জ্বলদর্চি

তৃতীয় পাণ্ডব /সন্দীপ কাঞ্জিলাল

তৃতীয় পাণ্ডব 

সন্দীপ কাঞ্জিলাল 


(১)

তৃতীয় পাণ্ডব পার্থ সম্পর্কে যা জেনেছি, তাতেই বুঝেছি- প্রথমতঃ তিনি এইসব চুরি-ছিনতাই কিংবা গণহত্যা কিছুই করতে রাজি ছিলেন না। 

কিন্তু মধ্যমণি কৃষ্ণ তাকে বোঝালেন- এইযে ঘরবাড়ি, শস্যক্ষেত্র, নদী, পাড়ে কাশফুল, নদীর জলে কুমীর, লক্ষ লক্ষ পঙ্গপাল, আয়তলোচনা সুরক্ষিত নারী, সব মায়া সত্য শুধু আমি। 

পার্থ একথা শিরোধার্য মেনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন যুদ্ধক্ষেত্রে। 

মানুষ এড়িয়ে যায় কাঁটা ছড়ানো পথ, জোয়ার ভরা নদী, মেঘে মেঘে বেলা, নীল প্রজাপতি, ঘাস, পচা ডোবা, ডোবার ভেতর অস্ত্রশস্ত্র, সমুদ্রের জলে লবণ আরো কত কি। 

কিন্তু কিছুতেই হারাতে পারে না কর্মফল। 

তাই পার্থ এখন এসে দাঁড়িয়েছে অনন্ত নরক দর্শনে। 
আর তা স্বর্গ থেকে দুর্যোধন উঁকি মেরে দেখে বলে উঠলো- পার্থ তুমি-ও। 


(২)

মায়ের কথা রাখতে গিয়ে এত যে কষ্ট পেতে হবে, ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি অর্জুন। 

যে রাতে দ্রৌপদী কাছে থাকতো না, সে রাতে অর্জুনের- কিছুতেই ঘুম আসত না চোখে। ঘনঘন জল খেতো আর বাথরুমে যেতো, আর অর্জুনের শরীরের বিষুব অঞ্চল জুড়ে ঘন মেঘ, বিদ্যুৎ,  আর বাজের উথাল পাথাল। 

দ্রৌপদী তখন চোখ বুজে তৃতীয় পাণ্ডবকে দেখতে দেখতে যুধিষ্ঠির ভীম নকুল সহদেবকে জড়িয়ে ধরতো।

যে রাতে দ্রৌপদীর কাছে আসতো, অর্জুন বলতো- মহাবিশ্বের যা কিছু সব তুমি, নদীর জল ও ঢেউ, বই ও তার ভেতর লাইন, লাইনের ভেতর কমা, সেমিকোলন, হাইফেন, ফুলস্টপ, স-ব, সব তুমি। 

পূর্ণিমার চাঁদ গড়াতে গড়াতে পশ্চিম দিগন্তে যখন ডুবে যেতো, তখন অন্ধকার, সুনসান, নির্জনতা সরে গেলে, অর্জুনের বুকে মাথা রেখে দ্রৌপদী ভাবতো- ভাষা কত অশ্রাব্য আর আচারণ কত অশ্লীল হতে পারে। 

অর্জুন হয়ে উঠতো দার্শনিক - কপালে বাম হাত রেখে বলে উঠে- খারাপ বই যত পড়বে, ততোই খিড়কি দরজায় দাঁড়াতে ইচ্ছা করবে। আর তা শুনে চোখ মুখ লাল করে লাফিয়ে ওঠে, শাড়ি আর চুল ঠিক করতে করতে দ্রৌপদী বলে উঠলো- অর্জুন, তুমি এমন পাল্টিবাজ। 


(৩)

মৃত্যুর সময় টাকা-পয়সা, গয়নাগাঁটি, জমিজমা, কিছু-ই সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায় না। সঙ্গে যায় শুধু যা তুমি ধারণ করে আছো। 

তাই ন্যায় ও সততার প্রতীক যুধিষ্ঠির, যখন দ্রৌপদীকে বন্ধক রেখে জুয়া খেলে অজ্ঞাতবাসে গেলেও তবু একবারও মুখ ফোটায়নি তৃতীয় পাণ্ডব। 

অজ্ঞাতবাসের সময় কিচক যখন দ্রৌপদীকে, মনে মনে রু মুরগির রোস্ট বানিয়ে সারাদিনে তিনবার খেতো, তখন ভালোবাসা দ্রৌপদীর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো লাগতো। তাই একদিন অর্জুনের কাছে এসে দ্রৌপদী বললো- তোমাকে ভেবেছিলাম আমার মাটির দাওয়ায় খড়ের ছাওয়া ঘর, আমার লাইফ-রেল, চাকরির পরীক্ষার সাদা খাতা, পি জি-র উডবার্ন ওয়ার্ড। অথচ তুমি আজ খড়ের চালে মধ্যরাতে দিয়েছো আগুন, তুমি-ই আমার লাইফ-রেলে সরিয়েছো ফিসপ্লেট, সাদা খাতায় লিখে দিয়ে পাশ করাবে বলেও কিছু লেখোনি, বিপদেও ভর্তি করাওনি উডবার্ন ওয়ার্ডে। পুরো নদীটা-ই তোমাকে দিয়েছিলাম, পরিবর্তে গোপনে নামিয়েছো তাতে পাঁচটা হাঙ্গর। 

এসব শুনে অসহায় অর্জুন বলে উঠলো- এ সময় যেন কুকুরদের গুণকীর্তন করাও ভালো কাজ। 
তা শুনে দ্রৌপদী বলে- এ কথা বলা ছাড়া উপায় বা কি তোমার, তুমি যে ন্যায় ও সততার প্রতিমূর্তিকে বিশ্বাস করে, এখন নপুংসক। 

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments