জ্বলদর্চি

হ্রাস পাচ্ছে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার/সূর্যকান্ত মাহাতো

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি

পর্ব - ২১

হ্রাস পাচ্ছে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার

সূর্যকান্ত মাহাতো

ফুটবল খেলছিল সন্দীপদা। হঠাৎ পায়ের বুড়ো আঙুলটা গেল মচকে। গ্রামের মাঠগুলো ঘাসে ভরা হলেও অতটা সমতল হয় না। বেশিরভাগ জায়গায় এবড়ো খেবড়ো। বল ক্যারি করতে গিয়েই সন্দীপদার পা টা মচকে গেছে। একটু পরে পরেই পা যথারীতি ফুলতে শুরু করল। ব্যথায় সে একেবারে কাবু। বেশ টনটন করছে। আমরা সবাই ধরাধরি করে ওকে মাঠের বাইরে নিয়ে এলাম। ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠছে। শরীরের পুরো ভারটাই তখন আমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। সাইকেলে চাপিয়ে কোনও মতে সন্দীপদাকে বাড়ি পৌঁছালাম।

গোটাপাড়া জুড়ে তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছে। ঘরে ঘরে বেজে উঠেছে শাঁখ। নাকে ভেসে আসছে ধূপ ও ধুনোর গন্ধ। হাসপাতাল বলতে কেওয়াকোল গ্রামীণ হাসপাতাল। গ্রাম থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। সন্দীপদার পায়ের ব্যথাও বাড়ছে। তখন আবার মোটরবাইক ছিল না কারওর। তাই সাইকেলে চাপিয়েই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি বন্ধুরা। হঠাৎ সন্দীপদার বাবা হেমন্ত বুড়োকে নিয়ে হাজির। বললেন, "কোথাও যেতে হবে না। তোদের হেমন্ত জ্যেঠু এসে গেছে। দ্যাখো, সব ঠিক হয়ে যাবে।"

হেমন্ত মাহাতো। দীর্ঘ কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে নানারকম ব্যথায় মালিশ করে থাকেন। চলতি কথায় বলি "পিছলাতে পারেন"। দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে চলেছেন। শিখেছিলেন পাশের গ্রামেরই এক কবিরাজের কাছে। বহুদিন আগেই কবিরাজ গত হয়েছেন। তারপর একটু একটু করে হেমন্ত জ্যেঠুর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে। এখন পাশাপাশি গ্রামের সকলের ব্যথার একমাত্র উপশমের নাম হেমন্ত মাহাতো। কত মানুষের ব্যথা যে উনি সারিয়ে তুলেছেন গুনে শেষ করা যাবে না। কারও পা ব্যথা! হেমন্ত মাহাতো। কারও কোমর ব্যথা! হেমন্ত মাহাতো। হাত ব্যথা কিংবা ঘাড়ে ব্যথা! মুশকিল আসান ঐ হেমন্ত মাহাতো। সরষের তেল মালিশ করে করে ব্যথা সারিয়ে তুলেন। অদ্ভুত তার হাতের জাদু। কোনটা ভাঙা ব্যথা, কোনটা মচকে যাওয়ার ব্যথা, কোনটা শিরা চাপাচাপির ব্যথা, সেটা উনি হাত বুলিয়েই বলে দিতে পারেন। দীর্ঘ কুড়ি থেকে পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই এটা আয়ত্ত করতে পেরেছেন।

হেমন্ত জ্যেঠু ফোটানো সর্ষের তেল দিয়ে সন্দীপদার উল্টো পা টা মালিশ করতে লাগলেন। আমি তো বেশ অবাক। উল্টো পা টা কেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে জ্যেঠুকে বললাম, "ওই পা টা নয় জ্যেঠু। ওর তো অন্য পায়ে ব্যথা?"

জ্যেঠু মুচকি হেসে বললেন, "চুপ করে ম্যাজিকটা দ্যাখ না!"

হেমন্ত জ্যেঠু দুই হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতে দিতে হাঁটু থেকে পায়ের পাতার দিকে নামাচ্ছেন, আবার ওঠাচ্ছেন। কখনও পায়ের পাতাটা চারপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হঠাৎ করেই একটা হ্যাঁচকা টান মেরে দিচ্ছেন। কখনও পায়ের আঙুলগুলো ধরে ধরে সযত্নে টেনে দিচ্ছেন। মিনিট দশেক পর সন্দীপদাকে জিজ্ঞেস করা হল, এখন সে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে কিনা।

সন্দীপদা 'হ্যাঁ' সূচক মাথা নাড়তেই আমরা বেশ অবাক হলাম। সন্দীপদা নাকি সেই অসহ্য ব্যথাটা এখন আর অতটা অনুভব করছে না। এবার হেমন্ত জ্যেঠু ব্যথা লাগা পা টাকে ধরলেন। তারপর আরাম করে মালিশ করতে লাগলেন। ফোটানো সর্ষের তেল বাম হাতের তালুতে নিয়ে অন্য হাতের আঙুলে মাখিয়ে মালিশ করছেন। গ্রাম্য ভাষায় আমরা একে বলি  "পা পিছলানো"। 'হাতিশুঁড়' গাছের পাতা বেটে পায়ে লাগিয়েও দিলেন। একে বলে 'চাপান'। 'হাতিশুঁড়' ছাড়াও এই "চাপান" অন্যান্য ভেষজ গাছের ছাল পাতা ও শিকড় দিয়েও তৈরি হয়। তবে কেউ গাছের নামগুলো সহজে বলতে চায় না। এভাবে দুদিন চাপান লাগানো হল। সেইসঙ্গে পা পিছলানোও চলল। তিনদিন পর সন্দীপদা অনেকটাই ফিট হয়ে উঠল। তবে ভিতরের ব্যথাটা সারতে আরও কিছুদিন সময় লেগেছিল।


জ্যেঠু এক পায়ে ব্যথা লাগলে অন্য পা মালিশ করেন। এই জন্য তিনি আরো বেশি বিখ্যাত। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম এর রহস্য কী! জ্যেঠু বলেছিলেন, "আসলে ব্যথা পেলে আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে ব্যথা স্থানেই। এবং এত বেশি থাকে যে ওখানে কিছুতেই স্পর্শ করতে দেয় না। তাই অন্য পা টিপে টিপে মালিশ করলে রোগীর মনোযোগ ব্যথা থেকে কিছুটা সরে যায়। তাছাড়া শরীরের সকল শিরার সঙ্গেই তো কিছু না কিছু যোগসূত্র থাকেই। সেটাও একটু কাজ করে। তখন ব্যথা যুক্ত স্থানে মালিশ করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। নয় তো কেউ ব্যথার জায়গা টা হাত দিতেই দেয় না। তখন রোগীর মানসিক অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করি। আর এভাবেই একটু একটু করে কৌশলটা আবিষ্কার করে ফেলি।"

বললাম, "বাহঃ! দারুণ আইডিয়া তো, তোমার!"

তখন এক্স-রে-র এত বেশি প্রচলন ছিল না। অর্থোপেডিক নামটাই কেউ শোনেনি। শরীরের কোনও অঙ্গ ভেঙে গেলে কিংবা হেমন্ত জ্যেঠুর মতো মানুষেরা সুস্থ করতে না পারলে তখন দূরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হত। ব্যথার ওষুধ কেউ কখনও খেত না। তখন মানুষের অদ্ভুত রকমের সহ্য ক্ষমতা ছিল। পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবেই সে ব্যথা সেরে উঠত। নয় তো ছোট খাটো ব্যথা নিয়েই অনেকে সারাজীবন কাটিয়ে দিত।


খেলার মাঠগুলো ছিল দূর্বা ঘাসে ভরা। গাঁটযুক্ত লতানো ঘাস। সরু সরু লম্বা পাতা। ছোটবেলায় গড়াগড়ি দেওয়ার সময় গায়ে বেশ একটা সুড়সুড়ি লাগত। তখন গা চুলকোলেই জুটত বড়দের বকুনি। মাঝে মাঝেই খেলতে গিয়ে চামড়া ছড়ে যেত। কখনও চামড়া উঠে রক্ত বেরিয়ে পড়ত। আমরা সঙ্গে সঙ্গে দূর্বাঘাস চিবিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে নিতাম। সঙ্গে সঙ্গে রক্তপড়া ধরে যেত। যদিও পরে সেটা ক্ষতস্থানে চিটিয়েও যেত। তারপরেও রক্ত ক্ষরণ বন্ধে দূর্বা ঘাস দারুণ কাজ করত। এখনও অনেকে এটা ব্যবহার করে।


খেলার মাঠের পাশেই অজস্র লঙ্কা গাছের মতো এক ধরনের গাছ জন্মায়। আমরা এদের 'ঝুনঝুনি' বা 'লংকা ঝুঁটি' নামে ডাকি। এখনও হয়। বেশ সরু সরু পাতা। একটু ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে। অনেকগুলো ডালপালা নিয়ে বেঁটেখাটো চেহারার গাছগুলো। গাছের ডালগুলো ভাঙলেই এক ধরনের রস বেরিয়ে আসে। কখনও কখনও ক্ষতস্থানে সেই রস লাগানো হয়। রক্ত ক্ষরণে এটাও খুব কাজে লাগে। গাছগুলো ছোটখাটো হয় বলে অনেকে ব্যঙ্গ করে বলে, "বেশি কিছু বললে ঝুনঝুনি গাছে গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাব।" হাঁটুর নিচের সমান গাছে এটা যে সম্ভব নয়, তা ভেবেই তখন সকলে হেসে উঠে।

পাঁচিলের গায়ে, রাস্তার পাশে, কখনও নালার মধ্যে গজিয়ে উঠে "হাতিশুঁড়" গাছ। মাথায় হাতির শুঁড়ের মতোই লম্বা বাঁকানো একটি ঝুঁটি থাকে। ফুলে ভরা থাকে সেই ঝুঁটি। দারুণ ভেষজ এক উদ্ভিদ। যে কোনও ফোলা কিংবা আঘাত জনিত ফোলার দারুণ এক ওষুধ। গাছের পাতা বেঁটে একটু গরম করে ফোলা জায়গায় লাগাতে হয়। এছাড়াও ছত্রাক জনিত সংক্রমণ, টাইফয়েড জ্বর, কাশি এবং একজিমাতেও এই গাছের পাতা ব্যবহৃত হয়। এই গাছও যে ভেষজ এটা এখনও অনেকে জানে না।

ঘুম থেকে উঠেই ছিল নিম দাঁতনে মুখ ধোওয়া। ছিলনা কোনও কোলগেট। ছিল না সেনসোডাইনও। দাঁতে ব্যথা হলেই বকুল ছাল, কলা ছাল নয় তো কচি পেয়ারা পাতা দাঁতে চেপে রাখতাম। এছাড়াও "ভেঁড়রা" বা "ভেরেন্ডা" গাছের সরু ডালকে দাঁতন হিসাবেও ব্যবহার করা হত।এটাও বেশ কাজের। এখনও অনেকে দাঁতের ব্যথায় এই দাঁতনে মুখ ধোয়। আজকের দিনের মতো  দাঁত ব্যথা তখন বোধহয় এতটা ছিল না। এখন যত বেশি বেশি পেস্ট, তত বেশি যেন দাঁত ব্যথা।  দাঁতের ডাক্তার তখন কোথায়? আর এখন তো জঙ্গলমহলের প্রায় প্রতিটি জায়গায় দাঁতের ডাক্তারবাবুরা এসে রোগী দেখছেন।

সকালেই খালি পেটে ছিল নিয়ম করে নিম পাতা নয় তো কালমেঘ পাতার বড়ি খাওয়া। না হলে খালের ধারে, জমির আলে কিংবা কুয়োর পাড়ে গজিয়ে ওঠা 'থানকুনি' পাতা চিবিয়ে খাওয়া তো ছিলই। ওতে নাকি পেটের নানান রোগ সেরে যায়। 'লাহেড়' বা 'লাহড়' কলাই, অন্য নাম 'তুমুর' কলাই এর পাতাও জলে ভিজিয়ে রেখে সেই পাতার রস খেত অনেকেই। ওতে লিভার ও জন্ডিসের মতো কঠিন অসুখও সেরে যায় বলে মনে করা হয়।

কচি শাল পাতা, কচি পেয়ারা পাতা, শতমূলী, আমলকী ফল, বেলগাছের ফল ও মূল শালপানি ডাইরিয়ার মোক্ষম ওষুধ রূপে অনেকে খায়।

খুবই দুর্গন্ধ যুক্ত একটি লতানো গাছ আছে। আমরা "গাঁধাল" গাছ বলে ডাকি। এই গাছের পাতা বেঁটে খাওয়া হয়। রক্ত শুদ্ধিকরণে এই পাতা দারুণ উপকারী বলে মনে করা হয়। আবার রক্ত স্বল্পতায় কুলে খাড়া বা কুলে শাক তো অব্যর্থ ওষুধ।



দীর্ঘদিন ধরে কেউ জ্বরে ভুগলে শিউলি পাতার রস খাওয়ানো হত। এখন তো তিনদিনের বেশি কারওর জ্বর হলেই কত রকমের রক্ত পরীক্ষা! এবং সোজা হাসপাতালে ভর্তি।

কিছু কিছু টোটকা তো ছিলই যেমন বাচ্চাদের হঠাৎ কান ব্যথা করলে মা কাকীমারা "বেগনা" পাতার রস লাগিয়ে দিতেন। কখনও ঘি মাখা আকন্দ পাতার সেঁক দিতেন। পেটে কৃমি হলে কখনও খেজুর পাতা চিবিয়ে তার রস খেতে বলতেন। কখনও আনারস গাছের পাতাও বেশ কাজ করে। কৃমি বিনাশে কালমেঘ পাতাও বেশ উপকারী। স্বাদে প্রচণ্ড তিতা বলে বড়ি করে খাওয়া হয়। আর এখন তো ঘরে ঘরে "আলবেনডাজোল"।

ঠান্ডা লেগেছে? তুলসী পাতার রস মধু মাখিয়ে খেলেই হত। বাড়ির আনাচে কানাচে অজস্র তুলসীর গাছ জন্মাত। এখনও জন্মায়, তবে অনেক কম। আর এখন তো কফ  সিরাপের ছড়াছড়ি। তখন বুকে কফ জমে কাশি হয়েছে তো কি হয়েছে! বাসক পাতার রস আছে না! ওতেই  সেরে উঠতাম।

তখন প্রেসার মাপার যন্ত্র কোথায়! প্রেসার কী, সেটাই কেউ জানতেন না। কারও মাথা ঘোরা ঘোরা ভাব হলেই 'সজনে' শাকের ঝোল খেত। কিছুদিন খেলেই অনেকটা ঠিক হয়ে যেত। সজনে ফুল আর সজনে ডাঁটা তো বসন্ত রোগ প্রতিরোধে দারুণ রকমের উপকারী। সজনে ফুলের চচ্চড়ি তো উপকারও যেমন খেতেও তেমনি দারুণ। রাত্রে ভালো ঘুম না হলে 'সুষনি' শাকের পাতা ভেজে দিত মা। আর এখন? ঘুম ধরছে না! একটা ছোট্ট ঘুমের বড়িতেই কুপোকাত।

আমাশয়ের ওষুধ তো গ্রামের মেয়েরাও জানে। থানকুনি পাতা তো আছেই। সেইসঙ্গে বেশ কিছু গাছের ছাল দিয়েও ঔষধ বানাতে জানত ওরা। কোন কোন গাছ তার নাম বলতে চাইলেন না। তবে প্রায় সকলেই সেরে উঠেন এমনটা জানালেন। কিছুটা সময় হয় তো লাগে। ধৈর্যও ধরতে হয়। এখনও কেউ কেউ ঐ ওষুধ খায়। তবে বেশিরভাগই এখন ডাক্তারি ঔষধের উপরই বেশি করে ভরসা করছেন।

বত্রিশা মশলার সঙ্গে শিমুল ফুল, পদ্ম ফুল, জামছাল, অর্জুন ছাল শতমূল প্রভৃতির সংমিশ্রণে দারুণ এক হজমের ঔষধ তৈরি হয়। নাম 'ফাঁকি'। হজম ও বদহজমের জন্য দারুণ উপকারী। তাছাড়া আমলকী চূর্ণ তো আছেই।

"পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভেষজ উদ্ভিদ পর্ষদ" যে কয়েকটি ভেষজ উদ্ভিদের নাম বলেছেন, তার প্রায় সবগুলোয় জঙ্গলমহলে সহজেই পাওয়া যায়। যেমন - ঘৃতকুমারী, সর্পগন্ধা, অশ্বগন্ধা, কালমেঘ, গুলঞ্চ, তুলসী, শতমূল, ভৃঙ্গরাজ, বাসক, শালপানি, অর্জুন, আমলকী, বহেড়া, হরীতকী, নিম, বেল, কুরচি ইত্যাদি।

আছে "হাড়জোড়া" গাছ। প্রকৃত নাম কী জানি না। তবে আঞ্চলিক ভাষায় আমরা ও নামেই ডাকি। লতানো উদ্ভিদ। ছাগল কিংবা ভেড়ার মতো গৃহপালিত পশুদের পা ভেঙে গেলে এই গাছের পাতা বেঁটে লাগানো হয়। এবং শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়। ভাঙা পা সহজেই সেরে যায়। তাই বোধহয় গাছটির নাম এমন  'হাড়জোড়া'।

আজকাল ভেষজ উদ্ভিদে আর কেউ আস্থা রাখে না। গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে ডাক্তারখানা। এলোপ্যাথি নয় তো হোমিওপ্যাথি ঔষধের এখন ছড়াছড়ি। যে কোনও অসুখে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন হাত বাড়ালেই মেলে। আগে দূরের হাসপাতালে যেতে ভয় পেত সকলে। আর এখন চিকিৎসার কারণে কলকাতা, ভেলোর, ভুবনেশ্বর সহজেই ঘুরে আসছেন। যেন জল ভাত। এখন একটু কিছু হলেই সঙ্গে সঙ্গে ঔষধ। সুইচ দাবানোর মতোই। ঘুম হচ্ছে না? আছে ঘুমের ঔষধ। প্রেসার বেশি? আছে প্রেসারের ঔষধ। সুগার বেশি? নিজেই ইঞ্জেকশন নিয়ে নিচ্ছেন। অথচ আগে ইঞ্জেকশনের ভয়েই কতজন ডাক্তারখানায় যেত না।


আধুনিক চিকিৎসার সমস্ত রকমের সুযোগ-সুবিধা মেলে এখন জঙ্গলমহলে। রক্ত পরীক্ষা করতে শহরে যেতে হয় না। ল্যাবের লোকেরাই গ্রামের দিকে পৌঁছে যাচ্ছে। সব কিছুই কত সহজ হয়ে উঠেছে।

আগে হেমন্ত জ্যেঠুরাই ছিলেন ভরসা। আর এখন তো থেরাপিস্টরাই খোদ জঙ্গলমহলের বুকে। শিলদা, বেলপাহাড়ী সহ একাধিক জায়গায় ওরা কাজ করছেন। তারপরেও কেউ কেউ জঙ্গলমহলের ভেষজ উদ্ভিদে যে আস্থা রাখছেন না এমনটা নয়। এখন আর কেউ নতুন করে হেমন্ত জ্যেঠুর মতো ব্যথায় মালিশ করা শিখছে না। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ওসব শেখার প্রয়োজনও কেউ মনে করছে না।

তারপরেও ভেষজ উদ্ভিদকে আমাদের এড়িয়ে গেলে চলবে না। তাদের গুণাগুণ সঠিক ভাবে জেনে ব্যবহার করতে পারলে কত কিছু রোগ থেকে আমরা সহজেই নিরাময় লাভ করতে পারি। তবে এর পরিমাপ সম্পর্কে বিশদ জেনে তবেই ব্যবহার করা উচিত।

এ ব্যাপারে ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণে "পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভেষজ উদ্ভিদ পর্ষদ" গঠিত হয়েছে। ভেষজ উদ্যান নির্মাণে এই পর্ষদ নানাভাবে উৎসাহ ও সহযোগিতাও করছে।


ঝাড়গ্রাম রিসার্চ রেঞ্জ, সিলভিকালচার(সাউথ) ডিভিশন বনবিভাগ আমলাচটিতে "আমলাচটি ভেষজ উদ্যান" গড়ে তুলেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণের এ এক দারুণ উদ্যোগ।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

2 Comments