জ্বলদর্চি

ধর্মরাজের গাজন/ভাস্করব্রত পতি


পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক উৎসব, পর্ব -- ২০


ধর্মরাজের গাজন

ভাস্করব্রত পতি


"দেববন্দন, দেয়াশী বন্দন / খাট পা লাঠি বন্ধন / আর বন্দন সরস্বতী গান / ডাইনে ডাকুর বন্ধন / বামে বীর হনুমান / গাজনে যে বাবা আছেন, / তাঁর চরণে প্রনাম"! --  
  ধর্মরাজের পূজার শ্লোক এটি। ধর্মরাজ হলেন গদাপদ্মধারী বিষ্ণু দেবতা। নারায়ণ। "শঙ্খচক্র গদাপদ্ম কৌস্তভ ভূষণ / বনমালা গলে শোভে গরূড় বাহন"! ধর্মরাজ উলুক বাহন হলেও কখনো তাঁকে গরূড় বাহন রূপেও পাওয়া যায়। 

  ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, "So Dharma may be at its basis just a non Ariyan word either Sanskritsed in sound of form or translated into Sanskrit"। ধর্ম শব্দটি কুর্মবাচক অনার্য শব্দ। পরে তা সংস্কৃতে রূপান্তরিত হয়েছে। মূল অনার্যবাচক কুর্ম শব্দটি হল 'দড়ম'। এই দড়ম বা ধরম শব্দ থেকে এসেছে ধর্ম। 

   উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুদের দ্বারা পূজা পেলেও ধর্মঠাকুর আসলে নিম্নশ্রেণীর মানুষের পূজিত দেবতা। নরসিংহ বসু ধর্মঠাকুরের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, "দ্রৌপদীকে পাশায় হারিল ধর্মরাজে / দুশাসন উলঙ্গ করিল সভামাঝে।। / তোমাকে স্মরণ কৈল দ্রোপদ নন্দিনী। / লজ্জা নিবারণে তার করিলে আপনি।। / অহল্যাকে মুক্ত কৈলে আছিল পাষাণ। / গজরাজে মোক্ষণ করিলে ভগবান।।" ড. সুকুমার মাইতির মতে "ধর্ম ঠাকুরের নাম আধুনিক নয়। এই একটি অতি প্রাচীন নাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে পূজা পেয়ে বর্তমান কালে ধর্মঠাকুরে রূপান্তরিত হয়েছে"।    

      
  ড. সুকুমার সেন লিখেছেন, "ধর্মঠাকুরের পূজা চলে এসেছে দেশের তথাকথিত নিম্নস্তরের জনগনের মধ্য দিয়ে। এঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন"। একই মতামত ড. সুকুমার মাইতিরও, "ধর্মঠাকুরের পূজা সাধারণত হাড়ি ডোম প্রভৃতি তথাকথিত নিম্নশ্রেণীর লোকেদের দ্বারা সম্পন্ন হত। কালক্রমে উচ্চশ্রেনীর লোকেরা এই দেবতাটির আরাধনার ভার গ্রহণ করেন। ধর্মঠাকুরের পূজারী বৃন্দের পদবি 'পণ্ডিত' হত। এখনো অধিকাংশ স্থানে এই পণ্ডিত উপাধীকারী লোকেরা দেবার্চনার ভার নিলেও সকলে নিম্নশ্রেনীর লোক নহে"।

  ধর্মরাজের নিত্যপূজাকে 'বালাপূজা'ও বলা হয়। আর ধর্মরাজের সেবাইতদের বলা হয় 'দেয়াশী'। তবে বর্ধমান জেলায় ধর্মরাজের পূজা পালনকারী ভক্তরা 'ভক্ত্যা' নামেই পরিচিত। নিত্য পূজার আগে মূর্তিকে তেল বা ঘি মাখিয়ে তামার পাত্রে রেখে প্রতিদিন মূর্তির মাথায় জল ঢেলে স্নান করানো হয়। নৈবেদ্য থাকে ফলফুলারি, মিস্টি, বাতাসা ইত্যাদি। যেহেতু ধর্মরাজ কখনো হিংসা করেন না তাই গাছ কেটে তার রস থেকে প্রস্তুত খেজুর গুড় তিনি নৈবেদ্য রূপে গ্রহণ করেন না। মানতকারী ভক্তরা এসে পূজা দেন। ছেলের মঙ্গল কামনায় বা গৃহের মঙ্গল কামনায় পূজা দেন। বিশেষ করে চক্ষুরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মানত করেন রোগ নিরাময়ের জন্য। রোগ মুক্তির পর তিনি ধর্মরাজকে সোনা অথবা রূপার চক্ষু দান করেন। এছাড়া কুষ্ঠরোগের নিরাময়েও ধর্মরাজের শরণাপন্ন হতে হয়। কুষ্ঠ নিরাময়ের জন্য ধর্মের থানে অনেকে ‘টোটকা' করেন। সামান্য সরিষার তেল ধর্মের গায়ে ঢেলে দিয়ে নীচে একটি পাত্রে সেই তেল সংরক্ষণ করে গায়ে মাখলে কুষ্ঠরোগ নিরাময় হয় বলে বিশ্বাস। 

  ধর্মরাজের পূজায় ধ্যানমন্ত্র হিসেবে উচ্চারিত হয় -- "ওঁং ধর্মং সৎকাম পাত্রং সকল শুভকরং শ্বেত পদ্মাসবস্থং / নির্লেপং সৎম্প্ৰতিষ্ঠানশ্চ জাগতি পরমানন্দ সন্দিরাপম্  ।। / কৈবল্যং চিৎস্বরূপং ত্রিভুবন সহিত নিগুণ নিরাকারং। / বন্দে কৃন্দেশঙ্খ স্ফটিকমনিনিভং সর্বদাসুপ্রসন্নং / ওঁং পৃষ্ঠভামাদ মন্দমন্দর গিরিগীবাগ্রকল্পনা নিদ্রালোঃ / কমঠাকৃতে ভগবতঃ শ্বাসাণিলা পাণ্ডবঃ ।। / সৎ সংস্কার কল্লানুবর্তন বশাত্বেলা নিভেনাসাং। / যাতায়াত মতত্রিতং জলনিধের্ণাদ্যানি বিশামতি ৷৷" এরপর প্রনাম জানাতে হয় এই মন্ত্র বলে -- "উল্লুকং বাহনঃ ধর্মং শ্বেতপুষ্প সমন্বিতং। / তাম্রতং যোতনাথং ধর্ম্মরাজ নমোহস্তুতে।।" ড. সুকুমার মাইতি উল্লেখ করেছেন, "বাংলাদেশে ধর্মঠাকুরের মূর্তির পরিচয় ও তার পূজা পদ্ধতি আলোচনা করে দেখলে দেখতে পাওয়া যায় যে বিষ্ণু, শিব, মনসা প্রভৃতি বিভিন্ন দেবদেবীর বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে রয়েছে।"

 
  
শিবের গাজনের মতোই ধর্মের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মদেবতার উৎসবকেই বলে "ধর্মের গাজন"। তবে এই গাজনে ঘোড়ার ব্যবহার থাকবেই। ধর্মরাজের পূজার বেদীতে অসংখ্য পোড়ামাটির ঘোড়া উৎসর্গ করা হয়। কিন্তু তা শিবের গাজনে দেখা যায় না। ধর্মের গাজনে ধর্মের সাথে নীলাবতীর বিয়ে দেওয়ার রীতি অনুসৃত হয়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, "ধর্মের গাজনের নাচ গান আর্য ধর্মের নয়। এগুলি দ্রাবিড় বা চিন তিব্বতীয় হতে পারে"। প্রাচীন মিশরীয় রাজা ওসাইরিসের মৃত্যুদিবসে যেভাবে শোক পালন করা হয় তার সঙ্গে ধর্মের গাজনের অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়। শিবের শক্তির মতো ধর্মরাজেরও শক্তি আছে। এই সাদৃশ্য দেখে অধ্যাপক ক্ষিতীশ প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, "There is a tendency in Midnapore to equate Dharma to Shiva by making him husband of a Shakti"। ধর্মঠাকুরের আশেপাশে যে সব দেবতা থাকেন তাঁদের বলে আবরণ দেবতা। একাধিক আবরণ দেবতা এবং কামিনী রূপে কালী, ষষ্ঠী, দুর্গা, শীতলা, চণ্ডী থাকে। ধর্মরাজের আবরণ দেবতা হিসেবে নাম মেলে বিশ্বকর্মা, দক্ষিণরাঢ়, গরুঢ়, নীলপণ্ডিত, শ্বেতপণ্ডিত, গনেশ, ক্ষেত্রপাল, বাশুলী, বসুমতী, ইন্দ্রানী, ভৈরব, কুবের, মহেশ্বরী, বারাহী, চৌরাঙ্গনাথ, বটুকনাথ, পণ্ডাসুর, বাণেশ্বর, ভগবতী, শিব, বিষহরি, কামদেব, দশদিকপাল, রামাইপণ্ডিত, নন্দী, আদিনাথ, দীননাথ, গোরনাথ, পঞ্চগৌড় ইত্যাদি।

  বৈশাখী পুর্ণিমা তথা বুদ্ধপূর্ণিমায় অনু্ষ্ঠিত হয় ধর্মরাজ পূজা। তিন থেকে পাঁচ দিন ধরে পূজো চলে এলাকা বিশেষে। আর এজন্য হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই দেবতাকে বৌদ্ধ দেবতা বলে মনে করেছিলেন। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মনে করেন ধর্মপূজা বৌদ্ধধর্মের শেষ নিদর্শন। তাঁর মতে 'ধর্ম' শব্দের অর্থ হল 'বুদ্ধ'। ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “বাঙ্গালা দেশেই অনার্য সঙ্গমে বুদ্ধদেবের চরম অধোগতি হয়। এইখানেই বুদ্ধদেব নৈরাত্মা দেবীর সহিত শূন্যে ঝাঁপ দিয়া করুণায় দ্রব হইয়া গেলেন। ক্রমশঃ সনাতন ধর্ম প্রবল হইয়া উঠিয়া তাহার দল গ্রাস করিতে লাগিল। সত্য সত্যই এইবার বুদ্ধদেব শূন্যসাগরে ঝাঁপ দিলেন। তিনি কোথায় মিশিয়া গেলেন খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। তাঁহার করুণা রহিয়া গেল। শূন্যতা করুণাভিন্না শূন্যতারও শেষ নাই, তাঁহার করুণারও শেষ নাই।”

  চৈত্রমাস ছাড়া বছরের অন্য সময় শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হলে তাকে 'হুজুগে গাজন' বলে। বাঁকুড়ার ছাতনার ঝাঁটিপাহাড়ীতে ২৫ - ২৬ শে জৈষ্ঠ্য আয়োজিত হয় এই শিবকেন্দ্রিক 'হুজুগে গাজন'। পূজোর আগে থেকেই ভক্তা বা দেয়াসীরা উপবাসে থাকে। আর এ সময় শিবের গাজনের মতোই নিজের দেহে নানাবিধ যন্ত্রনাদায়ক কাজকর্ম করা অন্যতম উপচার। দণ্ডি কাটা, বাণফোঁড়া, আগুন খেলা, পাতাভরা, কাঁটা লোটন, শিবদোলা, ভাঁড়াল, লোটন, ফুলখেলা, কাঁটাখেলা ইত্যাদিই হয়ে ওঠে অন্যতম উপজীব্য।

  ভক্ত্যারা পূজোর আগের দিন চলে আসেন মন্দিরে। এরপর তাঁরা বানেশ্বরকে কাঁধে নিয়ে গোটা গ্রাম পরিক্রমা করে ধর্মপূজার সময়। বাণেশ্বর হল বাম বা শলাকা যুক্ত একটি কাষ্ঠখণ্ড। বাণেশ্বরের স্নানকে বলে 'বাণামো'। ধর্মপূজায় বাণেশ্বরের বাণের ওপর আম, আনারস বিদ্ধ করে রাখে। আর নিজেরা উত্তরীয় ধারণের পর ঐ শলাকাতেও একটি উত্তরীয় দেয়। পূজোর শেষদিন সব উত্তরীয় গুলো একসাথে বাণেশ্বরের শলাকায় জড়িয়ে রাখে। অনেক সময় পাটভক্তাকে ঐ শলাকাতে শুইয়ে গ্রাম পরিক্রমা করে মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। তিনি সেই শায়িত অবস্থায় ধর্মরাজের পূজা করেন। একে বলে 'পাতাভরা'। দ্বিতীয় দিনে জল ঢালা, দণ্ডী কাটার পাশাপাশি কাঁটাখেলা, বাণফোঁড়া অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় দিন পাঁঠা বলি হয় শুধু। একে বলে 'লুয়াবধ'। সন্তানের কামনায় অপুত্রক নারী লুয়ার (ছাগল) মুণ্ডসুদ্ধ হাঁড়ি কোলে নিয়ে সারারাত বসে থাকে মন্দিরে। আর চতুর্থ দিন হল 'উতরিখোলা'। এদিন তেল, হলুদ, মিস্টান্ন দেওয়া হয় ভক্তদের। ধর্মঠাকুরের গাজনে রাতের বেলা যখন শোভাযাত্রা বের হয় বাদ্যিবাজনা সহকারে, তখন ভক্ত্যারা হাতে বেতের ছড়ি নিয়ে ধর্মরাজের নামোচ্চারণ করতে করতে ছোটে। শিবের গাজনেও এই বেতের ছড়ির ব্যবহার আছে। 

  পূর্ব বর্ধমানের কুড়মুন শোনপলাশির গাজনে সন্ন্যাসীরা মুখে রং মেখে সঙ সাজে আর মানুষের মাথার খুলি নিয়ে নৃত্য করা এক অন্যতম উপচার। মৃত মানুষের মাথার খুলি নিয়ে নৃত্য করাও ধর্মের গাজনের এক লোকাচার। এটির উৎস সম্ভবত অনার্য সংস্কৃতি। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে ধর্মরাজ ঠাকুরের গাজনে তিনটি বড় আকারের কাঠের ঘোড়ার উপরে মহামানস, স্বরৃূপনারায়ণ ও ধর্মরাজ তথা বুদ্ধ, সংঘ ও ধর্মকে চাপিয়ে অসংখ্য সন্ন্যাসী সহ মাথায় জ্বলন্ত ধুনোর ধুনুচি  নিয়ে ব্রতীদের শোভাযাত্রা বেরোয়। 

   তমলুক পৌরসভার অন্তর্গত রাধাবল্লভপুর মৌজার দক্ষিণ পূর্বে শ্মশানের পাশে পাকার দালানে পাশের কিয়াখালী গ্রাম থেকে দেবনাথ পরিবারের ধর্ম ঠাকুরের বিগ্রহ এনে পূজো করা হয়। এই পূজো প্রসঙ্গে গবেষক জয়দীপ পণ্ডার বিবরণে পাই, "দুপুরে নাথ পরিবারের পক্ষ থেকে দেবতাকে ভোগ নিবেদন করার পর নিয়ে যাওয়া হয় রাধাবল্লভপুর গ্রামে। এখানে দেবতার পূজো নিবেদন করার পর পাশের ভুবনেশ্বরপুর গ্রামে নিয়ে গিয়ে এক প্রাচীন অশ্বত্থ গাছের তলায় স্থায়ী বেদীতে দেবতাকে বসিয়ে পূজো দেন গ্রামের মানুষ। এরপর রাত্রিতে দেবতাকে ফের নাথ পরিবারের মন্দিরে পৌঁছে দেওয়া হয়।" আর এই লৌকিক উৎসবে কি কি হয় সে প্রসঙ্গে জয়দীপ পণ্ডা লিখেছেন, "গ্রামের বিশিষ্ট মহিলা ও পুরুষ তাঁদের মানসিক শোধ করতে আসেন। বন্ধ্যাত্ব মোচন, বৃষ্টি কামনা, সন্তান কামনা, রোগ নিরাময়, স্বামী ও সন্তানের মঙ্গল কামনা ইত্যাদি নানা কারণে দেবতার উদ্দেশ্যে পূজো নিবেদন করা হয়। এই মেলা মূলত একদিনের হলেও বিশ্বকর্মা পূজোকে কেন্দ্র করে তা চলে তিনদিন।" 

   ধর্মরাজের গাজন হয় অবিভক্ত বর্ধমান জেলার অণ্ডালের দক্ষিণখণ্ড, ছোড়া, বৈদ্যনাথপুর, আউসগ্রামের আলিগ্রাম, দীঘনগর, ধাড়াপাড়া, আউসগ্রাম, ধনকড়া, বননবগ্রাম, দেয়াসা, আসানসোলের কন্যাপুর, কাটোয়ার চন্দ্রপুর, কৈথন, কুয়াড়া, দেবকুণ্ড, পলসনি, বাউরা, মাস্থূলী, সুগাছি, মোস্তাবগপুর, ভালশুনি, জামালপুরের পাল্লা, জামুড়িয়ার চিচুরিয়া, খণ্ডঘোষের কেন্দুর, নারিচা, শশঙ্গা, সগড়াই, বুদবুদের ভরতপুর, ভাতারের মান্দারবাটি, কোশিগ্রাম, আমারুন, রায়রামচন্দ্রপুর, মঙ্গলকোটের ইছাবট, খুদরুন, কানাইডাঙা, মাধবডিহির রাউতাড়া, মেমারির দাদপুর, বঁড়োয়া, শালিগ্রাম, রায়নার ধামাস, হিজলনা, সালানপুরের এথোরা, কাঁকসার রক্ষিতপুর, পাণ্ডবেশ্বরের বাজারি সহ  ফরিদপুর, সুহারিতে আয়োজিত হয় ধর্মরাজের গাজন। এছাড়া ধর্মরাজের পূজা উৎসব হয় কাঁন্দরা, শ্রীগ্রাম, খুদকুড়ি, উখড়া, এড়াল, বনকূল, দামড়া, গোস্তস্বা, মেদগাছি, রাজকুসুম, গোন্নাসেরান্দি, শ্রীপুর, শ্রীগ্রাম, গলসি, সেহারাগ্রাম, অমরপুর ইত্যাদি গ্রামেও। বীরভূমের কেন্দ্রগড়িয়া, কালুহা, ঘুরিষা, কুনুঢড়ি, সিউড়ি, জামথলি, গোয়ালপাড়া, মালাবেড়িয়া, মেটেল্যা, বড়রা, কুড়মিঠা, মাহমুদপুর, অবিনাশপুর, হাড়াইপুর, লম্বোদরপুর, জীবধরপুর, পুরন্দরপুর, কৃষ্ণপুর, বাতাসপুর, কালুরায়পুর, বারুইপুর, জগদীশপুর, মুর্শিদাবাদের ঘাসিয়াড়াতেও ধর্মরাজের পূজা ও গাজন আয়োজিত হয়। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের গ্রামে ধর্মঠাকুরের পূজা হয়। বৈশাখ মাসে একটি হাঁসের ডিমকে ধর্মঠাকুর মনে করে তার পূজা হয়।

   ধর্মঠাকুর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। বসন্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ময়ূরভট্টের 'ধর্মমঙ্গল' গ্রন্থে মেলে ৫২ টি ধর্মশিলার নাম এবং পরিচয় -- ১. যাত্রাসিদ্ধি ২. স্বরূপনারায়ণ ৩. ক্ষুদিরায়. ৪. জগত্রায় ৫. কৌতুকরায় ৬. বৃদ্ধরায় ৭. রাজা সাহেব ৮. সুন্দর রায় ৯. দলু রায় ১০. কালু রায় ১১. শ্যাম রায় ১২. খেলা রায় ১৩. দলমাদল ১৪. বংশীধারী ১৫. লক্ষ্মীনাথ ১৬. শঙ্খাসুর ১৭. মোহন রায় ১৮. লক্ষ্মী নারায়ণ ১৯. শীতল সিংহ ২০. গন্ধরায় ২১. মনোহর রায় ২২. শীতল নারায়ণ ২৩. রাজেশ্বর ২৪. ধিয়ান রায় ২৫. ফতু সিংহ ২৬. চন্দ্ররায় ২৭. বাঁকুড়া রায় ২৮. কালস্বর্ণশিলা ২৯. কর্কট বৃশ্চিক ৩০. রাম রায় ৩১. চূড়ামণি ৩২. রণজয় ৩৩. নারায়ণ রায় ৩৪. ব্রাহ্মণ নাথ ৩৫. নবযৌবন চক্রশিলা ৩৬. নিমিক নাথ ( জৈন প্রভাবের সংযোগ রয়েছে ) ৩৭. ঝগড় রায় ৩৮, কালসার ৩৯. সর্বেশ্বর ৪০. আঁধার কলি ৪১. দেবেশ্বর ৪২. শীতলনাথ ৪৩. মদনরায় ৪৪. রসিক রায় ৪৫. গঙ্গাধর ৪৬. সিদ্ধি রায় ৪৭. কালাচাঁদ ৪৮. রূপারায় ৪৯. দর্শন রায় ৫০. পরম নাথ ৫১. অনন্ত রায় এবং ৫২. ঝর্ঝরী রায়। তবে ড. অমলেন্দু মিত্র বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব ধর্মশীলার নাম সংগ্রহ করেছেন সেগুলি হল -- ১. অনাদি নাথ ২. আউলা ধরম ৩. আদিড়ে ধরম ৪. আদিরাক্ষ্য ৫. আষিড়ে ধরম ৬. এলো রায় ৭. কটা রায় ও কট রায়. ৮. কণ্ঠ রায় ৯. কাণারায় ১০. কামার বুড়ো রায় ১১. কালা রায় ও কেলে রায় ১২, কালুরায় ১৩. কাঁটা রায় ১৪ কেদার রায় ১৫. কোদালে কাটা ১৬. কোঁড়া পাড়ার ধরম ১৭. কুর্মদের ১৮. খঞ্জরায় ১৯ খোঁড়া রায় ২০. খুজুটেশ্বর ২১. খেলা রায় ২২. খেলারাম ২৩. গিরিধরম ২৪. চাঁদ রায় ২৫. চশ্বের ২৬, ছেলে ধরম ২৭. জুবুটেশ্বর ২৮. তুলোরায় ২৯. দর্পনারায়ণ ৩০. দামোদর ৩১. দুধকমল ৩২. ধর্মরায় ৩৩. ধরম ৩৪. ধরমশিলা ৩৫. নীল রায় ৩৬. নীলকণ্ঠ পঞ্চানন ৩৮. পঞ্চারায় ৩৯. পাদুকা রায় ৪০. পোড়া রায় ৪১. পুরন্দর ৪২. পৈঠদেব ৪৩. পচা ধরম ৪৪. ফটিক রায় ৪৫. ফুলচাঁদ ৪৬. বাঘরায় ৪৭. বাংড়া রায় ৪৮, বুড়ো ঠাকুর ৪৯. বৃদ্ধরায় ৫০. বুড়ো রায় ৫১. বালক রায় ৫২. বিজলী রায় ৫৩. বহড়া ডিহি ধর্মরাজ ৫৪, বিধায়ক রাজ ৫৫. বাঁকড়ো রায় ৫৬. বাথান রায় ৫৭. পাঁকা রায় ৫৮. বাঁকা শ্যাম ৫৯, বিনোদ রায় ৬০. বেণুদেব ৬১. ভুলো রায় ৬২. মনোহর রায় ৬৩, মানিকলাল ৬৪, ময়না রায় ৬৫, মেঘ রায় ৬৬. মৎস্য রাজ ৬৭. রঘুনাথ ৬৮. রাজরাজ্যেশ্বর ৬৯, রামঘুঘু ৭০, রসিক রায় ৭১. লীলা রায় ৭২, লীলা ধরম ৭৩. লালচাঁদ ৭৪. হাতি রায় ১৫ শিরে ধর্মরাজ ৭৬, শ্বেতচাদ ৭৭. শ্যামরায় ৭৮, শ্রীধর রায় ৭৯, সিঁদুর রায় ৮০, সুন্দর রায় ৮১. সিন্ধু রায় ৮২. সুগণ রায় ৮৩, সুহ্মরায় ৮৪. সুচাঁদ ৮৫, সেঙ্গুরাজ ৮৬, সোন্দল রাজ ৮৭. সিদ্ধেশ্বর ৮৮. স্বরূপনারায়ণ ৮৯. শশী রায় ৯০, গরীব রায় এবং ৯১, চম্পক রায়।
---------
ছবি -- অরুণ কুমার সাউ

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments