জ্বলদর্চি

শতবর্ষে শিল্পী সোমনাথ হোর (১৯২১-২০২১)/অর্ণব মিত্র

শতবর্ষে শিল্পী সোমনাথ হোর (১৯২১-২০২১)

অর্ণব মিত্র

সোমনাথ হোর-এঁর  জন্ম হয় ১৯২১ সালে পূর্ববঙ্গের চট্যগ্রামে। তার কিশোর বয়স কেটেছিল পূর্ববঙ্গের তখনকার অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে।তরুণ বয়সে শিল্পী চিত্তপ্রসাদের  সাথে সোমনাথ  হোর–এর পরিচয় হয় চট্যগ্রামে। সেই সময় চিত্তপ্রসাদ বাংলার দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকছেন। সোমনাথ হোরও তখন চিত্তপ্রসাদের উৎসাহে ক্ষুধায় পীড়িত মানুষের অবয়ব আঁকতে শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষ ও তেভাগা আন্দোলনের মধ্যে তিনি অনেক কাজ করেন। ১৯৪৩ সাল থেকে প্রায় ১৯৪৮ সাল অবধি তিনি দৃশ্য সংকলন ও সাংবাদিকতার কাজ করেন কলকাতার কম্যুনিস্ট পার্টির পত্রিকা ‘জনযুদ্ধ’-র জন্য। এই সময়ধরে তিনি সেই সময়ের বিখ্যাত পোস্টার ও ছাপচিত্র শিল্পী চিত্রপ্রসাদ-এর অধীনে কাজ করেন ও তার আঁকা সাদাকালো ড্রয়িং ও পোস্টার ‘জনযুদ্ধ’পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতে থাকে।  

এ সমন্ধে সোমনাথ হোর একটি লেখায় লেখেন ‘একসময়ে চিত্তপ্রসাদের সাথে যোগাযোগ হয় । তিনি আমাকে হাতে – কলমে দেখিয়ে দিলেন কি করে দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের ড্রয়িং করতে হয়। তাই থেকে আবার পোস্টার করা’। 
তিনি সেই লেখায় স্বীকার করেন ‘চিত্তপ্রসাদই আমার প্রথম দীক্ষা গুরু’। 
এর মধ্যে তিনি ১৯৪৫ সালে কলকাতার সরকারী আর্ট কলেজে ভর্তি হন। তিনি এখানে শিক্ষক হিসেবে পান শিল্পী জয়নুল আবেদিন -কে ।  আর সেই সময় আর্ট কলেজের  প্রিন্ট বিভাগে  পেয়েছিলেন বিখ্যাত ছাপচিত্রকর  সঈফুদ্দিন আমেদ –কেও । তার কাছে শেখেন কাঠখোদাই, লিথোগ্রাফি ও ইন্তাগ্লিও পদ্ধতির ছাপচিত্র । ১৯৫০ সাল অবধি বিভিন্ন ছাপচিত্রের পদ্ধতি তিনি শেখেন ও ক্রমস্য তার নিজের কাজ ও বিষয় তার শেখা ছাপচিত্রের পদ্ধতিগুলির মধ্যে দিয়ে বিকশিত হয়। 


এরপর ১৯৫৪ সালে সেই সময়ের  ইন্ডিয়ান আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষ শিল্পী অতুল বসুর আহ্বানে ওই আর্ট স্কুলে আসেন ও সেখানে ‘গ্রাফিক্স ডিপার্টমেন্ট’ খোলার দায়িত্ব গ্রহণ করেন । এখানে তিনি ১৯৫৮ সাল অবধি গ্রাফিক্স ডিপার্টমেন্টর শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। 
এরপর  ১৯৫৯ সালে সোমনাথ হোর দিল্লী পলিটেকনিকে গ্রাফিক্স বিভাগের প্রধান হয়ে যোগদান করেন। সেই সময় দিল্লীতে তার পরিচয় হয় ভবেশ সান্যাল, শৈলজ  মুখোপাধ্যায় ,ধ্যনরাজ ভগত, বীরেন দে, জয়া আপ্পাস্বামী প্রমুখ শিল্পীদের সঙ্গে । দিল্লির আধুনিকতাবাদী শিল্পীদের সঙ্গে  এই আলাপ পরিচয়ের ফলেই সোমনাথ হোরের শিল্পকলা সম্পর্কে ধারণা  পরিবর্তিত  হয় । সে সময় শিল্পী ভবেশ সান্যালের উৎসাহে ১৯৬০ সালে  তিনি প্রথম জাতীয় প্রদর্শনীতে অংশ নেন ও পুরস্কৃত হন। এরপর ১৯৬২ ও ১৯৬৩ সালেও জাতীয় পুরস্কার পান তার ছাপচিত্রের জন্য । 
দিল্লিতে থাকলেও কলকাতার সঙ্গে তার নিয়মিত সংযোগ থাকছিল। 

১৯৬০ সালে কলকাতার ‘সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্ট’ দলের সদস্য হয়েছিলেন। সোসাইটির ওয়েলিংটন স্কোয়ারে অবস্থিত দপ্তরে শিল্পীর  আঁকা ছবির একক প্রদর্শনী হয় যথাক্রমে ১৯৬১ ও ১৯৬২ সালে। 

তিনি এরপর বরোদা এম, এস, বিশ্ববিদ্যালয় ও দিল্লী পলিটেকনিক-এ কিছুকাল শিক্ষকতা করার পর পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসেন ১৯৬৭ সালে ।দিল্লীর  পলিটেকনিক-এ শিক্ষকতা করার সময় সেখানেই মহারাষ্ট্রের শিল্পী দিনকর কৌশিক-এর সাথে তার আলাপ হয়েছিল।  

চিত্রশিল্পী ও কলাভবনের অধ্যক্ষ নন্দলাল বসুর মৃত্যুর পর  ১৯৬৯ সালে কলাভবনে প্রধান অধ্যক্ষের পদের ভা্রপ্রাপ্ত হয়ে এলেন শিল্পী দিনকর কৌশিক ।তিনি এরপর সোমনাথ হোর- কেই  কলাভবনে ‘গ্রাফিক্স’ বিভাগের অধ্যাপকরুপে যোগদান করার আহ্বান করলেন ।


দিনকর কৌশিক তার একটি লেখায় সোমনাথ হোর সমন্ধে বলেন ‘ অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে মায়ের ছত্রছায়ায় মানুষ হয়েছিলেন সোমনাথ। চট্যগ্রাম তখন জাপানি বোমাবর্ষণে অস্থির। বিয়াল্লিস – তেতাল্লিস নাগাদ শুরু হল দুর্ভিক্ষ।  মানুষের হাতে গড়া দুর্ভিক্ষ। চারিদিকে মৃত্যুর বিভীষিকা, আর প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ শাসকের উদাসিন্যে অবাধ লুঠতরাজ।   চিত্রপ্রসাদ-এর ছবি এই সময়টাকে অনেকখানি ধরতে পেরেছিল। সোমনাথ এলেন কলকাতায়, এখানে রাস্তায় রাস্তায় কাতারে কাতারে মৃত্যু’। 

এরপরে দিনকর কৌশিক লিখছেন ‘দেখা হল জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে । শিল্পের তালিম শুরু হয়ে গেল। মনন্তরের যন্ত্রণার আগুনকে আরও সুতীব্র খোঁচায়  আবেদিন উস্কে দিলেন তরুণ সোমনাথের অন্তরে। তেভাগা  আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে শরিক হলেন সোমনাথ। শিল্প জন্মায় অন্তরের মানবতার বোধ থেকে। এ এক ধারাবাহিক রুপান্তর- প্রক্রিয়া, সরস্বতীর ফল্গু-ধারার মতো, অদৃশ্য।  শিক্ষানবিশীর  শুরু থেকেই  আঁকার  দিকে সোমনাথের দক্ষতা প্রকাশিত হয়েছিল।  বিষয়ের রুপ, গতি ইত্যাদির প্রতি শিল্পীর চেতনা ও কল্পনার ডানা অনায়াসে হত প্রসারিত ,অবারিত। ছাত্রবস্থায় সোমনাথ রাজনৈতিক কারণে, বেশ কিছু সময় ধরে ‘আন্ডা্রগ্রাউন্ড’-এ ছিলেন, থাকতে হয়েছিল। এবং তার পরেই তিনি ছবি আঁকার দিকে আরও বেশি করে মনোনিবেশ করতে শুরু করলেন। ছবিকে শান দিয়ে পরিণত করলেন রাজনৈতিক জেহাদের হাতিয়ার’। 
তিনি বলেন ‘একজন শিল্পীর পক্ষে তাঁর সমকালীন অনান্য সহকর্মীদের কাজের বিচার করা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ স্থান এবং কাল,পাত্রভেদে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দেয়। আর সেখান থেকেই উৎপন্ন হয় শিল্পের নতুন নতুন ধারা, রুপ। বিগত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে সোমনাথের সঙ্গে আমার  যোগাযোগ ও নিবিড় হ্রিদ্যতা। সে আমার যথার্থ বন্ধু। এবং এ জিনিসও আজকের দিনে বড় একটা মেলে না। অন্তত আমার কাছে এটা সোনার চাইতে বহুগুণে মুল্যবান। এতদিনের সাহচর্যে তার কাজের ব্যাপ্তির কিছুটা পরিমাপ বোধহয় করতে পেরেছি। 

রাজনীতিতে জড়িয়ে যাবার সুত্রেই দেশ ও দশের বিষয়টি সোমনাথের চিন্তার ভেতরে পাকাপাকিভাবে ঢুকে পড়ে’।


কলকাতার সরকারী আর্ট কলেজে শিক্ষক জয়নুল আবেদিন -এঁর ও তার আগে শিল্পী চিত্তপ্রসাদের  কাজের  প্রভাবে তার প্রথম পর্বের কাজগুলি গড়ে ওঠে । এছাড়া জার্মান  ‘Expressionism’ ও বিশেষ করে শিল্পী  ‘ক্যাথে কোলভিচ’ তার কাজে প্রভাব ফেলেছিলেন। কলকাতার সরকারী আর্ট কলেজে  পড়ার সময় ১৯৪৬ সালে একটি চিনের ‘উডকাট’ -এর এলবাম তার হাতে আসে । সেটি দেখে তিনি প্রভাবিত হন ও ছাপচিত্র-কে তার প্রধান প্রকাশ মাধ্যম করেন । ‘Cubism’-এর কৌণিকতা এই সময় তার কাজে দেখা যায়। 

ছাপচিত্রের পাশাপাশি ভাস্কর্যেও রয়েছে সোমনাথ হোরের বিশেষ অবদান।কলাভবনে অধ্যাপক থাকাকালীন তিনি ১৯৭৪ সাল থেকে ভাস্কর্য বানাতে শুরু করেন।

এই বিষয়ে একটি প্রবন্ধে শিল্প সমালোচক ও প্রাবন্ধিক  প্রশান্ত দাঁ বলছেন ‘এখানে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় (১৯০৪-১৯৮০) ও রামকিঙ্কর বেইজ (১৯০৬-১৯৮০) –এর সান্নিধ্য সোমনাথ হোর-কে নতুন করে চিন্তায় অনুপ্রাণিত করে। এছাড়াও এখানকার গ্রন্থাগার,জীবনযাত্রা, ও খোলা পরিবেশ জীবনবোধকে নব চিন্তায় আলোকিত করে’।

‘নতুন প্রজন্মের কাজকর্ম নিয়ে সোমনাথদা খুব আশাবাদী ছিলেন। ওর কাছে ছাত্রছাত্রীরা আসত,তাদেরকে যথেষ্ট সময় দিতেন এবং কাজকর্ম নিয়ে খুব মন দিয়ে আলোচনা করতেন। তখনকার কলাভবন ও এখনকার কলাভবন অনেক আলাদা,নতুন নতুন বিষয় যোগ হয়েছে,কিন্তু শান্তিনিকেতনে এখনও তিনি শিল্প, শিল্পচর্চায় একইভাবে প্রাসঙ্গিক’।বলেন শান্তিনিকেতনে কলাভবন পর্বে তার বন্ধুস্থানীয় সুলেখক সুজিত চট্যোপাধ্যায়, একটি পত্রিকায় তার লেখা ‘সোমনাথদা’ নামক প্রবন্ধে ।

তাকে স্মরণ করে শিল্পী ও প্রাবন্ধিক সুশোভন অধিকারী বলেন ‘শিল্প কলার ইতিহাসে এমন শিল্পীর আবির্ভাব সচরাচর ঘটে না। সোমনাথ হোরের শিল্পীসত্ত্বা তার ব্যাক্তি জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেখানে কোন ফাঁক নেই’। ‘চল্লিশের দশকের গোঁড়ায়  দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধের  প্রেক্ষাপটে যে আর্ত হাহাকার,দাঙ্গার হানাহানি,  মন্বন্তরের  যে ভয়াল চেহারা সোমনাথ প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা আজীবন তার শিল্পীমনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।’

তার ছাপাই ছবি সমন্ধে তিনি লেখেন –‘ ছাপাই ছবির জগতে সোমনাথ এক নতুন আঙ্গিকের অবতারণা করেছেন। কাঠখোদাই ছাড়াও এচিং লিথো গ্রাফ এনগ্রেভিং – ইত্যাদি অজস্র মাধ্যমের কাজ তার সারাজীবনে ছড়িয়ে আছে। বিষয়ের জন্য কুড়িয়ে নিয়েছেন অসংখ্য মানুষের অবয়ব –এদের মধ্যে যেমন আছে দুর্গত নিরন্ন অসহায় আর্ত মানুষের ভিড়,তেমনি শান্তিনিকেতন-এঁর আশেপাশে থাকা আদিবাসী জীবনের ছবিও কিছু কম নেই। শিল্পীর ব্রোঞ্জে ভাস্কর্যও গড়ে উঠেছে এক আশ্চর্য অনুভব। চিত্রকলা,ছাপাই-ছবি, ভাস্কর্য ছাড়াও তার একাধিক  মুরাল শিল্পীর নিজস্বতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়’।


৪ 
শিল্প সমালোচক ও প্রাবন্ধিক মনসিজ মজুমদার বাংলার শিল্পচর্চার ধারার আধুনিকতা প্রসঙ্গে লিখছেন ‘উনিশ শতকের শেষ থেকে জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় জন্ম নিয়েছিল অবনীন্দ্রনাথের ভারতশিল্প । ভারতশিল্প ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নান্দনিক হাতিয়ার। বিশ শতকের প্রথম তিন দশকে জাতীয়তাবাদের সমান্তরাল ভারতশিল্পের প্রসার ঘটেছিল । কিন্তু জাতীয়তাবাদের আবেগ স্তিমিত হয়ে গেল চল্লিশের দশকে, অন্তত নতুন প্রজন্মের তরুণ শিল্পীদের মনে। কারণ, দ্বিতীয়  মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ অভিঘাত (কোলকাতায় জাপানি বোমার আতঙ্ক,কারফিউ, কলকাতা ফাঁকা করে শহরবাসীদের গ্রামে গঞ্জে উদ্ভাসন), দুর্ভিক্ষ,দাঙ্গা, দেশভাগ এই তরুণ শিল্পীদের আত্বপ্রকাশের ভাষা ভারতশিল্পের ভাবালুতায় ছিল না। 

এমনই এক পরিবেশের শিল্পীর নিজস্ব ভাবনা প্রকাশের পথ খুঁজে নিল। তিনি লেখেন ‘ কিন্তু চল্লিশের দশকের দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলা সব কিছুতেই ক্ষতবিক্ষত মানবতাকে তিনি দেখেছেন, যা তাঁর মন-চেতনা  ক্ষতক্লিষ্ট করেছে। ছবি আঁকার সময় এই  ক্ষতচিহ্ন ভুলে যেতে বা মন থেকে সরিয়ে রাখতে পারেননি। এই ক্ষতচিহ্ন তার ছবি , ছাপাই ছবি ও ভাস্কর্যের প্রেরণা। 

প্রায় বারো বছর অধ্যাপনার পর সোমনাথ হোর কলাভবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৮৩ সালে।


১৯৭০ সাল নাগাদ তিনি ভাস্কর্য বানাতে শুরু করেন। তার আকারে ছোট ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যগুলো দুর্ভিক্ষ ও মানুষের অসহায়তাকে প্রতিনিধিত্ব করে ও আধুনিক শিল্পের উদাহরণ হয়ে ওঠে। সোমনাথ হোরের কলাভবন পর্যায়ে করা এই ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যগুলো সমন্ধে দিনকর কৌশিক লেখেন ‘ মানুষের প্রতি মানুষ কিরকম অমানুষিক হতে পারে,কত দয়াহীন হয়ে নির্যাতন করতে পারে, মানুষের অন্তহীন নিদারুণ অবস্থা, তার ক্ষুধা,তার পীড়া- এসবই আন্তরিক অনুভবে প্রকাশ পেয়েছে সোমনাথ হো্র-এঁর ব্রোঞ্জ শিল্পে। শিল্পের এই বিশেষ দিকটির প্রতি অনুরাগ সোমনাথের জীবনে একটু দেরিতেই জন্ম নিয়েছে। সম্ভবত এক দশক পূর্বেই তিনি এ- ধরণের কাজকর্ম বেছে নিয়েছেন। শুরুটা করেছিলেন নিছক মোমের কাজ দিয়ে সে সব কাজে পরিণতির সাক্ষর ছিল সুস্পষ্ট’। 

তার ‘তেভাগা’ পর্বের কাজে ও ১৯৫০ দশক ও তার পরবর্তী সময়ের কাজে সেই সময়ের চিনের সামাজিক বাস্তবতাভিত্তিক কাজ ও জার্মানির এক্সপ্রেসনিস্টিক কাজের প্রভাব ছিল। সেই সময়ের জার্মানির ছাপচিত্র শিল্পী kathe kolliwitz-এর কাজ তাকে প্রভাবিত করেছিল।

তিনি কয়েকটি ছাপাই পদ্ধতি নিজে তৈরি করেন । তার কাজের বা ভাবনার পরবর্তী প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ।যেমন‘pulp print teckniq’ যা তিনি তার ‘ক্ষত’ ধারার ছাপচিত্রের ছবির জন্য তৈরি করেন। 

প্রায় চার দশক ধরে ছাপচিত্র ও ভাস্কর্য বিভাগে তার নতুন ধারার কাজের দ্বারা ও শিল্পশিক্ষার মাধ্যমে তিনি শিল্পের জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন।  

তার গ্রাফিক্স-এর কাজ সমন্ধে তিনি নিজে লেখেন ‘পঞ্চাশের মন্বন্তরের যে ক্ষত, যুদ্ধের যে  অমানবিকতা, ছেচল্লিসের দাঙ্গার বীভৎসতা-এগুলি আমার আঁকার পদ্ধতিতে খোদিত হয়ে যাচ্ছিল,আমারিই অজান্তে। কাঠখোদাই-এর নরুন দিয়ে কাঠ মাটি,ধাতুতলে অ্যাসিড দিয়ে,ক্ষত তৈরি করি,আগে থেকে কোন প্রাথমিক খসড়া ছাড়াই এই কাটাকুটির কাজ চলে, পরে অসংখ্য ক্ষত  একটি  মাত্র বিষয়ের ইঙ্গিত বয়ে আনে, তাহল আমাদের চারিপাশে যারা অসহায়, পরিত্যক্ত ,নিরন্ন তাদের অবয়ব। দুর্ভিক্ষয়ের ছবি দিয়ে যে খড়ি হাতের আঙ্গুল পেরিয়ে হৃদয়ে দাগ কেটেছিল, তার দাগ আর মিলাল না’। 

২০২১ সালে এই শিল্পীর জন্মের ১০০ বছর পূর্ণ  হয়েছে। 
ভাস্কর্য ও ছাপচিত্রের মাধ্যমে তিনি গত শতকের শিল্পের ইতিহাসে নিজের ছাপ রেখে গেছেন যা নিঃসন্দেহে ভারতের তথা বিশ্বের ভবিষ্যৎ শিল্পীদেরও প্রভাবিত করবে।  
‘পদ্মভূষণ’ উপাধি পাওয়া এই শিল্পীর প্রয়াণ ঘটে ২০০৬ সালে।  



তথ্যসুত্র –
জনযুদ্ধে সোমনাথ হোর’ শুভেন্দু  দাশগুপ্ত, উদ্ভাস প্রকাশন ।  
কৃত্তিবাস পত্রিকা সোমনাথ হোর সংখ্যা,
শনিবারের কড়চা, ওয়েব পত্রিকা।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments