জ্বলদর্চি

অশোক মহান্তীর কবিতা : জীবন ভাঙা পথে ঈশ্বরের গান -১/ দিলীপ মহান্তী

অশোক মহান্তীর কবিতা : জীবন ভাঙা পথে ঈশ্বরের গান 

দিলীপ মহান্তী

              । ১ ।

'বাঁকুড়ার গ্রামে প্রতিদিন যে রোদ ওঠে, প্রতিদিন যে সব পাতারা ঝরে যায়, প্রতিদিন যে সব শালিখ পাখিরা ঘাসের বীজ খুঁটে খেতে মাটিতে নেমে আসে তাদের সকলের ভেতর একটি বালক রোজ সকালবেলা দাঁত মাজতে-মাজতে শীর্ণ খাল পাড়ে এসে এক মুহূর্ত থেমে যায়, তারপর আস্তে- আস্তে জলের কাছে গিয়ে ভাবে-- এই জল আর আমি এক। জলের ভেতর তার যে ছায়া পড়ে, সেই ছায়া আর সূর্যের মধ্যে একটি গোপন- আত্মীয়তা অনুভব করে সে, তারপর বিষণ্ণ শালিখ পাখির বিমর্ষ রোমের ভেতর সে শুনতে পায় ঝরে- যাওয়া বট পাতার খস্ খস্ শব্দ। এই লাল- কাঁকরের গ্রামদেশেও কী কোনদিন ঈশ্বর এসেছিলেন, ওই লালমাটির পথ যেখানে শেষ হয়ে যায় পাহাড়ের কোলে, যেখানে পাথরে জল ফোটে, সেই শুশুনিয়া পাহাড়েও কী ঈশ্বরের আবির্ভাব সম্ভব, এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে- ভাবতেই তার পাঠশালার সময় বয়ে যায়। হাঁটু পর্যন্ত ধুলো পায়ে একটা খেজুর পাতার চাটাইয়ের ওপর ধারাপাত মুখস্থ করছে বালক, মুখস্থ করছে-- আর ভুল হয়ে যাচ্ছে। ওই কোথায় গাছের পাতা ঝরে পড়লো, ওই কোথায় জলের ধারে বক দাঁড়িয়ে আছে, ওই কোথায় সূর্যের আলোয় ছায়া পড়েছে তালগাছের, সেদিকেই তাকিয়ে থাকে সে। মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে যাচ্ছে বার বার, সে বুঝতে পারেনা। নামতা- পড়া শেষ হলে, একে- একে সবাই ঘরে ফিরে যায়, পাঠশালা বন্ধ হয়, কিন্তু পাতা ঝরতেই থাকে সমানে, হাজার- হাজার পাতা, লক্ষ- লক্ষ পাতা উড়তে থাকে বাতাসে।

ওই যে রোদের ছায়া, ওই যে মাটির উত্তাপ, ওই যে জলের ভেতর নিজের প্রতিবিম্ব, ওই যে ধারাপাত, ওই যে পাহাড়, পাহাড়ের মধ্যে দেবতা, তা কি স্পষ্ট হয়ে উঠবে না কোনদিন? সে জলে ঢিল ছোঁড়ে, জল কাঁপতে কাঁপতে পাখনায় ভর করে তীর অব্দি পৌঁছে যায়।
 সে রোদের মধ্যে দাঁড়ায়, রোদ আলিঙ্গন করে তাকে, সে মাটির দিকে তাকায়-- মাটি তাকে আত্মস্বরূপের কথা বলে। একদিন গভীর রাতে সে স্বপ্ন দ‍্যাখে: অনেক উঁচু একটা পাহাড়, সেই পাহাড়ের মাথায় একটা গাছ, সে তার ডালপালা মেলে আকাশকে ছুঁতে চাইছে‌। প্লেন উড়ে যাচ্ছে আকাশে, সীমান্তে সৈন্য- সমাবেশ হচ্ছে, অগণিত নিরন্ন মানুষের মিছিল বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়, তারা চিৎকার করে- করে বলছে : 'আমরা যুদ্ধ চাইনা। আমরা অন্ন চাই।' তবু দুমদাম ভেঙে পড়ছে অট্টালিকা, কুঁড়েঘরে আগুন জ্বলে উঠছে, পোড়া মানুষ- মাংসের গন্ধে ভারি হয়ে আসছে পৃথিবী‌। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় তার। সে ভাবে, এই একটা সময়-- যখন আর চুপচাপ বসে থাকা চলে না। ক্ষুধিতের দীর্ঘ মিছিল পেরিয়ে, ধর্মের যুগ- সঞ্চিত অবসাদ ও জড়তা পেরিয়ে, বিজ্ঞানের দম্ভ, আর কবিতার কল্পলোক পেরিয়ে সে হাত ধরে মানুষের।

 মানুষের হাতে- হাত- রেখে শিউরে ওঠে ওই বালক। অমৃতের মতো এই মানুষ, কত জল, কত ঝঞ্ঝা, কত ভূমিকম্প, কত অগ্নুৎপাত পেরিয়ে, ধ্বংস হতে- হতে বেড়ে উঠেছে সে। ভয়ের ভেতর ভগবান খুঁজতে খুঁজতে, আরও অনন্ত ভয় জড়িয়ে ধরেছে তাকে। ক্ষুধায়- দৈন‍্যে- পরাধীনতায়, দাসত্বে- ত্রাসে- বঞ্চনায় ছোটো হতে- হতে সে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে দুরপনেয় লজ্জায়। আত্মস্বরূপের কথা মনে পড়ে যায় বালকের। সেই আত্মস্বরূপ-- যে বিপদকে ভয় করে না কখনও। যে কখনও কোনো অন‍্যায় এবং অসত‍্যের কাছে নতিস্বীকার করে না, যার জীবনের কোথাও কোনো অন্ধকার নেই, শুধু এক অমলিন বাল‍্যকাল আছে, সমস্ত জীবন ধরে এক অমলিন বাল‍্যকাল, যা ঈশ্বরের মতোই মহৎ।'

এটি অশোক মহান্তীর অপ্রকাশিত লেখা। শিরোনাম: 'একটি বালকের আত্মকথা'। তাঁর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে আমার সম্পাদিত 'মনন' পত্রিকার জন্য একগুচ্ছ কবিতার সঙ্গে এই অসাধারণ লেখাটিও পাঠিয়েছিলেন। সেই সংখ‍্যায় তাঁর একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। এই লেখাটি এবং আরও কিছু কবিতা পরের সংখ্যায় প্রকাশ করবো বলে রেখে দিয়েছিলাম। তারপরই তাঁর আকস্মিক মৃত্যু। আমার পৃথিবী ওলোট পালোট। পরে তাঁকে নিয়ে একটি স্মরণ সংখ্যা করেছিলাম কিন্তু এই লেখাটি এবং কয়েকটি কবিতা যে কোনো কারণেই হোক ছাপা হয়নি। হয়তো অনবধান বশতই। তারপর পত্রিকা আর প্রকাশিত হয়নি। প্রায় কুড়ি বছর এই লেখা সযত্নে আমার কাছে রাখা আছে গোপন কথার মতো। আজ পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটা সুযোগ এল। আমার মতে, প্রত‍্যেক পাঠকের এই লেখাটি পড়া উচিত। এটা না পড়লে কবি অশোক মহান্তীকে জানা অনেকটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যাঁরা অশোক মহান্তীকে দেখেন নি, জানেন না তাঁর জন্মস্থানের পরিচয়, তাঁদের সামনে একটি তাপস বালকের ছবি ভেসে উঠবে। যে ক্রমশ হয়ে উঠবে ঋষিপ্রতিম।

আমি মনে করি, কোনো কবির কবিতাকে ঠিক মতো বুঝতে হলে, নিবিড়ভাবে কবিতার ভেতরে ঢুকতে গেলে সেই কবির জীবন ও জীবন যাপন প্রণালীও ভালো ভাবে জানা একান্ত দরকার। তাঁর কথা বলা, চোখের ভাষা,হাঁটা চলা, মুদ্রা দোষ, সামাজিক সম্পর্ক, একাকীত্ব, জীবিকা, ভালো লাগা- মন্দ লাগা ইত্যাদি ব‍্যক্তিত্বের টুকরো টুকরো অনুভবের ধ‍্যানমগ্নতার বিষয়ও লক্ষ করা দরকার। সেই কবির ব‍্যক্তিগত পছন্দ- অপছন্দের বিষয় গুলি, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বা তুচ্ছতম ঘটনাগুলিও জানা দরকার। কারণ তিনি যখন কবিতা লেখেন তখন তাঁর ব‍্যবহৃত শব্দ, উপমা ও চিত্রকল্প জীবন থেকেই উঠে আসে। আর জীবন জানা থাকলে শব্দের তাৎপর্য বুঝতে সাহায্য করে। তাঁর ব‍্যবহৃত একটি শব্দে বা পংক্তিতে জড়িয়ে থাকে তাঁর ব‍্যক্তিগত জীবনের কত স্মৃতি, কত ঘটনা, কত প্রাপ্তি, কত আলো, কত অন্ধকার, কত আনন্দ, কত বিষাদ! কত নিঃসঙ্গ ও নিবিড় সাহচর্যের ঘটনার আন্তরিক অনুবাদ হয়ে যায় শব্দের সঠিক ব‍্যবহারে। সেই জন্য কবিকে যাঁরা  খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাঁদের দেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কবির কবিতা পড়ে সেই কবিকে ঠিক মতো বোঝা যাবে না।   যদিও এর বিপরীতে যুক্তি গ্রাহ‍্য মতবাদও আছে। এখন সেই বিতর্কে প্রবেশ করছি না‌।

কবি অশোক মহান্তীকে ঠিক মতো বুঝতে গেলে ত়াঁর জীবন জানাও জরুরি। '৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি' কবিতা গ্রন্থের বিভাব কবিতাতে জীবন থেকে উঠে আসা কিছু পংক্তি, তিনি এভাবেই সাজিয়েছেন: 
' আমি কবি সাজিনি।
বলতে পারেন-- আমি কবি হয়েই জন্মেছি।

আমি সাধু সাজিনি।
বলতে পারেন-- সাধুতাই আমার চরিত্রের স্বভাব।

আমি প্রেমিক সাজিনি।
বলতে পারেন-- প্রেমই আমার মজ্জাগত সংস্কার।

শুধু আমার মধ‍্যে যা মিথ্যা, যা অর্ধসত্য যা আত্মঘাতী
এই ৪৮ বছরের জীবনে সে টুকুই আমি অর্জন করেছি
                অনেক চেষ্টায় ।'

তাঁর জন্মস্থান বাঁকুড়া জেলার দুধ‍্যা গ্রামে। তিনি ছিলেন আর পাঁচ জনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক ছোটবেলা  থেকেই তাঁর প্রতি আমার গভীর কৌতূহল ছিল। যেহেতু ঝাড়গ্রামে থাকতেন এবং অনেক দিন পর পর আমাদের গ্রামের বাড়িতে আসতেন সেই জন্য টান বা আগ্রহ ছিল প্রবল‌ । তার ওপর লম্বা চুল ও দাড়ি নিয়ে সাধু সন্ন‍্যাসীর মতো চেহারা। আমার ঠাকুরদারা পাঁচ ভাই ছিলেন। তিনি ছিলেন সবথেকে বড় ভাইয়ের সবথেকে বড় নাতি। আমি মেজ ভাইয়ের একমাত্র নাতি। আমরা যারা নাতি, এই নাতিদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড়। পরিবারের বড়রা তাঁকে কেউ বলতেন সন্ন‍্যাসীভাই কেউ বলতেন সাধুবাবা কেউ বা সন্ন‍্যাসীঠাকু্র। সাধু সন্ন্যাসীদের মতোই ছিল তাঁর জীবন যাপন। কবিতার মতো 
ছন্দে মিলে তিনি জীবনটাকেও নিয়মের মধ্যে বেঁধেছিলেন। কবিতা ছিল তাঁর জীবন থেকে উঠে আসা সুর।

রিলকে সম্বন্ধে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন: '' এমন এক কবি, যিনি সর্বতোভাবে কবি হতে চেয়েছিলেন। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে কবি। দৈনন্দিনতম জীবনের অর্থহীনতম মুহূর্তেও।... যাঁর বিষয়ে আমাদের প্রায় সন্দেহ হয় যে তিনি সাধারণ অর্থে 'বেঁচে থাকতে ' কখনো চাননি, চেয়েছিলেন শুধু নিজেকে কবিতার একটি বাহন করে তুলতে-- এমন এক ধনুর্গুণ, যা লক্ষ্যভেধের জন্য সর্বদা টান হয়ে আছে, সর্বদা প্রস্তুত।" অশোক মহান্তীও এমনি একজন কবি যিনি সর্বতোভাবে কবি হতে চেয়েছিলেন। তাঁর কথায় তিনি কবি হয়েই জন্মেছেন। তিনি চরিত্রের দিক থেকে সৎ এবং তাঁর মজ্জার ভেতরে আছে প্রেম। এগুলোই তাঁর ভেতরের বৈশিষ্ট্য বাকি সমস্ত কিছু অর্জন করেছেন বহু চেষ্টায়‌। অঙ্গীকার করেছেন কিছু লেখার। কিছু কিছু কথা শোনাতে এসেছেন যা আগে শোনেনি কেউ:

 ' শোনো, জীবন- বিষয়ে কিছু কথা লিখতে চাই
শোনো, মৃত্যুর বিষয়ে কিছু কথা লিখতে চাই
শোনো, প্রেম- ভালোবাসা আর বিশ্বাস বিষয়ে কিছু লিখে রাখতে চাই।

যন্ত্রের ঘর্ঘর শোনো
হৃদয়ে যে অবিশ্বাস দ্বিতীয় সঙ্কেত দিয়ে গ‍্যাছে তার শব্দ শোনো।
আর শোনো, কোলাহল ছাপিয়ে আকাশে এক নিদারুণ ব‍্যস্ত নির্জনতা
কীভাবে উদ্বেল হলো।
শোনো, গান।
বসন্তের রাত্রির ওপারে শোনো ঝড়ের সঙ্কেত।

আমি যেভাবে এসেছি ঠিক সেভাবে যাবো না।
মাটির কুটিরে একা নিষ্কান্ত ভোরের আলো ছড়াবার আগে
আমার প্রথম দেখা এই সূর্য আজ ক্রমে বাস্তব কঠিন।
আজ ক্রমে আমাকে বেঁধেছে দ্বন্দ্ব, দুরাশয়, নিন্দাখ‍্যাতিঅপমানস্তব
আজকে কাঁটার মত ভোরের পৃথিবী।

শোনো, আমি শোনাতে এসেছি সেই কথা
যে কথা শোনেনি কেউ। যে- কথা আড়াল হয় না, অবিশ্রান্ত ভাসে শুধু
রোদে, অন্ধকারে, প্রচ্ছায়ায়।
শোনো, সব পেয়েছির দেশে, কবিতাই পাইনি এখনো।
(আত্মকথা: দ্বিতীয় সঙ্কেত)

তাঁর কবিতার একেবারে সূচনা পর্ব থেকেই জীবন ও অস্তিত্বের বিপরীতধর্মী কিছু বৈশিষ্ট্যের কিছু দ্বন্দ্বের মধ‍্যবর্তী শূন্যতায় জমে থাকা প্রগাঢ় সূক্ষ্ম সংবেদনশীল অনুভূতিগুলি নিবিড় মমতায় আপন করে এক নতুন ভুবনের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। সামঞ্জস্য বিধানের একাগ্রতায় তাঁর ভাষা পরিশীলিত ও উজ্জ্বল হয়েছে। সুখ- দুঃখ, আনন্দ - বেদনা, সঙ্ঘবদ্ধতা - বিচ্ছিন্নতা, প্রেম - অপ্রেম, বিশ্বাস - অবিশ্বাস, তৃপ্তি - অতৃপ্তি, এই সমস্ত বিপরীত বৈশিষ্ট্যকে গ্রহণ করে পৌঁছাতে চেয়েছেন এক মহাজাগতিক অপার রহস‍্যে। ব্রহ্মের বোধিতে। হয়তো বা জীবনানন্দ কথিত মহাবিশ্বলোকের ইশারায় দুলে ওঠে তাঁর পংক্তি মালা। এবং এই পর্ব থেকেই প্রকৃতি ভাবনার সঙ্গে ঈশ্বর ভাবনাও একই স্রোতে বয়ে চলেছিল। সব বড় কবিই এই বৈপরীত্যকে অবলম্বন করেই সমগ্ৰতায় পৌঁছাতে চান। তিনিও চেয়েছেন।
আর একটি কথা, এই সূচনা পর্ব থেকেই তাঁর কবিতায় যেমন চির আর্ত ব‍্যক্তি জীবনের স্বগত সংলাপ আছে, তেমনি আছে দেশকাল মানুষ আর এক রূপময় প্রকৃতি। এই প্রকৃতির বেশিরভাগটাই নির্মিত হয়েছে তাঁর জন্মভূমি গ্রামকে কেন্দ্র করে। এক বালকের চোখে যে প্রকৃতি মায়াকাজল পরিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন প্রবহমান যুগ যুগ ধরে তেমনি পিতামহের জীবনের স্রোতও বইছে তাঁর মধ্যে। এরকম কবিতা তাঁর সবকটি কবিতার বইয়ে ছড়িয়ে আছে:

' তোমাকে কবিতা করতে বুকের গোপনে স্মৃতি নামে যে- মাঠটি
বহুকাল ধুলায় লাঞ্ছিত, তাতে শব্দসেচ করে যাচ্ছি আজও।
কীভাবে বোঝাবো, তুমি না থেকেও রয়ে যাচ্ছো অন্তত যখন
খেজুর বাদাম আর ভুঁড়ুরের গন্ধ আনবে জ্যৈষ্ঠের প্রবাহ, আর
তোমার নারীর হাত আমার নারীর হাত হয়ে গ্রীষ্মের দুপুরে আনবে
ভাতঘুম, পাখার বাতাস, আর এই কবিতার শব্দে, মুদ্রিত অক্ষরে
অবিশ্বাস্য হয়ে থাকবে হাতের  কোমল, তাঁর অন্ধ হয়ে আসা চোখ।
এতদিন চিনিয়েছো গাছ, পাখি, বস্তুপৃথিবীর রঙ--
বলোনি নারীর সঙ্গে কী আগুন- খেলা তুমি খেলেছো গোপনে।
তবু, আমরা তোমার পাশে তোমার নারীকে দেখে অকস্মাৎ চিনে গেছি
আমাদের নিজস্ব নারীকে, জেনেছি আগুন- খেলা তার সঙ্গে‌।
        আজ আরও মৃত্যুকে চিনিয়ে দিলে।
আজ আর আঙুল বাড়িয়ে নয়, সর্বাঙ্গ বাড়িয়ে, এমনকি সর্বাঙ্গ গোপন করে
চিনিয়েছো আমাদেরও ঠিক অবস্থান, তোমার নিজের চোখে
আমাদের আরেক পৃথিবী।
       পিতামহ, আর কিছু রাখোনি তো, বাকি?'
( পিতামহ: মাটির মন)

তিনি চেতনায় ও অবচেতনায় নিজের দৃষ্টিকোণকে অর্থাৎ বলা ভালো জীবনদর্শনকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে অব‍্যর্থ শব্দের ব‍্যঞ্জনার, উপমার,  চিত্রকল্পের, মিথের আশ্রয় নেন। তাঁর আনন্দ যন্ত্রণা, ভয় নির্ভয়, চিন্তা দুশ্চিন্তা, ন‍্যায় অন‍্যায়, আশা নিরাশা, সবই শিল্পে মূর্ত হয় উপরোক্ত মাধ্যমে। এসবের মধ্যে দিয়েই   তিনি তাঁর ব‍্যক্তি জীবনের ইতিহাসে, পরিবার ও সমাজের শিকড়ে পৌঁছাতে সক্ষম হন।
এই ভাবে নিজের কথা, ঘরের কথা, পিতামহের কথা, জন্মভূমির কথা বুকের ভেতর রেখে শব্দকে অবলম্বন করে, শব্দকে তীর করে শুরু হল এক আত্মমগ্ন কবির, এক প্রবল আত্মসচেতন কবির, যিনি কখনোই আত্মহারা নন, তাঁর নিবিড় পথচলা...
                        (  ক্রমশ )
(প্রতি বৃহস্পতিবার প্রকাশ পাবে এই ধারাবাহিক) 

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments