জ্বলদর্চি

লাভ হোস্টেল : রংচটা দেওয়ালে রক্তের ছিটে!/রাকেশ সিংহ দেব


লাভ হোস্টেল : রংচটা দেওয়ালে রক্তের ছিটে!
রাকেশ সিংহ দেব

পরিচালক – শংকর রমন
অভিনয় – বিক্রান্ত মাসে, ববি দেওল, সানিয়া মালহোত্রা, রাজ অর্জুন, অক্ষয় ওবেরয়
মুক্তি - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ZEE5 ওটিটি প্ল্যাটফর্ম

রেটিং - 2/5


পরিবারের অমতে প্রেমের টানে দুই যুবক যুবতীর ঘর ছেড়ে আদরের সংসার পাতা। শত অসুবিধার মধ্যে প্রেমের ছোট্ট দুনিয়া গড়ে তোলা তারপর একদিন পরিবারের সদস্যদের হাতে সেই স্বপ্নের নির্মম পরিনতি। বর্তমান সমাজের ভাষায় আজ বহু আলোচিত 'অনার কিলিং'। বলিউডি মুভির তালিকায় 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' ধরে চলে আসা এই ফর্মুলা এখনও বেশ হিট! এই তালিকায় নবতম সংযোজন পরিচালক শংকর রমনের দ্বিতীয় মুভি 'লাভ হোস্টেল'। পরিচালকের প্রথম ছবি ‘গুরগাঁও’ দেখলে বোঝা যায় পিতৃতন্ত্র এবং পারিবারিক হিংসাকে তিনি আলাদা ভাবে দেখেন না। তাই তার মুভিতে ভায়োলেন্সের প্রভাব পরোক্ষ হলেও সিনেমাটোগ্রাফির আলো আঁধারিতে তার শ্বাসরোধকারী উপস্থিতি টের পাওয়া যায় সর্বক্ষণ। পরিচালকের দ্বিতীয় ছবি ‘লাভ হোস্টেল’ (Love Hostel) -ও রয়েছে পিতৃতন্ত্রের অপ্রতিরোধ‌্য হিংস্র দমননীতি। এখানেও গল্পের প্রেক্ষাপট সেই উত্তর ভারতের হরিয়ানা। 

হরিয়ানার উচ্চ বর্ণের হিন্দু পরিবারের মেয়ে জ‌্যোতি দিলাবর (সানিয়া মালহোত্রা) তার ভিন্নধর্মী প্রেমিক আহমেদ সৌকিন (বিক্রান্ত মাসে)- এর সঙ্গে পালিয়ে বাড়ির অমতে আদালতে বিয়ে করে।  আহমেদ এবং জ্যোতির প্রেম ও কোর্ট ম্যারেজ জ্যোতির ঠাকুমা বিধায়ক কমলা দিলাওয়ারকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে। কমলা অত্যন্ত গোঁড়া ও রক্ষণশীল। তিনি ভীষণভাবে চান জ্যোতিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হোক যাতে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে জ্যোতিকে তিনি খুন করতে পারেন। এদিকে আদালতে নির্দেশে জ্যোতির পরিবারের লোকেদের হাত থেকে বাঁচতে নবদম্পতির আশ্রয় হয় বিশেষ সেফ হোমে। এই সেফ হোম লাভ হোস্টেল নামে কুখ্যাত। এদিকে আহমেদ এবং জ্যোতির গতিবিধিকে নজরে রাখতে কমলা দিলাওয়ার নিজে দাগর নামে একজন হিটম্যানকেও (ববি দেওল) কাজে লাগান।
ছবির শুরুতেই আমরা দেখি ‘দাগর’ (ববি দেওল) নামের এক মধ্যবয়সী ব‌্যক্তি এমনই এক ঘর ছেড়ে পালানো প্রেমিকযুগলকে গাছে ঝুলিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে। এই ‘দাগর’ গোটা এলাকায় এই কাজের জন‌্যই কুখ‌্যাত। সাইকোপ‌্যাথ ‘দাগর’ অবশ‌্য নিজেকে সমাজসেবী বলে বিশ্বাস করে। বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে এমন দম্পতিদের খুঁজে বের করে হত্যার বিষয়ে খুবই উদ্যোগী ববি দেওলের চরিত্রটি। এই মনোভাবের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে অতীতের একটি ঘটনা। চলচ্চিত্রের শেষের মুখে তা জানা যায়।


যারা পরিবারের অমতে পালিয়ে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে, পরিবারের সদস্যদের কোপ থেকে বাঁচাতে কোর্টের নির্দেশেই তাদের ঠাঁই হয় সেফ হোমে। রাষ্ট্রের তৈরি এই ‘সেফ হোম’ পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। সদ্য বিবাহিত জ‌্যোতি এবং আহমেদ সেই সেফ হোমে যে সেফ নয়, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শেষপর্যন্ত কি হবে তাদের? তাদের কপালে কি লেখা রয়েছে দাগরের বুলেট? উত্তর পেতে দেখতে হবে মুভিটি। 

এই সময়ে দাঁড়িয়ে নিঃসন্দেহে সাহসী এবং রাজনৈতিক ছবি ‘লাভ হোস্টেল’। তবে ঘটনাপ্রবাহ খুব দ্রুত হওয়ার কারনে কিছু বিশেষ দৃশ্যও দর্শকদের মনে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারেনা। বেশ কিছু জায়গায় সিনেম‌্যাটিক লাইসেন্স ব‌্যবহার করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করেছেন পরিচালক। ‘দাগর’ যতই কুখ‌্যাত কনট্রাক্ট কিলার হোক না কেন, এইভাবে মুড়ি মুড়কির মতো মানুষ মেরে কী করে দিব‌্যি ঘুরে বেড়ায় সেটা একটা বিশাল প্রশ্ন। ডাগরের চরিত্রে ববি দেওল বেশ মানানসই। বিবেক শাহের সিনেমাটোগ্রাফি প্রশংসনীয়। তবে লাভ হোস্টেলে থাকা অন্যান্য ভিন্ন ধর্মে বা ভিন্ন জাতে বিয়ে করা দম্পতিদের বিষয়ে চিত্রনাট্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু বলার নেই। এক সমকামী জুটিকেও মুভিতে দেখানো হয়েছে, তবে কোনও সাবপ্লটই গভীরে ছাপ ফেলতে পারেনি। প্রয়োজন ছিল আরও নিঁখুত চিত্রনাট্যের। তবে বেশ মারমার কাটকাট রক্তারক্তি মুভি দেখতে চাইলে দেখে ফেলতে পারেন এই ওয়ান টাইম ওয়াচ। 


রেটিং

5 - অসাধারণ 
4 - বেশ ভালো 
3 - ভালো 
2 - দেখতে পারেন
1 - না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

0 Comments