জ্বলদর্চি

প্রথম মহিলা বাঙালি-বৈজ্ঞানিক ড: অসীমা চট্টোপাধ্যায় ― ০৪/পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ৫৯


প্রথম মহিলা বাঙালি-বৈজ্ঞানিক ড: অসীমা চট্টোপাধ্যায় ― ০৪

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

(১)
   সময়টা তিরিশের দশক। শেষ দিককার ঘটনা। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে তখন তিনজন মাত্র চেয়ার-অধ্যাপক। পালিত অধ্যাপক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ঘোষ প্রফেসর ড. প্রফুল্লচন্দ্র মিত্র আর খয়রা প্রফেসর অধ্যাপক জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। এ হেন তিনজন চেয়ার অধ্যাপকের বাইরে আরও একঝাঁক নামিদামি অধ্যাপকের চাঁদের হাট ছিল সায়েন্স কলেজে। নিজ নিজ গবেষণার ফিল্ডে প্রত্যেকে সমুজ্জ্বল। রীতিমত প্রথিতযশা একঝাঁক পণ্ডিত মানুষ। জ্ঞানীগুণী আর বিশ্বজোড়া নাম তাঁদের। প্রথম তিনজনের সঙ্গে বাকিদের শুধুমাত্র একটাই তফাৎ। প্রথম তিনজন চেয়ার অধ্যাপকের অধীনে গবেষণা করে ফেলোশিপ মিলত রিসার্চ স্টুডেন্টদের। বাকিদের বেলায় প্রযোজ্য ছিল না এ শর্ত।

   সালটা ১৯৩৮। রসায়নে মাস্টার্স কমপ্লিট করে অসীমা মুখোপাধ্যায়ের পরের লক্ষ্য রসায়ন গবেষণা। গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশীয় গাছগাছড়ার ব্যবহার তখন বেশ অবহেলিত। অতি সাধারণ সেসব গাছগাছড়ার ফুল, পাতা, ছাল, ফুল আর কাণ্ডের বিজ্ঞানসম্মত রাসায়নিক পরিচয় তখনও অন্ধকারে। কারও জানা নেই। অজ্ঞাত ও অবহেলিত সেসব গাছগাছড়াকে গবেষণায় হাতিয়ার করলেন অসীমা দেবী। তাঁর গবেষণার বিষয় নির্বাচনে ঠাঁই পেল দেশীয় গাছগাছালি। গবেষণার জন্য পশ্চিমের ভাবধারা একেবারে না-পসন্দ তাঁর। ঘুণাক্ষরেও পাশ্চাত্যের পথ মাড়ালেন না তিনি। বরং দেশীয় প্রযুক্তির উপর তাঁর অগাধ ভরসা। এ বিষয়ে সঠিক মার্গ-দর্শন করালেন দেশের ভেষজ রসায়ন বিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ একজন পণ্ডিত মানুষ। তিনি অধ্যাপক ড. প্রফুল্ল কুমার বসু। প্রফেসর বসু মূলত ন্যাচারাল প্রোডাক্ট নিয়ে গবেষণায় সিদ্ধহস্ত। গ্রামের গাছগাছালি থেকে প্রাপ্ত ভেষজ উপাদানের রাসায়নিক গুণাগুণ বিশ্লেষণের কাজে হাত পাকিয়েছেন অধ্যাপক বসু। এ হেন পণ্ডিত মানুষের তত্ত্বাবধানে ন্যাচারাল প্রোডাক্ট নিয়ে বিস্তর গবেষণার শুরু অসীমা দেবীর। এ বিষয়ে সামান্য পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এম এস সি চলাকালে দ্বিতীয় বর্ষে গবেষণায় হাতেখড়ি হয়েছিল। ন্যূনতম অভিজ্ঞতা পুঁজি করে তাঁর রিসার্চ থিসিস জমা পড়ে সেকেন্ড ইয়ারে। তারপর এম এস সি'তে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড। সিলভার মেডালিস্ট।
        
  
 নতুন উদ্যমে শুরু হল প্রফেসর প্রফুল্ল কুমার বসুর অধীনে তাঁর স্বপ্নের গবেষণা। গবেষণার শুরুতেই সামান্য হোঁচট। দেখা দিল এক অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা। ড. বসুর আন্ডারে গবেষণায় ফেলোশিপ মেলে না। কারণ তিনি চেয়ার-প্রফেসর নন। একমাত্র চেয়ার-প্রফেসরের অধীনে গবেষণায় ফেলোশিপের সুব্যবস্থা আছে। দস্তুর মতো সেসময় এটাই ছিল নিয়ম। বাকি অধ্যাপকদের অধীনে গবেষণায় কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। শুধু স্কলারশিপের বন্দোবস্ত নেই। এই যা! 

   বিজ্ঞান কলেজের তৎকালীন ডিন ছিলেন ড. শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়। কলেজের সম্মাননীয় পালিত অধ্যাপক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় চিঠি লিখলেন ড. মুখোপাধ্যায়কে। চিঠির সারমর্ম ছিল এই যে, তরুণী গবেষক অসীমা মুখোপাধ্যায়ের ফেলোশিপের পাকা বন্দোবস্ত করা। পাল্টা চিঠিতে অক্ষমতা জ্ঞাপন করলেন ডিন। কারণ কলেজের আর্থিক অপ্রতুলতা। এমন ঘটনায় মর্মাহত বর্ষীয়ান বৈজ্ঞানিক। মহা আতান্তরে দ্রোণাচার্য। অসীমা তাঁরই ছাত্রী। সেসময় একলা ছাত্রীটির প্রতি ক্লাসে বর্ষীয়ান প্রফেসর বিশেষ স্নেহ, আলাদা যত্ন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে মানবিক টানাপোড়েনে তিনি ভেতরে ভেতরে খানিক দগ্ধ। পরক্ষণেই উপায় বাতলে দিলেন তিনি। বিজ্ঞান কলেজের পালিত প্রফেসর তিনি। অথচ বেতন বাবদ এক নয়া পয়সা কলেজ থেকে নেন না। সবটাই দান করেছেন কলেজকে। কলেজের মঙ্গলের কথা ভেবে। এসময় দারুণ একখানা বুদ্ধি খেলে গেল বৃদ্ধ পণ্ডিতের মাথায়। তাঁর পাওনা বেতন, যা তিনি কস্মিনকালেও গ্রহণ করেননি, তা থেকে ছাত্রী অসীমার স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হোক― এই মর্মে তিনি পুনরায় চিঠি লিখলেন কলেজের ডিন ড. শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়কে। মন্ত্রের মতো কাজ হল তাঁর চিঠিতে। মাসিক পঞ্চাশ টাকা ফেলোশিপ মঞ্জুর হল নতুন একমাত্র মেয়ে-গবেষকের। 

   হঠাৎ বেঁকে বসলেন স্বয়ং বৃত্তি-প্রাপক। পঞ্চাশ টাকা মাসিক স্কলারশিপ গ্রহণ করতে নিমরাজী অসীমা দেবী। ফেলোশিপ নিতে তাঁর এত টালবাহানা কেন? কীসের এত আপত্তি তাঁর? 

   সেসময় চেয়ার-প্রফেসরের আন্ডারে গবেষণা করে পঁচাত্তর টাকা মাসিক ভাতা পেত একজন রিসার্চ স্টুডেন্ট। তাহলে তাঁর বেলায় মান্থলি পঁচিশ টাকা কেন কম? কীসের ভিত্তিতে এমন বৈপরীত্য? 

   জরুরি মিটিং বসল কলেজের সিন্ডিকেট মেম্বারদের নিয়ে। গুরুত্ব দিয়ে আতস কাঁচের তলায় চলল যুক্তি-পাল্টা যুক্তি, বিতর্ক। শেষমেশ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল― ১৯৩৯ সাল থেকে মাসিক পঁচাত্তর টাকা ফেলোশিপ পাবে মেধাবী তরুণী গবেষক। নজরকাড়া সিদ্ধান্ত। রীতিমত হইচই হওয়ার মতো ঘটনা এটা। সমাজ বদলের ভাবনা একটু একটু ঢুকে পড়ছে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় জনমানসে। অথচ ভ্রুক্ষেপ নেই আন্দোলনকারী তরুণী গবেষকের। তিনি ডুবে আছেন রিসার্চের গভীর চিন্তায়। গবেষণাই তাঁর পৃথিবী, তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। এই ক্ষুদ্র বৃত্তের মধ্যে তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ, আনাগোনা। অসংকোচ পথচলা। এ পরিধির বাইরে তিনি ছাপোষা একজন নারী। মৌলালির বাড়ি থেকে তাঁর দৌড় বিজ্ঞান কলেজের ল্যাবরেটরি পর্যন্ত। কলকাতার রাস্তায় তখন ট্রাম গাড়ির রমরমা। এ হেন ট্রামে চড়ে সকাল সকাল বিজ্ঞান কলেজ পৌঁছন তিনি। তখন ভোর হয়তো পাঁচটা বাজে। ট্রামে চেপে কিংবা বাড়ির গাড়িতে চড়ে তিনি যখন কলেজ পৌঁছন, ভোরের কাকপক্ষীও টের পায় না। গবেষণার কাজ চলে অনেক রাত পর্যন্ত। তারপর বাড়ি ফেরা।
         
   
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই স্বীকৃতির দরজা গেল হাট করে খুলে। রসায়ন বিজ্ঞানী অধ্যাপক প্রফুল্ল কুমার বসুর অধীনে জৈব রসায়নে গবেষণা করে মিলল প্রথম জোড়া সাফল্য। ১৯৪০ সালে তিনি পেলেন নাগার্জুন স্বর্ণপদক আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনার মেডেল। স্বীকৃতি সর্বদা ভালো কাজে উৎসাহ জোগায়। নতুন আবিষ্কারে উদ্দিপনা বাড়ায়। এ হেন পুরস্কার প্রাপ্তিতে দ্বিগুণ উৎসাহে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন অসীমা দেবী। গবেষণা জীবনে তাঁর প্রথম কাজের পরিধি বেশ ইন্টারেস্টিং― ইনডোল অ্যালকালয়েড। কেমন জিনিস এই ইনডোল অ্যালকালয়েড?

   অ্যালকালয়েড শব্দের বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় 'উপক্ষার'। ক্ষার সদৃশ এসব পদার্থগুলি নাইট্রোজেন ঘটিত এক রকমের জৈবযৌগ যা অত্যন্ত সহজলভ্য, অন্তত গাছগাছড়ার রাজত্বে। ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস, ক্যানসার আর কার্ডিয়াক অ্যাটাকের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত অ্যালকালয়েডগুলি দারুণ কাজ করে। আবার, ইনডোল হল নাইট্রোজেনঘটিত এক রকমের অ্যারোমেটিক জৈব যৌগ। প্রাকৃতিক পরিবেশে ইনডোলের প্রাচুর্য দেখার মতন। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সহজে প্রস্তুত করা হয় ইনডোল। বর্তমানে ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলোন ক্যানসার সহ একগুচ্ছ ক্যানসারের চিকিৎসা হয় ইনডোল-3-কারবিনোল ব্যবহার করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ হেন ইনডোলের গুরুত্ব অপরিসীম। ইনডোল অ্যালকালয়েড এক বিশেষ ধরনের অ্যালকালয়েড যার ভেতর কাঠামোগত ইনডোল-এর আংশিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইনডোল অ্যালকালয়েডের বিপুল ব্যবহার আজ সর্বজন স্বীকৃত।

(২)
   রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ চত্বরে মহিলা গবেষক বলতে তখন একজন। অসীমা মুখোপাধ্যায়। সারাদিন কলেজ-ল্যাব‍রেটরির পরীক্ষা নিরীক্ষায় দিন কাটে তাঁর। তাত্ত্বিক গবেষণায় ঝুঁকি কম। এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চে বিস্তর ঝক্কি। অনেক বেশি বাস্তব সম্মত ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে হাতে নাতে পাওয়া তথ্য। সেজন্য কদর বেশি এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্টিস্টদের। ব্যবহারিক গবেষণার কাজে ল্যাবে এত বেশি বুঁদ হয়ে থাকতেন অসীমা দেবী যে, দিনের আলো কখন নিভল, রাতের তারারা কখন প্রস্ফুটিত হল আকাশে; সে খেয়াল থাকে না তাঁর।

   বিজ্ঞান কলেজে তখন ল্যাব-অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন একজন। রামপিরিত। গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে। কলেজে একলা গবেষক-মেয়ের জন্য তার চিন্তার শেষ নেই। রোজ দুপুরে সে ডাল-রুটির ব্যবস্থা করত দিদিমণির জন্য। সন্ধ্যের পর তার দায়িত্ব আরও বাড়ত। সন্ধ্যে থেকে রাত― যতক্ষণ পর্যন্ত না দিদিমণি বাড়ি ফেরেন, ততক্ষণ অসীমা মুখোপাধ্যায়ের নিকটে বসে থাকাই ছিল তার কাজ। প্রতিদিন একই নিয়ম। একচুল ওলটপালট হওয়ার নয়।

   শরীর চর্চার জন্য তখন ময়দান ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত ছিল আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়-এর। সান্ধ্য-ভ্রমণ তাঁর শরীর চর্চার আবশ্যিক অঙ্গ ছিল। ময়দানে সান্ধ্য-ভ্রমণ সেরে যখন বিজ্ঞান কলেজের পালিত ভবনের দোতলায় নিজের ঘরে ফিরতেন আচার্য, তখন সিঁড়ির পাশের ঘরে আলো জ্বলত। ছাত্রী অসীমা সেখানে গভীর গবেষণায় মগ্ন। ডুবে গেছে দুরূহ গণনায়। নিজের ঘরে ফেরার আগে, সন্ধ্যায়, অত্যন্ত মেধাবী সে-ছাত্রীর নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন তিনি। ছাত্রীর হয়তো ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া হয়নি। বেশির ভাগ দিন অশীতিপর বৃদ্ধ পানতুয়া, চিঁড়ে, দই প্রভৃতি খাবার পাঠিয়ে দিতেন তার জন্য।
        
   তারপর এল কঠিন সে-সময়। সালটা ১৯৩৯। সেপ্টেম্বর মাস। যুদ্ধ বেঁধে গেল। বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের যুযুধান দুটি পক্ষ। অক্ষ-শক্তি আর মিত্র-শক্তি। শেষের দলে রয়েছে ব্রিটিশরা। প্রথম প্রথম যুদ্ধের আঁচড় কিংবা উত্তাপ সেভাবে আছড়ে পড়েনি ভারতীয় উপমহাদেশে। যুদ্ধের আয়ু যত গড়াল, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আঁচ পড়ল ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের উপর। এমনিতে ভারতীয় জনজীবন বিপর্যস্ত। দেশে রাজনীতির ডামাডোলে ব্রিটিশের নোংরামি আরও বেড়ে গেল। ট্রাকের পর ট্রাক, জাহাজভর্তি যুদ্ধের রসদ যাচ্ছে ভারত থেকে। অথচ দিন দুবেলা খাবার জোটে না আমজনতার। ভারত জুড়ে সংগঠিত প্রতিবাদ কোথায়? বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা বাদ দিলে সবাই আশ্চর্য রকমের চুপচাপ! রাস্তাঘাট থমথমে। রাস্তায় শুধু ভারী বুটের শব্দ। কাতারে কাতারে ভারতীয় সেনা প্রেরণ করা হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে; যাদের একটাই লক্ষ্য ব্রিটেনের হয়ে বিশ্বযুদ্ধে হয় শহীদ হওয়া নতুবা বন্দি বনে যাওয়া। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে। রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশ কেমন যেন থমথমে! রাত-বিরেতে একলা বের হতে ভয় করে। অন্ধকার গ্রাস করছে সমাজ সংসারে।

   তাঁর স্মৃতিচারণে বিজ্ঞানী অসীমা চট্টোপাধ্যায় তখনকার সমাজ ব্যবস্থার ভয়ঙ্কর যে-চিত্র তুলে ধরেছেন, শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন যে কোনও মানুষের হাড় হিম হয়ে যাবে, গা ছমছম করবে সে-বর্ণনায়। তিনি বলেছেন― 'যুদ্ধ লেগে গেল ১৯৩৯ সালে, ব্ল্যাক আউট হয়ে গেল, সন্ধ্যের পর আলো পাওয়া যেত না, আমরা করতাম কি, তিন-চারজনে থাকতাম। অন্য ঘরে যাঁরা সিনিয়র ফেলো, রিসার্চ ফেলো, তাঁরা সব বার্ণারগুলিকে লিউমিনাস করে দিতেন, ঘরে আলো হত। আমিও সেই ট্যাকটিক্স ধরলাম। এইভাবে যাতে পুলিশরা না দেখতে পায় বিল্ডিংয়ে আলো জ্বলছে, দরজা বন্ধ করে কাজ করতাম। তারপর যুদ্ধ বন্ধ হবার পরে যখন রায়ট বেঁধে গেল তখন কাজ করার খুব অসুবিধা। তখন সায়েন্স কলেজে ঢোকা যেত না। চারদিকে খুনোখুনি ― তখন তো সায়েন্স কলেজে কোনো দেওয়াল ছিল না। একদম রাস্তা থেকে যে কেউ ঢুকে পড়তে পারত। সে সময় পাঁচিল তৈরি করালেন অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা, অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু, অধ্যাপক শিশির কুমার মিত্র ― এঁরা সকলে মিলে। রাজনৈতিক আন্দোলনে আমরা তখন অনেক অসুবিধা ভোগ করেছি। বহুদিন আমরা ওখানে কাজ করতে পারিনি।' (ক্রমশ...)

তথ্যসূত্র :
●'বারোজন বাঙালি রসায়নবিজ্ঞানী'―ড. রবীন্দ্রনাথ পাত্র
●'অর্ধশত বিজ্ঞানী-কথা'― ড. সন্তোষকুমার ঘোড়ই
●বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, দৈনিক সংবাদপত্র
●উইকিপিডিয়া, সায়েন্টিফিক উইমেন পেজ

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments