জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

গুচ্ছ কবিতা
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

                   বা    স    না  

বায়ু প্রবাহিত বর্ষার মেঘ প্লাবন ও  বন্যা আনে,
বহু অনর্থ ঘটায় এ মেঘ সকলেই সেটা জানে,
এমন ভাবেই অহমিকা বোধ সকলের ক্ষতি করে,
শুভ কামনার সকল চেতনা উড়ে যায় এর ঝড়ে।।

প্রচেষ্টা বলে এ অহং বোধ যদি বা সরানো যায়,
বিষয়-চিন্তা ইন্ধন পেয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়,
দেহ অভিমানী সকল মানুষই কামনার দাস হয়,
যার নাই - এই দেহ অভিমান সে সুরক্ষিত রয়।।

ছলা কলা বলে কুলটা রমণী পুরুষকে কাছে টানে,
এটাই যে তার প্রবল অস্ত্র সেটা সে ভালোই জানে,
মোহাচ্ছন্ন উপপতি তার ভুলতে পারে না তাকে,
বারে বারে তাই ফিরে ফিরে আসে যখনই মোহিনী ডাকে,
ঠিক এই ভাবে বিষয়-চিন্তা মানুষকে ফেলে পাঁকে,
বাইরের আভা ভিতরের বিষ দুরেতে সরিয়ে রাখে।।

যেমন জলেতে ভাসমান পানা সর্বদা জলে ভাসে,
সরিয়ে দিলেও সেই জলাশয়ে আবার সে ফিরে আসে,
ঠিক এ ভাবেই কামনা বাসনা মনকে রুদ্ধ করে,
শত চেষ্টাতে সরানো যায় না মানসকে ঘিরে ধরে।।

বাসনা যতই বেড়ে ওঠে তত কামনা পাত্র ভরে,
সংযমহীন প্রবৃত্তি এসে মানসকে ঘিরে ধরে,
জনম-মরণ প্রবাহ জীবের সদাই চলতে থাকে,
বিষয় বুদ্ধি,সকাম কর্ম মন অধিকারে রাখে ।।

সকাম কর্ম,বাসনা বৃদ্ধি,বিষয় চিন্তা তিন,
এ তিন চিন্তা প্রসৃত হলে মানুষ হবে স্বাধীন,
ব্রহ্মর মাঝে নিলীন হও  তুমি,বিলীন হোক তব সত্তা,
'আমি-আমার' এই ভাব  শেষ হয়ে আসবে বুদ্ধিমত্তা।।

সূর্য উদয়ে তমোনাশ হয় আলোকিত চারি দিক,
'আমিই ব্রহ্ম' এই বোধে হয় অক্ষর অনিমিখ,
বিজয়ী সে ভোলে বিষয় চিন্তা,অবিনাশী অন্তর,
আধি,ব্যাধি যতো অপগত হয় শুভ এই মন্তর ।।

প্রসৃত    :  পলায়িত, দূরীভূত

অক্ষর     :  অখিলেশ ঈশ্বর

অনিমিখ  : স্থির নিবদ্ধ দৃষ্টি

আধি    :  মানসিক পীড়া

সূত্র  :   শংকরাচার্যের 'বিবেক চূড়ামণি'



       অতিমারী করে গোপনে আক্রমণ        
              

" বয়স আমার বেশি নয় ভাই,তরুণইতো বলা চলে,
এ অতিমারীর' ধরন ধারণ সবই অজানা বলে,
তরুণতাটাই অঙ্গত্রাণ দম্ভটা ছিলো মনে,
অতিমারী এলো অতীব সঙ্গোপনে,
এখন বাঁচতে চাই,
ICU-এতে ঠাঁই,
(নিয়েছি) তাই।

সূত্র  : Times of India, Calcutta Times 
          P. 3 ,  23 rd March, 2020 .

'Young people, stop thinking you're not
at risk. Please stay indoors.'





                       বে     দা     ন্ত

কিএই জগত কেন এ জগৎ,কে তিনি পরাৎপর?
কুতুহলী যতো জ্ঞানী গুণীজন এই অন্বেষে তৎপর,
কার্য-কারণ বিচারের পথে করেন সত্য সন্ধান,
হয়তো ভাবেন এই পথেই হবে মিথ্যার অবসান।।

বাহ্য জগতে,গবেষণা পথে, সত্য খোঁজেন গুণীজন,
এই বিশ্বের শেষ সত্য কি? সেটাই খোঁজেন অনুক্ষণ,
সন্ধান শেষে খুঁজে পান তিনি আপন আত্মসত্তা,
এই সত্তার উৎসমূল হন ঈশ্বর আদি কর্তা ।।

আত্মার যিনি আত্মা তিনি তো পরম শুদ্ধ সত্ত্বা,
পরমাত্মা তো তাঁকে সবে বলে-জগৎ সৃষ্টিকর্তা,
এ বোধ যখন হৃদয়েতে জাগে তখন অনুভূতি হয়,
আমার এ দেহ সীমায়িত নয়,ব্যাপ্ত জগৎ ময়।।

রোগ,আধি, ব্যাধি আধিপত্যের তখনই পতন হয়,
সত্য স্বরূপে মুক্তি তখন হ্দয়ের মাঝে রয়,
মৃত্যুর ভয় অপগত হয়, আসে প্রকৃত জ্ঞান,
মৃত্যু তখন,পরিবর্তন, নয় সব অবসান ।।

নির্বিশেষ এই সত্যের জ্ঞান বেদান্ত এনে দেয়,
মন হতে যতো আতংক ভয় সবই  সরিয়ে নেয়,
কোন পথে এই জ্ঞানের আগমন? সকলে ভাবেন তাই ,
বেদান্ত কয় যোগই সে পথ,অন্য পথ আর নাই।।

একাগ্র ধ্যান আর প্রাণায়াম 'রাজযোগ' এরে কয়,
নিষ্কাম হয়ে কর্ম সাধনে 'কর্মযোগে'র জয়,
ভক্তি ও প্রেমে সাধনা করলে তা হয় 'ভক্তিযোগ',
এ তিন যোগের যে কোনও একটি তোমার মার্গ হোক ।।

পবিত্র যাঁর হৃদয় আর মন,তিনি পান ঈশ্বর,
প্রসন্ন চিত ঈশ তাঁর কাছে আসেন নিরন্তর,
অতি সযতনে আয়ত্ত করো বেদান্তের এই জ্ঞান,
এ জ্ঞান তোমাকে মুক্ত করবে ,দূর হবে অভিমান।।

আধি  :  মানসিক অসুস্থতা

মার্গ  : প্রকৃষ্ট উপায়

সূত্র : স্বামী অভেদানন্দের রচনাবলী,
         প্রথম খন্ড


                   মুখ ঢাকা মেয়ে

বাইরে বেরোয় না সে সদা  থাকে বাড়িতে
যদি বা  বেরোয় পথে যায় ঢাকা গাড়ীতে,
বৃষ্টিতে জলে জলে চলে যদি হেঁটে সে।
বোরখাতে মুখ ঢাকে আসে না তা হদিসে ।

চোখ মুখ ঢাকা থাকে ঘেরাটোপ হিজাবে,
সুন্দর চোখ মুখ পাই না তো হিসাবে ,
ফিস ফাস কথা আর জোলো জল বাতাসে,
অদেখা থেকেও কেন দেখা দিতে চায় সে ।

ইরেজার দিয়ে যেন মুছেছে সে নিজেকে ,
কারণটা খুঁজি অমি  লুকায় সে কি দেখে ?
চেয়েছি তো তারে আমি আপনার করে যে,
তাই কি শরম হয় ?  লেখা খাতা মোছে সে ।


              অতিমারী ভয়

মহাপ্রলয়  এসে গেছে আজ ?
এদিকে সবার দৃষ্টি ,
অতিমারী নেবে কল্কির কাজ --
ধ্বংস করবে সৃষ্টি ?

কি জবাব দেবে কেয়ামত রোজে?
এ কথাই বুঝি ভাবছো?
জীবন কেটেছে স্বার্থের খোঁজে,
অনুতাপে আজ ভাসছো ?

এখনও সময় আছে তো মিত্র,
এখনও সজাগ হও,
জেনে নাও যেটা প্রকৃত চিত্র,
সতর্ক সদা রও।।

ঝেড়ে ফেলো সব গা ছাড়া স্বভাব,
যা জানার জেনে নাও,
সহযোগিতার আনো মনোভাব,
হাতটা বাড়িয়ে দাও।।

বিদেশ হতে যারা এসেছো দেশেতে,
'আইসোলেশনে’ যাও,
সন্দেহ হলে হাসপাতালেতে,
পরখ করিয়ে নাও ।।

হাত ধোওয়া সেটা বড়ো দরকার,
নাক মুখে রাখো 'মাস্ক'
ভেবো না এ সবই করে সরকার,
তোমারও আছে তো 'টাস্ক'।।

হামলিয়ে পড়ে কেনা কাটা করো,
ভাবছো সবই অমিল --
হয়ে যাবে ; তাই সবই করো জড়ো,
তোমরা তিমিঙ্গিল ।।

আলোচনা মাঝে গুজব ছড়ায়,
আছে তো এমন লোক,
'এ সব গুজবে কান দিতে নাই'
তোমার ভাবনা হোক ।।

পারতপক্ষে যাবো নাতো ভিড়ে,
ব্যাপক সংক্রমণে,
করোনা তখনই ফেলবে তো ঘিরে,
শাণিত আক্রমণে।।

সকলের তরে রও সচেতন,
এই কাজ বড়ো পুণ্য,
দেখবে বন্ধু হবেই তখন,
অতিমারী বিষ শূন্য।।

কল্কি      : দশম অবতার যিনি বিশ্বকে নাকি 
                জন শূন্য করবেন ।

তিমিঙ্গিল : বিশাল পৌরাণিক এক প্রাণী
                 যে তিমিকেও নাকি গিলে নিতে
                 সক্ষম ।





                    ক    বি   তা

কবিতা,তুমি কি থাকতে চাও না আজ ?
ভাবছো-তোমার ফুরিয়েছে সব কাজ ?
অভিমান বহু করেছো কি মনে জড়ো ?
ভাবছো কেউ আর বলেনা,"কবিতা পড়ো" ?
কবিতা তোমাকে এখনও সকলে চায় ,
মান করে আজ পালিয়ে যেও না তাই ।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments