জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা, পর্ব- ৫, তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

রম্য কবিতা, পর্ব- ৫, তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

চিত্র- কবি

(১)
পেঁচার প্যাঁচ

জীবনে প্রথম তাকে দেখে বিভ্রান্ত -
ব্রহ্মমুহূর্তেই হবো- তা কে জানতো!
ডাগর নয়ন তার, মুখশ্রী কমনীয়,
গ্রীবাভঙ্গিও বিস্ময়কর, নমনীয়!
ফিরিয়েই ছিলো মুখ, আভাসে সতর্ক,
“ব্যাধ আমি নই”- বলে পাতি সম্পর্ক।
মুখ ঘুরে গেলো তবু শরীর ঘোরায়নি!
আমিতো ভয়েই কাঠ, রাতও যে ফুরায়নি!
ধাতস্থ হয়ে ভাবি - এ কিকোরে সম্ভব!
শুধালুম যা যা হয়েছিলো মনে উদ্ভব।

“একশত আশি ডিগ্রীই ঘোরে ঘাড় আমার,
সেখানেতে প্রায় দুশো সত্তর যে তোমার!
ছেঁড়েনা ঘাড়ের শিরা-ধমনী আবর্তনে?
রক্ত জমাটও বেঁধে যায়না ব্যাবর্তনে!
চলচ্ছক্তিলোপ, লোপ চৈতন্যের -
হুট্‌ করে হয়ে যেতো এতোখনে অন্যের!”

সে বোঝালো, “হে বালক, অদ্ভুত কিছু নয়,
গঠন ভিন্ন হলে উপায়ও ভিন্ন হয়।
বৃহদ্ধমনী যারা ঘি’তে বয় রক্ত,
কশেরুর কাছে- তাই ঘোরা নয় শক্ত।
ঘূর্ণন কেন্দ্রের থেকে দূরে হলে দায়,
তাইতো তোমার ঘাড় ঘোরে কম, অসহায়।
ধমনীর ব্যাস যতো - তার থেকে দশগুণ,
কশেরুকা-ছিদ্রয় ফাঁকা থাকার দরুন –
বায়বীয় গদি পায় সামলাতে মোচড়ে,
টান পড়েনাকো বেশি, যদিও ঘাড় ঘোরে।
বৃহদ্ধমনীগুলো মস্তিষ্কে তোমার,
সরু হয়ে যায় শেষ হলে শাখাবিস্তার।
আমার সে ধমনীরা ফুলে গিয়ে প্রান্তে,
আপৎকালেও পারে রক্তকে টানতে।
সংকোচনীয় রুধিরাধারওলা ধমনী -
ছাড়া কৈশিকা শিরা আছে বহু এমনই,
বিকল্প পথ হিসেবে নয় তারা মন্দ -
রক্ত-জোগানে যদি আসে প্রতিবন্ধ। ”

“ধন্যবাদ জানাই, ভয় হলো নিবারণ,
এতো নমনীয়তার বুঝলাম কি কারণ।
শুনেছি তোমার কতো কাহিনী ও গল্প,
বুঝি কুসংস্কার, মিথ্যে, বিজল্প।”

অক্ষিগোলক তার ঘোরাবার মতো নয়,
তা’র অভাব ঘাড় বেশি ঘুরেই পূরণ হয়।


(২)
বাংলায় কম পাওয়া কবি

শুনেছি কবিতা লেখে ও পাড়ার মদনা!
এমনিতে ছেলে ভালো অতোটাও বদ না।
বাংলা পরীক্ষায় কম পেয়েছিলো সে,
আজকাল কি জানি কি ছাই-পাঁশ লিখছে!
যদিও কবিতা শুনে চোখ কারো বোজেনি,
কবিতা না ধাঁধা ছিল - অতো কেউ বোঝেনি।
রহস্যে মোড়া নাকি শব্দের আয়না,
শুঁকে তো গদ্য লাগে তবু বলা যায়না।
কজনই কবিতা বোঝে! যা শোনায় তা শোনে,
না বুঝেই বসিয়েছে কবিদের আসনে।
নিজের এলাকা ছাড়া খ্যাতি তবু হল কই!
কবিনাম পেতে তাই শুনেছি ছাপছে বই।
বই নয়, বই নয়, পত্রিকা কবিতার,
সে’ই যে সম্পাদক, সে’ই প্রকাশক তার।
রোজগার কতো হয়, থালায় কি পড়বে!
বই ধরলেও বরমালায় কে ধরবে?


(৩)
ভাঙনের নাম – ‘শর্তাদি দে’

ওহে তারাপদ, "গ্রামে থাকো নাকি থাকোনা!
দেখাও দাওনা, কারো খবরও কি রাখোনা? 
‘ঘাড়-ভাঙা-খগেনের’ হৃদয় ভেঙেছে কাল,
ন’খানা টুকরো হয়ে একেবারে নাজেহাল।
‘হৃদিধাম ভেঙেছে কে’- সে খবর জানতে,
পড়শিরা পাঠালো গোয়েন্দা ধরে আনতে।
জানালায় কান পেতে খোঁচরেরা বুঝেছে,
খগেন বন্ধ ঘরে বসে কাকে খুঁজেছে।
কার নাম আওড়েছে, কাকে গালি দিয়েছে,
তার সে নাটুকেপনা কতদূর গিয়েছে।
‘কে ভাঙন ধরিয়েছে’- জানতেই সন্ধ্যে,
ও গ্রামের ঘেঁটু’দার মেয়ে- ‘শর্তাদি দে’।
প্রেমে তার পড়ে খগা নিবেদন করতেই,
শর্ত রেখেছে শত, দুটো হাত ধরতেই।
প্রতিদিন তালগাছে দিতে হবে উঠতে,
ন মিনিট শ্মশানের ধার ঘেঁষে ছুটতে।
মাঝরাতে মোমবাতি জ্বেলে একা বসতে,
কথা বলে হিব্রুতে- আঁক্‌-টাঁক্‌ কষতে।
‘কার সাথে?’-উল্লেখ করেনি তা যদিও,
চাই তার শকুনির পালকের গদিও।
এরকমই আরো ছিলো বহুতল শর্ত,
শুনে, মেনে নিতে খগা হয় অসমর্থ।"

“কি যে বলো হরিপদ-এ ভাঙা সে ভাঙা নয়,
এ ভাঙন অদৃশ্য, শ্রবণাতীত এ হয়।
বুঝবে কি গোটা-মন কি যে মনভাঙানি!
কি বিষাদ, বিস্বাদ, আহারে! কি গোঙানি।”

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments