জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৮৪

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -৮৪


সম্পাদকীয়,
ছুটি, ছুটি আর ছুটি। গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। ছুটিতে কি করবে, কোথায় যাবে ঠিক করতে পারছো না? সৌমী আন্টির মতো ব্যাঙ্গালুরু, না মহীশূর বা উটি? তোমরা যেখানে খুশি যাও আমি কিন্তু ছুটিতেও পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে খেলব। ঠিক প্রচ্ছদের ছবির বাচ্চাগুলোর মতো। ঋপণ আঙ্কেল রুদ্রপুর গ্রামের ছবি তুলে প্রচ্ছদের জন্য পাঠিয়েছে। দেখেছো দেখেছো রুদ্রপুরের প্রাইমারী স্কুলের ছেলেগুলো ছুটির আনন্দে কেমন খেলছে? আরে তোমরাই কি কেবল খেলবে নাকি, ভূতেরাও খেলে। কোথায়? মৃত্যু উপত্যকায় ভূতেরা গলফ খেলে। বাপরে! শুনে তো আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। তখন আমার এক বন্ধু আমাকে কত সাহস দিল। কেমন বন্ধু? তৃষ্ণা আন্টির গল্পের জয়াবতী আর পুণ্যি যেমন বন্ধু তেমন বন্ধু। বন্ধু বন্ধুই তার যাই নাম হোক। সর্বমঙ্গলা কিংবা পেরজাপতি। তারা কারা? বলব না পড়ে নাও জয়াবতীর জয়যাত্রা। বন্ধুর কথা এখানেই কিন্তু শেষ নয়। পীযূষ আঙ্কেল কাজী নজরুল ইসলামের কথায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কাজী নজরুলের সুসম্পর্কের গল্প বলেছেন। ভানুপ্রিয়া দিদি আবার রবীন্দ্রনাথের কথায় বঙ্কিম চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের কথা ছড়া দিয়ে লিখেছে আবার এঁকেওছে। আর মানসী আন্টি ধনেখালি দিদুর গল্প বলেছে। এসো গল্প শুনতে শুনতে জেনে নিই ধনেখালি দিদু কে। তবে যে যাই সম্পর্কের গল্প বলুক তোমরা কিন্তু আমার ছোট্টবন্ধু। তোমরা কিন্তু জানাতে ভুল না, পৃথা, অনুশ্রুতি আর রাজদীপের আঁকা তোমাদের কেমন লাগল। কেমন? -- মৌসুমী ঘোষ।



ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর  জয়যাত্রা
ষোড়শ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক
 
পুজোর ছুটি
২০
 
আর তো সে মুখ্যু মেয়েমানুষ না, দিব্যি গড়গড় করে বাংলা তো বটেই, সমোসকিতো অব্দি কিছু কিছু পড়তে পারে, তবু পড়ালেখার কোন বিষয় হলেই জয়াবতী পুণ্যিকে শুধোবে, ‘ও পুণ্যি, এটা কী হবে রে?’ পুণ্যির কান ঝালাপালা হয়ে যায় শুনতে শুনতে। ‘কেন, তুই কি কিচু জানিস না নাকি? নিজে পড়ে নে না’
তবে আজকাল সে পুণ্যিকে বিশেষ জিগ্যেস করে না। তার একজন সহায় জুটেছে, পেরজাপতি। সেই যে মেয়েটাকে সতী হওয়া থেকে বাঁচাল তারা। ওর আসল নাম যদিও সর্বমঙ্গলা, কিন্তু সে নামে ডাকতে ভারি বয়ে গেছে জয়াবতীর। কয়েকদিন অসাড়ের মতো থাকার পর প্রথম নাম বলেছিল মেয়েটা ‘সর্বমঙ্গলা দাসী’
শুনেই পিত্তি চটে গেছিল জয়াবতীর। ‘হুঁ দাসী আবার কী? তুই কি আমাদের কালিন্দী ঝির মতো ঘর পোঁছা, বাসন মাজা করিস?’
মেয়েটা ভয়ে ভয়ে বলল ‘তবে কি সর্বমঙ্গলা দেবী বলব?’
‘দেবী আবার কী? তোর কি দশটা হাত আছে? না কপালে একটা চোখ আছে? দেবী হবার জ্বালা বুঝিস? সামনে চুড়ো করে সাজানো সন্দেশ, ফল পাকুড়, একটা মুখে তোলবার যো নেই, সব খাবে ভক্ত আর পিঁপড়ে। দুপুরে বড় বড় থালা ভর্তি করে অন্ন ভোগ যাবে, কত ঘটাপটা, হলদে ভাত, পাঁচ ভাজা, চাটনি পায়েস, কাপড় ফেলে আড়াল করবে, বলবে মা এখন খাচ্ছেন। ও মাগো মা, সব খায় ওই পুরুতঠাকুর আর তার এন্ডি গেন্ডি। দেবী কি দাঁতে কিচু কাটে রে? শুধু সব্বমঙ্গলা। নাহ, এখন ও নাম তোর ভুলে যা। কী মঙ্গল হল শুনি তোর ওই নাম রেকে? এখন থেকে তোর নাম পেরজাপতি’
সেই ইস্তক সবাই, এমনকি জগো পিসি অব্দি ওকে পেরজাপতি বলেই ডাকে, আর কি আশ্চর্য মেয়েটা সাড়াও দ্যায় ওই নামে ডাকলে।
অবশ্য পেরজাপতি ডাক শুনে মেয়েটা কাঁদত প্রথম প্রথম, কি না ওর বিয়ের সময় মন্ত্র পড়া হয়েছিল পেরজাপতি ঋষি, গায়ত্রী ছন্দ। বোকা মেয়েমানুষ। ঘাটের মড়ার সঙ্গে বে আবার বে নাকি?
সে একদিন পুণ্যিকে বলল ‘বুজলি গঙ্গাজল, মনে কত সাদ ছিল তোর আবার ঘটাপটা করে বে দেব, তুই যে একাদশির দিন খিড়কি পুকুরঘাটে গে কাঁদিস, সে কি আমি জানিনে ভেবেচিস? কিন্তু পেরজাপতির কপাল দেকে সে সাদ আমার ঘুচে গেচে। মেয়েমানুষ এত ফেলনা! নিজের বাপ এমন বরের সঙ্গে বে দ্যায়’
পুণ্যি এত পাকা পাকা কতা শুনে রাগতে গিয়েও রাগে না। পেরজাপতির ব্যাপার দেকে তারও হাত পা পেটের মধ্যে ঢুকে গেচে। যদি তারা গিয়ে না পড়ত, তবে তো ও মেয়ে এতক্ষণ ছাই হয়ে বাতাসে উড়চে। এতদিনে সেই ছড়াটার মর্ম বোজে সে।
পুড়বে মেয়ে উড়বে ছাই
তবেই মেয়ের গুণ গাই।
আচ্ছা এই মেয়েমানুষের জীবন এমনধারা কেন? বেঁচে থাকতে বুজি তার কোন গুণ কারো চোখে পড়ে না? এসব কতা আজকাল মাতায় আসে তার, আগে কোনদিন  এসব কতা সে ভেবেই দেকেনি, জয়াবতীর সঙ্গে  থেকে থেকে এইসব হয়েছে।
কিন্তু পুণ্যির সঙ্গে থেকেও পড়ালেকায় বিশেষ মন নেই জয়াবতীর।পড়া এখনো সাপবাঘ তার কাছে।পড়া বাদে যাবত খাটনির কাজ বলো না, জয়াবতী এক পায়ে খাড়া। অবশ্য, এক পায়ের দরকার কি, তার তো এখন চার চারটে পা। ঘোড়ায় চড়তে শিখে তার জীবনটা  ভারি মজার হয়ে গেছে। সে এমনকি ঠাকমা আর খুড়িমাকে টানাটানি করছে ঘোড়ায় চাপার জন্যে। পুণ্যি তাকে আর কত ইশারা করবে ওসব কথা মুখে না আনার জন্যে।
জয়াবতী সে কথা শোনার মেয়ে নাকি? পরে পুণ্যি তাকে বলে ‘হ্যাঁরে গঙ্গাজল, তোর আক্কেলটা কী বল দিকি? ঠাকমা আর খুড়িমা তোর সঙ্গে ঘোড়ায় চড়বে গিয়ে? শাড়ি সুদ্ধু জড়িয়ে হাত পা ভেঙে কী কাণ্ড হবে বল তো’
‘আক্কেল আমার নেই না তোর নেই? তুই ভাবলি কী করে শাড়ি পরে ওদের আমি উটতে দেব ঘোড়ার পিঠে? কী বুদ্ধি তোর পুণ্যি। ওদের জন্যে পেশোয়াজ তয়ের করতে হবে। ওই যে ওদিকে মোচলমান পাড়ায় ইবাদুল খলিফা আছে না? তাকে খবর দিলেই এসে বানিয়ে দিয়ে যাবে’
পুন্যি এবার মরেই যাবে মনে হয়। ঠাকমা আর খুড়িমা পেশোয়াজ পরবে, মুসলমান খলিফার হাতে তৈরি? কী জন্য না ঘোড়ায় চড়ার জন্যে? কোনকালে এমন কতা কেউ শুনেচে?
‘তুই হাসালি যে পুণ্যি। ধম্ম কম্ম তো করিস খুব, এ তো আমাদের ধম্মেই আছে। মা দুগগা এতবড় যুদ্ধুটা করলেন কীসে চেপে শুনি, সিংহের পিঠে চেপেই তো? তা সিংহ তো তোকে পেলে তো কড়মড়িয়ে খবে, ঘোড়া তো খায় ঘাস আর ছোলা। সেই সিংহের পিঠে চেপে মেয়েমানুষ হাওয়াও খাচ্ছে না, যুদ্ধু করছে, আর ঘোড়ার বেলায় যত দোষ। 

ওদের তো হাওয়া খাওয়াতেই পাটাচ্ছি, যুদ্ধু করতে তো আর নয়। পুজোর সময় তো খুব দুগগা ঠাকুরের সামনে চোখ বুজে মন্তর পড়িস’
পুণ্যিকে এত চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলল বটে, কিন্তু দুগগা ঠাকুরের কথায় তার মনটা ভারি অন্যমনস্ক হয়ে গেল।
সোনাটিকরির রোদে সোনা, আকাশ দেখলে মনে হয় যেন  নীলাম্বরী শাড়ি মেলে দিয়েছে কেউ, পাতু কুমোর নির্ঘাত এখন জোর কদমে প্রতিমা গড়তে লেগেছে, ছেলেপিলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে,আর এদিকে তারা কেবল ওষুধ আর অনুপান মেশাচ্ছে, হামানদিস্তেয় মকরধব্জ তয়ের করছে, আর দুলে দুলে পুথি মুকস্থ করছে। পিতাঠাকুরেরই বা কি আক্কেল, একটা পত্তর না চলনদার না, তাঁর মতলবখানা কি? পুজোতে সেই কৈলেস থেকে মা দুগগা চলে আসবেন সদলবলে, আর এই সোনাটিকরি থেকে বোলসিদ্ধি তারা যেতে পারবে না! পিতাঠাকুর না হয় ভুলে যেতে পারেন ছাত্র পড়ানোর ব্যস্ততায়, কিন্তু মা, তিনি কি দুর্গাগতি ভাইটিকে নিয়ে আহ্লাদ করতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছেন তাঁর একটা মেয়েও ছিল! না, তাবলে ভেবো না, এসব নিয়ে জয়াবতী পা ছড়িয়ে কাঁদবে বসে পেরজাপতির মতো, কিংবা পুণ্যির মতো খিড়কি পুকুর ঘাটে গিয়ে ফাঁত ফাঁত করে আঁচলে চোখের জল মুছবে, সেই বান্দা নয় হে জয়াবতী। তার সাহস দেখে স্বয়ং সেনমশাই বলেছেন সুশ্রুতের আমলে জন্মালে সে নাকি শল্যবিদ্যায় খুব নাম করত।
'এই পুণ্যি, শল্যবিদ্যাটা কী লা?;
‘আরে তাও জানিস নে? শরীরের হাড়গোড় ভেঙে গেলে অস্তর করা। বিলেতে নাকি এসব হয়। আমাদের দেশেও জিনিস হত অনেক আগে।‘
মুখ গম্ভীর করে শোনে জয়াবতী। ‘এই ব্যাপার। আমি বলি কী না কী!
কাটা মুণ্ডু জোড়া লাগানো রে পুণ্যি।’
পুণ্যি চোখ গোল গোল করে তাকায়। জয়াবতী ভাব দেখাচ্ছে যেন দুবেলা করে ওরকম।
কথাটাকে পাত্তা না দিয়ে বলল ‘হ্যারে গঙ্গাজল, এখনো কোন পত্তর এল না তো আমাদের পুজোয় বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্যে?’ 
(ক্রমশ)


ছুটির ছড়া
সৌমী আচার্য্য

এবারের গরমের ছুটিতে যাব ভাই উটিতে
খুব হবে ঘুরু ঘুরু প্লেনে করে ব‍্যাঙ্গালুরু
এদিক ওদিক ঘুরে চলে যাব মহীশূরে
বীর টিপু সুলতান প‍্যালেস তার সুমহান
সবকিছু দেখে নিয়ে চড়ব বাসেতে গিয়ে
সুন্দরী অরণ‍্য মডুমালাই সেখানে বীরাপ্পান আর নাই
এইসব পেরিয়ে সবুজের গালিচা সাথে কফি বাগিচা
অপরূপা উটি তার সুন্দরী লেক এখানে নেব মোরা দুটি দিন ব্রেক
ইডলি ধোসা আর সাম্বার,খুব প্রিয় আমাদের সব্বার
বিশাল বাগান আছে পাহাড়ের ধাপে অনেক গাছপালা সেইখানে থাকে
ঝকঝকে রাস্তা চকচকে উটি মন খারাপ হবে ফুরালে ছুটি



ধনেখালির দিদু
মানসী গাঙ্গুলী

ছিলেন তিনি ভারী মজার মানুষ। ছোটখাটো, গোলগাল, শ্যামবর্ণের মানুষটি ১৮ বছর বয়সে দেড় বছরের মেয়ে নিয়ে বিধবা হওয়া সত্ত্বেও এত ফূর্তিবাজ কি করে হন সেটাই আশ্চর্যের। তিনি ছিলেন আমাদের ধনেখালির দিদু। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে ধনেখালিতে তাঁর বাস। আমার মায়ের দূর সম্পর্কের পিসিমা তিনি।

        এই অভাগা মানুষটি, যদিও তিনি হয়ত তা ভাবতেন না কারণ তাঁর হাসিখুশি ভাব দেখলে তা বোঝার উপায় ছিল না। যার যখন প্রয়োজন হত ডাকলেই গিয়ে তাদের দায় উদ্ধার করতেন। আমরা জ্ঞান পৌঁছে ওনাকে দেখছি আমাদের বাড়ী আসা-যাওয়া করতে। দেখেছি ছোট ছোট ভাই-বোন হলে এসে বাচ্চার দেখভাল করতেন। আমাদের বাড়ীতে তিনি কিন্তু বিশেষ সমাদর পেতেন। আমার ঠাকুমা তাঁকে বড়ই স্নেহ করতেন।আসলে আমার ঠাকুমাও ১৭ বছর বয়সে দেড়বছরের বাবাকে নিয়ে দাদুকে হারান। তাই বোধহয় ওনার সঙ্গে একাত্ম বোধ করতেন আর তাই ভালবাসা। প্রয়োজন ছাড়াও ঠাকুমা মাঝেমাঝেই ধনেখালির দিদুকে পোস্টকার্ডে চিঠি পাঠাতেন আসবার জন্য আর উনি এলে আমাদের যে কি আনন্দ হত!ধনেখালির দিদু মানেই গল্প শোনা। এত রসিয়ে রসিয়ে গল্প বলতেন যে আমরা তাঁকে ঘিরে বসে চোখ বড় বড় করে সেসব শুনতাম। কতরকমের গল্প যে ওনার স্টকে ছিল তা বলার নয়।তাড়াতাড়ি পড়া সেরে, খেয়েদেয়েই আমরা জড়ো হতাম ওনার চারপাশে।

       এমন একদিন রাতে গল্প শুনতে বসেছিলাম আমরা মাদুর পেতে ওনাকে ঘিরে। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। উনি শুরু করলেন ভূতের গল্প। তখন টিউবলাইটের অত চল ছিল না, হলুদ বাল্বের আলোই জ্বলত ঘরে ঘরে। মাঝেমাঝে বিদ্যুতের ঝলকানিতে ঘরে আলো খেলে যাচ্ছিল, বাইরে বাজের কড়াৎকর। এমন সময় হল লোডশেডিং, যদিও তখন লোডশেডিং বলে বস্তু ছিল না। ঝড়বৃষ্টিতে কোথাও হয়ত তার ছিঁড়ে পড়েছিল, অতএব রাতের দায়ে নিশ্চিন্দি। সকালে ইলেক্ট্রিক অফিসের লোকেরা এসে সারাবে। অন্ধকার ঘরে ধনেখালির দিদু ভূতের গল্প বলে চলেছেন আর আমরা একটু একটু করে ওনার গা ঘেঁসে বসছি। উনি বলে চলেছেন, "কলকাতা থেকে ছেলে বাড়ী ফিরেছে মাসখানেক পর, জানে না সে গ্রামে মড়ক লেগে কেউ বেঁচে নেই। নিজের বাড়ী গেলে ঠাকুমা সরবত করে দেবার জন্য জানলা দিয়ে ইয়া লম্বা হাত বার করে বাগানের গাছ থেকে লেবু তুলছেন। তাই না দেখে ভয়ের চোটে সে ছেলে দৌড়ে পগারপার। নদী পেরোতে নৌকায় উঠে মাঝির কাছে শোনে গ্রামে কেউ বেঁচে নেই, যিনি লেবু তুলছিলেন উনি ঠাকুমার ভূত। শুনে তো সে ছেলে আঁতকে ওঠে, ভাবে খুব জোর ভূতের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। তারপর পাড়ে উঠলে মাঝি তার উল্টো পা দেখিয়ে বলে, 'আঁমিও তোঁ আঁর বেঁচে নেঁই, মঁরে ভুঁত হঁয়ে গেঁছি।' এসব দেখে সেখানেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।" আমাদেরই তখন অজ্ঞান হবার উপক্রম। গলা শুকিয়ে কাঠ। আমরা তখন কেউ ধনেখালির দিদুর হাতটা জড়িয়ে বসেছি, কেউ কাপড়টা খামচে ধরে আছি আর ছোটজন তাঁর কোলে উঠে বসে পড়েছে। তারই মধ্যে সবাই আমরা সেই অন্ধকারেই নিজেদের পায়ে হাত দিয়ে চেক করে নিলাম পা ঠিক আছে কিনা। এমন সময় ঘরে হ্যারিকেন এসে পৌঁছাল, আবছা আলোছায়ায় পরিবেশটা আরো যেন ভূতুড়ে হয়ে উঠল। এদিকে ভয়, এদিকে ভূতের গল্প শোনার লোভ। এরপর 'গোখুরো ভূতের' গল্প শোনার সময় হ্যারিকেন হাওয়ার দাপটে নিভে গেল। ঘরে টাঙানো একটা ছবি পড়ে খানখান হয়ে গেল। আমরা তখন বুঝে গেছি এসব ভূতের কীর্তি। ঘরের ভেতর ভূতের অস্তিত্বও যেন টের পাচ্ছি। সে এক ভূতুড়ে পরিবেশ।

       সে দিনগুলো আর ফিরে আসে না। এত লোডশেডিংয়েও ভূতেদের দেখা নেই, তারাও মরে ভূত হয়ে গেছে। আর এমন ধনেখালির দিদুরাও আজ উধাও।




বিশ্বকবি 
ভানুপ্রিয়া মাহাত
নবম শ্রেণী
জওহর নবোদয় বিদ্যালয়
পশ্চিম মেদিনীপুর

কোলকাতার জোড়াসাঁকোয় 
জন্ম এই মহান কবির,
গীতাঞ্জলি লিখে যিনি
হয়েছেন নোবেলজয়ী ।

বাঁধাধরা স্কুলের নিয়ম 
ভালো লাগত না তাঁর ,
তাঁর নামেই স্বর্নাক্ষরিত
সপ্তাহের একটি বার ।

প্রথম লেখা বের হয় তার
  " জ্ঞানকুর" পত্রিকায় ,
কবিতা লেখা দেখার পর
বঙ্কিম দেন মালা গলায় ।

দুটি দেশের জাতীয় সংগীত 
তারই হাতে লেখা,
বিষ্ণু চক্রবর্তী ও যদু ভট্টের
কাছে গান শেখা ।


তারই এক অমর কীর্তি 
শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী ,
প্রত্যেক বাঙালির গর্ব যিনি
কবিশ্রেষ্ঠ বিশ্বকবি ।

ধারাবাহিক ভ্রমণ
মৃত্যু উপত্যকার গহ্বরে
মলয় সরকার

শেষ পর্ব

যাই হোক, আমরা যেখানে পৌঁছালাম, সেখানে মাটিটা যেন ফুটিফাটা হয়ে আছে।একটা কাঠের ফুটবোর্ড করা আছে দর্শকদের হাঁটার জন্য।কাছে অল্প জল জমে আছে এক জায়গায়। এই জায়গাটার নাম ' Bad water basin'। হাসি পেল। জলই তো প্রায় নেই এখানে, তার আবার Bad Water !!এই জলটাও মোটেই গভীর নয়। হয়ত পায়ের পাতা ডুবতে পারে এতটুকুই। কিন্তু তাতেও এত নানা ধরণের নুন আছে যে বলা যাবে না। চারিদিকে শুধু নুন আর নুন। আসলে এই মাটি বালি যা দেখছি সবই নুন, নানাধরণের নুন।এগুলো  যে আমাদের খাবার নুন, তা কিন্তু ভেবে বসো না।এগুলি অন্য নানা খনিজ নুন।

  চারপাশে তাকিয়ে দেখি, দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে চারদিক ঘিরে উঁচু শুকনো পাহাড়ের সারি।যেন এই সুবিশাল সমতলের মত উপত্যকাকে চারদিকে দূর্গের মত ঘিরে রেখেছে পাহাড়ের দল। সামনের বোর্ডে লেখা রয়েছে, তাকিয়ে দেখুন, আপনার পিছনের পাহাড়ের গায়ে চিহ্ন দেওয়া আছে সমুদ্রতল কোথায়। দেখলাম সত্যিই পাহাড়ের গায়ে অনেক উঁচুতে সমুদ্রতলের চিহ্ন দেওয়া আছে। এরকম ব্যাপারটা যে হতে পারে ধারণা ছিল না।

চারদিকে দেখি, যে, সব মাটি ফুটিফাটা হয়ে আছে। তার ধরণধারণ কিন্তু আমাদের গ্রামের মাঠের মত নয়। আসলে এগুলো তো মটিই নয়। এই কাঠের ফুটবোর্ড কিছুটা যাওয়ার পরই থেমে গেছে।অর্থাৎ তার পর থেকে হেঁটে যাওয়া যাবে এই জমির উপর অনেক দূর।এই হাঁটার জায়গাটা, ওই সব বড় বড় উঁচুনীচু পাথরের টুকরোকে গুঁড়িয়ে সমান করে রাখা আছে বেশ কিছুদূর পর্যন্ত।নীচু হয়ে ভাল করে হাত দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম ওই উঁচুনীচু পাথরের চাকগুলি কেমন।দেখি ওগুলো আসলে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক নুন জমাট বেঁধে রোদের তাপে শুষ্কতায় এরকম হয়ে গেছে। আর হয়ত লক্ষ লক্ষ বছর আগে কোন সমুদ্র ছিল এখানে, যা শুকিয়ে গিয়ে, বহুযুগের পড়ে থাকা জমা লবণের থেকে নানা বিবর্তনের ফলে এরকম এক ভূপ্রকৃতির সৃষ্টি হয়েছে।এ গুলো কেমন দেখতে তা বোঝাবার জন্য হয়ত বলতে পারি, একটা জমি চাষ করার পর যদি সেটা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়, তাহলে যেমন দেখতে লাগবে অনেকটা তেমন। তবু ঠিক বোঝানো গেল না। এর উপর দিয়ে হাঁটা যাবে না এতই অসমান।এগুলো ভীষণ শক্তও বটে। সাদা লাল বেগুনী হলুদের মিশ্রণে নানা রঙের এই সব নুনের চাঁইগুলো।  তার থেকেও বড় কথা এই এবড়ো খেবড়ো শক্ত পাথরের উপর পড়ে গেলে হাত পা মাথা ছড়ে ভেঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। চারপাশে শুকনো পাহাড়ের গায়ে নানা পাথুরে  রঙ্গে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য্য লাগছে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে এগোলাম সেই ভাঙা নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে।রাস্তার দুধারে পড়ে রয়েছে সেই নুনের পাথরের চাঁই।

পাহাড়ের পাথর দেখে বুঝতে পারছি যে, এগুলো কোন এক সময় হয়ত  আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তৈরী হয়েছিল। এখানে তো আগ্নেয়গিরি ছিলই। আমাদের সবাইয়ের বেশ কিছু ছবি তোলা হল এখানে। 

হাওয়া দিচ্ছে অল্প ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা, তবে বেশ ভাল লাগা আবহাওয়া। কোন কোন জায়গায় দেখি ধবধবে  সাদা নুন জমাট বেঁধে আছে অনেকখানি জায়গা জুড়ে। চারিদিকে যেন সাদা ফুলে ভরে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, মৃত্যু উপত্যকায় চারিদিকে এক  অদ্ভুত নিস্তব্ধতা খেলা করে যাচ্ছে। হাওয়া ছাড়া আর কোন শব্দ নেই।এমন জনশূন্য এলাকায়, রাতে যদি কাউকে ছেড়ে দেওয়া হয়, সে কিন্তু ভুতুড়ে জায়গা বলে বিশ্বাস করতে বাধ্য।কারণ এখানে রাতে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই। হাওয়ায় ভাসে নোনা গন্ধ আর মাঝে মাঝে গরম হাওয়ায় এই সব নুনের পাথরের  আপনা আপনি ফেটে যাওয়ার শব্দ।হয়ত চারিদিকে ঘুরে বেড়াবে যত দিনের বেলায় লুকিয়ে বা ঘুমিয়ে থাকা নিশাচরের দল। 
 তখনকার সেই কথা মনে করে আমার একটু গা শিউরে উঠল বৈকি!  

এই বিচিত্র জায়গা ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। এরও যে একটা টান আছে এবং আমি তাতে বাঁধা পড়ে যাচ্ছি বুঝলাম। ছেলে বলল, এখনও অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখার আছে, তাড়াতাড়ি না গেলে দেখা যাবে না। অগত্যা এগোতেই হল। এই উঁচুনীচু এবড়ো খেবড়ো বিশাল জায়গাটাকে বলা হয় মজা করে, ‘শয়তানের গলফ খেলার জায়গা’ (Devil’s Golf Course), কারণ ঐ জায়গায় তো আর মানুষ খেলতে পারবে না, ওখানে শয়তান বা ভূতেরাই খেলতে পারবে। মানুষের গলফ খেলার জন্য চাই সুন্দর পরিষ্কার সবুজ ঘাস ওলা মাঠ।এই জায়গাটার কথাই ঐ রেঞ্জার ভদ্রলোক বলেছিলেন।কেন বলেছিলেন তা ভাল করেই বুঝলাম। 

এখান থেকে গেলাম আর একটি অদ্ভুত সুন্দর জায়গায়।তার নাম হচ্ছে, (Zabriskie Point) জাব্রিস্কি পয়েন্ট। এখানে নীচু নীচু পাহাড়ের উপর এত কোঁচ কোঁচ এবং হলুদে লালে সোনালীতে মিশিয়ে এত সুন্দর পাথরের রঙ যে মনকে নাড়া দেবেই। ভীষণ ভাল লাগল পাথরের উপর এই কারুকাজ দেখতে। আমরা সবাই সেই ছোট টিলার মত পাহাড়ের উপর উঠে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। আসলে এখানে চারিদিকেই পাথরের এত সৌন্দর্য যে বলে বোঝানো যাবে না।এখানের আসল সৌন্দর্য হল সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়। তখন সূর্যের লাল রঙ এখানের পাহাড়ের পাথরে পড়ে এত সুন্দর সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি হয় তা অবশ্যই মন ভরিয়ে দেয়।তবে আমাদের এর কোনোটাই দেখা হবে না, সে সময় নেই।বলা হয় এগুলির তৈরী হয়েছিল ৫০ লক্ষ বছর আগে।এখানকার এই সৌন্দর্য্যের জন্য এখানে বহু সিনেমার সুটিং হয়েছে। গিয়ে দেখি একটি বাচ্চা মেয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে এই  সব পাথরের দিকে। হয়ত মা বাবার সঙ্গে এসেছে, পাথরের রঙ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে। আমাদের দেখে ফিক করে হেসে ফেলে লজ্জা পেয়ে দৌড় লাগাল পরিবারের লোকজনের কাছে। 

সেখান থেকে গেলাম আর একটি জায়গায়। গিয়ে দেখি প্রাচীন দিনের কয়েকটি রেলের মালগাড়ির মত ছোট ছোট  কাঠের তৈরী ডাব্বা সরু একটা রেল লাইনের মত লাইনে দাঁড় করানো আছে। এছাড়া পড়ে আছে কিছু ভাঙ্গা ঘর ও কাজকর্মের  পড়ে থাকা চিহ্ন। আসলে এখানে এক সময়ে প্রচুর মানুষ এসেছিল। সেটা ১৮৪৯-৫০ সাল। যখন সারা পৃথিবী থেকে ভাগ্যসন্ধানী মানুষ গোটা আমেরিকা ঘুরে খুঁজে বেড়াচ্ছিল কোথায় সোনা পাওয়া যায়। ইতিহসে এই সময়টা চিহ্নিত হয়ে আছে ‘গোল্ড রাশ’ নামে। তোমরা বড় হয়ে এর সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারবে। বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক চার্লি চ্যাপলিনের একটি সিনেমা আছে এর উপর। এ ছাড়া প্রচুর বই পত্র এবং গল্প লেখা হয়েছে এই গোল্ড রাশের উপর। 

তখন এখানে মানুষ খুঁজছিল কি পাওয়া যায়। তারা পেয়েছিল, নানা খনিজ দ্রব্য।তার মধ্যে বোরাক্স একটা উল্লেখযোগ্য জিনিস। এই বোরাক্স নানা ওষুধে তো বটেই, তাছাড়া সোনা গালানোর কাজেও লাগে। তারা এই বোরাক্স এখান থেকে ২০টা খচ্চরে টানা গাড়ী করে নিয়ে যেত রেল স্টেশনে পৌঁছাতে। এখানে গড়ে ওঠে হারমনি বোরাক্স কোম্পানী। এছাড়াও আরও কোম্পানী গড়ে ওঠে। কিন্তু এখানের এই প্রচণ্ড গরম, ঠাণ্ডা, ও নানা প্রতিকূল পরিবেশে খনির কাজ চালানো খুব মুস্কিল ছিল। খুব বেশি দিন চলেনি এই সমস্ত কাজ। তারই পরিত্যক্ত ঐ সব গাড়িগুলি আজ দর্শনীয় বস্তু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ইতিহাস খুব ভালবাসি। তাই ঐ পুরানো দিনের কাঠের গাড়ীগুলি ও জিনিসপত্র দেখতে বেশ ভাল লাগছিল।

 হ্যাঁ বলা হয় নি, এই জায়গার নাম মৃত্যু উপত্যকা কেন হল।আসলে ১৮০০ সালে বেশ কিছু ভাগ্য সন্ধানী মানুষ এসেছিল এখানে ।তারা এখানের এই পরিবেশে পড়ে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে অনেক কষ্টে বেঁচে ফেরে।
তবে তাদের মধ্যে একজন মাত্র মারা গিয়েছিল। সেই থেকে তারা এর নাম দিয়েছিল “ডেথ ভ্যালী”। যদিও এর মৃত্যু উপত্যকা বলে বদনাম, আজ পর্যন্ত এখানে এই একজনেরই মাত্র মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা গেছে। এটি আমেরিকার যে মরুভূমির মধ্যে পড়ে তার নাম মোজাভে।

এখান থেকে আমরা গেলাম আর একটি খনির কাছে ।সেটিও পরিত্যক্ত  এবং সেটি সোনার খনি।এখানে প্রায় ১৪০ বছর ধরে সোনার খনির কাজ হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনও খুঁড়লে নিশ্চয়ই সোনা পাওয়া যাবে। কিন্তু পার্ক কর্তৃপক্ষ এখানে আর খোঁড়াখুঁড়ি করতে নারাজ, তাই বন্ধ হয়ে গেছে সব।১৯০৭ সালে এখানে সোনা তোলার কাজ প্রায় তুঙ্গে উঠেছিল। দৈনিক ৭০ টন পর্যন্ত সোনার আকর তোলা হত। যদিও এখানে ভীষণ প্রতিকূল পরিবেশে সোনার খনির কর্মচারীদের পক্ষে কাজ করা ছিল ভীষণ মুস্কিল, তবু এই খনির কাজ চলেছিল এই সেদিন পর্যন্তও। ১৯৪২ সালে শেষ কাজ হয়ে বন্ধ হয়ে যায় এটি। এখানে দেখলাম, পড়ে রয়েছে বেশ কিছু খনির কাঠামো, সিঁড়ি, কর্মচারীদের থাকার ঘর ও নানা যন্ত্রপাতি। শুনছি নাকি আবার কিছু কিছু জিনিস নতুন করে সাজানো হচ্ছে।

 হ্যাঁ এবার বলি আর একটি কথা, যা সত্যিই ভূতুড়ে। মৃত্যু উপত্যকার এত ভয় ধরানো নাম আর ভূতুড়ে কিছুই থাকবে না, তা আবার হয় নাকি! আমরা দেখলাম বেশ কিছু পাথর, যেগুলো বেশ বড় বড়, অসমান কিন্তু বালি বা পাথরের উপর দাগ দেখে বোঝা যাচ্ছে, সেগুলো চলে এসেছে মাটির উপর দিয়ে ঘষে ঘষে অনেক দূর।দেখে যেন মনে হয় , কেউ ঘষে ঘষে পাথর গুলো টেনে এনেছে মাটির উপর দিয়ে। এই পাথর গুলোকে আসলে কিন্তু কেউ আনে নি, নিজেই চলে এসেছে। মানুষ বহুদিন লক্ষ্য করেও কিছুতেই বুঝতে পারে নি, কি করে ব্যাপারটা হচ্ছে, পাথর নিজে নিজে চলছে কি করে! এটাকে তখন ভূতুড়ে মনে করা হত বা অপদেবতার কীর্তি বলে মনে করত মানুষ। কত  মানুষ সারা দিন রাত বসে থেকে লক্ষ্য করেও কিছুতেই ধরতে পারত না যে,  কি করে অত ভারী ভারী পাথর নিজে নিজে অত অসমান পাথরের জমির উপর দিয়ে নিজে এত দূর আসতে পারে। আর  দূরটাও তো কম নয়, এক একটা পাথর প্রায় ১০০০-১৫০০ ফুট পর্যন্তও যেতে পারে নিজে নিজে। অনেকে আবার এঁকে বেঁকে চলে, কেউ চলে সোজা সুজি।  

এই সম্প্রতি, মাত্র ২০১৪ সালে মানুষ এর রহস্য ভেদ করতে পেরেছ এবং বুঝেছে যে এটা কোন অপদেবতা বা ভূতের কারসাজি নয় এর পিছনে আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। সে তথ্যে আজ আর যাচ্ছি না। তোমরা বড় হয়ে জেনে নিও এর পিছনের কারণ।

 এখানে তারপর গেলাম আরও বেশ কয়েকটি জায়গায়। তবে দেখলাম এখানকার বিচিত্র পাথরের রঙ গঠন ও মরুভূমির বিচিত্র পরিবেশেই এত কিছু হওয়া সম্ভব।যেমন, একটি ছোট ব্যাপার জানিয়ে এখানকার কথা শেষ করছি। তা হল, যখন এখানে রোদ বা গরম বাড়ে তখন এখানে নানা আওয়াজ হতে থাকে।সেগুলো হল, বড় বড় নুনের চাঙড় গুলো রোদ পেয়ে বেড়ে যায় এবুং নানা শব্দ করে  ফাটতে থাকে। সেই সম্মিলিত আওয়াজ এক অদ্ভূত আওয়াজ তোলে বাতাসে। আবার কিছু জায়গায় দেখলাম, ফুটে রয়েছে নানা রঙের জংলী ফুল।
ঘুরতে ঘুরতে একসময় দেখলাম সূর্য ঢলে পড়েছে পাহাড়ের পিছনে, যদিও সত্যি সন্ধ্যা নামতে তখনও একটু দেরী আছে। কিন্তু সূর্য পাহাড়ের পিছনে চলে যাওয়ার অর্থই হল অন্ধকার নেমে আসা। আর অন্ধকার নেমে এলে এখানে আর কিছুই দেখা যাবে না। আমিও সমস্ত দিনটার স্মৃতি মনের মণিকোঠায় বন্ধ করে ফিরে এলাম।
আশা করব তোমরাও বড় হয়ে নিজের চোখে দেখে আসবে এই মজার জায়গা।দেখো নিশ্চয়ই তখন তোমাদের আরও ভাল লাগবে।

সত্যিই ভগবানের রাজ্যে যে কত আশ্চর্য জিনিস বাস্তবে আছে, না দেখলে বিশ্বাস হবে না। তখন মনে হবে মিথ্যে গল্পর থেকেও সত্যি অনেক আশ্চর্য জিনিস আছে, যা অনেক বেশি অবিশ্বাস্য।

স্মরণীয়
(কাজী নজরুল ইসলাম)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার


১৮৯৯ সালের ২৪মে বর্ধমানের আসানসোল মহকুমায় চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। শৈশবের নাম ছিল 'দুখু মিয়া'। বাবা ছিলেন কাজী ফকির আহমেদ ও মা ছিলেন জাহেদা খাতুন। নজরুল ছোটোবেলায় স্থানীয় মসজিদের মক্তবে কুরআন, ইসলাম ধর্ম ও দর্শন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। মাত্র নয় বছর বয়সে বাবা মারা গেলে তাঁর দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই শুরু হয়। যেখানে পড়তেন সেই মক্তবের থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পাশ করে সেখানেই শিক্ষাদান শুরু করেন এবং মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই ধর্মীয় পরিবেশ থেকে যা শিখেছিলেন তা তাঁর সাহিত্যের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। যদিও অল্পদিনেই তিনি এখান থেকে বেরিয়ে এসে স্থানীয় একটি 'লেটো' দলে(রাঢ় বাংলার কবিতা, গান ও নৃত্যসহ নাটক পরিবেশনের দল) যোগ দেন। তাঁর কাকা কাজী বজলে করিম লেটো গান লিখতেন একটি দলে, সেখানে তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন এবং সেখানেই তাঁর গান রচনার শুরু। এছাড়াও লেটোকবি শেখ চকোর এবং কবিয়া বাসুদেবের লেটো ও কবিগানের আসরে তিনি নিয়মিত যেতেন। প্রথমদিকে কিছু লোকসঙ্গীত রচনা করেন তিনি। এই সময় তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যে সহ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও পূরাণ সমূহ পড়াশোনা করেন। ১৯১০ এ তিনি লেটো দল ছেড়ে রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন ও পরে মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে(পরবর্তী নাম নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন) পড়াশোনা করেন। এই মাথরুন স্কুলের তৎকালীন প্রধানশিক্ষক কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের থেকে সাহিত্য রচনার প্রেরণা পান। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন আর্থিক সমস্যায় পড়া ছেড়ে বাসুদেবের কবিগানের দলে যোগ দেন। এরপর কিছুদিন একজন ইংরেজ সাহেবের খানসামা ও কিছুদিন একটি চা-রুটির দোকানে কাজ করেন। ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং পুনরায় একবছর পর সিয়ারসোল স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯১৭ সালে পড়াশোনা ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ও পরে বর্তমান পাকিস্তানের সীমান্তে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের নওশেরায় প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ৪৯বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক হিসেবে প্রায় আড়াই বছর সৈনিক জীবন কাটান। উক্ত সেনানিবাসে একজন পাঞ্জাবী মৌলভীর  কাছে ফার্সি ভাষা শেখেন। এই সেনানিবাসে থাকাকালীন নজরুল বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা), গল্প: হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার প্রভৃতি রচনা করেন। এখানে থাকাকালীন তিনি নানা পত্রপত্রিকা পড়তেন ও লেখাও পাঠাতেন, যেমন- প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী, মর্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত প্রভৃতি। এই রেজিমেন্টের সদস্য হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সেনাবাহিনী ছেড়ে কলকাতা ফিরে আসেন।

      কলকাতা ফিরে ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে মুজাফফর আহমেদ(কাকাবাবু নামে পরিচিত) এর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। এই সময় মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় লিখতে থাকেন। এরই মধ্যে বাঁধন হারা উপন্যাস ও বোধন, শাত-ইল-আরব, বাদল প্রাতের শরাব, আগমনী প্রভৃতি কবিতা বিশেষ সমাদর লাভ করেছিল। ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতন গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাতের ফলে তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরি হয়, এই সুসম্পর্ক সবদিন বজায় ছিল। মুজাফফর আহমেদের সঙ্গে থাকতে থাকতে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যোগ দিয়ে তাঁর মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী চেতনা জাগ্রত হয়েছিল। তিনি সৈনিক থাকাকালীন তুরস্কের নেতা মোস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে সেদেশে যেভাবে নতুন তুরস্ক গড়ার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার প্রতি ভীষণ আকৃষ্ট হয়েছিলেন। রচনা করেছিলেন 'কামাল পাশা'(১৯২১) কবিতাটি। ভারতের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিলেও গান্ধীজির পথের সমর্থক ছিলেন না তিনি। খিলাফত আন্দোলনের অসারতা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর আক্ষেপ ছিল তুরস্ক যা পারে তা ভারতবর্ষ পারে না কেন! তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বরাজ অর্জনের নেতাজি সুভাষচন্দ্রের পথের সমর্থক ছিলেন। তিনি আজীবন ছিলেন ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি, সংকীর্ণতা, কুসংস্কার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে। হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের ঐক্য ও সংহতি স্থাপনের উদ্যোগে লিখেছেন বলে  অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে, তবুও তিনি ছিলেন অবিচল। অন্যায় ও অবিচার দেখলেই গর্জে উঠত তাঁর লেখনী। ১৯২২ এ 'বিদ্রোহী' কবিতাটি রচনা করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এই বছরেই ১২ আগষ্ট ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন তিনি। এই পত্রিকায় ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক লেখার জন্য জেল খাটতে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর কিছু লেখা ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি নজরুল আকাশবাণী কলকাতা বেতারেও কাজ শুরু করেন। ১৯২৫ এ প্রথম তাঁর গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এই বছরেই তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দক্ষিণ বঙ্গের নানা জায়গায় সভা সমিতিতে যোগ দেন ও প্রচার করেন। এই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর সম্পাদক হিসেবে সাপ্তাহিক লাঙ্গল পত্রিকায় তাঁর সাম্যবাদী কবিতাগুচ্ছ প্রকাশ করেন। ১৯২৬ এ কৃষ্ণনগরে থাকাকালীন গণবানী পত্রিকায় এপ্রিল মাসের সংখ্যায় 'কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল' ও 'রেড ফ্ল্যাগ' অবলম্বনে রচনা করেন 'জাগো অনশন বন্দী' ও 'রক্ত পতাকার গান' ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় প্রথম গজল রচনার কৃতিত্বও তাঁর। ১৯২৮ থেকে ১৯৩২ পর্যন্ত তিনি এইচ. এম. ভি. গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গীত রচয়িতা ও প্রশিক্ষক রূপে যুক্ত ছিলেন। ১৯২৯ সালেই কলকাতা বেতার থেকে প্রথম অনুষ্ঠান প্রচার করেন তিনি। তাঁর নিজের রচিত 'নারী' কবিতার তিনি প্রথম রেকর্ডিং করেছিলেন। অসংখ্য নাটকের জন্য গান রচনা ও সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।১৯৩৩ এ তিনি কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থ অনুবাদ করেছিলেন,যেমন- রুবাইয়াত-ই-হাফিজ, রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম এবং কাব্য আমপারা। ১৯৩৪ এ 'ভক্ত ধ্রুব' নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। এই চলচ্চিত্রে তিনি সঙ্গীত রচনা, সুর সংযোজনা, সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেতা হিসেবেও কাজ করেছিলেন। এছাড়াও বহু চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত রচনা ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। কলকাতা বেতারে তিনটি অনুষ্ঠান তত্ত্বাবধান করতেন তিনি - 'হারামনি', 'মেল-মিলন' এবং 'নবরাগমালিকা'। ১৯৪১ এ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হলে তৎক্ষণাৎ লিখেছিলেন 'রবিহারা' এবং 'সালাম অস্তরবি' কবিতা। 'রবিহারা' কবিতাটি বেতারে আবৃত্তি করে কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন তিনি। তিনি 'ঘুমাতে দাও শ্রান্ত রবিরে' লোকসঙ্গীতটিও লিখেছিলেন এই সময়ে। ১৯৪২ সালে রেডিওর অনুষ্ঠান করার সময়ই হঠাৎ বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। ঐ বছরের শেষের দিকে হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল বলে তৎক্ষণাৎ বিদেশে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। পরে দেশে এবং ইংল্যান্ড, জার্মানি ও ভিয়েনার নামকরা সব স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখলেও তাঁর সুস্থ হবার কোনো আশা দেখাতে পারেননি। জীবনের শেষ ৩৪ বছর এভাবেই কাটে তাঁর।

    কবিতার জগতে তিনি 'বিদ্রোহী কবি' গানের জগতে 'বুলবুল'। তাঁর রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ও গানের সংকলন হল 'অগ্নিবীনা', 'দোলন চাঁপা', 'বিষের বাঁশি', 'ভাঙার গান', 'চিত্তনামা', 'ছায়ানট', 'সাম্যবাদী', 'ফনি মনসা', 'সিন্ধু হিল্লোল', 'সঞ্চিতা', 'বুলবুল', 'জিঞ্জীর' প্রভৃতি। গল্পের সংকলন 'রিক্তের বেদন', 'শিউলিমালা', উপন্যাস 'বাঁধন হারা', 'মৃত্যুক্ষুধা',  'কুহেলিকা' এবং নাটিকা 'ঝিলিমিলি' ও গীতিনাট্য 'আলেয়া' তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কীর্তি। ছোটদের জন্য তাঁর খুকি ও কাঠবেড়ালি, লিচুচোর, খাঁদু দাদু প্রভৃতি কবিতা উল্লেখযোগ্য।

    ১৯৭১ এ বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের বিশেষ অনুমতিক্রমে কাজী নজরুল ইসলামকে সেদেশে নিয়ে যান ১৯৭২ এর ২৪ মে। ১৯৭৬ সালে তাঁকে সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিতি দেওয়া হয়। তাঁর রচিত 'চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল' গানটিকে বাংলাদেশ রণসঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করে। ভারত ও বাংলাদেশে তাঁর নামে রাস্তা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমানবন্দর গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকায় তাঁর নামে গড়ে উঠেছে নজরুল একাডেমী। ১৯৪৫ এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাহিত্যের সর্বোচ্চ সম্মান জগত্তারিনী পদক প্রদান করে। ১৯৬০ এ ভারত সরকার দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৭৪ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি লিট দেয়। ১৯৭৬ এ বাংলাদেশ সরকার সেদেশের সবচেয়ে বড় সম্মান ১৯শে পদক দিয়ে সম্মানিত করেছিল কবিকে।

     ১৯৭৬ এর ২৯ আগষ্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


পাঠপ্রতিক্রিয়া
(ছোটোবেলা ৮৩ পড়ে রত্না দত্ত যা লিখলেন)

" জ্বলদর্চি " ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যা ৮৩ র পাঠ প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অনেক চুলচেরা ভাবনাচিন্তার শেষে যখন দেখলাম যে সম্পাদক মহাশয়া মিষ্টি মেয়ে মৌসুমী ( মৌসুমী ঘোষ ) সম্পাদকীয়তেই এক বর্ণময় ও সুন্দর প্রতিক্রিয়া সাজিয়ে উপহার দিয়েছেন পাঠকদের উদ্দেশ্যে সেখানে আমার প্রতিক্রিয়া কতটা ফলপ্রসূ হবে তা আমি সঠিক জানি না তবুও চেষ্টাতে কোনোদিনও গাফিলতি করিনি তাই এই ধৃষ্টতা রাখলাম।

পত্রিকাটির প্রথমেই চিত্রগ্রাহক অমিয় বিশ্বাসের প্রচ্ছদের ছবিটি আমার মনে দাগ কেটেছে। শালিখ দুটি যেন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে ডালের দুদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।দেখে আমাদের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল।স্কুলজীবনে সহপাঠীদের সঙ্গে কথায় কথায় মনোমালিন্য বা ঝগড়া হলে এইরকমই বোধহয় আড়ি মারফত মুখ ঘুরিয়ে বেঞ্চের একপাশে বসে থাকতাম আবার হঠাৎ করে কখন ভাবও হয়ে যেত।

এরপরে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র প্রমিত নস্করের আঁকায় ফুটে উঠেছে ছোট্ট ছেলেটির চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে প্রকৃতির রাজ্যে নৌকো নিয়ে নদীর বুকে ভেসে যাওয়ার চিত্র।

মিতা ঘোষের লেখা ' একটু যদি ..........' কবিতায় সমাজের দারিদ্রতার দৃশ্য ফুটে উঠেছে।অহরহ যা আমাদের চোখের সামনে কোনো না কোনো পরিস্থিতিতে ধরা পড়ে।অবহেলা,অপমান ও লাঞ্ছনার মধ্যে দিয়ে একটি ছোট্ট মেয়ের জীবনসংগ্রামের কথা এবং বিশ বছর পরে দেশের কাজে তার কৃতিত্বের কথা ফুটে উঠেছে।

তৃষ্ণা বসাকের লেখা ধারাবাহিক উপন্যাস ' জয়াবতীর জয়যাত্রা ' বরাবরই পাঠকদের মন জয় করেছে।ভবিষ্যতে আরও চমক আছে নিশ্চয়ই তা আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে জানতে পারব।

এরপরে শুভশ্রী সাহার লেখা ' সামার ভেকেশন ' গল্পে গনা মানে। গনাই এর দুষ্টুমির কথা উপভোগ করার মতো শুধু গনা নয়,গনার মামী,বাবা,মা, মালতী পিসি, বল্লু,দিদা এদের সকলের চরিত্রই অসাধারণ প্রাণ পেয়েছে এই গল্পে।

আমাদের সমাজের ও দেশের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন রাজা রামমোহন রায়।তিনি সতীদাহ প্রথার মতো একটি কলঙ্কিত প্রথাকে রদ করেছিলেন সমাজের বুক থেকে চিরতরে।তাঁকে নিয়েই লিখেছেন পীযূষ প্রতিহার।

মলয় সরকার মহাশয়ের লেখা ধারাবাহিক ভ্রমণ ' মৃত্যু উপত্যকার গহ্বরে ' সত্যিই অসাধারণ।পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে আরও অনেক কিছু জানার অপেক্ষায় আমরা পাঠকরা রইলাম। অবশ্যই আমরা এরইমধ্যে জেনে ফেলেছি লাস ভেগাসের প্রকৃতি ও আবহাওয়ার কথা।আর এই পর্বে ডেথ ভ্যালির প্রসঙ্গটা বেশ চমকপ্রদ।

যাইহোক ছোটো থেকে বড় এককথায় আবাল বৃদ্ধ বনিতাদের জন্য এটি একটি অনবদ্য পত্রিকা।নিজে পড়ুন আর সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।

আরও পড়ুন 

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments