জ্বলদর্চি

অ্যাটাক (পার্ট ওয়ান) – ঢিসুম ঢিসুম সুপার সোলজারের চেনা ছকের গপ্পো /রাকেশ সিংহ দেব

অ্যাটাক (পার্ট ওয়ান) – ঢিসুম ঢিসুম সুপার সোলজারের চেনা ছকের গপ্পো

রাকেশ সিংহ দেব

পরিচালক - লক্ষ্য রাজ আনন্দ
অভিনয় – জন আব্রাহাম, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, রাকুল প্রীত সিং, প্রকাশ রাজ, রত্না পাঠক শাহ। 
মুক্তি –১ এপ্রিল, ২০২২

রেটিং –2/5

সায়েন্স ফিকশন নির্ভর অ্যাকশন মুভির ক্ষেত্রে ‘সুপার সোলজার’ এর গল্প পরিচালকদের অন্যতম পছন্দের বিষয়। হলিউডের দিকে চোখ ফেরালে আমরা দেখতে পাই রোবোকপ, ইউনিভার্শাল সোলজার, আপগ্রেড, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, উইন্টার সোলজার এর মতো অসংখ্য মুভি। এই মুভিগুলোর গল্পের প্রাথমিক ধারণা হল বিশেষ কোনও সিরাম বা প্রযুক্তির মাধ্যমে এক সাধারণ মানুষ বা সৈনিককে বিশেষ অতিমানবিক ক্ষমতা দিয়ে তাদের মানবতার রক্ষার কাজে লাগানো। সেই চরাচরিত দুষ্টের দমন আর শীষ্টের পালনের গল্প। বলিউডে এই ধরনের প্রচেষ্টা এখনও চোখে পড়েনি। নয়ের দশকে রোবোকপের অনুকরণ করে ‘আবিস্কার এক রক্ষক’ নামের একটি টেলিভিশন সিরিজ বানানো হয়েছিল কিন্তু মুভি বানানোর পরিকল্পনা কোনও বলিউড পরিচালক নেননি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ‘অ্যাটাক’ একটি নতুন প্রচেষ্টা। মুভির টাইটেলে পার্ট ওয়ানের উল্লেখ থেকে বোঝা যায় সুপার সোলজার নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে মুভি ফ্র্যাঞ্চাইজি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে নির্মাতাদের। 

গল্পের শুরুতে দেখানো হয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মতো একটি জায়াগা যখানে জঙ্গী কার্যকলাপ বাড়বড়ন্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে কোভার্ট অপারেশোন করে এক বড় মাপের জঙ্গী নেতাকে গ্রেফতার করে ভারতীয় সেনার এক অন্যতম দক্ষ সৈনিক অর্জুন শেরগিল (জন আব্রাহাম) ও তার টিম। এই ঘটনার কয়েকমাস পরে বিমানবন্দরে আতঙ্কবাদী হামলায় অর্জুনের প্রেমিকা আয়শা (জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ) মারা যায়। এই ঘটনায় টেররিস্টদের সঙ্গে লড়াইতে প্রাণে বেঁচে গেলেও মারাত্মক আহত হন অর্জুন। প্যারালাইজড হয়ে হুইল চেয়ারে বন্দী হয়ে পড়ে তার জীবন। এক উচ্চপদস্থ অফিসার সুব্রমানিয়াম (প্রকাশ রাজ) চান অর্জুনকে টেস্ট সাবজেক্ট বানিয়ে উপর যাতে একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করা হয়। যে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাটি চালান ডাঃ সাবা (রাকুল প্রীত সিং)। তার ঘাড়ে লাগানো হয় একটি সুপার কম্পিউটার আর তাতে ইনস্টল করা হয় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ‘ইরা’। উদ্দেশ্য একটাই  বর্তমানে কোমরের নীচ থেকে প্যারালাইজড অর্জুন শেরগিলকে সুপর সোলজার তৈরি করে আবার সেনাবাহিনীতে নিয়ে আসা। ডেবিউ ডিরেক্টর লক্ষ্য রাজ আনন্দের সাইন্সফিকশন এবং একশানপ্যাক এই ছবিতে একজন সুপার সোলজারের চরিত্রে দেখা যাবে জন আব্রাহামকে। রাজধানী দিল্লীতে জঙ্গীরা নিয়ে আসে এক মারাত্মক রাসায়নিক বোম। তাতে জীবন সঙ্কট খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। একদল আতঙ্কবাদীর কবজায় ভারতের সাংসদ ভবন। এমন সময় মিশনে নামে ভারতীয় সেনার সুপার সোলজার অর্জুন শেরগিল। এবার অর্জুনের কাঁধে দায়িত্ব গোটা দিল্লিকে বিধ্বংসী বোমা থেকে রক্ষা করে সাংসদ ভবন দখলমুক্ত করা। অর্জুন কি পারবে গোটা দিল্লি ও প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করতে? সেই নিয়ে মুভির গল্প। 

এই মুভিটি আর পাঁচটা দেশাত্মবোধকে মুভির ফর্মুলা থেকে বেরিয়ে বানানো। নবাগত পরিচালক লক্ষ্য রাজ আনন্দ তাঁর প্রথম মুভি নিয়ে যেভাবে ভেবেছেন তা প্রশংসার যোগ্য। তবে মুভির সময় সীমা দুঘণ্টা ছাড়িয়ে এতটা না হলেও হত। মুভিতে কিছু এমন অপ্রয়োজনীর দৃশ্য আছে যেগুলো দেখলে দর্শকদের মনে হতেই পারে আছে এগুলো না থাকলে হয়তো মুভি অনেক বেটার হতো। যেমন রোম্যান্টিক সিন আর গানগুলো একটা অ্যাকশন থ্রিলার মুভির গতি অনেকটা স্লো করে দেয়। তবে এই ছবি অ্যাকশন কোরিওগ্রাফির সঙ্গে ভি এফ এক্সের কম্বিনেশন বাড়তি মাত্রা দেয় গল্পে। মুভির কয়েকটি অ্যাকশন দৃশ্য বেশ ভালো লাগে। স্ক্রিনে সুপার সোলজার অবতারে জন আব্রাহামের পাওয়ালফুল লুক মুগ্ধ করবে দর্শকদের। জন আব্রাহামেক শুধুই অ্যাকশন হিরো হিসেবে দেখা হয়নি এই ছবিতে। প্রযোজক নায়ক জন আব্রাহাম নিজে মুভিটির গল্প লিখেছেন। এছাড়াও সিনেমাটির অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর দায়িত্বে রয়েছেন শাশ্বত সচদেব যিনি ‘উরি-দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ মুভিতেও বিজিএম ডিসাইন করেছিলেন। মুভিটি দেখতে খারাপ লাগেনা তবে ট্রেলার দেখে মুভি দেখতে গিয়ে দর্শকদের বেশ আশাহত হতে হয়। তবে মুভিটি একটি এক্সপেরিমেন্ট হিসাবে মুভির নির্মাতারা সবটুকু চেষ্টা করেছে। তবে এই ধরনে ফ্র্যাঞ্চাইজি মুভি যেভাবে কোনও ক্লীফ হ্যাঙ্গারের সাথে শেষ হয়ে পরবর্তী মুভির আভাস দেয় , সেরকম কিছু এখানে দেখা যায়না। তবে সব মিলিয়ে বলা যায় সিনেমাটি একটি অন্যরকম প্রচেষ্টা হিসাবে ভালো ওয়ানটাইম ওয়াচেবেল।

রেটিং 

5 – অসাধারণ
4 – বেশ ভালো
3 – ভালো
2 – দেখতে পারেন
1  - না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments