঃবপন করতে হবে এই বছরগুলোতে? আর অতি উৎপাদনশীল ধ্বংসাত্মক প্রজাতির বা জীবাণুর সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটাবোই বা কিভাবে? এত বেশি মানুষ আজ ধ্বংসের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে! এত বেশি হিংসা বা বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তিহীনভাবে, অপ্রত্যাশিতভাবে! চেনাজানা ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে এখন অত অবাধ নির্মমতা বাসা বেধেছে! এখন আমাদের স্মরণের উৎসব কি হতে পারে? কী কী  আমাদের মনে রাখতে হবে? কোন কোন নতুন আচার শাস্ত্র আমাদের মত নাট্যকর্মীদের বারবার নতুন কল্পনার জগতে টেনে আনবে যা আমাদের নবীন মহড়ায় উদ্বুদ্ধ করবে এমন কিছু সৃজনে যা এতোকাল ছিল আজানা-  "যে পথ দিয়ে যায়নি কভু আর"?

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

 

Post a Comment

1 Comments