জ্বলদর্চি

অশোক মহান্তীর কবিতা : জীবন ভাঙা পথে ঈশ্বরের গান -৫/দিলীপ মহান্তী

অশোক মহান্তীর কবিতা : জীবন ভাঙা পথে ঈশ্বরের গান -৫

দিলীপ মহান্তী
                             
।৫।
অশোক মহান্তীর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘অতিবর্তী জাগো’। প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে। এটি শুধু তাঁর সময়েরই নয়, বাংলা কবিতার ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতাগ্রন্থ। কবিতা যতদিন লেখা হবে, যতদিন কবিতা পড়া হবে ততদিন এই গ্রন্থ বেঁচে থাকবে প্রকৃত কবিতা পাঠকের হৃদয়ে। তাঁর এই সময়ের কবিতায় দার্শনিকতা অতিমাত্রায় সক্রিয়। জন্ম-প্রেম-মৃত্যু-বিষাদ-ঈশ্বর-সময়ের প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন ও রহস্য দানা বেঁধেছে। তিনি উত্তর খুঁজছেন। পথ খুঁজছেন। তিনি হয়তো কিছু অতিক্রম করতে চান বা কাউকে পথ নির্দেশ করছেন। তাকে জাগ্রত করতে চাইছেন। ঘুমিয়ে থাকা মানুষ তো জড় পদার্থের মতোই। তার মধ্যে চেতনা সঞ্চার করতে চাইছেন। সেইজন্যই গ্রন্থের নাম অতিবর্তী জাগো। দার্শনিকতা থাকলেও কবিতার শিল্পগুণ একটুও নষ্ট হয়নি। বরং ব্যঞ্জনা বাড়িয়েছে। অলৌকিক মায়াজগৎ সৃষ্টি করেছে।
       তাঁর সময়ের অর্থাৎ সত্তর দশকের আর এক অন্যতম প্রধান কবি রণজিৎ দাশ ‘কবির স্মরণে’ শিরোনামের এক লেখায় জানাচ্ছেন: ‘অশোকের কবিতার আমি বিশেষ অনুরাগী। তার কবিতার মূল সুর দার্শনিক বিষাদের হলেও আরো বহু ভিন্ন স্বাদের কবিতা লিখেছে অশোক। একাধিক কাব্যগ্রন্থ রয়েছে তার, যেগুলির মধ্যে তার ‘অতিবর্তী জাগো’ গ্রন্থটি আমার বিশেষ প্রিয়। এই বইটি আমাদের সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি কাব্যপুস্তক, এই আমার বিশ্বাস। ৪৫টি কবিতা সম্বলিত এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে এবং এই ৪৫টি কবিতাই রচিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে। এক বছরের মধ্যে এতগুলি ভালো কবিতা লেখার দৃষ্টান্ত দেখে, একজন কবিতা-কর্মী হিসেবে, আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যে ১৯৯১ সালে নিশ্চয়ই কোনো দৈবের বশে ঝাড়গ্রাম শহরটি কবিতার একটি নির্জন দ্বীপে পরিণত হয়েছিল এবং অশোক ছিল সেই নির্জন দ্বীপের রাজা।’
      অতিবর্তী জাগো কাব্যগ্রন্থের সবকটি কবিতাই উদ্ধৃতিযোগ্য। প্রত্যেকটি কবিতাই সমান মনোযোগ দাবী করে। দু একটি কবিতা পড়তেই হবে:

১.  ‘তোমার ফেরার পথে ফুলগাছ মাথা ঝাঁকিয়েছে।
    বেড়ার ভেতরে এই ফুলগাছ কতদিন রোদে ও হাওয়ায়
    একটি ফুলের জন্য অপেক্ষায় ছিলো।
    আজ বৃষ্টি নেই, আজ বৃষ্টিহীন এ শান্ত প্রান্তর জুড়ে শুধু ক্ষোভ
    শুধুই গন্ধের ক্ষোভ উড়ে উড়ে যায়।

    তুমি অত্যন্ত কাশির ভারে আড়ষ্ট হয়েছো।
    কষ্ট, ছাপিয়ে গিয়েছে ওই আকাশ-পরিধি, দূরে
    আরো দূরে ওই শূন্যতা পেরিয়ে।

    কার ডাক শুনতে পাচ্ছো।
    দেবী নামগিরি নাকি টমাস হার্ডির?
    দেবী ও মানুষে মিলে এ এক আশ্চর্য প্রতিক্রিয়া।
    
    তোমার যৌগিক সংখ্যা সতেরো শ উনত্রিশ
    জুড়ে আছে অশুভের ছায়া।
    ঘোরতর আস্তিকের পক্ষেও যা মানা অসম্ভব।
 
    আমি তো নাস্তিক কবি, ঈশ্বর জানিনা
    এই সৃষ্টির গভীরে কার কালোহাত কিছুই জানিনা
    শুধু, নারী ও সন্তান নিয়ে কতদিন বিষণ্ণ দুপুরবেলা
    গাছ ও মাঠের দিকে তাকিয়ে থেকেছি।

    মাঠে কিছু নেই। এই রক্তের গভীরে কিছু নেই।
    তোমার গণিতে কিছু ছিলো?
    এতদিন ধরে যত কবিতা হয়েছে লেখা, তাতে কিছু ছিলো?
    বৈষ্ণবতিলকে কিছু ছিলো?
    প্রেমে বা বিরহে কিছু ছিলো?
    যত কিছু অধীত বিদ্যা রহস্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
    তোমার কাশির শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
    সমস্ত শতক ধরে দেখতে পাচ্ছি তোমার কাশির শব্দে
    লক্ষ লক্ষ যক্ষ্মার জীবাণু বাতাসে বাতাসে উড়ছে।

    দেবী নামগিরি এসে বসেছেন, বসেছেন টমাস হার্ডিও
    আরো লক্ষ পিপীলিকা পাশে ঘোরে একান্ত মৌলিক
    সৃষ্টির প্রাচুর্যে আজও অন্তহীন, অফুরন্ত যারা।
    চেটে খাচ্ছে রক্তের কণিকাগুলি, ফেনাভর্তি বাটি
    গণিতসূত্রের দ্রুম। আর একপাশে ওই শিথিল শিয়রে রাখা
    অনন্ত মৃতের পদ্য, শোকগাথা, রিলকের এলিজি

    নিস্তব্ধ আঁধারে উড়ে যায়’
      ( রামানুজন: অতিবর্তী জাগো )

 ২.  ‘বিভ্রান্ত ভাষায় তুমি কথা
    চারদিকে চাপ চাপ বমি ও রক্তের গন্ধে রি রি করে উঠেছে শরীর
    তার মধ্যে বিথারিত হাওয়া আর কালোচুল ওড়াতে ওড়াতে
    তুমি যে গানের কলি গাইতে চাও, আমি তার বিন্দুমাত্র
    কখনো বুঝিনা।

    বুঝতে পারি দুঃখের নিবিড় কোনো অর্থ আছে
    ক্ষুধারও নিজস্ব কিছু ভাষা আছে, আত্মদ্রোহ আছে
    তা বলে সুখের কোনো পরিচ্ছন্ন বেশবাস থাকতে নেই
    একথা আমার কাছে আজও অব্দি দুরূহ, কঠিন।
    তুমি প্রেমে থাকতে চাও থাকো।
    আমি যে আকাশ দেখে উড়িয়েছি দীর্ঘ কালো রোম
    সেও কি অপার কোন রহস্যের দরজা ঠেলে ভেতরে যাবেনা কোনদিন?

    তোমার বিভ্রান্ত সব কথা আমাকে তাড়িত করে আরো একবার
    এই চল্লিশ বছর পার হলে।

    কি বলতে চাই তবু আজও?
    বলতে চাই, ভাষার নিজস্ব কিছু নিয়মের কথা
    বিস্তৃত হাওয়ার মধ্যে এলোমেলো পাতাদের শেষতম পতনের কথা
    আগুনে ও আকাশে ব্যাপ্ত মৃতদের জীবনের কথা
    হৃৎস্পন্দনের কথা, এইসব।

    আরো কুড়ি বছরের কথা।
      (কুড়ি বছরের কথা: অতিবর্তী জাগো)

৩. ‘গাছে গাছে মুখোশ টাঙানো আছে দ্যাখো।
   আমাদের মানুষজন্মের এই পরিচয়ে মুখোশের বিশিষ্ট ভূমিকা
   স্থির হয়ে রয়েছে অনেককাল। তাই
   তোমারও এসব কিছু জেনে রাখা ভালো।

   আমাকে অনেকদূর যেতে হবে।
   অন্ধকার পেরিয়ে আলোয়। উন্মেষ পেরিয়ে আরো উচ্ছ্বাসের দিকে
   জীবন যেখানে মুক্ত।

   আমি পুরাণ ও প্রত্নতত্ত্ব থেকে আসছি।
   গুহাগর্ভ থেকে।

   যে প্রথম আগুন জ্বালতে শেখে সে আমার কে?
   যে প্রথম মুখোশ বানাতে শেখে সে আমার কে?
   
   অজস্র প্রশ্নের মধ্যে হারাতে হারাতে শেষে এখানে এসেছি।

   গাছে গাছে মুখোশ টাঙানো আছে, দ্যাখো।
   সুখের মুখোশ, আর দারিদ্র্যের, ধর্ম, ভাঁড়ামির
   শুধু শৈশবের কোনো মুখোশ হয় না, তাই
   যৌবনেরও মুখোশ রয়েছে।

   মুখোশ।
   যা মানুষের অকলঙ্ক মূর্তিটিকে বিকৃত করেছে বরাবর।
    (মুখোশঃ অতিবর্তী জাগো)

    অশোক মহান্তীর আর একটি উল্লেখযোগ্য কবিতার বই: ‘আলোক শিশির’। এটিও বাংলা কবিতার ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট গ্রন্থ। এই গ্রন্থে জীবন সম্পর্কে, পৃথিবী সম্পর্কে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভব ও বক্তব্য ছড়িয়ে আছে, সেই সঙ্গে আছে আগের কবিতা গ্রন্থের মতো এক দার্শনিক প্রত‍্যয়ও। তাঁর চিন্তাশীলতা, সজাগতা, অনুভূতিপ্রবণতা কবিতা গুলোকে অন‍্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ ' মাটির মন'-এ এই বৈশিষ্ট্য গুলি আরো গভীর ভাবে পরিস্ফুট। এই ধারা আরও এগিয়ে গেছে ‘ঘাস রঙয়ের আকাশ’ ও ’৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি’ কবিতাগ্রন্থে। পরে যা মহাকাশ স্পর্শ করতে পারতো কিন্তু তার  আগেই থেমে গেল কবির কলম। 'মাটির মন'-এ এই ধারাটির একটু পরিচয় নেওয়া যেতে পারে:

' যে-কোনো একজন মানুষ যে-কোনো একটাই পথ পার হয়ে যেতে পারে।
যে-কোনো মানুষের জন্য যে-কোনো একটাই পরিচয় রাখে পৃথিবী।
হাজার হাজার বছরের ব‍্যবধানে কনফুসিয়সকে আমরা যেভাবে দেখেছি
সেভাবে দেখা সম্ভব ছিলনা বুদ্ধকে।

তবু শেষ অঙ্গীকারে বুদ্ধ যেভাবে পরিনির্বাণের কথা বলেছিলেন
সেই এক কথাই ঘুরিয়ে বললেন কনফুসিয়স।
সবার উপরে এক অনন্ত জ্ঞানের রাজ‍্যে এভাবেই দু'জন মানুষ
কখন যে এক হয়, আমরা জানিনা।'
 (দু'জন মানুষ : মাটির মন)


এই কবিতাটি পড়ার পর দু একটি চিঠি পড়া দরকার। পঞ্চাশের বিশিষ্ট কবি আলোক সরকারও তাঁর মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন অশোক মহান্তীকে লেখা কিছু ব‍্যক্তিগত চিঠিতে। আপাতত দুটি চিঠি উদ্ধার করছি। প্রথম চিঠিটি লেখা ১৬. ৪. ৯৬, ।
১.   প্রীতিভাজনেষু,
     যে আর্ত প্রশ্নাতুর ও সংবেদনশীল মন 'মাটির মন' কাব‍্যগ্রন্থের কবিতাগুলির রচয়িতা, তার সঙ্গে সহজ সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছি। আপনার কবিতায় অতীতচারিতার যে স্ফূর্তি আছে তা সর্বকালীনতাকে স্পর্শ করেছে। ' মাটির মন' -এর রচয়িতা আমার একজন প্রিয় কবি, আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন। অনন্ত জ্ঞানের রাজ‍্য অর্থাৎ প্রজ্ঞার উদ্ভাসনে শেষ পর্যন্ত চিরকাল ও ক্ষণকালের সব অভিধা মুছে গিয়ে যে অনন্ত বর্তমান সুস্থিত হয় ' দুজন মানুষ' কবিতায় আপনি হয়তো তাকেই চিহ্নিত করেছেন - সেই বর্তমান আমার আজন্ম বাসভূমি।
ভালোবাসা আর শুভকামনা।
     আলোক সরকার

২.   প্রীতিভাজনেষু,
      ' ঘাস - রঙের আকাশ'  বেশ কিছুদিন আগে পেয়েছি। চিঠিও। 'ঘাস রঙের আকাশ'- এর আত্মনিবিড় সংসার - তার নির্জনতা, সংকট, প্রশ্ন, স্মৃতি, স্বপ্নময় আর্তি মনকে শেষ পর্যন্ত এক ধরনের বিষাদেই ভরে তোলে। যিনি এই কাব্য রচনা করেছেন পাঠককে আক্রান্ত করার তার সহজ ক্ষমতা আছে। আমার অভিনন্দন জানাই।...
    ভালোবাসা।
     আলোক সরকার

 ‘দু’জন মানুষ’ কবিতাটি পড়ার পর নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের আর একটি চিঠি উদ্ধৃত করতেই হবে। চিঠিটি লেখা হয়েছিল অশোক মহান্তীকে ২৬ মার্চ  ১৯৯৬ সন্ধ্যা মেঘ হাওয়ার মুহূর্তে।
অশোক
কল‍্যাণীয়েষু,
বেশ পরিণত হয়ে উঠেছে তোমার বোধ। চিন্তা ভাবনায় এক আশ্চর্য রকমের গাঢ়তা এসেছে, না হলে কি 'দু'জন মানুষ'- এর মতো কবিতা রচনা করা যায়? এ জাতের প্রগাঢ় কবিতা - সৌন্দর্য, স্মৃতিবিশ্ব, পায়রা, বামা, শিল্প, গ্রীষ্মরাত্রি।
এ জাতের কবিতা জীবনে খুব বেশি লেখা যায় না। এঁদের তোমার মনের সংসারে যে রেখেছিলে আজ দেখো - তোমাকে ছাড়িয়ে চলে গেছে। মহৎ সৃষ্টির ধর্মই এই যে তা পিতাকে অতিক্রম করে যায়। পিতা ভাবে এগুলি তো সাধারণ। এর আর কী এমন ঐশ্বর্য। কিন্তু আসলে তা নয়।

'মাটির মন'- এ বহু কবিতাই কবি ও কবিতা উপলক্ষে লিখেছো। এগুলি আমার মতে জগৎ ও জীবনকে দেখবার তৃতীয় ভূমি বা তৃতীয় নয়ন। এতে এক ধরনের গোত্র বোধ কাজ করে থাকে যার ফলে অমায়িক ব‍্যক্তি নিরপেক্ষ সহজে বেদনা বা সহজ আনন্দ ফুটে ওঠে। এখন তুমি মানসিক ভাবে যেখানে আছো তাতে তুমি এই নিপুণ কাজটি করতে পারো বলেই আমার মনে হয়েছে।
এছাড়া কতগুলি কবিতার শেষ লাইনে দেখছি কবিতাটির মূল বক্তব্যকে এনে বসিয়ে দিলে যেমন- মৃত্যুরিক্ত, জন্মমৃত‍্যু, সিদ্ধান্ত, তৃষ্ণা ইত্যাদি। এই সব সারকথা সমগ্ৰ কবিতার রহস্য, মায়া, ভাব ও দর্শনের আবরণ।
তবু বলবো অশোক এ গ্রন্থে মনোযোগ এবং কোথাও কোথাও বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।  সাধনার ক্ষেত্রটি ক্রমেই প্রস্তুতির দীপে লাবণ্যময়ী হয়ে উঠেছে। এবার দেখো যদি একটি চিরপ্রবহমাণ সুরের দিশা পেয়ে যাও তো তোমার নারায়ণদা শান্তি পাবে। 
                      প্রীতি
                      নারায়ণদা

  অশোক মহান্তীর কবিতায় এই দার্শনিকতার মূলে সৃষ্টি স্থিতি লয় সম্পর্কিত ভাবনা গভীরভাবে কাজ করেছে। এই তাত্ত্বিক মানসিকতা পৃথিবী জুড়ে বয়ে চলা রক্তের হোলিখেলা, অরাজগতা, মানবাত্মার অবমাননা ও অবমূল্যায়নে, ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক পিপাসায়, প্রেমে, হতাশায়, যন্ত্রণায় দগ্ধ হওয়া হৃদয়ে শুশ্রূষার বার্তা দেওয়ার ভাষা জুগিয়েছে। সৃষ্টি রহস্যে মগ্ন থেকে, মহাজাগতিক ঐশ্বর্যের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহে গূঢ় কল্পনার জগতে বিরাজ করে, চারপাশে মুখ ও মুখোশের দ্বন্দ্বে, মুখোশের অরণ্যের মাঝে প্রকৃত মুখ খুঁজে বেড়ানোর পথশ্রমে ব্যাকুল হয়ে তিনি কবিতার পংক্তিতে পংক্তিতে ফুল ফোটান, জন্ম দেন সঙ্গীতের।
   তাঁর দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে বহুদূর। সমগ্র পৃথিবীর পথে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আক্রোশ ও আগ্রাসনের লোলুপ চাহনি তাঁকে ভীত ও সন্ত্রস্ত করেছে। সেই প্রলয় ঝড় থেকে বাঁচার জন্য তিনি নতুন পৃথিবী খোঁজার স্বপ্নে বিভোর। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা ও অনুশীলনে, সমতাবিধানের চেষ্টায় ও কল্পনায়, উপনিষদ ও পুরাণ ভাবনায় নিমজ্জিত হয়ে ও আধুনিকতায় তিনি নিজেকে বিশ্বপথিক করে তোলেন। জগতের কার্যকারণ ভাব নিয়ে তাঁর চিন্তার সমুদ্রে প্রতিনিয়ত ঝড় ওঠে। আত্মতত্ত্ব, পরকালতত্ত্ব, ঈশ্বরতত্ত্ব, অদৃষ্টতত্ত্ব তাঁর প্রতিদিনের সকাল সন্ধ্যার আলোচনার বিষয় হয়। তিনি যতই নিজেকে নাস্তিক বলুন না কেন আস্তিক্যবোধ না থাকলে চারদিকে এত পতন, এত ধ্বংসের মাঝে, এত রক্তপাত ও মানবতার অপমানে জাতির শুদ্ধতা রক্ষার বাসনায় তিনি শব্দের প্রদীপ জ্বেলে অন্ধকার সরাতে চাইতেন না। এই পথেই তাঁর চেতনায় ও কবিতায় ঈশ্বরের অনুপ্রবেশ।
                    ( ক্রমশ )

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments