জ্বলদর্চি

মোরগ লড়াই: মেলা ও সংস্কৃতি /সূর্যকান্ত মাহাতো

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি

পর্ব - ১৬
মোরগ লড়াই: মেলা ও সংস্কৃতি

সূর্যকান্ত মাহাতো

নগেন কৈতকী বউকে ডাক দিয়ে বলল, "কই গো, আমার ব্যাগটা তাড়াতাড়ি দাও। বেলা যে পড়ে এল।"

মাথার উপর সূর্যমামা তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়তে শুরু করেছে। রোদটাও অনেকটাই নরম হয়ে এসেছে। হেমন্তের বিকেল, তাই একটু শীত শীত ভাব। দিনটা এ সময় খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে। তাই দুপুর গড়াতে না গড়াতেই হাজির হতে হয় আখড়ায়। "আখড়া" মানে যেখানে মোরগ লড়াইয়ের আসর বসে। উৎসাহী হাউশি-রা বড্ড তাড়াতাড়ি চলে আসেন। অনেকেই ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। "হাউশি" হলেন লড়াই করা মোরগের মালিক। নগেন কৈতকিকে দিয়েই তাদের কিছু জন মোরগগুলোকে লড়াই নামান।

বটতলার মাঠ। মানুষ ও মোরগের ভিড় জমতে শুরু করেছে। এবার ধনপতি সর্দার পুরস্কার হিসাবে একটি বড় ষাঁড় গরু দেবেন। বেলা যত গড়াচ্ছে, পাশাপাশি গ্রামগুলো থেকে উৎসাহী দর্শকের ঢল ততই বাড়ছে। কারও কোলে চেপে বেড়াচ্ছে তাদের প্রিয় মোরগগুলো। কারও কোলে আবার তাদের শিশুরা। বাবার কোলে চেপে ওরাও এসেছে মোরগ লড়াই দেখতে। সেইসঙ্গে মেলাও দেখবে। কারণ জঙ্গলমহলে মোরগ লড়াই মানেই মেলা। পান বিড়ি সিগারেট গুটকার দোকানের পাশেই বসে চপ সিঙাড়া পাপড় প্রভৃতি তেলেভাজার দোকান। বসে জিলিপির মতো মিষ্টির দোকানও।

লড়াইয়ে আসা সাইকেলগুলো উল্টিয়ে বাঁধা হয়েছে মোরগগুলো। কোনওটা বাঁধা আছে মোটর সাইকেলের স্ট্যান্ডে। কোনওটা খিল দিয়ে। থেকে থেকেই মোরগগুলো গগনভেদী চিৎকারে ডেকে উঠছে। কুকরুক-কু-উ-উ। সেই চিৎকারে গমগম করছে বটতলার মাঠ। তাদের লড়াকু ডানার ঝাপটায় আর উপস্থিত দর্শকদের পদচারণায় মাঠের সাদা ধুলো উড়ছে আকাশ জুড়ে। থেকে থেকেই যেভাবে ডেকে উঠছে মোরগগুলো তাতে বোধ হয় তারা জানান দিচ্ছে, "দেখো লড়াইয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত।" প্রতিপক্ষকে হুংকার দিয়ে একটা আত্মবিশ্বাস বাড়ানো মানসিক প্রস্তুতির মতো।
গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে সারা বছরই এমন অজস্র মোরগ লড়াইয়ের আসর বসে। তবে হেমন্ত আর শীতকালেই সবথেকে বেশি। মোরগ লড়াই এলাকাবাসীর কাছে একটা উৎসবের মতো। তাকে ঘিরে আনন্দ আর উন্মাদনা থাকে চোখে পড়ার মতো। হলই বা মোরগ লড়াই, তবুও সকাল থেকে চলে একটা সাজো সাজো রব। চলে আলাপ-আলোচনা, তর্ক বিতর্ক।

নগেন কৈতকির অভিজ্ঞতাও কম নয়। কম করে বিশ বছর তো হবেই। "কৈতকি" তাদেরই বলে যারা হাউশিদের মোরগগুলোকে আখড়াই নিয়ে গিয়ে লড়াই করে। মোরগের পায়ে বাঁধার জন্য যে অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হয় তাদের বলে "কাইত"। এই "কাইত" বাঁধার কাজটি যিনি করেন তাকে বলে 'কৈতকি'। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে নগেন কৈতকি মোরগ লড়াই করে চলেছে। তার বাবাও ছিলেন কৈতকি। বাবার কাছেই সে মোরগ লাগানো শিখেছে। কীভাবে দুই হাতে মোরগগুলোকে ধরতে হয়, কেমন করে লড়াইয়ের আসরে প্রতিপক্ষের সামনে নামাতে হয়, এসব কিছু বাবার কাছেই তার শেখা। কাইত বাঁধা অত সোজা নয়। মোরগের পায়ের মাপ অনুযায়ী কাইতের সাইজ নির্ধারণ করতে হয়। ওটাও একটা দক্ষতার কাজ। সবাই পারে না। সুদক্ষতার সঙ্গে বা নিপুণতার সঙ্গে বাঁধতে না পারলে মোরগ নিরস্ত্র সমান হয়ে পড়ে। মানে অস্ত্র থেকেও যেন নেই। খুব শক্ত করে বাঁধলে মোরগটি পায়ে ভর দিয়ে সহজে উড়তে পারবে না। আবার খুব ঢিলাঢালা বাঁধলেও হবে না। কাইত ঘুরে যেতে পারে। ফলে লড়াই করতে অসুবিধা হবে। তখন চেষ্টা করেও প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে ব্যর্থ হবে। উল্টে প্রতিপক্ষের আঘাতেই নিজেকেই ক্ষতবিক্ষত হতে হবে। তাই কাইত বাধার সময় এসব কিছুই খেয়াল রাখতে হয়। নগেন কৈতকিও কতবার ভুল করে করে শিখেছে। তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে তাই তো এখন সে পাকা কৈতকি। 
ছোটবেলা থেকেই বাচ্চা মোরগগুলো একটু বেশিই খাতির পাই মুরগীগুলোর তুলনায়। জঙ্গলমহলে মোরগকে "ষাঁড়া" বা "মুরগা" বলেও ডাকে। জঙ্গলমহলে কত দরিদ্র পরিবার লড়াইয়ের মোরগ পালন করে তাদের স্বপ্ন পূরণ করে। এই যেমন শালগে মুর্মু, দুটো বড়ো মোরগ বিক্রি করে নাতি-নাতনির জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনেছেন। মদন মাহাতো ছেলেকে সাইকেল কিনে দিয়েছেন। সীতারাম মাহাতো তার কলেজে পড়া মেয়েকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছেন। সবকিছুই বাড়ির পোষা মোরগগুলোকে বিক্রি করেই।

 মোরগগুলো একটু বড় হয়ে লড়াই  করার উপযুক্ত হয়ে উঠলেই হীরার মতো দামী হয়ে ওঠে। তাদের লড়াকু মনোভাব তাদের মূল্যকে আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। বড় জাতের মোরগ গুলোর দাম পনেরো থেকে কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। সাধারণত গ্রামের দিকের  মোরগগুলোর দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হয়।

মুরগা বা মোরগগুলো তাদের গায়ের রং, মাথার ফুল ও গঠন অনুযায়ী বিভিন্ন  নামে পরিচিত। যেমন সম্পূর্ণ সাদা রঙের হলে তাকে 'শ্বেতী' বলে ডাকে। আবার কোনও কোনও মোরগের পালকগুলোতে অনেক রং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বলে তাদের ডাকা হয় 'ঝিঝরা'। আবার লাল-কালো ও সাদা-কালোর সংমিশ্রিত মোরগ গুলোকে বলা হয় 'খইড়্যা'। গায়ে সূর্যের আলো পড়ে যাদের গায়ের রং সোনালী চকচকে হয়ে ওঠে তাদের স্থানীয় ভাষায় বলে 'সোনা ঝিঝরা'।

গায়ের রঙের মতোই মোরগের মাথার উপর আছে অপরূপ  সুদৃশ্যমান ফুল। সেই ফুলের গঠন অনুযায়ীও একাধিক নামকরণ হয়। যেমন করাতের মতো দাঁত কাটা কাটা ফুল হলে তাদের "করাত-ফুল্যা" মোরগ বলে। সিম ফুলের মতো হলে "সিম-ফুল্যা", কদম ফুলের মতো হলে "কদম-ফুল্যা", ধুতরা ফুলের মতো হলে ধুতরা ফুল্যা বলে। আবার বিড়ির মতো ফুলও হয়।

 মোরগগুলোর আকারগত গঠনও বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। ছোট মাঝারি এবং বড়। কোনওটা বাহারি লেজযুক্ত। কোনও কোনওটার গলায় সিংহের কেশরের মতোই পালক থাকে। কোনওটার গলা আবার পালক শূণ্য। কোনওটা টিয়া পাখির মতো বাঁকানো ঠোঁটের অধিকারী। ধারালো নখ।  
কোনওটার ঠোঁট আবার লম্বা। কম ওজনের পরিণত মোরগগুলোকে বলা হয় 'পাতি' মোরগ। এরা অনেকটা উপরে উড়ে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ায় বেশ দক্ষ।

 পোষা মোরগগুলো সচরাচর মুক্ত হয়েই বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘোরাফেরা করে। তবে বেশিরভাগ সময় বাঁধা অবস্থাতেই থাকে। লড়াইয়ের সময় এলেই দু এক সপ্তাহ আগে থেকে তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। যাতে তাদের ছটফটে চঞ্চল ভাবটা কেটে যায়। চঞ্চল ও ছটফটে স্বভাবের মোরগকে বলা হয় 'চাইড়া'। তাদের চাইড়া বা চঞ্চল ভাবটা কাটাতেই আলাদা করে বেঁধে রাখতে হয়। সারা শরীরে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে শান্ত করতে হয়। না হলে লড়াইয়ে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, লড়াই করানো সবেতেই অসুবিধা ঘটে। আবার দীর্ঘদিন একাকী বেঁধে রাখলে মোরগের রাগটাও কিছুটা বাড়ে। যা লড়াইয়ের আবশ্যিক একটা শর্ত। বিভিন্ন রকমের খাবার দিয়ে তাদের শক্তিও বাড়ানো হয়। লড়াইয়ের পূর্বে এসব কিছুই একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে চলে।

লড়াইয়ে যাওয়ার আগে থেকেই মোরগের মালিকের টেনশন শুরু হয়ে যায়। প্রিয় মোরগটির লড়াইয়ে ফলাফল কী হতে পারে সেই অনিশ্চয়তা তাকে বেশি করে ঘিরে ধরে। অনিশ্চয়তা যেখানে যত বেশি বিশ্বাস সেখানে ততই প্রবল। তাই হাউশি নানারকম কু-সংস্কারে তখন বিশ্বাস করতে শুরু করেন। যেমন পাঁজি দেখে যাত্রা করেন। নানান দেবদেবীর নাম বারবার স্মরণ করেন। লড়াইয়ের যাত্রাপথে কারও সঙ্গে তেমন একটা কথাও বলেন না। এছাড়াও ছোট ছোট নানা ধরনের সংস্কার পালন করেই চলেন। যতক্ষণ না তার মোরগটির জয় কিংবা পরাজয় ঘটছে। তবে নগেন কৈতকি এসবে বিশ্বাস করে না। ওসবে কোনওদিন ফলাফলও পাল্টায় না। কেননা দিনের শেষে মোরগটাকেই লড়াই করতে হয়। তার ক্ষিপ্রতা, ক্ষমতা, প্রতিপক্ষের উপর সঠিক সময়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আক্ৰমণ করা এসমস্ত কিছুর ওপরই নির্ভর করে ফলাফল কী হতে পারে। লড়াই করে তো মোরগটি। মালিকের বিশ্বাস ও সংস্কারে তার কিছু এসে যায় না। তারপরেও বিশ্বাসগুলো টিকে আছে দেখে নগেন কৈতকির হাসি পায়। মোরগের পায়ে কাইত বাঁধার সময় দু একজনকে অদ্ভুত সব আচরণ করতেও দেখেছে নগেন কৈতকি। তখন বলেই ফেলে, "ভাই লড়াইটা তো তুমি করছো না। করবে তোমার মোরগটি। জয় পরাজয় তার দক্ষতার উপর নির্ভর করছে। খামোকা তুমি টেনশন করলে কি কিছু বদল ঘটবে?" 

প্রিয় পোষ্য মোরগগুলো মালিকের কোলে চেপে চেপে আখড়ার পাশে পাশে ঘুরতে থাকে। মালিক মাঝে মাঝেই আদর করে তার শরীরে হাত বুলোই। আখড়ায় উপস্থিত মোরগগুলোর থেকে যোগ্য প্রতিপক্ষ খোঁজে। স্থানীয় ভাষায় একে বলে জোড়া খোঁজা। আখড়ার বাইরে দু পক্ষই  দুটো মোরগকে মুখোমুখি দাঁড় করায়। পরখ করে দেখে নেয় পরস্পর লড়াই করতে প্রস্তুত কি না। দু পক্ষের মালিক সম্মত হলেই লড়াইয়ের জন্য তাদের অস্ত্র বেঁধে তৈরি করা হয়।

ডাক পড়ে নগেন কৈতকিদের। তারাই আখড়ার ভিতর মোরগ দুটি লাগাবে। মোরগ লাগানোর দক্ষ সেনাপতি তখন তারাই। "কাইত"।তীক্ষ্ণ ও ধারালো চকচকে তরোয়ালের এক ক্ষুদ্র রূপ। বড় হাতের 'L' কিংবা কিছুটা উল্টানো 'T' এর মতো। কাইতের মতো অস্ত্রগুলো কৈতকিদের নিজস্ব। তবে "বাহির গেড়িয়া" কাইতের মতো বিষাক্ত কাইত ব্যবহারে এখন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। 

বেশ যত্ন সহকারে কাইত বাঁধেন কৈতকিরা। মালিক মোরগটিকে কোলে চাপিয়ে পা দুটো শক্ত করে ধরে থাকেন। কৈতকি সাবধানে কাইত বাঁধেন। একটু পা ঝাপটা মারলেই ধারালো কাইতে হাত কেটে ফালা ফালা হয়ে যেতে পারে। এমন দুর্ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। শুরুর দিকে দু একবার নগেন কৈতকিরও এমনটা ঘটেছিল। মোরগ লাগাতে গিয়েও কত রকমের দুর্ঘটনা ঘটে। একবার কোনও এক আখড়ায় লড়াই চলাকালীন এক মোরগ উড়ে গিয়ে এক দর্শকের ঘাড়ে বসে পড়েছিল।সেই কাইতের ফলায় কাটা হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিল। কত কৈতকির হাত কেটেছে। তবে এখন সে অনেক বেশি সাবধান। 

কাইত বাঁধা সম্পন্ন হলে মোরগ দুটি নিয়ে দুই কৈতকি  মূল আখড়ায় প্রবেশ করে। দুটো মোরগকে আরও একবার মুখোমুখি দেখানো হয়। তারা লড়াই করতে প্রস্তুত কিনা। গলায় কেশরের মতো পালকগুলোকে খাড়া করে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়। বুঝিয়ে দেয় লড়াইয়ের জন্য তারা প্রস্তুত। দুই কৈতকি নিশ্চিত হওয়ার পর ছেড়ে দেয় দুই যুযুধান মোরগদুটোকে। মোরগের লেজে টোকা মেরে মেরে কৈতকি উৎসাহ দেয়। টোকা খেয়ে উপরে উড়েই সজোরে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের উপর। এভাবেই দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে। এক একটা দফাকে বলে "শুঁড়"। এক শুঁড়েই কোনও একটা হেরে গেলে বিজেতা মোরগ পুরস্কারও পায়। টানা লড়াইয়ে পায়ে বাঁধা কাইতের ফলাই ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে দুটোর শরীর। শরীর বেয়ে নেমে আসে রক্তধারা। অবশেষে একটা সময় কোনও একটাকে পরাজয় স্বীকার করতেই হয়।

আহত মোরগগুলোকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য আখড়ার পাশেই বসে চিকিৎসালয়। লড়াইয়ে আহত মোরগগুলোর প্রাথমিক চিকিৎসা ওখানেই হয়। যেমন কেটে যাওয়া অংশের সেলাই করা হয়।  ব্যথার ঔষধ, রক্ত ধরে যাওয়ার ঔষধ প্রভৃতি দেওয়া হয়।

পরাজিত মোরগটিকে বলে "পাহুড়"। বিজেতা মোরগের মালিক হন পাহুড়ের দাবিদার। কৈতকি হেরে যাওয়া মোরগের মালিকের থেকে লাগানোর দরুণ কোনও বখশিস নেয় না। কিন্তু বিজেতা মোরগের মালিকের কাছ থেকে কৈতকি বখশিস নেয়। ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। টাকা দিতে না পারলে কৈতকি হেরে যাওয়া মোরগের একটি পা কেটে নেয়। একে বলে "ফড়্যা"। কৈতকি অনেকগুলো ফড়্যা পেলে তাদের কিছু কিছু বিক্রীও করে দেন। নগেন কৈতকি পাহুড়ের মাংস খেয়ে খেয়ে ক্লান্ত। তাই দশে মাসে একদিন ফড়্যা (পাহুড়ের পা) বাড়ি নিয়ে আসে। না হলে বেশির ভাগ দিন বিক্রীই করে দেয়। এছাড়াও বাড়িতে কুটুম এলে কিংবা মদ খাওয়ার মন করলে সেদিন পাহুড়ের পা নিয়ে বাড়ি ফিরে।

নতুন নতুন বিয়ের সময় নগেন কৈতকি বউকে প্রায় দিনই ফড়্যা-র মাংস খাওয়াত। বউই একদিন বিরক্ত হয়ে বলেছিল, "ধুর! দিন দিন মাংস খেতে ভালো লাগে না।"

তারপর আর বাড়িতে ফড়্যা আনে না। বিক্রী করে দেয়। খুব চাহিদা। তাই বাড়তি একটা টাকা পায়। সেটা দিয়েই তো বউকে নগেন কৈতকি একটা হার বানিয়ে দিয়েছে। বউ কি যে খুশি হয়েছিল! সেকথা ভাবলেই এখনও তার হাসি পায়।

পাহুড়ের মাংসের স্বাদ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এমন অপূর্ব স্বাদের বিকল্প খাবার জঙ্গলমহলে আর দ্বিতীয়টি নেই। জঙ্গলমহলে এলে  পাহুড় মোরগের মাংস একবার খাওয়ার অনুরোধ রইল সবাইকে।

নগেন কৈতকি জানে, এই লড়াইয়ে আসা হাউশিদের কেউ কেউ বিজয়ীর হাসি হেসে বাড়ি ফিরবেন। কেউ কেউ পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে দুঃখ হতাশায় ভেঙে পড়বেন। অনেকটা পাত্র পক্ষের বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার আনন্দ আর পাত্রী পক্ষের  মেয়ে হারানোর বিষাদ ও যন্ত্রণার মতো।

জঙ্গলমহলে মোরগ লড়াই সারা বছর ধরেই চলে। একই সঙ্গে এখানকার মানুষের বিনোদন ও হারা জেতার খেলা। অনেক মানুষের উপস্থিতিতে মোরগ লড়াই তাই হয়ে উঠে এক মিলন মেলা।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments