মারণবীজের আজব ধাঁধা
পর্ব ২
বাসুদেব গুপ্ত
এ এল ৫২। ইটিডি ৯৩০ এএম। BLR বেঙ্গালুরু কেম্পেগোডা এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়বে সকাল ৮:১০। হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ৩ কিমি। দৃশ্যমানতা ১০ কিমি। ফ্লাইট টাইম ৮০ মিনিট। গন্তব্য GOI ডাবোলিম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। নভীন পাওয়ার flightaware অ্যাপ খুলে দেখে। দেখে নিশ্চিন্ত হয়। উর্বী অবশেষে আসছে। বোম্বে থেকে এসে বীচ লাগোয়া হোটেল পানাজি ইন্টারন্যাশানালে কালই উঠেছে নভীন। ওর পেশা ব্যবসা। ক্রেতা মোটামুটি সরকারী দপ্তর। ঝুটঝামেলাহীন আধুনিক ব্যবসা, খালি সরকারী ঘাঁতঘোঁতগুলো জানলেই কাজ চলে যায়। ওর স্ত্রী উর্বী আইটির প্রজেক্ট ম্যানেজার। বিখ্যাত আইটি ফার্ম, দেশের অধিকাংশ ইঞ্জিনীয়ারদের তারা বছর বছর তুলে নেয়। তারপর তারা বেরিয়ে পড়ে দেশে দেশে ভিসা আর ট্রলি ব্যাগ বগলে করে। উর্বী দেখে ইউরোপের কাজকর্ম। নির্ঝঞ্ঝাট কাজ। আজ পাঁচ বছর হল বিয়ে। কিন্তু একসাথে বাস করার সুযোগ হয় না তেমন। দুজনেই ভীষণ পেশাদার। ঘরসংসার করার থেকে কাজে উন্নতি করার সময় এখন। উর্বী যখন তখন বিদেশ পাড়ি দেয়, নভীন চরকি কাটে এক একটা স্টেটের সরকারী দপ্তরে। একসাথে থাকার যোগাযোগ হয়ে ওঠে না। গুগল মিট ভরসা। প্রতি বছরে ছুটি ম্যানেজ করে কটা দিন একসাথে থাকা। কেরিয়ারের অনেক দায়। একটা গাড়ী পাওয়া গেছে স্থানীয় এম এল এর আতিথ্যে। সরকারী যোগাযোগের ঝালর সুবিধা বা fringe benefit এগুলো। গাড়ীতে পাঞ্জিম তথা পানাজি থেকে ২৫ কিমি পথ তেমন চওড়া নয়, কিন্তু চারদিক ছোট ছোট বাড়ী, আরব সাগরের শান্ত হাওয়া, আর জুয়ারী নদীর মোহনায় ছবির মত কেবল দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ব্রীজ। গাড়ীতে লোকাল এফ এমের গান শুনতে শুনতে রাস্তাটা সরু ফিতের মত খুলে যাচ্ছিল। গানের সুর সেই কবেকার শোনা ববির গানের মত। দূর থেকে ধীরে ধীরে ফরাসী রিভিয়েরাতে সন্তরণশীল এক প্রমোদতরণী যেন ভেসে আসে ওর দিকে। এয়ারপোর্টের আধুনিকতম স্থাপত্য দেখে দু দশক আগে বাবা মার সঙ্গে বেড়াতে আসার কথা ওর মনে পড়ে যায়। তখন ছিলো একটা বেঢপ তিনতলা বাড়ী, মাথায় জলের ট্যাংকের মত একটা স্ট্রাকচার, তার থেকে বেরিয়ে আসা খোঁচা খোঁচা এনটেনাশোভিত এয়ার ট্রাফিক কনট্রোল রুম । আর আজ? আলো ঝলমল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দেশের যে কোন এয়ারপোর্টকে টক্কর দিতে পারে।
মাল্টিলেভেল পার্কিংএ গাড়ীটা পার্ক করে একটা ছবি তুলে রাখলো নভীন। ওর মাঝে মাঝেই ভুল হয়ে যায় কোথায় কোন লেভেলে ওর গাড়ী। ওর মোটা কাকা বীরেন্দ্র ওরফে বকুল পালুসকার জেট সেটার ইনভেস্টর। তিনি যা বলেন ফ্যামিলির সবাই শোনে ও মনে রাখে। ওঁর কাছেই শেখা এই কায়দা। রিসেপশান হলের বাইরের স্টল থেকে একটা কফি নিয়ে গেটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখল নভীন। আইওয়াচ দেখাচ্ছে ৯টা ২৫। ইন্টারনেট টাইম। সেইসংগে হার্ট রেটটাও দেখা হয়ে গেল। ৯৫। একটু উত্তেজনা তো হবেই। ক্যান্ডল লাইট ডিনারের প্ল্যান আছে। তার সংগে উর্বীর জন্য উপহার একটা হীরের সেট। জাভেরীর দোকান থেকে কেনা। হোটেলের লকারে যত্ন করে রাখা। সারপ্রাইজ।
৯টা ৩০ ল্যান্ডিং। হাওয়া কোনদিকে বয় সেটা ঠিক করে দেয় পাঁচ দশ মিনিট দেরী হবে কিনা। ডিসপ্লেতে দেখাচ্ছ ইটিএ ৯-৩০। অর্থাৎ যে কোন সময় ল্যান্ড করতে পারে।
পাঁচ মিনিট। দেখা গেল দূর থেকে একটা ছোট্ট বিন্দু আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। যেমন ছোটবেলায় হুমহাম করে স্টেশনে কানাডিয়ান ইঞ্জিন ঢুকতো আর মনে হত ভূমিকম্প অগ্ন্যুৎপাত সব শুরু হয়ে গেছে তার একেবারেই উল্টো। বিন্দু থেকে ধীরে ধীরে মাছি হয় প্লেন। তারপর মৌমাছি। এবারে একাগ্র একটা ঈগলের ডানা হয়ে লাফ দেবে রানওয়ের বুকে।
তা হলো না। আশ্চর্যভাবে কাঁপতে কাঁপতে প্লেনটা দুবার তিনবার গুলি খাওয়া পাখীর মত এলোমেলো মাটি ছোঁয়ার চেষ্টা করে আবার উড়ে চলে গেল পানাজির দিকে। তারপর আর দেখা গেল না।
পা থেকে মাথা ঠাণ্ডা বরফের স্রোত কাঁপতে কাঁপতে উঠে এল। নভীন এবং আরো শখানেক অপেক্ষমাণ মানুষ এক মুহূর্ত নিস্তব্ধ স্থির। একটু পরে একটা প্রবল গুঞ্জন ও আলোড়ন উঠে এলো ভিড়ের মধ্যে থেকে। অনেক লোক সিকিউরিটি ভেঙে এরাইভ্যাল হলে ঢোকার চেষ্টা করতে লাগল। সিকিউরিটির সংখ্যা প্রায় ন দশ জন। তারা এই জনতাকে আটকাতেও পারছে না আবার তাদের অবিশ্রান্ত প্রশ্নের উত্তরও তাদের কাছে নেই। নবীনের হাত পা বুক যেন ঠাণ্ডা জেলী দিয়ে তৈরী। আর ওর মাথায় একটা আগুনের হলকা উপর নীচ করছে আর ছোটছোট বিস্ফোরণ কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর।
পাবলিক এড্রেস সিস্টেমে ঘোষণা হচ্ছে একটা। কি বলছে? ঠিক শোনা যাচ্ছে না। ঠেলাঠেলি করে এগিয়ে যা বোঝা গেল প্লেন যান্ত্রিক গোলোযোগের জন্য ল্যান্ড করতে পারে নি। তারপর জুয়ারী নদীর ব্রীজের পাশে জলে ল্যান্ড করতে বাধ্য হয়েছে। ইংরাজী ও হিন্দীতে বারবার একই ঘোষণা,
-যতদূর জানা গেছে প্লেন অক্ষত আছে। যাত্রীদের বাইরে আনার কাজ চলছে। ভয় পাবেন না। আশা করা যায় আধঘণ্টার মধ্যে সবাইকে উদ্ধার করতে পারবো। বিশেষ ঘোষণা। যাত্রীদের আত্মীয় বা বন্ধু কেউ এখানে থাকলে জুয়ারী ব্রীজের কাছে চলে আসুন। প্রয়োজন হলে সনাক্ত করতে হতে পারে।
জনতা হঠাৎ একটা নদীর বন্যাস্রোতের মত মোড় ঘুরে দৌড়ল এক্সিটের দিকে। হাত কাঁপছিল থরথর করে। হাত থেকে ছিটকে ফোনটা পড়ে গেল। কোনমতে সেটা দৌড়তে থাকা পায়ের ফাঁক থেকে বাঁচিয়ে ভয়ে ভয়ে চেক করল, না, ফোন একদম ঠিক আছে। এবারে এক দৌড়ে পার্কিং সেখান থেকে পাগলের মত গাড়ী চালিয়ে জুয়ারী ব্রীজ সব যেন এক মুহূর্তর মধ্যে ঘটে গেল। স্পীডিংএর জন্য রাস্তায় বোধহয় পুলিস নম্বর নিল কিন্তু সেটা গ্রাহ্য করার সময় এটা নয়। শুধু নভীন নয় আরো অনেকেই দৌড়চ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে বাসও রেডি, যাদের গাড়ী নেই তারা পড়ি মরি করে সেসব বাসে উঠতেই বাসগুলো ছুট লাগাল এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে।
ব্রীজের ১০০ মিটার আগে থেকে পুলিসের বিশাল কর্ডন। একটু দূরেই বিমানটি জলের ওপর ভাসছে একটা বিরাট জাহাজের মত। গোয়াতে এমন দৃশ্য খুব স্বাভাবিক। কোথাও ক্যাসিনো চলছে সমুদ্রের জলে, কোথাও মান্ডোভী নদীর ওপর ট্যুরিস্টদের নাচগানপানের জমজমাট জাম্বোরী l তফাত হচ্ছে এটা প্রমোদ তরণী নয়, একটা আস্ত প্লেন। প্লেনটাকে ঘিরে রয়েছে তিনটি রেসকিউ বোট, আর গোটা চারেক এম্বুলেন্স একটানা ওঁয়াও ওঁয়াও করে আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে। একের পর এক যাত্রী স্ট্রেচারে করে এম্বুলেন্সে উঠছে। নাঃ মনে হচ্ছে বড় ইন্জুরী কারো হয়নি। কিন্তু সবাই দিশাহারা ও বিমূঢ় । হঠাৎ একটা গুঞ্জন ওঠে, স্ট্রেচারে করে পাইলটের পোষাক পরা একজনকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হল। শরীরে কোন সাড় নেই। দুটো চোখ অদ্ভুত ঠেলে বেরিয়ে এসেছে দুটো লাল বলের মত।
কে যেন বলে ওঠে পাইলট পাইলট। পুলিশ এসে লাঠি দিয়ে ব্যারিকেড করে এম্বুলেন্সে তোলে। একজন কনস্টেবলকে ফিসফিস করে পাশের জনকে বলতে শোনা যায় ক্যাপ্টেন মালিক, ডেড।
বেশ কয়েকজন এমনি করে একের পর এক সাদা গাড়ীতে উঠতে থাকে। একের পর এক। উর্বী কোথায়? একটানা তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় হঠাৎ নভীনের বুকটা চলকে ওঠে। হাতে কালো চশমা, একটা সাদা টি শার্টের ওপর লেখা We consult the World, কে? হ্যাঁ হ্যাঁ, উর্বীই তো। নভীন এক লাফে সামনে যাবার চেষ্টা করতে একজন অফিসার ওকে লাঠি দিয়ে আটকে অভদ্রভাবে প্রশ্ন করে,
-কোথায় যাচ্ছেন? কেবল আত্মীয়রাই যেতে পারেন। আপনি ওনার কেউ হন?
-উনি আমার স্ত্রী। ঊর্বী পালুসকার। আমি ওর স্বামীর নভীন পালুস্কার। ঊর্বী, ঊর্বী ঊর্বী কেমন আছ? ঠিক আছ তো?
উর্বীর মুখে একটা এন ৯৫ মাস্ক। দুর্বল কম্পমান হাত নাড়ে নবীনের দিকে। তারপরেই বোধহয় মাথা ঘুরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
উর্বীর সামান্য চোট, প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হল। বেশ কিছু ফর্মে নভীন সই করে ছাড়া পায় ঘণ্টা তিনেক পরে। একটা দীর্ঘনিশ্বাস এতক্ষণ পরে বেরোয় ওর বুক থেকে।
-কাল আর একবার চেক আপের জন্য আসতে হবে। আর না জানিয়ে শহর ছাড়বেন না। এই নম্বরটা রাখুন কিছু অসুবিধে হলেই আমাদের ফোন করবেন।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক অফিসারের নম্বর নিয়ে তবে ওদের ছুটি। উর্বীর মুখ ভয়ে এখনও পুরো ফ্যাকাশে। মুখ থেকে সব রক্ত যেন কে শুষে নিয়েছে। মেডিকাল এড থেকে কিছু ট্রানকুইলাইজার দিয়েছে, দুদিন পূর্ণ বিশ্রাম।
মুনলাইট পার্টি না হলেও নভীন সময়মত হীরের সেটটা দিতে ভোলে না। ওদের হনিমুনের পাঁচবছর শুরু হয় এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা দিয়ে। যতক্ষণ পারে দুজনে দুজনকে আগলিয়ে জড়িয়ে রাখে।
প্লেনের পাইলটের শরীর মর্গের টেবিলে রেখে পুলিশের চিত্রগ্রাহক ছবি তোলেন। ক্যাপ্টন এস মালিক কুড়ি বছরের অভিজ্ঞ পাইলট। কোন রেকর্ড নেই। চোখ দুটি ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। যেমন ভাবা গিয়েছিল তেমনি। এক ঘন্টা আগে ডেথ হয়েছে। ঠিক যখন প্লেনটা ল্যান্ড করতে শুরু করেছিলো। শেষ মুহূর্তে কোপাইলটকে উনি নির্দেশ দেন ল্যান্ড অন ওয়াটার। কোপাইলট আহুজা অল্প আহত কিন্তু বেঁচে। তাঁর অপরিসীম সাহস ও দক্ষতার জন্য যাত্রীর প্রায় সবাই অক্ষত। একজন বৃদ্ধার শুধু কোমর ভেঙেছে ঝাঁকুনিতে। তিনি উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে উঠেছিলেন, সীট বেল্ট খুলে। বাকী সব মামুলি চোট। মিরাকিউলাস সারভাইভাল। সব খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেলে খবরটা চলে যায় বিকেলের মধ্যে।
সারভাইভ কথাটা হয়ত একটু আগে আগেই বলা হয়ে গিয়েছিল। কারণ ঘটনা অদ্ভুত মোড় নেয় দু এক দিনেই।
ডক্টর বেরার কাছে খবর যেতে থাকে। দুদিন না কাটতেই প্রতিটি প্যাসেঞ্জারের থেকে ফোন আসতে থাকে নির্ধারিত ফোন নম্বরে। সবারই হঠাৎ চোখ ফুলে উঠছে। তারপর হঠাৎ চোখ ঠেলে বেরিয়ে এসে আধঘণ্টার মধ্যে তারা মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে পৌঁছবার আগেই। ১৫০ টি কেস এখনও পর্যন্ত।
শুধু একজনের কিছু হয় নি। উর্বী। সে ছুটি কাটিয়ে বাঙ্গালোর ফিরে গেছে। নভীন চলে গেছে মুম্বাই। আর বিমানের যাত্রীদের খবর কাক পক্ষীতেও জানে না। তাদের বাড়ীর লোক সবাই আলাদা আলাদা করে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে। বডিগুলো স্পেশাল কোন টাস্ক ফোর্সের লোক এসে নিয়ে চলে গেছে। যাবার আগে ফর্মে সই করিয়ে নিয়ে গেছে, তাতে লেখা আছে কোনরকম আলোচনা বা বিবৃতি তারা দিতে পারবে না। করলে বিশেষ আইনে ( যা নাকি হঠাৎ অর্ডিনান্স করে পাস করা হয়েছে) দেশদ্রোহের অপরাধে গ্রেফতার করা হবে।
আর দিয়ে গেছে তাদের ডাক্তারের ডেথ সার্টিফিকেট। বিমান দুর্ঘটনায় ইন্টারনাল আঘাত ও হেমারেজে মৃত্যু।
ডক্টর বেরার সহকারিনী নিশা। নিশা কৌশল। তার সমসাময়িকদের মধ্যে যে হাতে গোনা কয়েকজন উজ্জ্বল প্রতিভা বিদেশে মস্তিষ্কপয়ঃপ্রণালী দিয়ে ভেসে যায়নি ও সেই বিরল তাদের একজন। এই ল্যাব ভাইরাল রিসার্চ ল্যাব হলেও এখন প্রতিরক্ষা বিভাগের অন্তর্গত। এখানকার সব সিক্রেট টপ সিক্রেট। এবং নিশ্ছিদ্র প্রটোকল। নিশা জানে এর প্রয়োজন কতটা।
নতুন একটা অসুখ অদৃশ্য ঘাতকের মত আঘাত হানছে এখানে সেখানে। এখন পর্যন্ত ভারতের বাইরে এর পদধ্বনি শোনা যায় নি। কিন্তু এ দেশে এখানে ওখানে হঠাৎ আঘাত হানছে ও মানুষ বোঝার আগেই ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে।
এই অসুখের কিছু একটা ওষুধ বা টিকা তিন চার মাসের মধ্যে না বার করতে পারলে, এক কোটি মানুষ পর্যন্ত মারা যেতে পারে পরের ৬ মাসে। সেরকমই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে SCOV322 (Secret committe on virus 322, 322 মানে ২২ মার্চ। সেদিনই প্রথম এটা প্রথম কোন মানুষের শরীরে আক্রমণ করে এই ভাইরাস।)
এখন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে জিততেই হবে। নিশার কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ। তার চোখের সামনে এখনও জ্বলজ্বল করছে ২ বছর আগের সেই ভয়ংকর ছবি। দ্বিতীয় ঢেউ। বাবা হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হতে অক্সিজেনের জন্য সারারাত ছুটোছুটি। শেষ পর্যন্ত চোখের সামনে মায়ের কোলে বাবাকে হার্ট এটাকে রক্ত বমি করে মরে যেতে দেখা। কেউ সাহায্য করতে পারে নি। অথচ ফেসবুকে যখন এই খবরটা ও পোস্ট করল, ওকে ডেকে পাঠালেন ডক্টর বেরা। সহজভাবে বললেন,
-তোমার পোস্ট ডিলিট করে দাও। ওতে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি মদত পাবে। আর তোমার বাবার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা থাকবে, সাডেন হার্ট এটাক, এট্রিয়াল ফিব্রিলিয়েশান। তুমি এ নিয়ে হৈ চৈ করো না, যিনি গেছেন তিনি তো আর ফিরবেন না। আই এম সরি ফর ইয়োর লস। যাও মন দিয়ে কাজ করো। ,
নিশার মনে ঐ ব্যাপারটাই যন্ত্রণা থেকেই গেছে ক্ষতের মত। চুঁইয়ে চুঁইয়ে সেখান থেকে রক্ত পড়ে। ভুলে যাওয়ার একমাত্র উপায় কাজ। অনেক মানুষকে বাঁচাবার জন্য যদি কিছু করা যায়, সেটাই হবে ওর নিরাময়। প্রতিশোধ নয়, জীবনদান। ভোলা কি সহজ? তবু মনের ভিতর খচখচানি যায় না কিছুতেই।
গোয়ার ঘটনায় একজন প্যাসেঞ্জার কি করে বাঁচলো সেই রহস্যটা এখন ভেদ করা দরকার। তার সংগে যোগোযোগ করতে হবে। ব্যাপারটা বুঝতে হবে। কোন ক্লু নিশ্চয় মিলবে। নিশা পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় ডক্টর বেরার ঘরের দিকে।
ডক্টর বেরা এগিয়ে এসে ওর হাতটা ধরে।
-তোমার পোস্টটা ডিলিট করে খুব ভাল করেছ। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, এটা সরকারী প্রতিষ্ঠান।
-স্যার আমাদের কিন্তু কোভিড প্রোটোকলে হ্যান্ডশেক করা বারণ,
বলে নিশা হাতটা টেনে নিতে যায়।
-এটা তোমার পুরস্কার বলেই না হয় ধরে নাও ।
বলে ডঃ বেরা আরো একটি হাত বাড়িয়ে আলিংগন করার জন্য এগিয়ে আসেন। তাঁর মুখ থেকে হাল্কা হুইস্কির গন্ধ ভেসে আসে।
-সরি স্যার। আমি পরে আসবো। এখন আপনি মনে হয় ঠিক সুস্থ নন
হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে যায় নিশা ঘর থেকে। খচখচনাটি আরো বেড়ে যায়।
-ক্রমশঃ-
0 Comments