জ্বলদর্চি

দক্ষিণ আমেরিকা (ব্রাজিল) -এর লোকগল্প /চিন্ময় দাশ

দূরদেশের লোকগল্প—দক্ষিণ আমেরিকা (ব্রাজিল)


চিন্ময় দাশ 

ব্যাঙ বাবাজীর বিদ্ঘুটে বপু 


(এবারের গল্প ব্যাঙকে নিয়ে। “ ও সোনা ব্যাঙ / ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ” – আমাদের ছোটবেলায় শোনা এই ছড়া কোনও দিন ভুলবার নয়। তবে, এই ‘সোনা’ নামটা কিন্তু আসলে আমাদের, মানে বাঙ্গালীদের দেওয়া নাম। এদের আসল নাম—কোলা ব্যাঙ। 
ব্যাঙকে আমরা মাত্র দুটো ভাগে ভাগ করে বলি—কুনো ব্যাঙ আর কোলা ব্যাঙ। কিন্তু বিজ্ঞানের (হারপেটোলজি) ভাষায় অনেক নাম এদের-- কুনো ব্যাঙ, কোলা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, ধেড়ে ব্যাঙ, গিরগিটি ব্যাঙ, হলুদ ব্যাঙ, ডারউইন ব্যাঙ ইত্যাদি, ইত্যাদি,ইত্যাদি।
নামের শেষ নাই এদের। আসলে হয়েছে কী, বিধাতার হাতে গড়া জীবদের মধ্যে ব্যাঙই একমাত্র প্রাণী, যার হাজারো বৈশিষ্ট আছে। দেহের গড়ন বলো বা গায়ের চামড়ায় রঙের কারিকুরি—  বৈচিত্র অন্য কারও নাই।
আজকের গল্পটা এক জাতির কুনোব্যাঙের গায়ের চামড়া নিয়েই। দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে উত্তর এলাকার দেশগুলোতে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত আছে গল্পটি। আমাদের গল্পটা ব্রাজিল থেকে নেওয়া।)

কুনো ব্যাঙ দেখতে কতটা কদাকার আমরা সবাই জানি। কিন্তু আগেকার দিনে কুনো ব্যাঙের শরীর দেখতে এমন কুশ্রী ছিল না। তারাও ছিল কোলা ব্যাঙের মতোই। পিঠের চামড়া কী মসৃণ। কী উজ্বল আর মন মাতানো ঝকঝকে রঙ। কোলা ব্যাঙের মতো লম্বা লাফও দিতে পারত তারা। একবার একটা দুর্ঘটনায় সব গিয়েছে তাদের। গায়ের চামড়ার রঙ, আর পায়ের লম্বা লাফ—সব গিয়েছে চিরকালের মত। ঘটনাটা শুনে নেওয়া যাক। 
যুগ যুগ আগের কথা। তখন যেমন ছিল কুনো ব্যাঙের চামড়ার উজ্বল রঙ, তেমনি সে ছিল চঞ্চল ভবঘুরে। নিজের বাসায় দেখাই মিলত না তার। ভোজসভা বলো, বা কোনও জমায়েত—সবখানেতেই সে হাজির। কত দূরের পথ, কত সময় লাগবে সেখানে পৌঁছোতে, সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতই না সে।
তখন শীতকাল। একবার ব্যাঙের কাছে নিমন্ত্রন এলো মেঘের দেশ থেকে। বড়সড় একটা ভোজসভার আয়োজন করা হয়েছে, অবশ্যই আসা চাই তোমার। 
বড় মাপের ভোজসভা। তাও কি না একেবারে মেঘের দেশে! ব্যাঙ তো একেবারে আহ্লাদে আটখানা। মনের আনন্দে গান জুড়ে দিয়েছে গলা ছেড়ে। 
ব্যাঙের বন্ধু ছিল এক গিরগিটি। হোলই বা বন্ধু, সকাল থেকে ব্যাঙের একঘেয়ে চেঁচানি শুনে শুনে, তার মেজাজ গিয়েছে বিগড়ে। সে গাছ থেমে নেমে এসে বলল—ব্যাপারটা কী বলো তো? সকাল থেকে চেঁচিয়ে গোটা পাড়া ঝালাপালা করে দিচ্ছো। হয়েছেটা কী? 
খুশীতে মুখ-চোখ আলো করে, ব্যাঙ বলল—নেমন্তন্ন পেয়েছি, বন্ধু। খুব বড় এক ভোজবাড়ির নেমন্তন্ন। আনন্দ হবে না, বলো? 
--সেই আনন্দে গলা ছেড়ে গান জুড়েছ সকাল থেকে? 
--হ্যাঁগো। ভারি মজা হবে কাল সেখানে। 
--সেখানে মানে? ভোজসভাটা হচ্ছে কোথায়? 
--আমাদের এই এঁদো বন-পাহাড়ে নয়, বুঝেছো? কালকের ভোজসভা সেই অনেক দূরের মেঘেদের দেশে। সূর্যের মিষ্টি রোদে ঝলমল করে সেই দেশ। কী মিষ্টি হাওয়া বয়। ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায় সুন্দরী মেঘপরীর দল।  
গিরগিটি তো হেসে বাঁচে না। হাসি থামিয়ে বলল— সব শুনলাম। বুঝলামও সব। কিন্তু আগে গান থামাও। এখন ভাবতে বসো, পৌঁছবে কী করে ভোজসভায়? তোমার চলাফেরা তো ঐ থপথপ করে।
কথা শুনে, ব্যাঙ তো অবাক—কেন, বন্ধু? আমি কি লাফ দিতে জানি না? 
--জানবো না কেন? ভালোই জানি। কিন্তু লাফের কি আর তোমার এতই মুরোদ, যে এক লাফে মেঘের দেশে পৌঁছে যাবে! যাই বলো ভাই, অতোটা জোর তোমার পায়ে নেই।
শুনে, চিড়িক করে উঠলো ব্যাঙের মাথায়। সত্যিই তো? এটা তো ভাবা হয়নি। কিন্তু মুখে এসব উচ্চারণও করা যাবে না। বন্ধুর কাছে মান থাকবে না আর তাহলে।
ব্যাঙ বলল—ভাবনাটা তোমার নয়, বন্ধু। আমার। কাল বরং দেখে নিও, যেতে পারি কি না। 
মুখে বলল বটে, রাজ্যের দুঃশ্চিন্তা এসে ভীড় করছে মাথায়। সত্যিই তো। এক লাফে তো পৌঁছানো যাবে না। কী করা যায়। কতো দূরের পথ মেঘের দেশ! কী করে পৌঁছানো যাবে সেখানে। 
কিন্তু দমে গেলে তো চলবে না। কিছু একটা উপায় করতেই হবে। ভাবতে ভাবতে একটা উপায় এসে গেল মাথায়। সাথে সাথে মনটাও নেচে উঠল আনন্দে। 
ব্যাঙের বাসা থেকে খানিক দূরে থাকে এক কালো বাজপাখি। কোনও পাখি তো দূরের কথা, বনের অন্য প্রাণীরাও কেউ পছন্দ করে না কালোবাজকে। কেউ মেশে না তার সাথে। তাই, বন-পাহাড়ের একটেরে বাসা বানিয়ে থাকে বেচারা। আর, বেহালা বাজায়। 
হ্যাঁ, বেহালা বাজায় পাখিটা। পাড়া-পড়শি কেউ মেলামেশা করে না তার সাথে। দুটো-একটা মুখের কথাও বলে না কেউ। মনে মনে ভারি মুষড়ে থাকে পাখিটা। সেজন্যই তার বেহালা বাজানো। যতক্ষণ চক্কর কাটে আকাশে, ততক্ষণ কোন ভাবনা নাই। বাসায় ফিরলেই আর সময় কাটে না। কী আর করে? বেহালা জোগাড় করেছে একটা। সেটা বাজিয়েই সময় কেটে যায় বেশ। 
ব্যাঙ এসে হাজির হোল বাজের বাসায়। পাখিটা তখন বাইরে বসে বেহালা বাজাচ্ছে। 
--সুপ্রভাত, বন্ধু বাজ। ভালো আছো আশাকরি। 
--আমার আবার ভালো থাকা! একলাটি থাকি। তার আর ভালোই বা কী, মন্দই বা কী? বাজনা বাজিয়েই সময় কেটে যায়।
তোমার সময় কেমন কাটে জানি না। তবে বন্ধু, একটা কথা বলি তোমাকে। বাজনার হাতটি তোমার ভারি ভালো। কী যাদু যে আছে তোমার হাতে, ভেবে পাই না। কেমন করে এমন মিষ্টি সুর তোল তুমি? কতো দিন তো এমন হয়, তোমার সুরের যাদুতে খাওয়া-দাওয়া ভুলে ঘুমিয়েই পড়ি আমি।
বাজকে আর পায় কে? আনন্দে বুক ফেটে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে তার। কেউ তার সাথে কথাটি বলে না। ঘরে আসা তো দূরের কথা। এই ব্যাঙই প্রথম, যে তার ঘরে এসে হাজির হয়েছে। তার উপর নিজের বাজনার প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে। 
বাজ বলল—তা ভাই, আজ হঠাত কী মনে করে? 
ব্যাঙ বল্ল—জানো নিশচয় মেঘের দেশে ভোজের আয়োজন হয়েছে কাল। মনে ভাবলাম, হোলই বা বনের পাখি, কিন্তু এমন যার বাজনার হাত, নিশ্চয়ই ডাক পড়েছে কালকের ভোজসভায়। 
বাজ খুশির গলায় বলল—হ্যাঁ গো, ডাক পেয়েছি । যাবো কালকের সভায়। তুমিও যাচ্ছো নাকি?
--সেজন্যেই তো আসা। একা একা কি আর ভালো লাগে কোথাও যেতে? 
--একা কেন যাবে গো? দুজনে একসাথে যাওয়া যাবে। তা, কখন বেরুতে চাও? 
--যাবোই যখন একটু আগে-ভাগে যাওয়াই তো ভালো নয় কি? বিকেলেই বেরিয়ে পড়া যাবে। ব্যাঙ বলল—তাহলে ঐ কথাই রইল। আমার বাসায় চলে এসো। আমি তৈরি হয়েই থাকব। দেখো, তাড়াহুড়োয় বেহালা নিতে ভুলো না যেন। 
সব ব্যবস্থা সেরে, ব্যাঙ তার ডেরায় ফিরে এল। 
বিকেল না হতেই বাজ এসে হাজির হয়ে গেল ব্যাঙের বাসায়। হাঁক দিয়ে বলল—কী বন্ধু, তৈরি তো? 
ব্যাঙকে দেখা গেল না। ভেতর থেকে বলল—এই হোল বলে। বেহালাটা দোরগোড়ায় রেখে, ভেতরে এসে বসো এক্টুখানি। 
কথামত বেহালাটা দোরগোড়ায় রেখে, ভিতরে ঢুকে এল বাজ। হয়েছে কী, সেখানেই কপাটের আড়ালে লুকিয়ে বসেছিল ব্যাঙ। যেই না বাজ চৌকাট পার হয়েছে, টুক করে ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে বেহালার খোলের ভিতরে ঢুকে পড়ল পুঁচকেটা। বাজ টেরই পেল না কিছু। 
কতক্ষণ বসে রইল বাজ। ব্যাঙের তো দেখাই নাই। ডাকলও কয়েক বার। সাড়া নাই কোন। ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না বাজের। কতক্ষণ আর বসে থাকা যায়? বিরক্ত হয়ে একসময় উঠে পড়ল সে। বেহালা তুলে নিয়ে রওনা দিল মেঘের দেশে। 
বেশ খানিকটা দেরীতেই ভোজসভায় হাজির হোল বাজ। আরও অনেক পাখি এসেছে—হামিংবার্ড, রাতচরা, পায়রা, ঈগল, শকুন, টিয়া, এলবাট্রস, পেঙ্গুইন, মাণিকজোড়, পেলিক্যান—কে নেই। 
একটা চিল এগিয়ে এলো সামনে। আকাশের দখল নিয়ে বাজদের সাথে চিরকালের বিবাদ চিলেদের। চিলকে তার দিকে
এগোতে দেখে, চোখ পিটপিট করত লাগল বাজ। কীরে বাবা, এখানেও ঝগড়া শুরু করবে না কি?
চিল এসে বলল—কী ভায়া, ঘুমিয়ে পড়েছিলে না কি? 
তার মস্করা শুনে হেসে উঠল সবাই। একটা উটপাখি ছিল ভীড়ের পিছনে। চেহারার জন্য সবাই বেশ মান্য করে তাকে। পাখিটা বাজকে বলল—ছাড়ো তো এসব। বেহালা রেখে, নাচ-গানের আসরে চলো। 
বেহালা রেখে এগোতে যাবে, নাছোড়বান্দা চিল বলল—সত্যি করে বলোই না, দেরী করলে কেন? 
--হয়েছে কী, পাড়ার একটা কুনো ব্যাঙ সাথে আসবে বলেছিল। তার জন্য কতক্ষণ বসে রইলাম। টিকির দেখাও নাই তার। এদিকে আমার নিজেরই দেরী হয়ে গেল।
কথা শোনাবার এমন মওকা ছাড়া যায় না। চিল বলে উঠল—আচ্ছা বেকুব তো তুমি? তুমি গিয়েছে একটা ব্যাঙের সাথে ভাব করতে? তাছাড়া, এটা তোমার মাথায় এলো না, একটা পুঁচকে ব্যাঙ আকাশের এই মেঘের দেশে আসবে কী করে? 
অনেক হজম করেছে বাজ। সে এবার বলে উঠল, তোমরা কি সেটা জানতে না? তাহলে বেকুবের মতো তাকে নেমন্তন্ন পাঠিয়েছ কেন?
এবার এগিয়ে এল একটা গাঙচিল—সে তো স্রেফ ব্যাঙের সাথে একটু মস্করা করার জন্য।   
এই কথাবার্তার ফাঁকে, ব্যাঙ তো বেরিয়ে গিয়েছে বেহালা থেকে। সে ভীড়ের ভিতর থেকে বলে উঠল— কে যে কার সাথে মস্করা করবে এবার, বিধাতাই বলে দেবেন। 
সবাই চমকে গেল তার কথায়। সত্যিই তো, ব্যাঙটা এলো কী করে এত দূরের পথ। কথাটিও নাই কারও মুখে। 
ব্যাঙ এবার বাজকে বলল-- এভাবে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো কাজের কথা নয়, বন্ধু। আমিই বরং তোমার জন্য অপেক্ষা করে করে, শেষে একলাই চলে এসেছি। 
চিল ছাড়বার পাত্র নয়। সে বলে উঠল—ছিঃ ছিঃ ভায়া। নিজের দোষ ঢাকতে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছো? যাই বলো তুমি, মিছে কথা বলাটা ঠিক হয়নি তোমার। 
--ঠিকই তো, ঠিকই বলেছ তুমি। সকলেই সায় দিচ্ছে চিলের কথায়। 
মেজাজ বিগড়ে গেল বাজের। মিছে কথা বলল হতভাগা ব্যাঙটা। অপদস্থ হতে হোল তাকে। রাগে গরগর করতে করতে ভোজসভা ছেড়ে বেরিয়ে বাড়ির পথ ধরল বাজ। সাধের বেহালার কথাটা মাথাতেই রইল না তার। 
উটপাখি ব্যাঙকে জিজ্ঞেস করল—সত্যি করে বলো তো, তুমি এলে কী করে এতটা পথ? 
--সে তুমি তাদের জিজ্ঞেস করো বরং, যারা ব্যাঙের সাথে মস্করা করতে চাইছিল। তোমাদের মতো ডানা নাই আমার। চেহারাও নাই বড়সড়। দেখতেও সুন্দরও না হয়ত তোমাদের অনেকের চেয়ে। তাই বলে, কাউকে উপহাস করি না কখনও। 
কথা না বাড়িয়ে ভোজ শুরু হোল। চব্য চোষ্য পানীয় সবই পেট পুরে খেল ব্যাঙ। যেন জন্মের খাওয়া খেয়ে নিচ্ছে। চটপট কাজটা সেরে ফেলল। এবার সরে পড়তে হবে এখান থেকে। 
বাজ যে বেহালাটা ফেলে গিয়েছে, ব্যাঙের চোখ এড়ায়নি। এখন সে অন্যদের চোখ এড়িয়ে, আবার বেহালার ভিতরে সেঁধিয়ে বসে রইল। কেউ নিশ্চয় বেহালাটা তুলে নিয়ে যাবে, এই আশায়। 
বসে আছে তো আছেই। এদিকে ভোজের আসরও শেষ হোল এক সময়। বেহালাটা দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। পড়ে আছে যেমনকে তেমন। ভিতরে বসে থেকে থেকে ব্যাঙ অধৈর্য হয়ে উঠছে। 
একেবারে শেষে বের হোল একটা শিকরে বাজ। তার চোখ গেল বেহালাটার দিকে। চোখ কুঁচকে বলল—আরে, এটা তো কালোবাজের বেহালা। রাগের মাথায় ভুলেই গিয়েছে হতভাগা। এখানে পড়ে থেকে কী হবে? নিয়েই যাই বরং। ফেরত দিয়ে দেব। 
বেহালা নিয়ে আকাশে ডানা মেলে দিল শিকরে বাজ। ভরা পেট নিয়ে ভিতরে বসে আছে ব্যাঙ। অনেক খাওয়া-দাওয়া হয়েছে বাজটারও। বেহালাটাও একটু বেশীই ভার লাগছে। উড়তে বেশ কষ্টই হচ্ছে পাখিটার। 
--দূর ছাই। পরের বেগার খাটতে নিজের প্রাণটাই না যায়। দায় পড়েছে আমার পরের মোট বইতে। আর এক মুহূর্তও নয়। বলেই, বেহালাটা ছেড়ে দিল সে।
ভয়ে আঁতকে উঠে ব্যাঙ চেঁচাতে লাগল—হায় হায়, আমার কী হবে? কে আছো, বাঁচাও আমাকে।
ঐ বলতেই যতক্ষণ! মুখের কথা শেষ হয়েছে কি হয়নি। ধপাস করে বেহালাটা পড়ল এসে একগাদা পাথরের উপর। তাই হোল তাতে, যা হবার। বেহালাটা পড়েই একবার ছিটকে উথল উপরপানে, তারপর আবার পড়ে গিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো। তার তলায় চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে পড়ে রইল ব্যাঙ বাবাজী। 
হাড়গোড় কিছু ভাঙ্গল বটে, পিঠের চামড়া ছিঁড়েখুঁড়ে একশা কাণ্ড একেবারে। ওঠা তো দূরের কথা, নড়বার ক্ষমতাটুকুও নাই বেচারার। 
একেবারে নির্জন এলাকা। কাছেপিঠে কেউ নাই কোথাও। চেঁচিয়ে মরে গেলেও, শুনবার কেউ নাই। 
দিন দুই না যেতে, সারা পিঠ জুড়ে ঘা দগদগিয়ে উঠল। সেসব শুকালো যতদিনে, চেহারা একেবারে বদলে গেল ব্যাঙের। সারা পিঠের চামড়া কুঁচকে, কালচে হয়ে, একেবারে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না বেচারা। 
সেই থেকে ব্যাঙের সুরেলা গলা হারিয়ে গিয়েছে কোথায়। পায়েও জোর নাই। লম্বা লাফ দিতে পারে না আগেকার মতো। আর চেহারাখানা যা হয়েছে, সে আর বলবার নয়। 
এই অবস্থা নিয়ে কাউকে মুখ দেখাবে কী করে? সেই থেকে পাথর-নুড়ির খোঁদলে, গাছের গুঁড়ির নীচে, ছোটখাটো কোনও গর্ত পেলে, সেখানে ঢুকে থাকে কুনোব্যাঙ। আর শীত কাল এলে? আবার যদি কেউ নেমন্তন্ন নিয়ে চলে আসে—এই ভাবনায়, কোথায় যে ঘাপটি মেরে ঢুকে বসে থাকে ব্যাঙ, টিকির দেখাও পাওয়া যায় না তাদের।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments