জ্বলদর্চি

দুটি কবিতা /বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

দুটি কবিতা
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়


১)দম্পতি সমাচার

পত্নী :
নাক ছাবি নাকে, 'কাকা' বলে ডাকে,প্রায়ই আসে এই বাড়িতে 
দু চোখে কাজল,পায়ে পাতা মল, কখনও বা সাজে শাড়িতে,
দেখলে আমাকে,চুপ করে থাকে, ভাবে আমি বুঝি কেউ নই তোমাকেই খোঁজে, তোমাকেই বোঝে,জানে না কাউকে তোমা বই ।।

বলো তো আমায়, এ মেয়ে কি চায়, কেন ঘন ঘন আসে সে?
ভাইঝি সে বলে,বুঝি তো আসলে,তোমাকেই ভালোবাসে সে,
এতো গর্হিত,তুমি বিবাহিত, এ কথা কি তার জানা নাই?
তুমি সুন্দর,রূপে মনোহর,তাই কি তোমায় এতো চায়?

খুলে বলো সব, কিবা মতলব,তোমার মনে কি বাসনা?
কি মনের সাধ,আমি বরবাদ?তোমারও কি এই এষণা?
খুলে বলো প্রিয়,হোক অপ্রিয়, মেনে নেবো যেটা বলবে,
নির্জনে বসে,বেদনার রসে,আমার হাহাকার চলবে ।।

পতি :

তোমার এ কথা,মনে আনে ব্যথা,এরকম কথা বলো না,
বলি বার বার, হে প্রিয়ে আমার,তোমা সাথে কার তুলনা?
আমার হৃদয়ে, রাজরানি হয়ে তুমি চিরদিন থাকবে,
আমি যে তোমার,তুমিও আমার ,চিরদিন মনে রাখবে।।

ও মেয়ে যে আসে,জানি না কি আশে,এটা তো আমারও অজানা,
এটা শুধু জানি ,এ মনের রানি, তুমি, তুমি ছাড়া কেউ না,
তা ছাড়া ও তো, মেয়েরই মতো,নাবালিকা এতো নিশ্চয়,
তুমিও জানো তা,তুমিও মানো এতো সন্দেহ ভালো নয়।।

পত্নী  :

জানি জানি কবি,আমার এই ছবি তোমার আর ভালো লাগে না
ফুল বাসি হলে,ফেলে দেওয়া চলে,মালিকায় কেউ রাখে না,
'নয়ার' কদর, হয় বরাবর,আমি তো সেকেলে ঘরনি ,
পারে ফেলে রাখা পাল দিয়ে ঢাকা, দীর্ন জীর্ন তরণী ।।

পতি  ;

দিও না দারুণ, এতো1 সুকরুণ যাতনা আমারে প্রেয়সী ,
গৃহে আর বনে,জীবনে মরণে তুমিই আমার শ্রেয়সী ,
আমার এই মনে নিভৃত কোণে রয়েছে তোমার বসতি,
জীবনে মরণে জেনো প্রতি ক্ষণে তোমাকেই করি প্ৰণতি।।

পত্নী  :

তাই যদি হয়,শোনো মহাশয়,নিষেধ করো ও মেয়েকে,
না আসে আবার, কাছেতে তোমার, সাজসজ্জার মোড়কে,
আমার যে স্বামী সব চেয়ে দামি পারবো বা তাকে ছাড়তে,
কাউকে দেবো না আমার স্বামীকে আমার কাছ হতে কাড়তে।। 


২)   অজুহাত
(আমার শ্যালক শ্রী সোনা লাল চ্যাটার্জী'র, Ex. AGM, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া,চাকরি জীবনে ঘটে যাওয়া একটি   ঘটনা অবলম্বনে রচিত)
******
ব্যাংকে প্রথম চাকরি পেলাম বছর ত্রিশেক আগে,
আত্মজনেরা আশিস দিলেন ভালোবেসে,অনুরাগে।
জিয়াগঞ্জ শাখা,দূরে বেশি নয়,যেতাম ট্রেনে বা বাসে,
বেকার ছিলাম, চাকরি পেলাম,আনন্দে মন ভাসে।।

গুরুজন গন দিলেন উপদেশ,এ চাকরি জনসেবা,
ব্যাংকের কাজে যাঁরাই আসুন,ধনী, নির্ধন যে বা-
তাঁরা সকলেই শ্রদ্ধাভাজন,তাঁদের সেবক তুমি, 
ব্যাংক কেই তুমি ভগবান মেনো, ব্যাংকই পুণ্যভূমি।।

নিষ্ঠা,সততা, এই দুটি কথা নিরবধি রেখো মনে,
দেখবে তোমার শান্তি আসবে,ঋদ্ধ হবে জীবনে।
**********
গ্রাহক কে সব পরিষেবা দিতে ব্যস্ত হলাম আমি,
এ কঠোর শ্রম বুঝলেন শুধু আমার অন্তর্যামী।
সরকারি আর ব্যাংকের যত নীতি নির্দেশ আছে,
সাম্প্রত এই নিয়ম কানুন রাখলাম সবই কাছে।।
***********
একদিন এক পেনশনভোগী স্বাধীনতা সংগ্রামী-
আমার নিকটে এলেন,তাঁর বয়স ঊনআশি গামী।
সংকোচ ভরে জানালেন তাঁর ডিএ রয়ে গেছে বাকি,
মাস দুই হতে ঘুরছেন তিনি,আরো দেরি হবে নাকি?
সৌম্যকান্তি বৃদ্ধ কে দেখে সমব্যথী হল মন,
সম্ভ্রম ভরে বললাম তাঁকে,'বসুন খানিকক্ষণ'।।

একে একে তাঁর কাগজপত্র দেখলাম মন দিয়ে,
সংগ্রহ করা নির্দেশ সাথে দেখলাম তা মিলিয়ে।
বললাম আমি,'আসুন আপনি আরো তিন দিন পরে,
ইতিমিধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে, বলছি সত্যি করে।

 অবশ্য পাবেন ডি এ,পেনশন একসাথে,একযোগে',
ফিরলেন তিনি,হাতেতে প্যাকেট,ভর্তি তা রাজভোগে,
স্নেহের এই দান, প্রত্যাখ্যান কি ভাবে করি যে হায়,
বললাম,'এরা সব বদমাশ, কেড়ে খেয়ে নেবে তাই-
আজ এ প্যাকেট বাড়ি নিয়ে যান,মনে দুঃখ না করে,
সময় সুযোগ করে একদিন যাবো আপনার ঘরে।
আপনি আমার দাদুর মতই,সত্যি বলছি যাবো,
নাতিকে তখন যেটা খাওয়াবেন,সবটাই আমি খাবো'।।

হয়তো একটু হতাশ হলেন, মানলেন এই কথা,
বললেন,'যেন অবশ্য যাবে,না গেলে যে পাবো ব্যথা'।
প্রতি মাসে তিনি আসতেন এ ভাবে,হাতে তে প্যাকেট নিয়ে,
প্রতিবারই তাঁকে ফেরাতাম আমি কোনো অজুহাত দিয়ে।
***********
ছয়মাস পরে একদিন ভোরে কে যেন কড়া নাড়ায়,
খাগড়ায় এসে আমাদের বাড়ি, আমাদের দরজায়।
'সোনা বাবু বলে কেউ কি আছেন?বাইরে আসুন ভাই,'
অতি দ্রুত পায়ে নেমে এসে আমি দাঁড়ালাম দরজায়।
'আপনার জিয়াগঞ্জের দাদু,গত হয়েছেন রাতে,
মৃত্যুর আগে এ প্যাকেট তিনি দিয়েছেন আমার হাতে,
বলেছেন তাঁর নাতি সোনা লাল অবশ্য যেন পায়,
আপনিই হন, তাঁর অতি আপন এই গোটা দুনিয়ায়'।
************
কি জানি কি হল,দু চোখে আমার নামলো জলের ঢল,
কাঁপা কাঁপা হাতে মিষ্টি প্যাকেট নিলাম না করে ছল,
কোনোবার যাঁর কথা রাখিনি তো,হাত দি নি তাঁর দানে-
আজো কেন তাঁর সৌম্যাকৃতি নিয়ত আমাকে টানে?

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments