জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /বিশ্বরূপ ব্যানার্জী

গুচ্ছ কবিতা
বিশ্বরূপ ব্যানার্জী 


শুদ্ধা ভক্তি

ফুল, বেলপাতা,দীপ, চন্দন নেইকো তোমার হাতে,
মন্ত্র বলার পুরোহিতকেও পাওনি তোমার সাথে,
কারণ ?  তুমি যে গরিব বেজায়,
টাকা কড়ি কিছু তোমার তো নাই,
তবে কি বিভুও বিমুখ হবেন,রবেন না আর সাথে?
প্রভু চান শুধু শুদ্ধা ভক্তি পেলে খুশি রন তাতে।।


কবি ও শিল্পী

দেখিনি কখনো, শুনেছি তোমার কথা,
সকলেই বলে অপরূপা নাকি তুমি ,
মনটা পোড়ায় অজানা কি এক ব্যথা,
 হৃদয়কে  করে ঊষর এক  মরুভূমি ।

বাড়ির অমতে আসতে পারো নি কাছে,
আমিও ভয়েতে লুকিয়ে থেকেছি শুধু,
ভীরু ভালোবাসা চোখে দেখে ফেলে পাছে,
মনকে করেছি বিশুস্ক মরু ধু ধু ।

কবি এক ছিলো আমার বাড়ির পাশে,
লিখেছে কবিতা সে নাকি তোমাকে নিয়ে,
চাঁদকেও নাকি  বেঁধেছো বিনুনি ফাঁসে ,
বাঁশি সুর পায় তোমারই কন্ঠ দিয়ে ।

তোমার কেশেতে নদী বয় ঢেউ তুলে ,
সেই কেশ বাঁধো চম্পা অঙ্গুলি দিয়ে ,
চাঁদমুখ দেখে চাঁদ তার রূপ ভুলে,
তোমাকেই আঁকে সোনার কিরণ নিয়ে ।

 মুখটি তোমার যেন এক পানপাতা ,
টিয়া পাখি নাক শুক পাখি দেখে চেয়ে,
লিখতে লিখতে ফুরায় কবির খাতা,
তোমাকে দেখতে আসে মাঝি নৌ বেয়ে ।

আমি কবি নই ছবি আঁকি তুলি দিয়ে,
কবির কবিতা শুনে শুনে আমি আঁকি,
এঁকেছি এ ছবি অদেখা রূপসী নিয়ে,
দেখোতো রূপসী হয়েছে ছবিটা নাকি ?


            
মোচার ঘন্ট

পত্নী :
মোচার ঘন্ট/রান্না করবো/জলদি বাজারে যাও,
দেরি হলে আর পাবে না কিছুই মুখ হাত ধুয়ে নাও,
কাপ চাপা দেওয়া ফর্দটা আছে টেবিলের পরে রাখা,
একটাও যেন ভুল হয়নাকো বেশি করে নিও টাকা।।

স্বামী  :

এতো তাড়া তুমি দিওনা আমাকে মাথাটা ঘুরছে বড়ো,
ঠিক সময়েই বাজারেতে যাবো একটু সবুর করো,
ফ্রেশ এক কাপ চা এনে দাও, মৌজ করে আগে খাই,
তার পরে ঠিক বাজারেতে যাবো চিন্তার কিছু নাই।।

পত্নী :

তুমি তো দেখছি আলসের ডিম কিছুতে ঘামেনা গা,
বাজার হতে এলে খাওয়াবো তোমাকে ডবল কাপের চা,
বাজারের সব উধাও হয়ে যাবে দেরি যদি করো আর,
মনের সাধটা মনেই থাকবে বাড়বে বুকের ভার ।।

ঘি,তেজপাতা,গরম মশলা ফর্দ তে লেখা আছে,
এ ছাড়াও আরও সবই লিখেছি ভুল করো যদি পাছে,
এই নাও ব্যাগ, ফর্দ ও নাও, বেশি টাকা হাতে নিও,
যেটাই কিনবে ভালো ভাবে তাতে নজরটা যেন দিও।।

( এর পরে স্বামী বাজার হতে ফিরে এলেন ,ব্যাগটি
পত্নীর হাতে দিলেন )

স্বামী  :

এই নাও আমি ফর্দ মাফিক মিলিয়ে এনেছি সব,
তুমি নাকি এক জাঁদরেল বউ বাজারে উঠেছে রব,
'স্লেভের' মতই খাটাও আমায় আমি যেন চিরদাস,
পাড়ার গেজেট কান টু এ কথা বলে চলে বারো মাস ।।

প্রতিবাদ করে বলেছি আমিও আমার স্ত্রী এক রত্ন,
সব সময়ই সে আমাকে ই দেখে নিয়তই করে যত্ন,
আনো এইবার যেটা বলেছিলে ডবল কাপেতে চা,
শরীরের সব ব্যাথাটা সারিয়ে মজবুত করি গা ।।

( ব্যাগ আজাড় করার পর গিন্নি তো অগ্নি-শর্মা )

পত্নী  :  

ব্যাগ তো উজাড় করলাম আমি,মোচাতো কোথাও নাই,
সবই তো এনেছো কিন্তু তুমি তো মোচাই আনোনি ভাই ।

স্বামী  :

ফর্দ-এর মাঝে দেখো দেখি খুঁজে মোচাটা কি লেখা আছে ?
আমি ভাবলাম হয়তো পেয়েছো আছে তা তোমারই কাছে ।।

পত্নী  :

সত্যি কি তুমি এতোই আকাট,এতো তুমি হাঁদারাম?
রামায়ণ গান কখনও কি হয় না থাকলে সেথা রাম?
মোচার ঘন্ট হবেটা কি ভাবে মোচাই যদি না থাকে ?
সাধে কি তোমাকে পাড়ার লোকেরা উজবুক বলে ডাকে?

   ***   ***   ***   ***   ***   ***   ***   ***

এরপর হলো ধুন্ধুমার এক বলবো না সেটা মুখে,
জানতে চাইলে জেনে নিও সেটা কান টুর ফেস- বুকে ।।

কান টু  :  পাড়ার একজন নিষ্কর্মা বেকার যুবক
               পাড়ায় সে কান টু গেজেট নামে
               পরিচিত

 

  আহ্বান

আমি তো তোমার দেহ নয় প্রিয় হৃদয়কে ছুঁতে চাই,
অতল অথৈ  তোমার হৃদয় কি ভাবেতে তাকে পাই ?
আমার বুকেতে হাত রেখে তুমি মন কি বুঝতে চাও ?
ফাগুনের ঝড়ে উড়ে যাবে প্রিয় বাসনা দূরে সরাও ।

ধুলোবালি মেখে কলুষিত হবে হারিয়ে ফেলবে মন,
তোমাকে যে আমি প্রিয় বলে মানি আমার প্রিয় সুজন,
কারণ বারিতে তৃষ্ণা মেটে না মত্ততা শুধু বাড়ে ,
খোয়ারির নেশা আসক্তি আনে শ্রেষ্ঠতা কে সে কাড়ে ।

অমলিন প্রেম লোলুপতা নয় শুদ্ধতা তার রীতি ,
দেয় সে প্রেমী কে পবিত্র প্রেম প্রণয় পুষ্প প্রীতি,
এসো এসো প্রিয় কাছে চলে এসো হাতেতে রাখো গো হাত,
আনন্দে থাকি দুজনে আমরা সকাল দুপুর রাত।

আমার এ ছবিটি দিলাম তোমায় দেখো প্রণয়ের রূপ,
এই রূপ জেনো উদার মুক্ত তা নয় অন্ধ কূপ ,
এ ছবিটি যদি ভালো করে দেখো শিখবে প্রেমের ভাষা,
জানবে কোনটা বিশুদ্ধ প্রেম কাকে বলে ভালোবাসা ।



রঙের খেলায় wrong-এর জ্বালায়


ছোট্টো সে গ্রাম/ম্যাপে নাই নাম/নয় মাসই জলে ভাসে,
তিন দিকে জল/মাঝ খানে স্থল/কম লোকই হেথা আসে,
খাগড়া বাজারে বঙ্কিম পাল,
কারবার তার বেচা কেনা চাল,
তার কি কপাল/কিনতে সে চাল/সেই গ্রামে চলে আসে ,
জানতো না তো সে/এ গ্রামে  মিলবে/দারুণ সর্বনাশ এ ।।

বঙ্কিম সেই/গ্রামে এলো যেই/তখন সকাল বেলা,
ছিলো সেই দিন/উৎসব দিন/দোলোৎসব মেলা,
একে তো ফাগুন,ফাগের চাদর,
বঙ্কিম সেও  রসিক নাগর,
দোকানেতে গিয়ে/আবির না পেয়ে/কিনলো সিঁদুর মেলা 
ভাবলো খেলবে/এই গ্রামেতে সে/রঙিন ফাগের খেলা ।।

ছোট্টো গ্রামের ছোটো মন্দিরে বসন্ত উৎসবে ,
কিশোর,কিশোরী,তরুণ, তরুণী সেখানে জুটেছে সবে ,
বঙ্কিম সেথা এলো পায়ে পায়ে,
ছুঁড়লো সিঁদুর ডানে আর বাঁয়ে,
এক কিশোরীর সীমন্ত পরে পড়লো সিঁদুর আহবে,
"কি হলো কি হলো"সবে ছুটে এলো চিৎকারে কলরবে।।

হৈ হৈ রব/সকলে সরব/লোকজন ছুটে এলো,
বঙ্কিম তার সকল অঙ্গে কিল,চড়,ঘুসি খেলো,
কাতরে বললো," খেলেছি তো রং,
ভুল হয়ে গেছে, sorry এটা wrong,
ক্ষমা করে দিন আর মেরেন না,প্রাণ যে আমার গেলো 
শোনে না তো কেউ যেন সবে ফেউ আরো আরো ওরা এলো।।

সকলে বললো,"পাপ করেছিস,ক্ষমা নাই সেই পাপে ,
শুনে বঙ্কিম ভয়ে দিশাহারা থর থর করে কাঁপে ,
উলু উলু রবে শঙ্খ ধ্বনিতে,
বিয়ের মন্ত্র পড়ে পুরোহিতে,
একটি wrong--এর কারণে জুটলো বিয়ের এমন চাপ এ,
বিয়ের  ফাঁস টা পরতেই হলো লোকেদের এই দাপে ।।

 সীমন্ত  :   সিঁথি, কেশ বীথি,মাথা

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

0 Comments